চরাচর-একজন মুক্তিযোদ্ধার জীবনযুদ্ধ by বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
মুক্তিযুদ্ধের উত্তেজনা-উৎকণ্ঠা চারদিকে। রক্তস্নাত হত্যাযজ্ঞে মর্মান্তিক দিনগুলো তখন অতিক্রম করছে জাতি। এই সময় ১৮ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন তরুণ রসময় কর্মকার। শায়েস্তাগঞ্জের একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন তিনি। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হবিগঞ্জের মাধবপুরে এসে পড়লে প্রাণভয়ে তিনি মা-বোনদের নিয়ে ভারতের উদ্দেশে রওনা হন। ভারতের খোয়াই শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মানুষের মুখে তিনি জানতে পারেন,
তাঁর বাবাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হত্যা করেছে। এ কথা শুনেই প্রতিশোধের সংকল্প দানা বাঁধতে থাকে তাঁর মনে। সেই সময় মা-বোনের কান্না সহ্য করতে না পেরে তিনি ত্বরিত সিদ্ধান্ত নেন মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার।
রসময় জানান, হবিগঞ্জের খোয়াইয়ে একটি ক্যাম্প গঠন করা হয়। সেখানে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নিজের নাম লেখান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আনসার আলী, নিখিল পাল, সুনীল বাড়ৈ, গোবিন্দ, কবির ও রামকৃষ্ণসহ ১২ জনের একটি দল। নানা রকম প্রশিক্ষণ শেষ করে ক্যাপ্টেন এজাহারের নেতৃত্বে যুদ্ধে নেমে পড়েন তিনি। রেমা, কালেঙ্গা প্রভৃতি এলাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধে সরাসরি অংশ নেন। তাঁর স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্রটির নম্বর_০৫০৩০১০০৫৫ এবং যোদ্ধা নম্বর_১২৩১৪২। এরপর দেশ স্বাধীন করে বাড়িতে ফেরেন তিনি। এসে নিজ বাড়িটি বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখতে পান। হাত দেন বাড়িটি পুনর্নির্মাণে। কিন্তু এরই মধ্যে গ্রামের অবশিষ্ট জমিজমা, বিষয়-সম্পত্তির জাল দলিল করে গ্রাস করে নিয়েছে এলাকার সংঘবদ্ধ চক্র। অবশেষে পরিবার নিয়ে চলে আসেন শ্রীমঙ্গলের সবুজবাগ এলাকায়। এখানে এসে পড়েন আরো বিড়ম্বনায়। স্ত্রী এবং বৃদ্ধ মাকে নিয়ে যেন ভাসমান জীবনযাপন। জীবিকার জন্য ঘুরতে থাকেন শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। একজনের আর্থিক সহযোগিতায় একটি পান দোকান নিয়ে বসেন। একপর্যায়ে পুঁজির অভাব এবং বাকির খাতায় নাম দীর্ঘ হওয়ায় দোকানটি বন্ধ করে দিতে হয়। আবার নিঃস্ব হয়ে পড়েন তিনি। রসময় ১৯৫৩ সালে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার লেঞ্জাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি বৃদ্ধ মা, স্ত্রী এবং দুই মেয়েকে নিয়ে থাকেন। রসময় কর্মকার বলেন, 'আগে পত্রিকা বিক্রি করে যা পেতাম তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলত। এখন তো তা-ও বন্ধ। শারীরিক অসুস্থতা লেগেই আছে। অসুস্থতার জন্য কাজ করতে পারি না। পরিবারের মুখে একমুঠো ভাতও তুলে দিতে পারি না।' চোখ জলে ভরে ওঠে তাঁর। কথা যেন ফুরায় না। কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে শব্দগুলো বিড়বিড় করে বের হতে থাকে। অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি বলেন, 'ভগবান আমাকে বুড়ো বয়সে সন্তানের মুখ দেখিয়েছেন। কিন্তু বাচ্চাটা মায়ের দুধ পায় না। দুধ কিনে দেওয়ার ক্ষমতা নেই। ঘরেও বুড়ো মা। বড় আশা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, দেশ স্বাধীন হলে সব মানুষ তার মর্যাদা পাবে। এখন নিজেরই কোনো দাম নেই নিজের কাছে।' তাঁর অসহায়ত্বের এই সুগভীর আর্তনাদ কাউকে যদি স্পর্শ করে থাকে, তাহলে তাঁকে সাহায্য পাঠাতে পারেন। হতদরিদ্র বীর মুক্তিযোদ্ধা রসময় কর্মকারকে আর্থিক সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা : রসময় কর্মকার, অগ্রণী ব্যাংক, সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর_১৫১৬৬, শ্রীমঙ্গল শাখা, মৌলভীবাজার। একসময় বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেও জীবদ্দশায় তিনি আজ অবহেলিত, বঞ্চিত এবং জীবন সংগ্রামে পরাজিত সেই 'একাত্তরের সৈনিক'।
বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
রসময় জানান, হবিগঞ্জের খোয়াইয়ে একটি ক্যাম্প গঠন করা হয়। সেখানে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নিজের নাম লেখান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আনসার আলী, নিখিল পাল, সুনীল বাড়ৈ, গোবিন্দ, কবির ও রামকৃষ্ণসহ ১২ জনের একটি দল। নানা রকম প্রশিক্ষণ শেষ করে ক্যাপ্টেন এজাহারের নেতৃত্বে যুদ্ধে নেমে পড়েন তিনি। রেমা, কালেঙ্গা প্রভৃতি এলাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধে সরাসরি অংশ নেন। তাঁর স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্রটির নম্বর_০৫০৩০১০০৫৫ এবং যোদ্ধা নম্বর_১২৩১৪২। এরপর দেশ স্বাধীন করে বাড়িতে ফেরেন তিনি। এসে নিজ বাড়িটি বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখতে পান। হাত দেন বাড়িটি পুনর্নির্মাণে। কিন্তু এরই মধ্যে গ্রামের অবশিষ্ট জমিজমা, বিষয়-সম্পত্তির জাল দলিল করে গ্রাস করে নিয়েছে এলাকার সংঘবদ্ধ চক্র। অবশেষে পরিবার নিয়ে চলে আসেন শ্রীমঙ্গলের সবুজবাগ এলাকায়। এখানে এসে পড়েন আরো বিড়ম্বনায়। স্ত্রী এবং বৃদ্ধ মাকে নিয়ে যেন ভাসমান জীবনযাপন। জীবিকার জন্য ঘুরতে থাকেন শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। একজনের আর্থিক সহযোগিতায় একটি পান দোকান নিয়ে বসেন। একপর্যায়ে পুঁজির অভাব এবং বাকির খাতায় নাম দীর্ঘ হওয়ায় দোকানটি বন্ধ করে দিতে হয়। আবার নিঃস্ব হয়ে পড়েন তিনি। রসময় ১৯৫৩ সালে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার লেঞ্জাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি বৃদ্ধ মা, স্ত্রী এবং দুই মেয়েকে নিয়ে থাকেন। রসময় কর্মকার বলেন, 'আগে পত্রিকা বিক্রি করে যা পেতাম তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলত। এখন তো তা-ও বন্ধ। শারীরিক অসুস্থতা লেগেই আছে। অসুস্থতার জন্য কাজ করতে পারি না। পরিবারের মুখে একমুঠো ভাতও তুলে দিতে পারি না।' চোখ জলে ভরে ওঠে তাঁর। কথা যেন ফুরায় না। কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে শব্দগুলো বিড়বিড় করে বের হতে থাকে। অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি বলেন, 'ভগবান আমাকে বুড়ো বয়সে সন্তানের মুখ দেখিয়েছেন। কিন্তু বাচ্চাটা মায়ের দুধ পায় না। দুধ কিনে দেওয়ার ক্ষমতা নেই। ঘরেও বুড়ো মা। বড় আশা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, দেশ স্বাধীন হলে সব মানুষ তার মর্যাদা পাবে। এখন নিজেরই কোনো দাম নেই নিজের কাছে।' তাঁর অসহায়ত্বের এই সুগভীর আর্তনাদ কাউকে যদি স্পর্শ করে থাকে, তাহলে তাঁকে সাহায্য পাঠাতে পারেন। হতদরিদ্র বীর মুক্তিযোদ্ধা রসময় কর্মকারকে আর্থিক সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা : রসময় কর্মকার, অগ্রণী ব্যাংক, সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর_১৫১৬৬, শ্রীমঙ্গল শাখা, মৌলভীবাজার। একসময় বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেও জীবদ্দশায় তিনি আজ অবহেলিত, বঞ্চিত এবং জীবন সংগ্রামে পরাজিত সেই 'একাত্তরের সৈনিক'।
বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
No comments