ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে লাভ-ক্ষতি ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন by শাহ আহমদ রেজা
বহুল আলোচিত রোডম্যাপ অনুযায়ী ক্ষমতায় এলেও আওয়ামী লীগ সরকার সর্বতোভাবে ভারতের স্বার্থেই ভূমিকা পালন করবে-এমনটি ভাবা হয়নি। অন্যদিকে সরকারকে একের পর এক এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে, যেগুলো এমনকি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের জন্যও বিপজ্জনক।
যেমন প্রথমে এসেছিল ট্রানজিটের নামে ভারতকে করিডোর দেয়ার প্রশ্ন। দ্বিতীয় পর্যায়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য সীমান্ত খুলে দেয়ার উদ্দেশ্য থেকে সরকার দক্ষিণ এশীয় টাস্কফোর্স গঠনের ঘোষণা দিয়েছিল। পিলখানা হত্যাকান্ডকে এ ব্যাপারে চমৎকার অজুহাত বানানো হয়েছে। সরকার ঐতিহ্যবাহী বিডিআরকে বিলুপ্ত করে নতুন বাহিনী গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। এর দায়িত্ব দিতে যাচ্ছে ভারতের হাতে। এদিকে করিডোরের পাশাপাশি ভারতকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে দেয়ার ব্যাপারে মন্ত্রীরা এমনভাবেই অর্থ উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে চলেছেন, যেন বাংলাদেশ রাষ্ট্র কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান! এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত লজ্জার ঘোমটা খুলে ফেলেছেন। ভারতকে করিডোর ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে দেয়ার মতো বিষয়গুলোর সঙ্গে তিনি 'জুজুর ভয়ের' তুলনা করেছেন এবং জাতীয় সংসদে বলেছেন, তিনি নাকি ওই 'জুজুর ভয়' পান না! প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে স্বাগত জানানো যেত, তিনি যদি এসবের মধ্যে বাংলাদেশের লাভ ঠিক কতটুকু সে কথা বোঝাতে পারতেন। কারণ, দেখা যাচ্ছে সরকার যা কিছু করছে ও করতে যাচ্ছে সেগুলোর কোনোটিতেই বাংলাদেশের ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এর আলামতও সপষ্টভাবেই দেখা যাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে সর্বশেষ একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার উল্লেখ করা যায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির ভারত সফর শেষে ১১ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে যে যুক্ত বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছিল তার কপি গভীর রাত পর্যন্তও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পৌঁছেনি। ফ্যাক্সযোগে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমকে বিবৃতির কপি পাঠিয়েছিল ভারতীয় দূতাবাস। অথচ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও অনুসৃত নিয়ম হলো, এ ধরনের যুক্ত বিবৃতি সংশ্লিষ্ট দুই দেশের রাজধানী থেকে একযোগে প্রকাশ করবে দেশ দুটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে দীপু মনির ক্ষেত্রে দেখা গেল, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে যুক্ত বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়েছে নয়াদিল্লি থেকে। যুক্ত বিবৃতি প্রকাশের এ ঘটনা থেকেই পরিষ্কার হয়েছে, দীপু মনি অন্তত বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের জন্য ইতিবাচক কিছুই অর্জন করতে পারেননি। তিনি বরং ভারতের দাবি ও ইচ্ছাই পূরণ করেছেন এবং শুধু দিয়ে এসেছেন উজাড় করে। ভারতকে আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার করতে দেয়ার সুবিধা একটি বড় উদাহরণ। যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ভারতকে এই বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দিতে 'সম্মত' হয়েছে। অন্যদিকে নেপাল ও ভুটানে যাতায়াতের জন্য বাংলাদেশের যে করিডোর বা ট্রানজিট সুবিধা পাওয়া দরকার, সে প্রসঙ্গে যুক্ত বিবৃতিতে 'কানেক্টিভিটির' উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে দু'দেশের মধ্যে পরবর্তী সময়ে আলোচনা হবে। অর্থাৎ অতীতের মতো এবারও ভারত চমৎকার কৌশলে বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে গেছে। কথা যেখানে ছিল ভারত বাংলাদেশকে নেপাল ও ভুটানে যাতায়াতের জন্য করিডোর বা ট্রানজিট সুবিধা দেবে, সেখানে 'কানেক্টিভিটির' জন্যও বাংলাদেশকে 'আরও আলোচনার' অপেক্ষা করতে হবে। ওদিকে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন্তু আশুগঞ্জের বন্দর সুবিধা ভারতকে দিয়ে এসেছেন। দর কষাকষির জন্যও ঝুলিয়ে রাখেননি। উল্লেখ্য, বাংলাবান্ধা থেকে নেপাল ও ভুটানে যাতায়াত করার জন্য বাংলাদেশের দরকার যথাক্রমে ৬১ ও ৬৮ কিলোমিটার ভারতীয় সড়ক ব্যবহার করা। কিন্তু নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে বাংলাদেশকে এটুকু সুযোগও দিচ্ছে না ভারত। ফলে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারছে না। অন্যদিকে ভারতকে আশুগঞ্জ বন্দর শুধু নয়, রেল চলাচলের সুবিধা দিতেও সম্মত হয়ে এসেছেন দীপু মনি। এ সুযোগ দেয়া হলে ভারত আখাউড়া থেকে ত্রিপুরার আগরতলা পর্যন্ত সরাসরি রেল চলাচলের সুবিধা পাবে। শুরু হবে কলকাতা থেকে আগরতলা পর্যন্ত সরাসরি রেল চলাচলও। এর ফলে কলকাতা ও আগরতলার দূরত্ব ১৫০০ কিলোমিটারের স্থলে কমে দাঁড়াবে মাত্র ৩৫০ কিলোমিটার। সেই সঙ্গে আশুগঞ্জে বন্দর সুবিধা দেয়া হলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে নৌপথে আশুগঞ্জ পর্যন্ত পণ্য এনে ভারত আখাউড়া-আগরতলা রেললাইনের মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পাঠাতে এবং ওই সব রাজ্য থেকে মূল ভূখন্ডে পণ্যসামগ্রী নিয়ে যেতে পারবে। উল্লেখ্য, উভয় সরকারের পক্ষ থেকে সমগ্র বিষয়টিকে কেবলই 'অর্থনৈতিক ইস্যু' হিসেবে সামনে আনা হয়েছে-যেন এর সঙ্গে রাজনৈতিক এবং সামরিক ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কোনো কিছু জড়িত নেই! অন্যদিকে বাস্তবতা হলো, ভারতকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে জাহাজ, ট্রেন ও যানবাহন চলাচল করার সুবিধা দেয়া হলে দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। কারণ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের 'সেভেন সিসটারস' নামে পরিচিত রাজ্যগুলোতে বহু বছর ধরে স্বাধীনতার জন্য সশসত্র সংগ্রাম চলছে। পাঁচ লাখের বেশি ভারতীয় সেনা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিয়োজিত রয়েছে। বন্দর ও সড়ক ব্যবহার এবং রেল চলাচলের সুযোগে ভারত বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে তার সেনাবাহিনী এবং অসত্রশসত্র আনা-নেয়া করবে। এর ফলে বাংলাদেশ অযথাই ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় জড়িয়ে পড়বে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হবে। স্বাধীনতা সংগ্রামীরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ শুরু করবে। এই প্রক্রিয়ায় ভারতের সেনাবাহিনী কখনও বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে পড়লে বিপন্ন হবে দেশের স্বাধীনতা। একই কথা চট্টগ্রাম বন্দরের ক্ষেত্রেও সমান সত্য। কারণ ভারত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্যের সঙ্গে অসত্রশসত্র আনা-নেয়া করলে ভারতের শত্রু ও প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করবে এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা চালাবে। এখানেই আওয়ামী লীগ সরকারের নীতি ও ভূমিকা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চলে গেছে। এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত করার নামেও সরকার বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ঠেলে দিতে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে জানান দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। ৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি বলেছেন, এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত না হলে আমরা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ব। বিশেষ জোর দিয়ে তিনি বলেছেন, এশিয়ান হাইওয়ে হলে ভারত সবকিছু নিয়ে যাবে-এই 'জুজুর ভয়' দেখিয়ে দরজা বন্ধ করে রাখব, অমন নীতিতে আমরা বিশ্বাসী নই। প্রধানমন্ত্রী প্রথমবারের মতো অন্য একটি তথ্যও