ডিজিটাল সন্ত্রাসের নমুনা বটেঃ হাতিয়ায় যেতে পারলেন না স্থানীয় সংসদ সদস্য
কিছুদিন ধরে কয়েকটি এলাকায় আমার দেশসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের স্থানীয় সাংবাদিকরা থাকতে পারছেন না। তাদের কেউ কেউ প্রাণভয়ে ঢাকায় পালিয়ে এসেছেন। সংশ্লিষ্ট পত্রিকা কর্তৃপক্ষকে আপৎকালীন ভিত্তিতে তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। এসব ঘটনার উৎস হচ্ছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নামধারী তথাকথিত ক্যাডারদের সন্ত্রাস।
আওয়ামী লীগ এবার ভোটে জিতে ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকে ধরাকে সরাজ্ঞান করতে শুরু করেছে। দেশজুড়ে এ দলের নেতাকর্মী -সমর্থকরা এমন তান্ডব শুরু করেছে যে, সাধারণ মানুষের এখন ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা। তাদের এসব অনাচারের খবর পরিবেশন করায় তারা সাংবাদিকদের ওপর ক্ষেপেছে। বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে সাংবাদিক-বিরোধী আওয়ামী তান্ডব। আমরা ধারাবাহিকভাবে ঘটতে থাকা এ সন্ত্রাসী তৎপরতাকে আওয়ামী তান্ডবের শেষ কথা ধরে নিয়েছিলাম। কিন্তু বিধাতা বোধহয় আড়াল থেকে হাসছিলেন। আমাদের ভুল ভাঙতে দেরি হয়নি। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এবার চড়াও হয়েছে সংসদ সদস্যের ওপর। নোয়াখালী-৬ হাতিয়া আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ফজলুল আজিম বনদস্যু সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে বৃহসপতিবার তার নির্বাচনী এলাকায় ঢুকতে পারেননি। ওইদিন সেখানে তার পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর মদতে কুখ্যাত বনদস্যু সর্দার বাসার মাঝি তার দলবল ও অন্যান্য সন্ত্রাসী মিলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যে, শেষ পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ার ফজলুল আজিমকে মাইজদী থেকে ফিরে যেতে হয়। তিনি হাতিয়া যাওয়ার জন্য নোয়াখালীর এসপির সহায়তা চেয়েছিলেন। কিন্তু এসপি সাহেব তাকে হাতিয়া না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছেন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ফজলুল আজিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগের মধুর সম্পর্কের কথা শোনা যায়। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক এমপির নেতৃত্বে যে সংসদীয় প্রতিনিধিদল টিপাইমুখ দেখতে গিয়েছিল তিনি তার একজন সদস্য ছিলেন। তাদের বহনকারী হেলিকপ্টার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে টিমাইমুখে অবতরণ করতে না পারায় তারা দিল্লি থেকে ফিরে এসেছিলেন। আল্লাহ ফজলুল আজিমকে টিপাইমুখে যেতে দেননি! এবার তার সফরসঙ্গীদের দল আওয়ামী লীগ তাকে নিজের নির্বাচনী এলাকা হাতিয়ায় ঢুকতে দিল না। সংসদ সদস্যরাই যদি গণতন্ত্রের জন্য উৎসর্গীকৃত প্রাণ আওয়ামী ক্যাডারদের দাপটে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন তবে অন্যদের দশা কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। আজিম সাহেব আওয়ামী লীগ করেন না। কিন্তু আওয়ামী লীগেরই সংসদ সদস্য কবরী সারওয়ার নিজ দলের সোনার ছেলেদের তৎপরতায় আপন নির্বাচনী এলাকা ফতুল্লায় যেতে বিচলিত বোধ করেন বলে শোনা যায়। এই পটভূমিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব হিলারি ক্লিনটন যখন বাংলাদেশে মন্ত্রাসী দমনে বাড়তি উদ্যোগ প্রয়োজন বলে একমত হন তখন আমরাও এ মতৈক্যের প্রতি সমর্থন না জানিয়ে পারি না। হিলারি যখন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহায়তা দেবে তখন আমরা আশ্বস্ত বোধ করি। কিন্তু সর্বাত্মক মার্কিন সহযোগিতা সত্ত্বেও আমরা আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্তি পাব কিনা সেটাই হচ্ছে প্রশ্ন।
No comments