ইসলামে চরমপন্থার স্থান নেই by মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
ইসলামি জীবনব্যবস্থায় ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ, শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান, সম্প্রীতিপূর্ণ ব্যবহার, পরম সহনশীল মনোভাব ও মধ্যমপন্থা অবলম্বন মুসলমানদের চরিত্রের অনুপম বৈশিষ্ট্য। আর চরমপন্থা হলো দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি করা, কঠোরতা অবলম্বন করা, সীমা অতিক্রম করা, প্রবৃদ্ধি ঘটানো প্রভৃতি। তাই ইসলামে চরমপন্থা, ফেতনা-ফাসাদ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এগুলোকে ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম বলেই জানতে হবে। ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থায় মানুষ যখন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে, তখন গোঁড়ামির মতো এক ধরনের মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। তখন মানুষ সাধারণত অন্যের মত ও পন্থাকে গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করে না, বরং নিজের মত ও পন্থাকে সঠিক বলে মনে করে এবং সেটাই প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কঠোরতা অবলম্বন ও শক্তি প্রয়োগ করতে চায়। এসব শরিয়তবিরোধী কর্মকাণ্ড ইসলাম কর্তৃক সমর্থন লাভের তো প্রশ্নই আসে না। এই মর্মে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ধর্মে কোনো জোর-জবরদস্তি ও কঠোরতা নেই।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-২৫৬)
শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলাম হচ্ছে ‘সিরাতুল মুস্তাকিম’ বা কুসুমাস্তীর্ণ পথ। এ পথের পথিক হবে শান্তিকামী, সুস্থ-সুন্দর ও সহজ-সরল ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। মানুষের প্রতি দয়া-মায়া-মমতা ও শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত হওয়াই তো ইসলামের সুমহান শিক্ষা। ইসলাম প্রচারের নামে মানবসমাজে ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করা, বাড়াবাড়ি করা, কঠোরতা প্রদর্শন, চরমপন্থা অবলম্বন মূলত শয়তানের কারসাজি। বোমাবাজি ও আত্মঘাতী হামলা করে নিরপরাধ মানুষ হত্যার মাধ্যমে দ্বীন কায়েম বা ইসলামি আইন বাস্তবায়ন করার অপচেষ্টা কোনো পুণ্যকর্ম নয়। বরং যে ব্যক্তি, দল বা সংগঠন দ্বীন কায়েমের নামে একজন মানুষ হত্যা করবে, তার আমলনামায় সব মানুষ হত্যার গুনাহ বা পাপ লেখা হবে। মানুষের জীবনের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আল্লাহর কালামে পাকে ঘোষিত হয়েছে, ‘নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করল; আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে প্রাণে রক্ষা করল।’ (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত-৩২)
চরমপন্থা অবলম্বন ইসলামি আকিদা, বিশ্বাস ও চেতনার সম্পূর্ণ বিরোধী। প্রকৃতপক্ষে ইসলাম হলো মধ্যমপন্থার ধর্ম ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে, দেশময় বোমা-আতঙ্ক ও ভয়ভীতি সৃষ্টি করে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কল্পিত এবং মনগড়া ব্যাখ্যার সঙ্গে ইসলামের দূরতম সম্পর্কও নেই। ইসলামের অভ্যুদয় থেকে ১৪০০ বছরের ইতিহাসে ইসলামের মূলধারার কোনো আন্দোলন অসি শক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয়নি। বরং ইসলামের আদর্শিক মহানুভবতা, ক্ষমা, উদারতা ও নৈতিক শক্তির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ইসলাম ব্যাপক প্রচার ও প্রসার লাভ করেছে। ইসলাম প্রচার ও প্রসারে কোমল ব্যবহারের দাবি রাখে। কঠোরতা বা জোরপূর্বক ইসলাম গ্রহণের প্রচেষ্টা দাওয়াতের মূল উদ্দেশ্যকে বিনষ্ট করে দেয়। আংশিক বা খণ্ডিত ইসলাম এবং ইসলামের বিকৃত অপব্যাখ্যা থেকে মুসলমানদের সজাগ ও সচেতন থাকা দরকার। যে ব্যক্তি বা দল-মত চরমপন্থা অবলম্বন করে, সে ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠী কখনোই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে না। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোমল ব্যবহার থেকে বঞ্চিত (কঠোরতা বা চরমপন্থা অবলম্বন করার কারণে), সে কল্যাণ থেকে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত। কোমলতার ফলে আল্লাহ পাক এমন কিছু দান করেন যা চরমপন্থা অবলম্বনকারীকে দান করেন না।’ (মুসলিম)
ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রচারের মাধ্যমে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা হয়। তাই সন্ত্রাস, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, সংঘাতমুক্ত পৃথিবীর প্রয়োজনে ইসলামের শান্তিপ্রিয় ও কল্যাণধর্মী জীবনাদর্শ এখন সময়ের দাবি। ইসলামের স্বভাব সম্পর্কে জানতে হলে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ মহামানব বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনচরিত অধ্যয়ন করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো একজন মানুষকে গুপ্তহত্যা করেননি; কারও বিরুদ্ধে কঠোরতা, বাড়াবাড়ি বা চরমপন্থার আশ্রয় নেননি। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) সাবধানবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘তোমরা আগে অস্ত্র উত্তোলন করো না বা অস্ত্রের ভয়ভীতিও প্রদর্শন করো না।’ পারস্পরিক দয়া, কোমলতা, সরলতা, প্রীতিপূর্ণ ব্যবহার, উত্তম আদর্শ, সুমধুর বাক্যালাপ ছিল নবীজির ইসলাম প্রচারের মূল হাতিয়ার। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে সরলপন্থা অবলম্বন করার জন্য পাঠানো হয়েছে, চরমপন্থা অবলম্বনের জন্য নয়।’ (বুখারি) হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে যে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘সহজ, সরলপন্থা অবলম্বন করবে, কঠোরতা প্রদর্শন করবে না। সুসংবাদ দাও, ঘৃণা ছড়িও না।’ (বুখারি)
বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন পর্যায়ে সভ্য সমাজে যেভাবে ফেতনা-ফাসাদ ও সন্ত্রাসবাদ চলছে, সর্বস্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে, এতে যেমন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম ব্যাঘাত হয়, তেমনি ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে দারুণভাবে ব্যাঘাত ঘটছে। ইসলাম ও মুসলমানের নামে যারা সন্ত্রাসবাদ চালিয়ে যাচ্ছে, সেসব শত্রু দেখাতে চায় ইসলাম হত্যা, সন্ত্রাস, ধ্বংস ও বিভীষিকার ধর্ম! মূলত ইসলাম যে শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের ধর্ম তা তাদের জানা নেই। এতে বিশেষ করে মুসলমান ও ইসলামের মূলে কুঠারাঘাত করা হচ্ছে। যেসব উগ্রবাদী, বিপ্লবী ও চরমপন্থীরা বিভিন্ন দেশে নানা পর্যায়ে সন্ত্রাস, বোমাবাজি, আত্মঘাতী হামলাসহ ইসলামবিরোধী মানবতাবিবর্জিত ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে, বাস্তবিকই তারা ইসলামের সঙ্গে সম্পর্কহীনই বটে। চরমপন্থা অবলম্বন বা কঠোরতা প্রদর্শন ইসলামের জন্য শুধু ক্ষতিকারক নয়, বরং এটা মানুষের মধ্যে ঘৃণা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করে ইসলামের সংস্কারের পথকে রুদ্ধ করে দেয়। এ জন্য জবরদস্তি, চরমপন্থাকে সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা এবং ফেতনা-ফাসাদ প্রতিরোধে সাধ্যমতো সংস্কার প্রচেষ্টা তথা কথা ও কলমের জিহাদ অব্যাহত রাখতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘ফেতনা হত্যা অপেক্ষা গুরুতর।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৯১)
নবী করিম (সা.)-এর ঘনিষ্ঠ সাহাবি এবং ইসলামের তিনজন বিশিষ্ট খলিফাকে কাউকে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত অবস্থায়, কাউকে মসজিদের মধ্যে চরমপন্থী আততায়ীরা নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। ইসলামের শত্রুদের প্রদত্ত আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় বর্তমানেও কিছু চরমপন্থী এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে। ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে যারা যুবসমাজকে বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট করছে, তাদের সংখ্যা বেশি নয়। দেশের আলেম সমাজ, ধর্মীয় নেতা, মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম ও খতিবদের উদ্ভূত সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থী বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে তাদের সোচ্চার প্রতিবাদ ও বলিষ্ঠ অবস্থান রেখে জনগণকে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা সমাধানের একটি সহজ পথ। তাই আসুন, আমরা জাতি-ধর্ম-বর্ণ দলমত নির্বিশেষে সবাই মিলে দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চরমপন্থা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং বোমাবাজদের নির্মূল করার লক্ষ্যে আল্লাহর মনোনীত মানবতার কল্যাণের ধর্ম ইসলামের পরম শান্তির বাণীকে ব্যাপক হারে প্রচার ও প্রসার করার চেষ্টায় ব্রতী হই।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।
শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলাম হচ্ছে ‘সিরাতুল মুস্তাকিম’ বা কুসুমাস্তীর্ণ পথ। এ পথের পথিক হবে শান্তিকামী, সুস্থ-সুন্দর ও সহজ-সরল ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। মানুষের প্রতি দয়া-মায়া-মমতা ও শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত হওয়াই তো ইসলামের সুমহান শিক্ষা। ইসলাম প্রচারের নামে মানবসমাজে ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করা, বাড়াবাড়ি করা, কঠোরতা প্রদর্শন, চরমপন্থা অবলম্বন মূলত শয়তানের কারসাজি। বোমাবাজি ও আত্মঘাতী হামলা করে নিরপরাধ মানুষ হত্যার মাধ্যমে দ্বীন কায়েম বা ইসলামি আইন বাস্তবায়ন করার অপচেষ্টা কোনো পুণ্যকর্ম নয়। বরং যে ব্যক্তি, দল বা সংগঠন দ্বীন কায়েমের নামে একজন মানুষ হত্যা করবে, তার আমলনামায় সব মানুষ হত্যার গুনাহ বা পাপ লেখা হবে। মানুষের জীবনের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আল্লাহর কালামে পাকে ঘোষিত হয়েছে, ‘নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করল; আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে প্রাণে রক্ষা করল।’ (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত-৩২)
চরমপন্থা অবলম্বন ইসলামি আকিদা, বিশ্বাস ও চেতনার সম্পূর্ণ বিরোধী। প্রকৃতপক্ষে ইসলাম হলো মধ্যমপন্থার ধর্ম ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে, দেশময় বোমা-আতঙ্ক ও ভয়ভীতি সৃষ্টি করে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কল্পিত এবং মনগড়া ব্যাখ্যার সঙ্গে ইসলামের দূরতম সম্পর্কও নেই। ইসলামের অভ্যুদয় থেকে ১৪০০ বছরের ইতিহাসে ইসলামের মূলধারার কোনো আন্দোলন অসি শক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয়নি। বরং ইসলামের আদর্শিক মহানুভবতা, ক্ষমা, উদারতা ও নৈতিক শক্তির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ইসলাম ব্যাপক প্রচার ও প্রসার লাভ করেছে। ইসলাম প্রচার ও প্রসারে কোমল ব্যবহারের দাবি রাখে। কঠোরতা বা জোরপূর্বক ইসলাম গ্রহণের প্রচেষ্টা দাওয়াতের মূল উদ্দেশ্যকে বিনষ্ট করে দেয়। আংশিক বা খণ্ডিত ইসলাম এবং ইসলামের বিকৃত অপব্যাখ্যা থেকে মুসলমানদের সজাগ ও সচেতন থাকা দরকার। যে ব্যক্তি বা দল-মত চরমপন্থা অবলম্বন করে, সে ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠী কখনোই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে না। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোমল ব্যবহার থেকে বঞ্চিত (কঠোরতা বা চরমপন্থা অবলম্বন করার কারণে), সে কল্যাণ থেকে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত। কোমলতার ফলে আল্লাহ পাক এমন কিছু দান করেন যা চরমপন্থা অবলম্বনকারীকে দান করেন না।’ (মুসলিম)
ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রচারের মাধ্যমে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা হয়। তাই সন্ত্রাস, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, সংঘাতমুক্ত পৃথিবীর প্রয়োজনে ইসলামের শান্তিপ্রিয় ও কল্যাণধর্মী জীবনাদর্শ এখন সময়ের দাবি। ইসলামের স্বভাব সম্পর্কে জানতে হলে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ মহামানব বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনচরিত অধ্যয়ন করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো একজন মানুষকে গুপ্তহত্যা করেননি; কারও বিরুদ্ধে কঠোরতা, বাড়াবাড়ি বা চরমপন্থার আশ্রয় নেননি। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) সাবধানবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘তোমরা আগে অস্ত্র উত্তোলন করো না বা অস্ত্রের ভয়ভীতিও প্রদর্শন করো না।’ পারস্পরিক দয়া, কোমলতা, সরলতা, প্রীতিপূর্ণ ব্যবহার, উত্তম আদর্শ, সুমধুর বাক্যালাপ ছিল নবীজির ইসলাম প্রচারের মূল হাতিয়ার। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে সরলপন্থা অবলম্বন করার জন্য পাঠানো হয়েছে, চরমপন্থা অবলম্বনের জন্য নয়।’ (বুখারি) হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে যে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘সহজ, সরলপন্থা অবলম্বন করবে, কঠোরতা প্রদর্শন করবে না। সুসংবাদ দাও, ঘৃণা ছড়িও না।’ (বুখারি)
বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন পর্যায়ে সভ্য সমাজে যেভাবে ফেতনা-ফাসাদ ও সন্ত্রাসবাদ চলছে, সর্বস্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে, এতে যেমন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম ব্যাঘাত হয়, তেমনি ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে দারুণভাবে ব্যাঘাত ঘটছে। ইসলাম ও মুসলমানের নামে যারা সন্ত্রাসবাদ চালিয়ে যাচ্ছে, সেসব শত্রু দেখাতে চায় ইসলাম হত্যা, সন্ত্রাস, ধ্বংস ও বিভীষিকার ধর্ম! মূলত ইসলাম যে শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের ধর্ম তা তাদের জানা নেই। এতে বিশেষ করে মুসলমান ও ইসলামের মূলে কুঠারাঘাত করা হচ্ছে। যেসব উগ্রবাদী, বিপ্লবী ও চরমপন্থীরা বিভিন্ন দেশে নানা পর্যায়ে সন্ত্রাস, বোমাবাজি, আত্মঘাতী হামলাসহ ইসলামবিরোধী মানবতাবিবর্জিত ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে, বাস্তবিকই তারা ইসলামের সঙ্গে সম্পর্কহীনই বটে। চরমপন্থা অবলম্বন বা কঠোরতা প্রদর্শন ইসলামের জন্য শুধু ক্ষতিকারক নয়, বরং এটা মানুষের মধ্যে ঘৃণা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করে ইসলামের সংস্কারের পথকে রুদ্ধ করে দেয়। এ জন্য জবরদস্তি, চরমপন্থাকে সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা এবং ফেতনা-ফাসাদ প্রতিরোধে সাধ্যমতো সংস্কার প্রচেষ্টা তথা কথা ও কলমের জিহাদ অব্যাহত রাখতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘ফেতনা হত্যা অপেক্ষা গুরুতর।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৯১)
নবী করিম (সা.)-এর ঘনিষ্ঠ সাহাবি এবং ইসলামের তিনজন বিশিষ্ট খলিফাকে কাউকে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত অবস্থায়, কাউকে মসজিদের মধ্যে চরমপন্থী আততায়ীরা নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। ইসলামের শত্রুদের প্রদত্ত আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় বর্তমানেও কিছু চরমপন্থী এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে। ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে যারা যুবসমাজকে বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট করছে, তাদের সংখ্যা বেশি নয়। দেশের আলেম সমাজ, ধর্মীয় নেতা, মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম ও খতিবদের উদ্ভূত সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থী বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে তাদের সোচ্চার প্রতিবাদ ও বলিষ্ঠ অবস্থান রেখে জনগণকে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা সমাধানের একটি সহজ পথ। তাই আসুন, আমরা জাতি-ধর্ম-বর্ণ দলমত নির্বিশেষে সবাই মিলে দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চরমপন্থা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং বোমাবাজদের নির্মূল করার লক্ষ্যে আল্লাহর মনোনীত মানবতার কল্যাণের ধর্ম ইসলামের পরম শান্তির বাণীকে ব্যাপক হারে প্রচার ও প্রসার করার চেষ্টায় ব্রতী হই।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments