হাটে হাটে কাঁঠাল-বন্যা by আকমল হোসেন
বাতাসে ভাসছে পাকা কাঁঠালের মত্ত ঘ্রাণ। মন চনমন করা কেমন ঘোর লাগানো গন্ধ। হাটের মধ্যে, রাস্তার পাশে কাঁঠালের ওপর কাঁঠাল স্তূপ করে রাখা। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই পাহাড়ি এলাকা থেকে বাজারমুখী নামে এই কাঁঠালের ঢল। কাঁধভার, ট্রলি, ঠেলাগাড়ি, রিকশা, বাইসাইকেল আর ট্রাকে করে আসতে থাকে কাঁঠাল। একসময় কাঁঠালে কাঁঠালে ভরে ওঠে হাট। সেই কাঁঠালের ওপর মৌমাছির মতো হুমড়ি খাওয়া মানুষ; চলে দরদামের মিঠেকড়া কথার গুঞ্জন।
এই কাঁঠাল-বন্যা মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার, রবিরবাজার; রাজনগরের টেংরাবাজার, মুন্সীবাজার; বড়লেখা সদর; কমলগঞ্জের আদমপুর, শ্রীমঙ্গল সদরসহ পাহাড়ি এলাকার হাটবাজারগুলোতে। হাটগুলো এখন কাঁঠালে কাঁঠালে সয়লাব হয়ে আছে। লোকজন জানিয়েছেন, এই হাটগুলো মূলত কাঁঠালের পাইকারি বাজার। তবে অনেকের মতে, কাঁঠালের বড় হাটটি বসে কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজারে। বিভিন্ন পাহাড়-টিলায় এত দিন যেসব কাঁঠাল গাছে গাছে দানাদার শরীর নিয়ে ঝুলেছিল, বড় হয়েছিল; সেগুলো এখন মানুষের হাত ঘুরে হাটে আসছে। যত দিন কাঁঠালের মৌসুম ফুরিয়ে না গেছে, তত দিন সপ্তাহের শনি ও বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাজারে কাঁঠালের হাট বসবে।
দেখা গেছে, ভোরের আলো স্পষ্ট হওয়ার আগে যেখানে সুনসান নীরবতা, রোদ যখন একটু একটু করে স্পষ্ট হতে থাকে, তখন স্রোতের মতো আসতে থাকে লোকজন; সঙ্গে কাঁঠাল। টুকরিতে করে কাঁধভারে, ট্রলি, বাইসাইকেল, ঠেলাগাড়ি, রিকশা ও ট্রাকে করে দূর-দূরান্ত থেকে কাঁঠাল নিয়ে আসতে থাকেন তাঁরা। মুহূর্তেই মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কের প্রায় আধা কিলোমিটার, কোনো কোনো দিন তারও বেশি জায়গার দুই পাশে কাঁঠালের বন্যা। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, বিশ্বনাথ; সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারেরা এসে ভিড় করেন। কাঁঠাল ব্যবসায়ীরা জানালেন, জ্যৈষ্ঠ মাসেই কাঁঠালের জমজমাট এই হাটটি বসে। কুলাউড়া উপজেলার বুধবাসি, টাট্টিউলি, মুরইছড়া, গণকিয়া, ধামুলি, টিকরিয়া, রাঙ্গিছড়া, হিঙ্গাজিয়া, গাজীপুর, লোয়াইউনি, জালালাবাদ, কালিটি, মনছড়া; রাজনগর উপজেলার টেংরা এলাকা থেকে এখানে কাঁঠাল নিয়ে আসেন কাঁঠালচাষি ও ব্যবসায়ীরা।
