বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
৩১০ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। মো. আবদুল মমিন
বীর প্রতীক মিরপুর যুদ্ধের বীর শহীদ ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করল। বাংলাদেশ স্বাধীন; কিন্তু ঢাকা শহরের একটি অংশ (মিরপুর) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী অবাঙালিদের (বিহারি) দখলে থেকে গেল। তারপর কেটে গেল আরও প্রায় দেড় মাস। অবাঙালিরা আত্মসমর্পণ করল না।
বীর প্রতীক মিরপুর যুদ্ধের বীর শহীদ ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করল। বাংলাদেশ স্বাধীন; কিন্তু ঢাকা শহরের একটি অংশ (মিরপুর) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী অবাঙালিদের (বিহারি) দখলে থেকে গেল। তারপর কেটে গেল আরও প্রায় দেড় মাস। অবাঙালিরা আত্মসমর্পণ করল না।
এরপর সরকার নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের নির্দেশ দিল সেখানে অভিযান চালানোর। মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে আক্রমণ চালানোর আগে অবাঙালিদের আবার নির্দেশ দিলেন আত্মসমর্পণ করতে। তারা আত্মসমর্পণ না করে বরং আকস্মিক আক্রমণ চালাল মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর। শুরু হয়ে গেল ভয়াবহ যুদ্ধ। রক্তক্ষয়ী এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারাই বিজয়ী হন; কিন্তু অবাঙালিদের হাতে শহীদ হলেন লেফটেন্যান্ট সেলিম, মো. আবদুল মমিনসহ প্রায় দেড়শ জন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মো. আবদুল মমিন।
মিরপুর ছিল অবাঙালি অধ্যুষিত এলাকা। ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে মিত্রবাহিনীর ১০ বিহার রেজিমেন্ট মিরপুরে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার কাছে নিয়োজিত থাকে। সেখানে বিপুলসংখ্যক অস্ত্রধারী অবাঙালি আত্মগোপন করেছিল। ৩০ জানুয়ারি থেকে মুক্তিযোদ্ধারা (দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও পুলিশ) মিরপুরে অভিযান শুরু করে। তাঁরা সেখানে যাওয়া মাত্র প্রচণ্ড আক্রমণের সম্মুখীন হন।
মো. আবদুল মমিন চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল ঢাকার অদূরে জয়দেবপুরে। তখন তাঁর পদবি ছিল সুবেদার। মো. আবদুল মমিন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মেজর কে এম সফিউল্লাহর (বীর উত্তম, পরে মেজর জেনারেল ও সেনাপ্রধান) নেতৃত্বে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহে সমবেত হয়ে বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধযুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে অংশ নেন। পরে যুদ্ধ করেন ৩ নম্বর সেক্টর ও ‘এস’ ফোর্সের অধীনে।
মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে আখাউড়া যুদ্ধে মো. আবদুল মমিন যথেষ্ট সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। ৩০ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আখাউড়ায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি দল অংশ নেয়। মো. আবদুল মমিনের দল আখাউড়ার উত্তর দিকে সিঙ্গারবিল হয়ে অগ্রসর হয়। সিঙ্গারবিলের আশপাশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বড় রকমের সংঘর্ষ হয়। মুক্তিযোদ্ধারা সিঙ্গারবিল জেটি ও পার্শ্ববর্তী রাজাপুর দখল করেন। এরপর তাঁরা আজমপুর রেলস্টেশনে আক্রমণ চালান।
মুক্তিযোদ্ধাদের অপর দল ১ ডিসেম্বর দুপুরে আজমপুর রেলস্টেশন দখল করেছিল; কিন্তু পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা আক্রমণ করে কয়েক ঘণ্টা পর স্টেশনটি পুনর্দখল করে। তখন ‘এস’ ফোর্সের অধিনায়ক মেজর কে এম সফিউল্লাহ আজমপুর রেলস্টেশন পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দেন। এরপর মো. আবদুল মমিনের দল সেখানে আক্রমণ চালায়।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য মো. আবদুল মমিনকে মরণোত্তর বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ সনদ নম্বর ৬৬।
শহীদ মো. আবদুল মমিনের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলার কামরাঙ্গা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম হায়দার আলী মুন্সি। মা নোয়াবজান বিবি। স্ত্রী মোসা. আমেনা খাতুন। তাঁর তিন ছেলে ও এক মেয়ে।
শহীদ মো. আবদুল মমিনের ছবি পাওয়া যায়নি।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ ব্রিগেডভিত্তিক ইতিহাস এবং স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, মো. আবদুল হান্নান।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
মিরপুর ছিল অবাঙালি অধ্যুষিত এলাকা। ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে মিত্রবাহিনীর ১০ বিহার রেজিমেন্ট মিরপুরে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার কাছে নিয়োজিত থাকে। সেখানে বিপুলসংখ্যক অস্ত্রধারী অবাঙালি আত্মগোপন করেছিল। ৩০ জানুয়ারি থেকে মুক্তিযোদ্ধারা (দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও পুলিশ) মিরপুরে অভিযান শুরু করে। তাঁরা সেখানে যাওয়া মাত্র প্রচণ্ড আক্রমণের সম্মুখীন হন।
মো. আবদুল মমিন চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল ঢাকার অদূরে জয়দেবপুরে। তখন তাঁর পদবি ছিল সুবেদার। মো. আবদুল মমিন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মেজর কে এম সফিউল্লাহর (বীর উত্তম, পরে মেজর জেনারেল ও সেনাপ্রধান) নেতৃত্বে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহে সমবেত হয়ে বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধযুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে অংশ নেন। পরে যুদ্ধ করেন ৩ নম্বর সেক্টর ও ‘এস’ ফোর্সের অধীনে।
মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে আখাউড়া যুদ্ধে মো. আবদুল মমিন যথেষ্ট সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। ৩০ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আখাউড়ায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি দল অংশ নেয়। মো. আবদুল মমিনের দল আখাউড়ার উত্তর দিকে সিঙ্গারবিল হয়ে অগ্রসর হয়। সিঙ্গারবিলের আশপাশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বড় রকমের সংঘর্ষ হয়। মুক্তিযোদ্ধারা সিঙ্গারবিল জেটি ও পার্শ্ববর্তী রাজাপুর দখল করেন। এরপর তাঁরা আজমপুর রেলস্টেশনে আক্রমণ চালান।
মুক্তিযোদ্ধাদের অপর দল ১ ডিসেম্বর দুপুরে আজমপুর রেলস্টেশন দখল করেছিল; কিন্তু পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা আক্রমণ করে কয়েক ঘণ্টা পর স্টেশনটি পুনর্দখল করে। তখন ‘এস’ ফোর্সের অধিনায়ক মেজর কে এম সফিউল্লাহ আজমপুর রেলস্টেশন পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দেন। এরপর মো. আবদুল মমিনের দল সেখানে আক্রমণ চালায়।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য মো. আবদুল মমিনকে মরণোত্তর বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ সনদ নম্বর ৬৬।
শহীদ মো. আবদুল মমিনের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলার কামরাঙ্গা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম হায়দার আলী মুন্সি। মা নোয়াবজান বিবি। স্ত্রী মোসা. আমেনা খাতুন। তাঁর তিন ছেলে ও এক মেয়ে।
শহীদ মো. আবদুল মমিনের ছবি পাওয়া যায়নি।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ ব্রিগেডভিত্তিক ইতিহাস এবং স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, মো. আবদুল হান্নান।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
No comments