অটিজম: প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ by আহমেদ হেলাল
২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। অটিজম হচ্ছে শিশুর বিকাশজনিত এমন একটি সমস্যা যেখানে তার ভাবের আদান-প্রদান ও সামাজিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এ সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের আচরণে সমস্যা থাকে, তারা নিজেদের মধ্যে গুটিয়ে থাকে আর কখনো বা একই আচরণ বারবার করতে থাকে। সারা বিশ্বে বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি হাজারে এক থেকে ১৫ জন শিশু অটিজমে ভুগছে। বাংলাদেশে অটিজম নিয়ে জাতীয় পর্যায়ের কোনো জরিপ না হলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় পরিচালিত ঢাকা বিভাগে শিশু-কিশোরদের মানসিক রোগবিষয়ক এক গবেষণায় দেখা যায়, এতে অংশ নেওয়া শিশুদের মধ্যে ০.৮৪ শতাংশ শিশুর অটিজম আছে। শিশুর বয়স তিন বছর হওয়ার আগেই অটিজমের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। মেয়েশিশুদের তুলনায় ছেলেশিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় চার গুণ বেশি।
সচেতনতা দিবস এই জন্য যে বিশ্বব্যাপী অটিজম নিয়ে রয়েছে নানা বিভ্রান্তি, অসচেতনতা ও অপপ্রচার—‘অটিজম সমস্যার কোনো চিকিত্সা নেই’, ‘অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী’, ‘অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের কোনো চিকিত্সকের কাছে নেওয়ার দরকার নেই’, ‘টিকার কারণে অটিজম হয়’, ‘অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের অঙ্কের জ্ঞান খুব ভালো’ ইত্যাদি। এগুলোর কোনোটাই সত্য নয়। একসময় অটিজম কী, তা-ই আমাদের দেশে অজানা ছিল। প্রচারমাধ্যমগুলোর ইতিবাচক ভূমিকা, কিছু উদ্যোগী মানুষের উদ্যম আর ইন্টারনেটের কল্যাণে আমাদের দেশে এখন অটিজম নিয়ে যথেষ্ট সচেতনতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু তার পরও বাকি রয়ে গেছে অনেক কিছু। অটিজম নিয়ে সচেতনতার প্রথম ধাপটি শুরু করতে হবে পরিবারের মধ্য থেকে। পরিবারের একজন শিশুর মধ্যে যখন প্রথম অটিজমের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে তখন বেশির ভাগ মা-বাবা প্রথমে বিষয়টি আমলে নেন না। এরপর একপর্যায়ে চিকিত্সকের কাছে নিয়ে গেলে কয়েকটি বিষয় ঘটতে পারে—চিকিত্সক যথাযথভাবে অটিজম নির্ণয় ও তার পরিচর্যা ব্যাখা করেন; অথবা চিকিত্সক অটিজম নির্ণয় করেন ঠিকই কিন্তু এর পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা দেন না; অথবা চিকিত্সক অটিজম নির্ণয়ই করতে পারেন না। প্রতি ক্ষেত্রেই মা-বাবারা বিভ্রান্তিতে পড়তে পারেন। প্রথম ক্ষেত্রে অটিজমের সঠিক ব্যাখ্যা শোনার পর বেশির ভাগ সময়ই তাঁরা মেনে নিতে চান না যে তাঁদের সন্তানের এমন একটি সমস্যা রয়েছে। এরপর তাঁরা চিকিত্সকের পর চিকিত্সক পাল্টান কিন্তু সন্তানের তাতে কোনো মঙ্গল হয় না। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অটিজম নিয়ে ব্যাখ্যা না জানায় তাঁরা ভুলপথে সন্তানের পরিচর্যা করেন, আর তৃতীয় ক্ষেত্রে মা-বাবাসহ অটিজমে আক্রান্ত শিশুর যে প্রভূত হয়রানি হবে তা বলাই বাহুল্য। এখন মা-বাবারা কী করবেন? তাঁরা অটিজম নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের মতামত জানবেন এবং তাঁরা জানবেন যে অটিজম কোনো একক চিকিত্সকের বিষয় নয়। অটিজম আক্রান্ত শিশুর পরিচর্যার জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ, সাইকিয়াট্রিক সোশ্যাল ওয়ার্কার, সাইকোলজিস্ট, বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক, বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মা-বাবা