প্রকাশ করেছেন। জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভার ১৬ জুনের বৈঠকে এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং বাংলাদেশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসকাপ হাইওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে। এশিয়ান হাইওয়ের ব্যাপারে আপত্তি উঠেছে সঙ্গত কিছু কারণে। একটি কারণ হলো, বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম থেকে রাখঢাক করে এসেছে। মন্ত্রীরা অর্থনৈতিক প্রলোভন দেখালেও কখনও জানাননি যে, মন্ত্রিসভা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। অন্যদিকে এতদিন পর সে কথাটা জানাতে গিয়েও প্রধানমন্ত্রী 'জুজুর ভয়' প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। অথচ দেশের কোনো দলই কখনও বাংলাদেশকে এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত করার বিরোধিতা করেনি। সবাই বরং এতে যুক্ত হতে চায়, কিন্তু সে ব্যবস্থায় বাংলাদেশের জন্য লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকতে হবে। উল্লেখ্য, এসকাপের মূল পরিকল্পনায় ছিল বাংলাদেশের টেকনাফ এবং মিয়ানমারের মংডু ও আকিয়াব হয়ে ইয়াঙ্গুন পর্যন্ত মহাসড়ক। এ পথে বাংলাদেশের জন্য ইয়াঙ্গুন পর্যন্ত দূরত্ব হবে ৪৫০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩০-৪০ কিলোমিটার ছাড়া বেশিরভাগ সড়কই তৈরি অবস্থায় আছে। এটুকু তৈরি করা হলে আমরা সহজেই ইয়াঙ্গুন যাওয়ার এবং মিয়ানমার হয়ে চীন ও জাপান পর্যন্ত এশিয়ার যে কোনো দেশে যাতায়াত করতে পারব। অন্যদিকে ভারতের প্ররোচনায় এসকাপ যে দুটি রুটের পরিকল্পনা করেছে, তার কোনোটিই বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের অনুকূল নয়। কারণ এএইচ-১ নামের রুটটি যশোরের বেনাপোল সীমান্ত থেকে ঢাকা ও সিলেট হয়ে তামাবিল সীমান্ত পর্যন্ত যাবে। এএইচ-২ নামের দ্বিতীয় রুটটিও পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা সীমান্ত থেকে টাঙ্গাইল, ঢাকা ও সিলেট হয়ে একই তামাবিল সীমান্তে গিয়ে শেষ হবে। দুটি মহাসড়কই ভারতের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ থেকে মেঘালয় ও আসামে ঢুকবে। এর মাধ্যমে ভারত সরাসরি করিডোর পেয়ে যাবে। এটা হয়ে উঠবে ইন্ডিয়ান হাইওয়ে। অন্যদিকে এই মহাসড়কে বাংলাদেশের কোনো লাভই হবে না। কারণ বাংলাদেশের দরকার একদিকে মিয়ানমার হয়ে চীন ও জাপান পর্যন্ত এবং অন্যদিকে ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান ও তুরস্ক হয়ে বুলগেরিয়া পর্যন্ত এবং তারপর ইউরোপের দেশগুলোতে যাতায়াত করার সুবিধা। কিন্তু বর্তমান হাইওয়ে দিয়ে মিয়ানমার পর্যন্ত যাওয়াই বাংলাদেশের জন্য কঠিন, এমনকি অসম্ভব হয়ে পড়বে। কারণ টেকনাফ হয়ে ইয়াঙ্গুন পর্যন্ত দূরত্ব যেখানে মাত্র ৪৫০ কিলোমিটারের মতো, সেখানে ইয়াঙ্গুন যাওয়ার জন্য বাংলাদেশকে আসাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামসহ ভারতের সাতটি রাজ্য পাড়ি দিতে হবে। ফলে দূরত্ব দাঁড়াবে ২০০০ কিলোমিটার। তাছাড়া প্রতিটি সড়কই যাবে ১০ থেকে ১৭ হাজার ফুট উঁচু দুর্গম ও বিপদসংকুল পাহাড়ের ওপর দিয়ে। প্রতি মুহূর্তে থাকবে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর ঝুঁকি। ওদিকে 'সেভেন সিসটারস' নামে পরিচিত রাজ্যগুলোতে চলছে স্বাধীনতার জন্য সশসত্র যুদ্ধ। সুতরাং সবদিক থেকেই বাংলাদেশকে মারাত্মক ঝুঁকি ও বিপদ মাথায় নিয়ে চলাচল করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, দুর্গম পাহাড় কেটে প্রায় ১০৫০ কিলোমিটার সড়ক তৈরির ব্যয়ভারও বাংলাদেশকে বহন করতে হবে। এসব কারণেই টেকনাফ-ইয়াঙ্গুন মহাসড়কটিই একমাত্র গ্রহণযোগ্য হতে পারে। কিন্তু ভারতের স্বার্থে এসকাপ বাংলাদেশকে ঝুঁকি ও বিপদের মুখে ঠেলে দিতে চাচ্ছে এবং আওয়ামী লীগ সরকারও এর পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। অথচ তথ্যনির্ভর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রস্তাবিত হাইওয়েতে যুক্ত হলে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এশিয়ান হাইওয়ের নামে ভারতকে আসলে করিডোর