অঘটন! অঘটন!
‘আমি খুব আপসেট’ বললে আপনি কী বুঝবেন? কোনো কারণে ‘আমি খুব হতাশ’—এই তো! এই ‘আপসেট’ শব্দটিই খেলায় এসে কেমন অর্থ বদলে ফেলে! সেখানে আপসেট মানে ‘ছোট’র কাছে ‘বড়’র পরাজয়। বাংলা প্রতিশব্দটা বড় সুন্দর—অঘটন।
খেলার অনেক মজার মধ্যে এই অঘটনও একটা। সবচেয়ে বেশি মজাও বলতে পারেন। আপনার প্রিয় দল বা খেলোয়াড় সেই আপসেট বা অঘটনের শিকার হলে অবশ্য ব্যাপারটা আর মোটেই মজার থাকে না।
সেদিন এক পাঠক ফোন করে জানতে চাইলেন, ‘এবারের বিশ্বকাপে কী অঘটন ঘটতে পারে বলে আপনি মনে করেন?’ আমি হেসে বললাম, ‘ভাই রে, অঘটনের যদি ভবিষ্যদ্বাণীই করা যায়, তাহলে কি আর সেটি অঘটন থাকে?
অঘটন মানেই তো অপ্রত্যাশিতের চমক, অভাবিতের বিস্ময়। সেই অঘটন যখন বিশ্বকাপে হয়, স্বাভাবিকভাবেই তা বেশি মনে থাকে। সেই অঘটনের প্রত্যক্ষদর্শীদের মনে তো চিরদিনের জন্যই গাঁথা হয়ে যায়। বাকিদের জন্য ইতিহাস সেই ‘রূপকথা’ বয়ে নিয়ে যায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।
‘রূপকথা’ শব্দটা বুঝেশুনেই ব্যবহার করা। বিশ্বকাপ ফুটবল এমন সব অঘটনের সাক্ষী, যা যুক্তি-বুদ্ধির অগম্য—রূপকথাও তো তাই-ই, নাকি! তেমনই এক রূপকথার গল্পের খুব স্মৃতিচারণা হচ্ছে এবার। ইংল্যান্ড-যুক্তরাষ্ট্র আবার মুখোমুখি বলে ফিরে-ফিরে আসছে ৬০ বছর আগের বেলো হরিজন্তে। ব্রাজিলের ছোট্ট একটা শহর, ফুটবল অনুসারীদের কাছে যেটির সমার্থক হয়ে গেছে সেই বিখ্যাত স্কোরলাইন: যুক্তরাষ্ট্র ১-ইংল্যান্ড ০! ইংল্যান্ডের কোন পত্রিকা নাকি রিপোর্টার ভুল করেছে ভেবে সংশোধন করে ইংল্যান্ড ১১-যুক্তরাষ্ট্র ০ ছেপে দিয়েছিল!
কেন—সময়টা মনে রাখলে তা বুঝতে সুবিধা হবে। এই বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্র ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিলে সেটিও অঘটন বলে বিবেচিত হবে। তবে একেবারে অভাবিতের মর্যাদা পাবে না। বাস্কেটবল আর বেসবলের দেশ বলে যুক্তরাষ্ট্র ফুটবলটাও যে খুব খারাপ একটা খেলে না, তা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। নইলে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে সেরা দশেও তো উঠেছে ওরা। এখনো যুক্তরাষ্ট্রের র্যাঙ্কিং ১৪। ইংল্যান্ডের ৮। বিশ্বের ১৪ নম্বর দল ৮ নম্বরকে হারালে সেটিকে কি খুব বড় অঘটন বলা উচিত?
১৯৫০ বিশ্বকাপের গল্প তো ছিল অন্য রকম। ‘আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে আবার বিশ্বকাপ লাগে নাকি’—এই অহংবোধ থেকেই কিনা ফুটবলের জনকেরা এর আগের তিনটি বিশ্বকাপে খেলেইনি। সেবারই ইংল্যান্ডের প্রথম বিশ্বকাপ এবং স্ট্যানলি ম্যাথুজের দল সেখানে অন্যতম ফেবারিট। আর যুক্তরাষ্ট্র জোড়াতালি দিয়ে নামানো এক দল। বিরতির ৮ মিনিট আগে হেডে গোল করে ওই মার্কিন রূপকথার লেখক গায়েটজেন্স। তা গায়েটজেন্স বলে হেড করেছিলেন, নাকি বলটা তাঁর মাথায় লেগে গিয়েছিল—এটা এখনো রহস্যই হয়ে আছে!
ফুটবলের যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে হেলাফেলাই করা হয়। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বকাপ-ঐতিহ্য কিন্তু বিশ্বকাপের সমান বয়সী। ১৯৩০ সালের প্রথম বিশ্বকাপেও ছিল ওরা; বিশ্বাস করবেন কি না, শীর্ষ বাছাই চার দলের একটি হয়ে!
