মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলা-এমন নাশকতার অবসান হোক
'কামনায় কামনায় দেশে দেশে যুগে যুগান্তরে/নিরন্তর নিদারুণ দ্বন্দ্ব যবে দেখি ঘরে ঘরে/প্রহরে প্রহরে; দেখি অন্ধ মোহ দুরন্ত প্রয়াসে/বুভুক্ষার বহ্নি দিয়ে ভস্মীভূত করে অনায়াসে/নিঃসহায় দুর্ভাগার সকরুণ সকল প্রত্যাশা,'_রবীন্দ্রনাথের এ শঙ্কার যেন কোনো ব্যত্যয় ঘটছে না! একটি দেশ, একটি জাতি কেন এমন বারবার তার নাগরিকদের রক্তে রঞ্জিত হতে দেখবে! সে কোন অন্ধ মোহ দুরন্ত প্রত্যাশা পূরণে? ভারতের মুম্বাই শহরের সাধারণ মানুষ কি সে প্রত্যাশার কথা জানে,
অথবা সে প্রত্যাশা পূরণ না হতে দেওয়ার জন্য দায়ী? তাহলে কেন এ হামলা, নিরীহ মানুষ হত্যা? আবারও বোমা হামলার শিকার হলো ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাই। প্রায় একই সময়ে তিনটি হামলায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অন্তত ২০ জন সাধারণ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। আহতদের অনেকে পড়ে আছে হাসপাতালে। জানা গেছে, মুম্বাই শহরের এ হামলায় অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ব্যবহার করা হয়েছে। কারা এ হামলার জন্য দায়ী তা জানা না গেলেও ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম বলেছেন, এটি একটি সমন্বিত হামলা। লক্ষণীয়, তিনটি এলাকার হামলায় টার্গেট ছিল মুম্বাইয়ের সাধারণ জনগণ। অর্থাৎ যারাই এ হামলা করে থাকুক, তাদের উদ্দেশ্যই ছিল 'বুভুক্ষার বহ্নি দিয়ে ভস্মীভূত' করা। তবে এ হামলায় এখনো কাউকে বা কোনো সংগঠনকে সরাসরি অভিযুক্ত না করা হলেও মুসলিম মৌলবাদীদের দিকেই যে সবার দৃষ্টি, সেটা নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া যায়। সে ইঙ্গিত ভারতের বিভিন্ন মহল থেকেও দেওয়া হয়েছে।
মুম্বাইয়ে এ হামলা প্রথম নয়। ১৯৯৩ সালেও মুম্বাই স্টক এঙ্চেঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় একযোগে হামলা করা হয়েছিল। সে হামলায় নিহত হয়েছিল দুই হাজার ১৬০ জন মানুষ। ২০০২ সালে মুম্বাইয়ের জাভেরি বাজারে দুটি বোমা হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। এবারও কিন্তু সেই জাভেরি বাজারে একটি হামলা হয়েছে। ২০০৬ সালে জঙ্গিরা মুম্বাইয়ের রেলগাড়িতে হামলা চালালে ২০৯ জন নিহত হয়। এবং এই সর্বশেষ হামলার আগে ২০০৮ সালে হোটেল তাজ, একটি রেলস্টেশনসহ তিনটি জায়গায় হামলা চালায়, যে সন্ত্রাসী হামলায় ১৭০ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয়। ওই হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তানের জঙ্গিরা, যাদের মধ্যে কাসাব নামের এক জঙ্গি ধরা পড়ে এবং তাঁকে ভারতের উচ্চ আদালত মৃত্যুদণ্ড দেন।
আমরা এ জঘন্য হামলার নিন্দা জানাই। নিরীহ মানুষ হত্যার মধ্য দিয়ে যদি কেউ কোনো মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাহলে সেটাকে অপরাধ বলে অভিযুক্ত করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিসম্পন্ন দেশে কোনো মতাদর্শ চাপিয়ে দিতে গিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা করা একটি নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অযৌক্তিক কাণ্ড ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে গিয়ে যারা সাধারণ মানুষ হত্যার পথ বেছে নেয়, তাদের বিরুদ্ধে আমরা সর্বদাই সোচ্চার। সুতরাং ভারতের জনগণ এবং সরকারের প্রতি আমরা আমাদের গভীর সমবেদনা জানাই। আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস, এমন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জনগণ ভারতের পাশে থাকবে, সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবে। এ ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সন্ত্রাসবিরোধী সমন্বিত কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তাকেই আরো ত্বরান্বিত করার তাগিদ দিয়ে গেল। ভারত এ সংকট দ্রুত কাটিয়ে উঠবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।
No comments