দেয়ার কৌশল নেয়া হয়েছে। এ ধরনের সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতেই দেশপ্রেমিকরা বর্তমান আয়োজনে এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হওয়ার বিরোধিতা করেছেন। তারা মনে করেন, এসকাপ যদি টেকনাফ-ইয়াঙ্গুন মহাসড়ককে প্রধান রুট করতে রাজি হয় তাহলেই শুধু বাংলাদেশকে যুক্ত করা যেতে পারে। এই মহাসড়কে চীনকে যুক্ত করা গেলে বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে ভারতের দার্জিলিং ও শিলিগুড়ি এবং ভুটান সীমান্তসংলগ্ন তিব্বতের চুম্বি ভ্যালি হয়ে বাংলাদেশ সহজেই চীনের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে। যেতে পারবে জাপান পর্যন্ত। এই পথে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ হবে। অন্যদিকে বর্তমান প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে বাংলাদেশ শুধু ভারতের করিডোরেই পরিণত হবে না, একই সঙ্গে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তাও বিপন্ন হয়ে পড়বে। প্রধানমন্ত্রী এসব যুক্তিকেই 'জুজুর ভয়' হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যঙ্গ করেছেন এবং দেশপ্রেমিকদের বিরোধিতাকে নাকচ করতে চেয়েছেন। শুধু তাই নয়, যেন সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে-এমনভাবেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছেন ক্ষমতাসীনদের প্রত্যেকে। এ ব্যাপারে সর্বশেষ 'কম্মটুকু' সেরে এসেছেন দীপু মনি। 'প্যাকেজের' আওতায় ভারতের সঙ্গে সব সমস্যার সমাধান করার কথা জানালেও দীপু মনি শুধু দিয়েই এসেছেন। বিদ্যুতের কথাই ধরা যাক-ভারত বাংলাদেশকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিতে সম্মত হয়েছে, কিন্তু এই বিদ্যুৎ নগদ অর্থে কিনতে হবে। এটুকুও সব নয়। শর্ত হলো, বিদ্যুৎ পেতে হলে ভারতকে বাংলাদেশের জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিড ব্যবহার করার সুযোগ দিতে হবে। অর্থাৎ ভারত বাংলাদেশের এই গ্রিড দিয়ে তার এক অঞ্চলের বিদ্যুৎ অন্য অঞ্চলে নিতে পারবে। এজন্য দেশটিকে একটি টাকাও ব্যয় করতে হবে না। অথচ নিজের হলে ভারতকে এরকম একটি গ্রিডের জন্য শত কোটি টাকার অঙ্কে খরচ করতে হতো। উল্লেখ্য, গ্রিডের কোথাও নষ্ট বা ক্ষতি হলে তার দায় পড়বে বাংলাদেশের ওপর। গ্রিডের রক্ষণাবেক্ষণও বাংলাদেশকেই করতে হবে। এখানে উল্লেখ করা দরকার, আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে কয়েক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাড়তি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এতদিন ভারত সেটা নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারছিল না। ফলে ভারতকেও বিদ্যুৎ ঘাটতিতে থাকতে হচ্ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের বদৌলতে ভারত এবার তার সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে। এভাবে পর্যালোচনায় দেখা যাবে, আওয়ামী লীগ সরকার ভারতকে শুধু দিয়েই চলেছে। সরকার এশিয়ান হাইওয়ের নামে ইন্ডিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে ভারতকে করিডোর দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশটিকে আশুগঞ্জ বন্দর ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করার এবং বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে দেশটির যানবাহন ও পণ্যসামগ্রী পরিবহনের সুযোগ দিতে যাচ্ছে। মাত্র ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের বিনিময়ে সরকার বাংলাদেশের জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডও ভারতের হাতে তুলে দিতে যাচ্ছে। ওদিকে পুনর্গঠনের নামে চলছে বিডিআরকেও ভারতের লেজুড় বাহিনীতে পরিণত করার কর্মকান্ড। এর মধ্যে বিডিআরের নাম, পোশাক ও মনোগ্রাম পাল্টে ফেলা হয়েছে। তারও আগে পিলখানা হত্যাকান্ডের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর কোমর ভেঙে ফেলা হয়েছে। অর্থাৎ সব মিলিয়েই বাংলাদেশকে ভারতের ইচ্ছাধীন রাষ্ট্র বানানোর আয়োজন সম্পন্ন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। লেখক : সাংবাদিক
No comments