ইরফান আলী, আবদুল করিমসহ অনেকে জানালেন, আট-দশ মাইল দূর থেকে ট্রাকে করে কাঁঠাল নিয়ে এসেছেন অনেকে। একা এত দূর কাঁঠাল নিয়ে আসতে খরচে পোষায় না। কাঁঠাল আনতে কয়েকজন মিলে ট্রাক ভাড়া করেন। তাঁরা জানান, তাঁদের এলাকায় এমন কোনো বাড়ি নেই যে বাড়িতে ৫০-১০০টি কাঁঠালগাছ নেই। ফসল ভালো হলে প্রতি গাছে ২০০-২৫০টি কাঁঠাল ধরে। এতে করে ৭০-৮০ হাজার টাকা মৌসুমে আয় করতে পারেন অনেকে। কাঁঠালের এই মৌসুমের জন্য এক ধরনের গোপন তাড়না থাকে তাঁদের। গাছ থেকে কাঁঠাল পেড়ে বাজার পর্যন্ত নিয়ে আসতে প্রতিটি কাঁঠালে শ্রমিক ও পরিবহন খরচ পড়ে প্রায় পাঁচ-ছয় টাকা।
তবে এই মৌসুমি ফল কাঁঠাল নিয়ে তৈরি হয়েছে এক নীরব বাণিজ্যিক ব্যবস্থা। বাজারে আসা কাঁঠালচাষি ও পাইকারেরা জানালেন, গাছের সংখ্যা অনুপাতে চৈত্র ও বৈশাখ মাসে আগাম একেকটি বাড়ির গাছের কাঁঠাল বিক্রি হয়ে যায় পাইকারদের কাছে। আবার কোনো কোনো পাইকার আছেন, যাঁরা এক-দুই বছর আগেও কাঁঠালবাগান কিনে নেন। জ্যৈষ্ঠ মাস কাঁঠালের প্রধান মৌসুম হলেও অনেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত কাঁঠাল বিক্রি করতে পারবেন বলে জানালেন। আরজ আলীসহ যাঁরা সাইকেলে করে কাঁঠাল নিয়ে আসেন, তাঁদের অনেকের জীবিকার অন্য রকম সন্ধান। অনেকেই মূলত দিনমজুর। কিন্তু এই সময়টায় দিনমজুরির কাজে যান না। তাঁরা হয় আগাম ক্ষুদ্র পুঁজিতে কাঁঠালের কিছু গাছ কিনে নেন, না-হয় মৌসুমে সরাসরি চাষির কাছ থেকে কাঁঠাল কিনে সাইকেলে বা কাঁধে করে বাজারে নিয়ে আসেন। সেগুলো বিক্রি করে যা মুনাফা হয়, তাতে কখনো কখনো লাভ ভালো হয় আবার কখনো কখনো কোনো রকম দিন চলার ব্যবস্থা হয়। এতেও তাঁরা সন্তুষ্ট থাকেন এটা মনে করে যে দিনমজুরিতে গিয়ে সারা দিনে যা পেতেন, তা না করে আধবেলায় সেই রুজিটা করলেন।
তবে গাছের কাঁঠাল যখন হাটে আসে, তখন তার দামের ওঠানামা আছে। একই রকম কথা বললেন প্রায় সব হাটের কাঁঠাল বিক্রেতারা। সব সময় ভালো দামে কাঁঠাল কেনাবেচা যায় না। কাঁঠালের দামের উঠতি-পড়তি আছে। হাটে যেদিন আমদানি বেশি হয়, সেদিন দাম পড়ে যায়। এতে কারও কারও মুনাফা দূরে থাক, পুঁজিতে হাত পড়ে। তবে মনে মনে আফসোস আছে অনেকের। এত ফল, কাঁঠালের বন্যা হাটে হাটে, তবু এই কাঁঠাল সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই দাম যা-ই পাওয়া যায়, সঙ্গে সঙ্গেই তা বিক্রি করে দিতে হয়। এখানে লাভ-লোকসান নিয়ে ভাবার সুযোগ নেই। কাঁঠালচাষিরা জানালেন, প্রাকৃতিকভাবেই বাপ-দাদার আমল থেকে পাহাড়ি এলাকায় কাঁঠাল চাষ হচ্ছে। কাঁঠাল চাষের ক্ষেত্রে তাঁদের আলাদা কোনো প্রশিক্ষণ নেই। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ বা পোকামাকড়ের আক্রমণ হলে তাঁরা অসহায় হয়ে পড়েন।