দ্যাখো কাণ্ড, বিশ্বকাপে অঘটনের কথা বলতে গিয়ে কেমন যুক্তরাষ্ট্র-কীর্তনে মেতে উঠেছি! ১৯৫০ বিশ্বকাপের ওই মার্কিন-রূপকথা শুধুই পড়ে জানা। ফুটেজ-টুটেজও দেখিনি। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে উত্তর কোরিয়ার কাছে ইতালির পরাজয়টাও একই রকম শুধুই পঠিত ‘জ্ঞান’। বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটনের মর্যাদা নিয়ে লড়াইটা এই দুটির মধ্যেই হয়।
লিখতে বসার আগে বিশ্বকাপ-জ্ঞানটা আরেকটু ঝালিয়ে নিতে বসে দেখলাম, অঘটন চর্মচক্ষে বিশ্বকাপ দেখার সময়েই বেশি ঘটেছে। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের পরের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেই হেরে যাওয়ার তিনটি ঘটনাই তো টেলিভিশনে সরাসরি দেখেছি।
১৯৮২ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে বেলজিয়ামের কাছে হেরে গেল আর্জেন্টিনা। অবশ্যই অঘটন, তবে খুব বড় নয়। কারণ বেলজিয়াম তখন ইউরোপিয়ান রানার্সআপ। সেই ম্যাচেই প্রথম ম্যারাডোনাকে দেখা এবং ওই ম্যাচের কথা মনে হলে ৬২ মিনিটে ভ্যানডারবার্গের করা বেলজিয়ামের গোলটি নয়, মনে পড়ে একটি ম্যারাডোনা-মোমেন্টের কথাই। অনেক দূর থেকে গোলার মতো এক শটে তাঁর গোলপোস্ট কাঁপিয়ে দেওয়া।
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের প্রথম ম্যাচেই হেরে যাওয়ার পরের দুটি ঘটনা ১৯৯০ ও ২০০২ বিশ্বকাপে। প্রথমটির শিকার আবারও আর্জেন্টিনা। ক্যামেরুনের মারদাঙ্গা ফুটবল দুটি লাল কার্ডের সঙ্গে জয়ও এনেছিল। ২০০২ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের পরাজয়ও এক আফ্রিকান নবাগতের বিপক্ষে। তবে সেনেগালের কীর্তি অন্তত সে ম্যাচের যোগ্যতর দলের জয়ই ঘোষণা করেছিল।
কী অদ্ভুত দেখুন, বিশ্বকাপে এই যে বড় সব অঘটনের কথা বললাম, সব কটিরই ফল ১-০! শুধু কাকতালীয় বলে শান্তি পাচ্ছি না; এ তো দেখছি ‘মহা-কাকতালীয়’!
খেলার অনেক মজার মধ্যে এই অঘটনও একটা। সবচেয়ে বেশি মজাও বলতে পারেন। আপনার প্রিয় দল বা খেলোয়াড় সেই আপসেট বা অঘটনের শিকার হলে অবশ্য ব্যাপারটা আর মোটেই মজার থাকে না।
সেদিন এক পাঠক ফোন করে জানতে চাইলেন, ‘এবারের বিশ্বকাপে কী অঘটন ঘটতে পারে বলে আপনি মনে করেন?’ আমি হেসে বললাম, ‘ভাই রে, অঘটনের যদি ভবিষ্যদ্বাণীই করা যায়, তাহলে কি আর সেটি অঘটন থাকে?
অঘটন মানেই তো অপ্রত্যাশিতের চমক, অভাবিতের বিস্ময়। সেই অঘটন যখন বিশ্বকাপে হয়, স্বাভাবিকভাবেই তা বেশি মনে থাকে। সেই অঘটনের প্রত্যক্ষদর্শীদের মনে তো চিরদিনের জন্যই গাঁথা হয়ে যায়। বাকিদের জন্য ইতিহাস সেই ‘রূপকথা’ বয়ে নিয়ে যায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।
‘রূপকথা’ শব্দটা বুঝেশুনেই ব্যবহার করা। বিশ্বকাপ ফুটবল এমন সব অঘটনের সাক্ষী, যা যুক্তি-বুদ্ধির অগম্য—রূপকথাও তো তাই-ই, নাকি! তেমনই এক রূপকথার গল্পের খুব স্মৃতিচারণা হচ্ছে এবার। ইংল্যান্ড-যুক্তরাষ্ট্র আবার মুখোমুখি বলে ফিরে-ফিরে আসছে ৬০ বছর আগের বেলো হরিজন্তে। ব্রাজিলের ছোট্ট একটা শহর, ফুটবল অনুসারীদের কাছে যেটির সমার্থক হয়ে গেছে সেই বিখ্যাত স্কোরলাইন: যুক্তরাষ্ট্র ১-ইংল্যান্ড ০! ইংল্যান্ডের কোন পত্রিকা নাকি রিপোর্টার ভুল করেছে ভেবে সংশোধন করে ইংল্যান্ড ১১-যুক্তরাষ্ট্র ০ ছেপে দিয়েছিল!
