এক কুমিরের ছানা কতবার দেখাবেন?-দুদক আইন সংশোধন
সরকার তার মেয়াদের অর্ধেকের বেশি পূরণ করার লগ্নে ২০০৪ সালের দুদক আইনে কতিপয় ইতিবাচক সংশোধনী আনছে। বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়েরে সরকারের অনুমতি লাগার যে প্রস্তাব আগে ছিল, তা বাতিল হতে যাচ্ছে। অবশ্য এ নিয়ে সরকারের মধ্যে মতবিরোধ ও দোটানা এখনো কম নয়।
সর্বশেষ, আইনমন্ত্রীর ৯ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে দেওয়া বক্তব্য গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছে। সরকারের অনুমতি না লাগার কথাটি প্রায় তিন বছর ধরেই গণমাধ্যমে আসছে। আমাদের একটি সংসদীয় কমিটি কয়েকটি দেশ সফর করেও তা বলেছিল। এসবই দৃশ্যত স্বস্তিদায়ক অগ্রগতি। কিন্তু এখানে একটি ফাঁকি আছে। এই ফাঁকির গল্পটা সেই শেয়াল ও কুমিরছানার গল্পের সঙ্গে তুলনীয়। ‘বোকা’ জনগণকে একটা ছানা বারবার দেখানো হচ্ছে।
দুদক আইনে, মামলার আসামি সরকারি কর্মচারীই হোক আর সাধারণ জনগণ হোক, বিচারের আগে দুদকের অনুমতি লাগে; বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরোর যুগের মতো সরকারেরটা লাগে না।
কিন্তু দুদক গত তিন বছরে যুগ্ম সচিব বা তার ওপরের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটিও মামলা দায়ের করতে পারেনি। এর মানে কি? তারা সব ধোয়া তুলসী পাতা? তাঁরা আমাদের জানাচ্ছেন না যে কেন তাঁরা জনপ্রশাসনের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়ের করতে অপারগ। প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত তিন বছরে সহকারী সচিব ও তার নিচের পর্যায়ের প্রায় ১০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুদক মামলা করেছে। যদিও এই ‘কৃতিত্ব’ শুধু মামলা দায়েরের মধ্যেই সীমিত। বৃহস্পতিবার দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরে সরকারের অনুমতির দরকার নেই। কিন্তু সংসদের বিবেচনাধীন একটি সংশোধনী আইনের ৩২ক ধারায় সিআরপিসির ১৯৭ ধারার আওতায় সরকারি অনুমতির প্রস্তাব করা হয়েছিল। আইনমন্ত্রী বলেছেন, এটা বাদ যাবে।
গত পাঁচ-ছয় বছরে সুপ্রিম কোর্টে দুদকের পক্ষে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মামলা পরিচালনাকারী ওই আইনজীবী বলেন, ‘আমার জানামতে গত তিন বছরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা কোনো একটি মামলাও বিচারিক আদালতে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়নি।’ দেশে দুর্নীতি দমনের কী হাল, সেটা এই মন্তব্যেই স্পষ্টর্ ।
ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতারা দূরে থাকুক, প্রভাবশালী সরকারি কর্তাদের থেকে অনেক তফাতে অবস্থান করছে দুদক। যে বেড়াল ইঁদুর মারে তার গোঁফ দেখলে যায় চেনা। সুতরাং প্রস্তাবিত সংশোধনী ভালো, কিন্তু তা দুর্নীতি দমনের বেহাল পরিস্থিতিতে তেমন পরিবর্তন ঘটাবে না, দেশে দীর্ঘকাল ধরে গড়ে ওঠা দুর্নীতিগ্রস্তদের দায়মুক্তির সংস্কৃতিতেও চিড় ধরবে না। তাই এক কুমিরের ছানা বারবার দেখানোর অবাঞ্ছিত ও অসহনীয় কসরতটা অন্তত বন্ধ হোক!
No comments