জেলার কাঁঠালের হাট ঘুরে মনে হয়েছে, ‘গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল’—এই প্রবাদটি এখন কাঁঠাল-বন্যার তোড়ে ভেসে গেছে। গাছের কাঁঠাল এখন হাটে হাটে।
এই কাঁঠাল-বন্যা মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার, রবিরবাজার; রাজনগরের টেংরাবাজার, মুন্সীবাজার; বড়লেখা সদর; কমলগঞ্জের আদমপুর, শ্রীমঙ্গল সদরসহ পাহাড়ি এলাকার হাটবাজারগুলোতে। হাটগুলো এখন কাঁঠালে কাঁঠালে সয়লাব হয়ে আছে। লোকজন জানিয়েছেন, এই হাটগুলো মূলত কাঁঠালের পাইকারি বাজার। তবে অনেকের মতে, কাঁঠালের বড় হাটটি বসে কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজারে। বিভিন্ন পাহাড়-টিলায় এত দিন যেসব কাঁঠাল গাছে গাছে দানাদার শরীর নিয়ে ঝুলেছিল, বড় হয়েছিল; সেগুলো এখন মানুষের হাত ঘুরে হাটে আসছে। যত দিন কাঁঠালের মৌসুম ফুরিয়ে না গেছে, তত দিন সপ্তাহের শনি ও বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাজারে কাঁঠালের হাট বসবে।
দেখা গেছে, ভোরের আলো স্পষ্ট হওয়ার আগে যেখানে সুনসান নীরবতা, রোদ যখন একটু একটু করে স্পষ্ট হতে থাকে, তখন স্রোতের মতো আসতে থাকে লোকজন; সঙ্গে কাঁঠাল। টুকরিতে করে কাঁধভারে, ট্রলি, বাইসাইকেল, ঠেলাগাড়ি, রিকশা ও ট্রাকে করে দূর-দূরান্ত থেকে কাঁঠাল নিয়ে আসতে থাকেন তাঁরা। মুহূর্তেই মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কের প্রায় আধা কিলোমিটার, কোনো কোনো দিন তারও বেশি জায়গার দুই পাশে কাঁঠালের বন্যা। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, বিশ্বনাথ; সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারেরা এসে ভিড় করেন। কাঁঠাল ব্যবসায়ীরা জানালেন, জ্যৈষ্ঠ মাসেই কাঁঠালের জমজমাট এই হাটটি বসে। কুলাউড়া উপজেলার বুধবাসি, টাট্টিউলি, মুরইছড়া, গণকিয়া, ধামুলি, টিকরিয়া, রাঙ্গিছড়া, হিঙ্গাজিয়া, গাজীপুর, লোয়াইউনি, জালালাবাদ, কালিটি, মনছড়া; রাজনগর উপজেলার টেংরা এলাকা থেকে এখানে কাঁঠাল নিয়ে আসেন কাঁঠালচাষি ও ব্যবসায়ীরা।
ইরফান আলী, আবদুল করিমসহ অনেকে জানালেন, আট-দশ মাইল দূর থেকে ট্রাকে করে কাঁঠাল নিয়ে এসেছেন অনেকে। একা এত দূর কাঁঠাল নিয়ে আসতে খরচে পোষায় না। কাঁঠাল আনতে কয়েকজন মিলে ট্রাক ভাড়া করেন। তাঁরা জানান, তাঁদের এলাকায় এমন কোনো বাড়ি নেই যে বাড়িতে ৫০-১০০টি কাঁঠালগাছ নেই। ফসল ভালো হলে প্রতি গাছে ২০০-২৫০টি কাঁঠাল ধরে। এতে করে ৭০-৮০ হাজার টাকা মৌসুমে আয় করতে পারেন অনেকে। কাঁঠালের এই মৌসুমের জন্য এক ধরনের গোপন তাড়না থাকে তাঁদের। গাছ থেকে কাঁঠাল পেড়ে বাজার পর্যন্ত নিয়ে আসতে প্রতিটি কাঁঠালে শ্রমিক ও পরিবহন খরচ পড়ে প্রায় পাঁচ-ছয় টাকা।
তবে এই মৌসুমি ফল কাঁঠাল নিয়ে তৈরি হয়েছে এক নীরব বাণিজ্যিক ব্যবস্থা। বাজারে আসা কাঁঠালচাষি ও পাইকারেরা জানালেন, গাছের সংখ্যা অনুপাতে চৈত্র ও বৈশাখ মাসে আগাম একেকটি বাড়ির গাছের কাঁঠাল বিক্রি হয়ে যায় পাইকারদের কাছে। আবার কোনো কোনো পাইকার আছেন, যাঁরা এক-দুই বছর আগেও কাঁঠালবাগান কিনে নেন। জ্যৈষ্ঠ মাস কাঁঠালের প্রধান মৌসুম হলেও অনেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত কাঁঠাল বিক্রি করতে পারবেন বলে জানালেন। আরজ আলীসহ যাঁরা সাইকেলে করে কাঁঠাল নিয়ে আসেন, তাঁদের অনেকের জীবিকার অন্য রকম সন্ধান। অনেকেই মূলত দিনমজুর। কিন্তু এই সময়টায় দিনমজুরির কাজে যান না। তাঁরা হয় আগাম ক্ষুদ্র পুঁজিতে কাঁঠালের কিছু গাছ কিনে নেন, না-হয় মৌসুমে সরাসরি চাষির কাছ থেকে কাঁঠাল কিনে সাইকেলে বা কাঁধে করে বাজারে নিয়ে আসেন। সেগুলো বিক্রি করে যা মুনাফা হয়, তাতে কখনো কখনো লাভ ভালো হয় আবার কখনো কখনো কোনো রকম দিন চলার ব্যবস্থা হয়। এতেও তাঁরা সন্তুষ্ট থাকেন এটা মনে করে যে দিনমজুরিতে গিয়ে সারা দিনে যা পেতেন, তা না করে আধবেলায় সেই রুজিটা করলেন।
তবে গাছের কাঁঠাল যখন হাটে আসে, তখন তার দামের ওঠানামা আছে। একই রকম কথা বললেন প্রায় সব হাটের কাঁঠাল বিক্রেতারা। সব সময় ভালো দামে কাঁঠাল কেনাবেচা যায় না। কাঁঠালের দামের উঠতি-পড়তি আছে। হাটে যেদিন আমদানি বেশি হয়, সেদিন দাম পড়ে যায়। এতে কারও কারও মুনাফা দূরে থাক, পুঁজিতে হাত পড়ে। তবে মনে মনে আফসোস আছে অনেকের। এত ফল, কাঁঠালের বন্যা হাটে হাটে, তবু এই কাঁঠাল সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই দাম যা-ই পাওয়া যায়, সঙ্গে সঙ্গেই তা বিক্রি করে দিতে হয়। এখানে লাভ-লোকসান নিয়ে ভাবার সুযোগ নেই। কাঁঠালচাষিরা জানালেন, প্রাকৃতিকভাবেই বাপ-দাদার আমল থেকে পাহাড়ি এলাকায় কাঁঠাল চাষ হচ্ছে। কাঁঠাল চাষের ক্ষেত্রে তাঁদের আলাদা কোনো প্রশিক্ষণ নেই। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ বা পোকামাকড়ের আক্রমণ হলে তাঁরা অসহায় হয়ে পড়েন।
জেলার কাঁঠালের হাট ঘুরে মনে হয়েছে, ‘গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল’—এই প্রবাদটি এখন কাঁঠাল-বন্যার তোড়ে ভেসে গেছে। গাছের কাঁঠাল এখন হাটে হাটে।
No comments