শেষটা হলো হতাশাতেই
জেমি সিডন্স ভুল ভেবেছিলেন। আগের দিন মাঠ ছাড়ার সময় বলে গেলেন, ‘ইংল্যান্ড হয়তো আমাদের ফলোঅন করাবে না। দ্বিতীয় ইনিংস ব্যাটিং করে অনেক বড় একটা টার্গেট দিয়ে দেবে সামনে...আমার তাই মনে হয়।’
সিডন্সের অনুমান ঠিক হলে ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টের আয়ু আরও বাড়তে পারত কিন্তু ইংল্যান্ড সেটা করবে কেন? শিকার যখন হাতের মুঠোয়, পিষে মারতে সময় নিল না অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসের দল। বাংলাদেশ শুধু ফলোঅনই করল না, লজ্জায় ফেলে দেওয়ার মতো ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী দেখিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট মাত্র ১২৩ রানে। টেস্টের দুই দিন বাকি থাকতেই ইনিংস ও ৮০ রানের হার। সকালের বৃষ্টিতে যে টেস্টটা পঞ্চম দিনে যাবে বলে মনে হচ্ছিল, সেটা শেষ তৃতীয় দিন চা-বিরতির আগেই। টেস্টে পরপর দুই দিন এক সেশনে অলআউট হয়ে যাওয়ার ব্যতিক্রমধর্মী রেকর্ডই গড়ে ফেলল কি না বাংলাদেশ, কে জানে!
ম্যানচেস্টারে পরশু রাত থেকেই পড়া গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি থামল কাল দুপুরে। লাঞ্চের পর খেলা শুরু হলে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস যেন সেই বৃষ্টিতেই পা পিছলে পড়ল। প্রথম ইনিংসে স্পিনে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ এবার পেসে ঘায়েল! ইংল্যান্ড অধিনায়ক অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস গ্রায়েম সোয়ানকে দিয়ে স্পিন আনলেন ইনিংসের ২১তম ওভারে এবং বাংলাদেশ যে ৩৪.১ ওভার ব্যাট করল তাতে সোয়ানই একমাত্র স্পিনার। আর কাউকে আনার দরকারও হয়নি কারণ তিন পেসার জেমস অ্যান্ডারসন, স্টিভেন ফিন ও আজমল শেহজাদ মিলেই পেসারদের জন্য পয়মন্ত কন্ডিশনে বাংলাদেশকে ডুবিয়ে দিলেন চরম হতাশায়। বিশেষ করে ফিন—এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটা টেস্ট খেলেছেন, তিনটাই বাংলাদেশের বিপক্ষে। আর এই তিন টেস্টে কাল তিনি দ্বিতীয়বারের মতো ৫ উইকেট নিয়ে হয়ে গেলেন ইংল্যান্ড দলের ম্যান অব দ্য সিরিজ। দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ আরেকটু ভালো খেললে হয়তো আলাদা করে দুই দলের ম্যান অব দ্য সিরিজ ঘোষণা করতে হতো না ইসিবিকে, তামিম একাই পেয়ে যেতে পারতেন পুরস্কারটা। সেটা না হওয়ায় এখন ফিনের মতো তামিমও কেবল বাংলাদেশেরই ম্যান অব দ্য সিরিজ। আর সেঞ্চুরির জন্য ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টের ম্যান অব দ্য ম্যাচও হয়েছেন ইংল্যান্ডের ইয়ান বেল।
ইংল্যান্ডকে আরেকবার ব্যাটিংয়ে নামাতে অন্তত ২০৩ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের, কিন্তু এমন বিকলাঙ্গ ব্যাটিংয়ে আর কত দূরই বা যাওয়া সম্ভব? পেসারদের দাপটে ৩৯ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েই এক শ পেরিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাটিং-ব্যর্থতার জন্য আলাদা করে কাউকে কিছু বলার নেই। কাঠগড়ায় ব্যাটসম্যানদের সবাই। লর্ডসে ৫৫ ও ১০৩ এবং ওল্ড ট্রাফোর্ডের প্রথম ইনিংসে ১০৮ রান করা তামিম দিনের দ্বিতীয় বলেই আউট। জেমস অ্যান্ডারসনের প্রথম বলে ২ রান নিলেন, সিমের ওপর পড়ে লাফিয়ে ওঠা পরের বলটাই তামিমের ব্যাটে চুমু খেয়ে জমা পড়ল উইকেটকিপার ম্যাট প্রিয়রের গ্লাভসে। প্রতিদিনই তো আর ভালো খেলা সম্ভব না, তামিমের পক্ষে এটা একটা সাফাই হতে পারে কিন্তু বাংলাদেশের অন্য ব্যাটসম্যানরা যেন উল্টোটাই মনে করলেন—‘তামিমই যেখানে পারে না, সেখানে আর আমরা পারব কী?’
লর্ডস থেকে বয়ে আনা সম্মান একটার পর একটা উইকেটের পতনে ওল্ড ট্রাফোর্ডের ধুলোয় মিটাল। ইংল্যান্ডের বোলারদের সামনে বিন্দুমাত্র প্রতিরোধ গড়তে পারলেন না কেউ। প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের মধ্যে দুই অঙ্কের রান কেবল মোহাম্মদ আশরাফুলের (১৪)। সপ্তম উইকেটে ৩৭ রানের জুটিতে মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহর সামান্য প্রতিরোধের চেষ্টা বা কিছু সময়ের জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের হাততালি কুড়ানো মাহমুদউল্লাহর ওয়ানডে সুলভ ব্যাটিং ম্যাচের চিত্র বদলাতে পারেনি একটুও। ৫২ বলে ৩৮ রানের ইনিংসে পাঁচটা বাউন্ডারি—সিরিজের শেষ দিনে এসে প্রথমবারের মতো কিছু পেলেন মাহমুদউল্লাহ, অন্যদের ব্যর্থতায় যেটা কি না দলের কোনো কাজেই এল না!
লর্ডসে ড্রয়ের স্বপ্ন জাগানো দিয়ে যে সিরিজের শুরু ওল্ড ট্রাফোর্ডে সেটা কলঙ্কিত লজ্জাজনক ব্যাটিংয়ে। ইংল্যান্ড সফর থেকে তাহলে কী নিয়ে দেশে ফিরছে বাংলাদেশ দল? হতাশাই তো!
No comments