সবার সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। অটিজম আক্রান্ত বেশির ভাগ শিশুর জন্য প্রয়োজন বিশেষায়িত স্কুল। অনেক সময় সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে অটিজম আছে এমন শিশুর মা-বাবা তাদের সন্তানকে বিশেষায়িত স্কুলে ভর্তি করাতে চান না। সন্তানকে প্রায় লুকিয়ে রাখেন সব সামাজিকতা পরিহার করে। অথচ অটিজম আছে এমন শিশুর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সামাজিক মিথস্ক্রিয়া করানো, তাকে মনের ভাব প্রকাশের নানাবিধ উপায় শেখানো।
অটিজম নিয়ে লেখালেখি, টিভি অনুষ্ঠান নেহাত কম হয় না। প্রতিবছর ২ এপ্রিলকে ঘিরে তো বটেই, এমনকি অন্যান্য সময়েও অটিজম নিয়ে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম হয়ে থাকে। কখনো বা বিদেশি বিশেষজ্ঞরাও অংশ নেন নানা কর্মশালায়। কিন্তু অটিজমের ক্ষেত্রে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যে অটিজম কোনো ভৌগোলিক সীমারেখা, ধর্ম, জাতি, অর্থনৈতিক অবস্থা মানে না। অর্থাত্ শহরে-গ্রামে যেকোনো জায়গায় অটিজম হওয়ার আশঙ্কা প্রায় সমান। কিন্তু আমাদের দেশের সচেতনতামূলক সব কর্মকাণ্ড এবং অটিজমের পরিচর্যা পাওয়ার সুযোগ-সুবিধাগুলো শহরকেন্দ্রিক, নির্দিষ্ট করে বললে কেবল রাজধানীকেন্দ্রিক। ফলে গ্রামাঞ্চলের বৃহত্ জনগোষ্ঠী রয়ে যায় পুরোপুরি সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের আওতার বাইরে।
আমাদের সব কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করলে ঘুরে-ফিরে যে বিষয়টি চলে আসে তা হলো—অটিজম নিয়ে আমাদের তাবত্ কর্মকাণ্ড, পত্রিকায় লেখা, বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান, অটিজম নিয়ে কাজ করছেন এমন বেসরকারি সংগঠনের কার্যক্রম—কোনোটাই তেমনভাবে গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পারছে না। অটিজম আছে এমন শিশুদের জন্য কেবল সহানুভূতিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেই আমরা যেন আমাদের দায় না সারি। অটিজম-বিষয়ক প্রকৃত তথ্য শহরে-গ্রামে, ধনী-দরিদ্র সবার কাছে নিয়ে যেতে হবে আমাদের সবাইকে। রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমগুলোতে (বিটিভি, বাংলাদেশ বেতার) কেবল এই ২ এপ্রিলকে ঘিরে নয়, বরং নিয়মিতভাবে অটিজম-বিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য বিভাগের আওতাধীন সব জেলা শহর ও উপজেলায় অটিজম-বিষয়ক বিলবোর্ড থাকা উচিত। অটিজমের সাধারণ পরিচর্যার দিকে এবং এ বিষয়ে বিভ্রান্তিমূলক কোনো তথ্য যাতে কেউ প্রচার করতে না পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নজর দিতে হবে। প্রতিটি গ্রাম এবং শহরের প্রাথমিক স্কুলসহ সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের এ বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। অটিজম আছে এমন শিশুদের মা-বাবারা প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রয়োজনে নিজ এলাকায় এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি ও অন্যান্য মা-বাবাকেও প্রশিক্ষণ দিতে পারেন।