কেন—সময়টা মনে রাখলে তা বুঝতে সুবিধা হবে। এই বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্র ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিলে সেটিও অঘটন বলে বিবেচিত হবে। তবে একেবারে অভাবিতের মর্যাদা পাবে না। বাস্কেটবল আর বেসবলের দেশ বলে যুক্তরাষ্ট্র ফুটবলটাও যে খুব খারাপ একটা খেলে না, তা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। নইলে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে সেরা দশেও তো উঠেছে ওরা। এখনো যুক্তরাষ্ট্রের র্যাঙ্কিং ১৪। ইংল্যান্ডের ৮। বিশ্বের ১৪ নম্বর দল ৮ নম্বরকে হারালে সেটিকে কি খুব বড় অঘটন বলা উচিত?
১৯৫০ বিশ্বকাপের গল্প তো ছিল অন্য রকম। ‘আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে আবার বিশ্বকাপ লাগে নাকি’—এই অহংবোধ থেকেই কিনা ফুটবলের জনকেরা এর আগের তিনটি বিশ্বকাপে খেলেইনি। সেবারই ইংল্যান্ডের প্রথম বিশ্বকাপ এবং স্ট্যানলি ম্যাথুজের দল সেখানে অন্যতম ফেবারিট। আর যুক্তরাষ্ট্র জোড়াতালি দিয়ে নামানো এক দল। বিরতির ৮ মিনিট আগে হেডে গোল করে ওই মার্কিন রূপকথার লেখক গায়েটজেন্স। তা গায়েটজেন্স বলে হেড করেছিলেন, নাকি বলটা তাঁর মাথায় লেগে গিয়েছিল—এটা এখনো রহস্যই হয়ে আছে!
ফুটবলের যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে হেলাফেলাই করা হয়। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বকাপ-ঐতিহ্য কিন্তু বিশ্বকাপের সমান বয়সী। ১৯৩০ সালের প্রথম বিশ্বকাপেও ছিল ওরা; বিশ্বাস করবেন কি না, শীর্ষ বাছাই চার দলের একটি হয়ে!
দ্যাখো কাণ্ড, বিশ্বকাপে অঘটনের কথা বলতে গিয়ে কেমন যুক্তরাষ্ট্র-কীর্তনে মেতে উঠেছি! ১৯৫০ বিশ্বকাপের ওই মার্কিন-রূপকথা শুধুই পড়ে জানা। ফুটেজ-টুটেজও দেখিনি। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে উত্তর কোরিয়ার কাছে ইতালির পরাজয়টাও একই রকম শুধুই পঠিত ‘জ্ঞান’। বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটনের মর্যাদা নিয়ে লড়াইটা এই দুটির মধ্যেই হয়।
লিখতে বসার আগে বিশ্বকাপ-জ্ঞানটা আরেকটু ঝালিয়ে নিতে বসে দেখলাম, অঘটন চর্মচক্ষে বিশ্বকাপ দেখার সময়েই বেশি ঘটেছে। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের পরের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেই হেরে যাওয়ার তিনটি ঘটনাই তো টেলিভিশনে সরাসরি দেখেছি।
১৯৮২ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে বেলজিয়ামের কাছে হেরে গেল আর্জেন্টিনা। অবশ্যই অঘটন, তবে খুব বড় নয়। কারণ বেলজিয়াম তখন ইউরোপিয়ান রানার্সআপ। সেই ম্যাচেই প্রথম ম্যারাডোনাকে দেখা এবং ওই ম্যাচের কথা মনে হলে ৬২ মিনিটে ভ্যানডারবার্গের করা বেলজিয়ামের গোলটি নয়, মনে পড়ে একটি ম্যারাডোনা-মোমেন্টের কথাই। অনেক দূর থেকে গোলার মতো এক শটে তাঁর গোলপোস্ট কাঁপিয়ে দেওয়া।
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের প্রথম ম্যাচেই হেরে যাওয়ার পরের দুটি ঘটনা ১৯৯০ ও ২০০২ বিশ্বকাপে। প্রথমটির শিকার আবারও আর্জেন্টিনা। ক্যামেরুনের মারদাঙ্গা ফুটবল দুটি লাল কার্ডের সঙ্গে জয়ও এনেছিল। ২০০২ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের পরাজয়ও এক আফ্রিকান নবাগতের বিপক্ষে। তবে সেনেগালের কীর্তি অন্তত সে ম্যাচের যোগ্যতর দলের জয়ই ঘোষণা করেছিল।
কী অদ্ভুত দেখুন, বিশ্বকাপে এই যে বড় সব অঘটনের কথা বললাম, সব কটিরই ফল ১-০! শুধু কাকতালীয় বলে শান্তি পাচ্ছি না; এ তো দেখছি ‘মহা-কাকতালীয়’!
No comments