সীমান্তে গুলি চলতে থাকা প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ-বিএসএফ-প্রধানের মন্তব্য
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধান মন্তব্য করেছেন, সীমান্তের গুলি বন্ধ হবে না। মন্তব্যটি দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সীমান্তরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ে আগের সিদ্ধান্তের সরাসরি বরখেলাপ। এর আগে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা হয়েছিল, সীমান্তে কেউ গুলি ছুড়বে না। অথচ এখন ভারত বলছে, গুলি বন্ধ হবে না এবং বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনাও ঘটছে। ঘটনাগুলো বাংলাদেশের মানুষের মনে গভীর হতাশা ও অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে।
গত এক যুগে প্রায় এক হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে কিশোরী ফেলানীর গুলিবিদ্ধ লাশ কাঁটাতারে ঝুলে থাকার দৃশ্য উভয় দেশের সাধারণ নাগরিকদের ব্যথিত করেছে। বিএসএফের দিক থেকে গুলি করে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার যুক্তি হিসেবে ‘আত্মরক্ষা’ ও ‘চোরাচালান’ বন্ধের কথা বলা হলেও প্রায়শই বাংলাদেশের মাটিতেও নিরস্ত্র বাংলাদেশিওে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাচ্ছে। তবে, দ্বিতীয় কারণটি বাস্তব। বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী এবং বিশেষত ভারতীয় গরু চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে আনা হয়। এদের মধ্যে কেবল গরু নিয়ে সীমান্ত পেরোনো বাংলাদেশিদেরই বিএসএফের গুলিতে নিহত হতে দেখা যায়।
ভারতের বিপুল পরিমাণে উদ্বৃত্ত গরু বেআইনি পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এ থেকে ভারত বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকে। এ ছাড়া বহু ভারতীয় সামগ্রীও সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। অবৈধ পণ্য চলাচল বন্ধে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীরা যে মোটেই আন্তরিক নয়, হাবিবুর রহমানের ঘটনাই তাঁর প্রমাণ। উৎকোচ দিতে রাজি না হওয়ায় তাঁর ওপর নির্মম নির্যাতন চালায় ্বিএসএফ সদস্যরা। অভিযোগ রয়েছে, এই অবৈধ গরু ব্যবসার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে সমস্যাই সীমান্ত-হত্যার একটি কারণ। এ ছাড়া অবৈধ পথে সীমান্ত পেরোনোর সময় গুলি করার যুক্তি দেওয়া হলেও প্রায়শই বাংলাদেশি ভূখণ্ডের ভেতরেও গুলি করে মানুষ হত্যার নজির রয়েছে। সীমান্ত ঘেঁষেই অনেকের জমি ও বসতি; নিজ জমিতে বা বাড়ির প্রাঙ্গনেও গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সীমান্তে চোরাচালানই হোক বা অনুপ্রবেশই হোক, এসব রোধের উপায় গুলি করে হত্যা নয় । এই অপরাধের সাফাই যখন বিএসএফ-প্রধান দেন, তখন দুঃখিত হতে হয়।
আমরা আশা করি, ভারত সরকার বিএসএফ-প্রধানের মন্তব্যের ব্যাখ্যা দেবে এবং সীমান্তে গুলি না করার ব্যাপারে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতাকে মান্য করে চলবে। ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির আসন্ন ঢাকা সফরের আগেই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আচরণ সংযত হওয়া প্রয়োজন।
No comments