মনে রাখতে হবে, অটিজমের পরিচর্যা ও অটিজমে আক্রান্ত শিশুকে সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত রাখার প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে দ্রুততম সময়ে তার অটিজম শনাক্তকরণ। এরপর সঠিকভাবে, বিশেষায়িত শিক্ষায়তনের মাধ্যমে তাকে সমাজে টিকে থাকার উপযোগী করে গড়ে তোলা। আমরা জানি, আমাদের সম্পদ সীমিত। উন্নত দেশের মতো করে অটিজমের পরিচর্যা এ মুহূর্তে হয়তো আমরা করতে পারব না, কিন্তু আমরা স্বপ্ন দেখি ভবিষ্যতের। আমরা বিশ্বাস করি, এ মুহূর্তে আমরা যদি দেশব্যাপী কেবল সচেতনতা তৈরি করতে পারি তবে ভবিষ্যতে অবশ্যই অন্যান্য দেশের মতো আমরাও এই একটু পিছিয়ে থাকা অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে আসতে পারব সামনের সারিতে। এর জন্য প্রয়োজন সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ এবং তা এখনই।
আহমেদ হেলাল: চিকিত্সক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
সচেতনতা দিবস এই জন্য যে বিশ্বব্যাপী অটিজম নিয়ে রয়েছে নানা বিভ্রান্তি, অসচেতনতা ও অপপ্রচার—‘অটিজম সমস্যার কোনো চিকিত্সা নেই’, ‘অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী’, ‘অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের কোনো চিকিত্সকের কাছে নেওয়ার দরকার নেই’, ‘টিকার কারণে অটিজম হয়’, ‘অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের অঙ্কের জ্ঞান খুব ভালো’ ইত্যাদি। এগুলোর কোনোটাই সত্য নয়। একসময় অটিজম কী, তা-ই আমাদের দেশে অজানা ছিল। প্রচারমাধ্যমগুলোর ইতিবাচক ভূমিকা, কিছু উদ্যোগী মানুষের উদ্যম আর ইন্টারনেটের কল্যাণে আমাদের দেশে এখন অটিজম নিয়ে যথেষ্ট সচেতনতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু তার পরও বাকি রয়ে গেছে অনেক কিছু। অটিজম নিয়ে সচেতনতার প্রথম ধাপটি শুরু করতে হবে পরিবারের মধ্য থেকে। পরিবারের একজন শিশুর মধ্যে যখন প্রথম অটিজমের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে তখন বেশির ভাগ মা-বাবা প্রথমে বিষয়টি আমলে নেন না। এরপর একপর্যায়ে চিকিত্সকের কাছে নিয়ে গেলে কয়েকটি বিষয় ঘটতে পারে—চিকিত্সক যথাযথভাবে অটিজম নির্ণয় ও তার পরিচর্যা ব্যাখা করেন; অথবা চিকিত্সক অটিজম নির্ণয় করেন ঠিকই কিন্তু এর পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা দেন না; অথবা চিকিত্সক অটিজম নির্ণয়ই করতে পারেন না। প্রতি ক্ষেত্রেই মা-বাবারা বিভ্রান্তিতে পড়তে পারেন। প্রথম ক্ষেত্রে অটিজমের সঠিক ব্যাখ্যা শোনার পর বেশির ভাগ সময়ই তাঁরা মেনে নিতে চান না যে তাঁদের সন্তানের এমন একটি সমস্যা রয়েছে। এরপর তাঁরা চিকিত্সকের পর চিকিত্সক পাল্টান কিন্তু সন্তানের তাতে কোনো মঙ্গল হয় না। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অটিজম নিয়ে ব্যাখ্যা না জানায় তাঁরা ভুলপথে সন্তানের পরিচর্যা করেন, আর তৃতীয় ক্ষেত্রে মা-বাবাসহ অটিজমে আক্রান্ত শিশুর যে প্রভূত হয়রানি হবে তা বলাই বাহুল্য। এখন মা-বাবারা কী করবেন? তাঁরা অটিজম নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের মতামত জানবেন এবং তাঁরা জানবেন যে অটিজম কোনো একক চিকিত্সকের বিষয় নয়। অটিজম আক্রান্ত শিশুর পরিচর্যার জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ, সাইকিয়াট্রিক সোশ্যাল ওয়ার্কার, সাইকোলজিস্ট, বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক, বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মা-বাবা সবার সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। অটিজম আক্রান্ত বেশির ভাগ শিশুর জন্য প্রয়োজন বিশেষায়িত স্কুল। অনেক সময় সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে অটিজম আছে এমন শিশুর মা-বাবা তাদের সন্তানকে বিশেষায়িত স্কুলে ভর্তি করাতে চান না। সন্তানকে প্রায় লুকিয়ে রাখেন সব সামাজিকতা পরিহার করে। অথচ অটিজম আছে এমন শিশুর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সামাজিক মিথস্ক্রিয়া করানো, তাকে মনের ভাব প্রকাশের নানাবিধ উপায় শেখানো।
