‘অঘটন’ নয়
জেমি সিডন্স কি আর জানতেন তাঁর বলা কথাটা বুমেরাং হয়ে বিঁধবে তাঁকেই? ব্রিস্টলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জেতার পর বাংলাদেশ কোচ বলেছিলেন, ‘ক্রিকেটারদের মধ্যে এখন এই বিশ্বাস জন্মাবে যে তারা যেকোনো দলকে হারাতে পারে।’ কিন্তু পাঁচ দিনের ব্যবধানে আইসিসির দুটি সহযোগী সদস্যদেশের কাছে হারার পর বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এখন এই বিশ্বাসও ছড়িয়ে পড়েছে যে বাংলাদেশ যেকোনো দলের কাছে হারতেও পারে!
তা খেলাধুলায় হারজিত আছেই। বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডকে হারাতে পারলে আয়ারল্যান্ড বা হল্যান্ড কেন হারাতে পারবে না বাংলাদেশকে? অবশ্যই পারবে। বাংলাদেশের কাছে ইংল্যান্ডের হারটা বরং অঘটন, ডাচ-আইরিশদের কাছে বাংলাদেশের হার কোনো অঘটন বা দুর্ঘটনা নয়। এই দলটা যে মাঝেমধ্যে বড় দলের বিপক্ষে জয় পেয়ে যায়, সেটাই বরং বোনাস। হ্যাঁ, হল্যান্ড আইসিসির সহযোগী সদস্য, এর আগে আর কোনো টেস্ট দলকে হারানোর অভিজ্ঞতা তাদের নেই, এই দলের ক্রিকেটাররা কেউ পেশাদার নন—সবকিছু জেনেই বলা হচ্ছে কথাটা। আসলে বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন যেভাবে চলছে, তাতে এ রকম পরাজয়ই বেশি থাকা উচিত ‘প্রাপ্তির’ থলেয়। এ নিয়ে দুঃখিত হওয়ার কিছু নেই। তবে হ্যাঁ, লজ্জা পেতেই পারেন।
মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে আয়ারল্যান্ড ও হল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি পরাজয়ে মর্মাহত দেশের ক্রিকেট-প্রিয় মানুষ। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কর্মকর্তারাও (বিসিবি) নিশ্চয়ই দুঃখের সাগরে ভাসছেন। ক্ষোভে ফুঁসছেন। আজ দল ঢাকা ফেরার পর দেশকে লজ্জায় ডোবানোর ব্যাখ্যা নিশ্চয়ই চাওয়া হবে খেলোয়াড়দের কাছে। দেশের ক্রিকেটের মানসম্মান ধুলোয় মেশানোর ‘অপরাধে’ বোর্ড কর্মকর্তারা তাদের কচুকাটা করবেন, তাতেও কোনো সন্দেহ নেই। এটাই হয়ে আসছে, আরও বহুদিন হয়তো হবে। দল এক-দুটি ম্যাচ জিতলে মিষ্টি খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। আর পরাজয়ে পারলে শূলে চড়ানো হয় ক্রিকেটারদের। সাফল্যে উৎসব-রেণু ছড়িয়ে দিতে হবে সবার মধ্যে, ব্যর্থতায় তীরবিদ্ধ হবেন শুধু খেলোয়াড়েরা—এটাই রীতি এখানে।
প্রশ্নটাও এখানেই—ব্যর্থতার দায় শুধু ক্রিকেটারদের কেন? মাঠের পারফরম্যান্সের জন্য তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। কিন্তু আচরণবিধির কণ্টকজাল ডিঙিয়ে এই দলটারই কোনো খেলোয়াড় যদি ঘাড় বাঁকা করে বলে ওঠেন, ‘ব্যর্থ তো শুধু আমরা নই! এর দায় তোমাদেরও, যারা আমাদের চালাও’, কী জবাব দেবেন বিসিবি কর্তারা? এ দেশের ক্রিকেট, ক্রিকেট বোর্ড আর ক্রিকেট দল যেভাবে চলছে তাতে জোর গলায় সাফল্য চাওয়ার অধিকার কারওই নেই। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের বিসিবি কার্যালয় থেকে পরিচালিত দেশের সার্বিক ক্রিকেটেরই প্রতিচ্ছবি মাঠের অননুমেয় পারফরম্যান্স।
পাকিস্তানের ‘ক্রিকেট কমেডি’ নিয়ে মানুষ হাসাহাসি করে। বাংলাদেশ একটু পেছনের সারিতে বলে সবার চোখে হয়তো ব্যাপারগুলো ধরা পড়ে না, নইলে এ দেশের ক্রিকেটেও ‘কমেডি’ কম হয় না, ‘কমেডিয়ান’ও অনেক। দল নির্বাচন বা টিম ম্যানেজমেন্ট ঠিক করা থেকে শুরু করে বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, একাডেমি পরিচালনা—কোন কাজটা ঠিকভাবে করতে পারছে আ হ ম মোস্তফা কামালের বোর্ড? নির্বাচকদের তৈরি করা দলে কাটাছেঁড়া আর পরিবর্তন এখন এতটাই নিয়মিত যে, বিসিবিতে কোনো নির্বাচক কমিটি না থাকলেও বোধ হয় চলে। বোর্ড সভাপতি আর দু-চারজন পরিচালক মিলেই তৈরি করে ফেলতে পারেন দল। তা ছাড়া দল নির্বাচন বাংলাদেশে এখন সহজ কাজগুলোর মধ্যে একটি। হাতে তো পর্যাপ্ত খেলোয়াড়ই নেই যে আপনি মাথা খাটিয়ে বাছাবাছি করবেন! বাজে ফর্মের কারণে বাদ পড়া মোহাম্মদ আশরাফুলকে তাই ইংল্যান্ডের বিমানে চাপতে কোথাও ভালো খেলতে হয়নি, একজনের ইনজুরিতেই ফেরার রাস্তা পরিষ্কার।
টিম ম্যানেজমেন্টের অবস্থাও একই। কোচকে না জানিয়েই বদলে যায় কোচিং স্টাফের চেহারা! গত ছয়-সাত মাসে দলে কতজন কোচিং স্টাফ এলেন-গেলেন সেটা সম্ভবত ঠিকভাবে মনে করতে পারবেন না অদল-বদলের কাজটা যাঁরা করেন তাঁরাও। ভাবলে বিস্মিত হতে হয়, নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপের মাত্র সাত মাস আগেও দলের সঙ্গে স্থায়ী কোনো বোলিং বা ফিল্ডিং কোচ নেই! বোর্ডের কর্মচারী-কর্মকর্তা নিয়োগ নিয়েও চলছে যথেচ্ছাচার। এক প্রধান নির্বাহী খুঁজে পেতেই লেগে গেছে আড়াই বছর। যোগ্যতা থাকুক আর না থাকুক, কারও ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার বা কারও বাবুর্চির ভাই হওয়ার সুবাদেও নাকি বিসিবিতে চাকরি পাচ্ছেন অনেকে! আর একাডেমি তো এখনো সুরম্য দালান। তাতে ক্রিকেটের পদধূলি সেভাবে না পড়লেও ঢাকার বাইরের অনেক বোর্ড পরিচালকের মনে ইচ্ছা জাগে বিসিবির সভায় যোগ দিতে এসে রাতটা বিলাসী ভবনেই কাটিয়ে যাওয়ার! আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা এখনো প্রতিশ্রুতিতেই সীমাবদ্ধ, ঘরোয়া ক্রিকেট চলছে প্রস্তর যুগের কাঠামোতে। বর্তমান বোর্ড সভাপতি বিসিবির দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের ক্রিকেটকে সাফল্যের ভেলায় ভাসানোর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। বাস্তবতা হলো, তাঁর সময়ে সাফল্যের আনন্দে হাসার চেয়ে বিদ্রূপের হাসিই মানুষ হেসেছে বেশি। ক্রিকেটকে তিনি ভাসাতে পেরেছেন কিনা কে জানে, ডোবার লক্ষণটা পরিষ্কার। আয়ারল্যান্ড আর হল্যান্ডের কাছে দুটি হারই দিচ্ছে সেই ইঙ্গিত।
বহির্বিশ্বের ক্রিকেটের কাছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভেতরের চিত্রগুলো তুলে ধরেই দেখুন, কেমন হাসিতে লুটোপুটি খায় মানুষ। ‘কমেডি’ বলে কথা! সমস্যা হলো, বাইরের মানুষের কাছে যেটা ‘কমেডি’, বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য সেটাই হয়ে দাঁড়াচ্ছে ‘ট্র্যাজেডি’। ‘কমেডি’র নায়ক হয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ‘ট্র্যাজেডি’তে পরিণত করার দায় বোর্ড সভাপতিকেই নিতে হবে। পার্শ্বচরিত্র হিসেবে পরিচালনা পর্ষদ সদস্যরা তো থাকছেনই।
তা খেলাধুলায় হারজিত আছেই। বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডকে হারাতে পারলে আয়ারল্যান্ড বা হল্যান্ড কেন হারাতে পারবে না বাংলাদেশকে? অবশ্যই পারবে। বাংলাদেশের কাছে ইংল্যান্ডের হারটা বরং অঘটন, ডাচ-আইরিশদের কাছে বাংলাদেশের হার কোনো অঘটন বা দুর্ঘটনা নয়। এই দলটা যে মাঝেমধ্যে বড় দলের বিপক্ষে জয় পেয়ে যায়, সেটাই বরং বোনাস। হ্যাঁ, হল্যান্ড আইসিসির সহযোগী সদস্য, এর আগে আর কোনো টেস্ট দলকে হারানোর অভিজ্ঞতা তাদের নেই, এই দলের ক্রিকেটাররা কেউ পেশাদার নন—সবকিছু জেনেই বলা হচ্ছে কথাটা। আসলে বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন যেভাবে চলছে, তাতে এ রকম পরাজয়ই বেশি থাকা উচিত ‘প্রাপ্তির’ থলেয়। এ নিয়ে দুঃখিত হওয়ার কিছু নেই। তবে হ্যাঁ, লজ্জা পেতেই পারেন।
মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে আয়ারল্যান্ড ও হল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি পরাজয়ে মর্মাহত দেশের ক্রিকেট-প্রিয় মানুষ। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কর্মকর্তারাও (বিসিবি) নিশ্চয়ই দুঃখের সাগরে ভাসছেন। ক্ষোভে ফুঁসছেন। আজ দল ঢাকা ফেরার পর দেশকে লজ্জায় ডোবানোর ব্যাখ্যা নিশ্চয়ই চাওয়া হবে খেলোয়াড়দের কাছে। দেশের ক্রিকেটের মানসম্মান ধুলোয় মেশানোর ‘অপরাধে’ বোর্ড কর্মকর্তারা তাদের কচুকাটা করবেন, তাতেও কোনো সন্দেহ নেই। এটাই হয়ে আসছে, আরও বহুদিন হয়তো হবে। দল এক-দুটি ম্যাচ জিতলে মিষ্টি খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। আর পরাজয়ে পারলে শূলে চড়ানো হয় ক্রিকেটারদের। সাফল্যে উৎসব-রেণু ছড়িয়ে দিতে হবে সবার মধ্যে, ব্যর্থতায় তীরবিদ্ধ হবেন শুধু খেলোয়াড়েরা—এটাই রীতি এখানে।
প্রশ্নটাও এখানেই—ব্যর্থতার দায় শুধু ক্রিকেটারদের কেন? মাঠের পারফরম্যান্সের জন্য তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। কিন্তু আচরণবিধির কণ্টকজাল ডিঙিয়ে এই দলটারই কোনো খেলোয়াড় যদি ঘাড় বাঁকা করে বলে ওঠেন, ‘ব্যর্থ তো শুধু আমরা নই! এর দায় তোমাদেরও, যারা আমাদের চালাও’, কী জবাব দেবেন বিসিবি কর্তারা? এ দেশের ক্রিকেট, ক্রিকেট বোর্ড আর ক্রিকেট দল যেভাবে চলছে তাতে জোর গলায় সাফল্য চাওয়ার অধিকার কারওই নেই। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের বিসিবি কার্যালয় থেকে পরিচালিত দেশের সার্বিক ক্রিকেটেরই প্রতিচ্ছবি মাঠের অননুমেয় পারফরম্যান্স।
পাকিস্তানের ‘ক্রিকেট কমেডি’ নিয়ে মানুষ হাসাহাসি করে। বাংলাদেশ একটু পেছনের সারিতে বলে সবার চোখে হয়তো ব্যাপারগুলো ধরা পড়ে না, নইলে এ দেশের ক্রিকেটেও ‘কমেডি’ কম হয় না, ‘কমেডিয়ান’ও অনেক। দল নির্বাচন বা টিম ম্যানেজমেন্ট ঠিক করা থেকে শুরু করে বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, একাডেমি পরিচালনা—কোন কাজটা ঠিকভাবে করতে পারছে আ হ ম মোস্তফা কামালের বোর্ড? নির্বাচকদের তৈরি করা দলে কাটাছেঁড়া আর পরিবর্তন এখন এতটাই নিয়মিত যে, বিসিবিতে কোনো নির্বাচক কমিটি না থাকলেও বোধ হয় চলে। বোর্ড সভাপতি আর দু-চারজন পরিচালক মিলেই তৈরি করে ফেলতে পারেন দল। তা ছাড়া দল নির্বাচন বাংলাদেশে এখন সহজ কাজগুলোর মধ্যে একটি। হাতে তো পর্যাপ্ত খেলোয়াড়ই নেই যে আপনি মাথা খাটিয়ে বাছাবাছি করবেন! বাজে ফর্মের কারণে বাদ পড়া মোহাম্মদ আশরাফুলকে তাই ইংল্যান্ডের বিমানে চাপতে কোথাও ভালো খেলতে হয়নি, একজনের ইনজুরিতেই ফেরার রাস্তা পরিষ্কার।
টিম ম্যানেজমেন্টের অবস্থাও একই। কোচকে না জানিয়েই বদলে যায় কোচিং স্টাফের চেহারা! গত ছয়-সাত মাসে দলে কতজন কোচিং স্টাফ এলেন-গেলেন সেটা সম্ভবত ঠিকভাবে মনে করতে পারবেন না অদল-বদলের কাজটা যাঁরা করেন তাঁরাও। ভাবলে বিস্মিত হতে হয়, নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপের মাত্র সাত মাস আগেও দলের সঙ্গে স্থায়ী কোনো বোলিং বা ফিল্ডিং কোচ নেই! বোর্ডের কর্মচারী-কর্মকর্তা নিয়োগ নিয়েও চলছে যথেচ্ছাচার। এক প্রধান নির্বাহী খুঁজে পেতেই লেগে গেছে আড়াই বছর। যোগ্যতা থাকুক আর না থাকুক, কারও ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার বা কারও বাবুর্চির ভাই হওয়ার সুবাদেও নাকি বিসিবিতে চাকরি পাচ্ছেন অনেকে! আর একাডেমি তো এখনো সুরম্য দালান। তাতে ক্রিকেটের পদধূলি সেভাবে না পড়লেও ঢাকার বাইরের অনেক বোর্ড পরিচালকের মনে ইচ্ছা জাগে বিসিবির সভায় যোগ দিতে এসে রাতটা বিলাসী ভবনেই কাটিয়ে যাওয়ার! আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা এখনো প্রতিশ্রুতিতেই সীমাবদ্ধ, ঘরোয়া ক্রিকেট চলছে প্রস্তর যুগের কাঠামোতে। বর্তমান বোর্ড সভাপতি বিসিবির দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের ক্রিকেটকে সাফল্যের ভেলায় ভাসানোর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। বাস্তবতা হলো, তাঁর সময়ে সাফল্যের আনন্দে হাসার চেয়ে বিদ্রূপের হাসিই মানুষ হেসেছে বেশি। ক্রিকেটকে তিনি ভাসাতে পেরেছেন কিনা কে জানে, ডোবার লক্ষণটা পরিষ্কার। আয়ারল্যান্ড আর হল্যান্ডের কাছে দুটি হারই দিচ্ছে সেই ইঙ্গিত।
বহির্বিশ্বের ক্রিকেটের কাছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভেতরের চিত্রগুলো তুলে ধরেই দেখুন, কেমন হাসিতে লুটোপুটি খায় মানুষ। ‘কমেডি’ বলে কথা! সমস্যা হলো, বাইরের মানুষের কাছে যেটা ‘কমেডি’, বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য সেটাই হয়ে দাঁড়াচ্ছে ‘ট্র্যাজেডি’। ‘কমেডি’র নায়ক হয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ‘ট্র্যাজেডি’তে পরিণত করার দায় বোর্ড সভাপতিকেই নিতে হবে। পার্শ্বচরিত্র হিসেবে পরিচালনা পর্ষদ সদস্যরা তো থাকছেনই।
No comments