অটিজম নিয়ে লেখালেখি, টিভি অনুষ্ঠান নেহাত কম হয় না। প্রতিবছর ২ এপ্রিলকে ঘিরে তো বটেই, এমনকি অন্যান্য সময়েও অটিজম নিয়ে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম হয়ে থাকে। কখনো বা বিদেশি বিশেষজ্ঞরাও অংশ নেন নানা কর্মশালায়। কিন্তু অটিজমের ক্ষেত্রে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যে অটিজম কোনো ভৌগোলিক সীমারেখা, ধর্ম, জাতি, অর্থনৈতিক অবস্থা মানে না। অর্থাত্ শহরে-গ্রামে যেকোনো জায়গায় অটিজম হওয়ার আশঙ্কা প্রায় সমান। কিন্তু আমাদের দেশের সচেতনতামূলক সব কর্মকাণ্ড এবং অটিজমের পরিচর্যা পাওয়ার সুযোগ-সুবিধাগুলো শহরকেন্দ্রিক, নির্দিষ্ট করে বললে কেবল রাজধানীকেন্দ্রিক। ফলে গ্রামাঞ্চলের বৃহত্ জনগোষ্ঠী রয়ে যায় পুরোপুরি সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের আওতার বাইরে।
আমাদের সব কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করলে ঘুরে-ফিরে যে বিষয়টি চলে আসে তা হলো—অটিজম নিয়ে আমাদের তাবত্ কর্মকাণ্ড, পত্রিকায় লেখা, বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান, অটিজম নিয়ে কাজ করছেন এমন বেসরকারি সংগঠনের কার্যক্রম—কোনোটাই তেমনভাবে গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পারছে না। অটিজম আছে এমন শিশুদের জন্য কেবল সহানুভূতিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেই আমরা যেন আমাদের দায় না সারি। অটিজম-বিষয়ক প্রকৃত তথ্য শহরে-গ্রামে, ধনী-দরিদ্র সবার কাছে নিয়ে যেতে হবে আমাদের সবাইকে। রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমগুলোতে (বিটিভি, বাংলাদেশ বেতার) কেবল এই ২ এপ্রিলকে ঘিরে নয়, বরং নিয়মিতভাবে অটিজম-বিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য বিভাগের আওতাধীন সব জেলা শহর ও উপজেলায় অটিজম-বিষয়ক বিলবোর্ড থাকা উচিত। অটিজমের সাধারণ পরিচর্যার দিকে এবং এ বিষয়ে বিভ্রান্তিমূলক কোনো তথ্য যাতে কেউ প্রচার করতে না পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নজর দিতে হবে। প্রতিটি গ্রাম এবং শহরের প্রাথমিক স্কুলসহ সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের এ বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। অটিজম আছে এমন শিশুদের মা-বাবারা প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রয়োজনে নিজ এলাকায় এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি ও অন্যান্য মা-বাবাকেও প্রশিক্ষণ দিতে পারেন।
মনে রাখতে হবে, অটিজমের পরিচর্যা ও অটিজমে আক্রান্ত শিশুকে সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত রাখার প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে দ্রুততম সময়ে তার অটিজম শনাক্তকরণ। এরপর সঠিকভাবে, বিশেষায়িত শিক্ষায়তনের মাধ্যমে তাকে সমাজে টিকে থাকার উপযোগী করে গড়ে তোলা। আমরা জানি, আমাদের সম্পদ সীমিত। উন্নত দেশের মতো করে অটিজমের পরিচর্যা এ মুহূর্তে হয়তো আমরা করতে পারব না, কিন্তু আমরা স্বপ্ন দেখি ভবিষ্যতের। আমরা বিশ্বাস করি, এ মুহূর্তে আমরা যদি দেশব্যাপী কেবল সচেতনতা তৈরি করতে পারি তবে ভবিষ্যতে অবশ্যই অন্যান্য দেশের মতো আমরাও এই একটু পিছিয়ে থাকা অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে আসতে পারব সামনের সারিতে। এর জন্য প্রয়োজন সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ এবং তা এখনই।
আহমেদ হেলাল: চিকিত্সক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments