সিলেটে সন্ত্রাসী শুটার আনসার গ্রেপ্তার by ওয়েছ খছরু

সিলেটের মেজরটিলার ত্রাস ‘শুটার’ আনসার। তার ভয়ে তটস্থ থাকতো এলাকার মানুষ। সেই আনসার পলাতক হওয়ার তিন মাসের মাথায় র‌্যাব’র হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। এতে এলাকায় ফিরেছে স্বস্তি। ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পূর্ব পর্যন্ত এলাকায় ভয়ঙ্কর ত্রাস ছিল আনসার। ৪ঠা আগস্ট সিলেটের রাজপথে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনা ঘটে। এ সময় মাঠের দখল নিতে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভকারী ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি ছুড়ে। ওইদিন সিলেটের রাজপথে একটি শর্টগান হাতে নিয়ে হাজির হয়েছিল শুটার আনসার। মাথায় হেলমেট পরে রাজপথে ছিল বেপরোয়া। অস্ত্র প্রদর্শন ও গুলিবর্ষণের ঘটনার দিন রাজপথে সশস্ত্র অবস্থায় থাকা আনসারের ছবি পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। গণমাধ্যমেও আসে তার ছবি। পরবর্তীতে প্রশাসনের তদন্তে অস্ত্র সহ আনসারকে চিহ্নিত করা হয়। তবে; ৫ই আগস্টে সরকার পতনের দিন থেকে আনসার পলাতক ছিল।  মেজরটিলার বাসিন্দারা জানিয়েছেন; শেখ হাসিনার পতনের পর মেজরটিলা এলাকার ছাত্র-জনতা সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ দেখিয়েছে। ওইদিন তারা শুটার আনসারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আড্ডাস্থল ও বাড়িও ভাঙচুর করে। ওইদিনই ছাত্র-জনতার ক্ষোভ থেকে রক্ষা পেতে শুটার আনসার গা-ঢাকা দেয়। এরপর থেকে গত তিন মাস এলাকায় তার কোনো উপস্থিতি ছিল না। গতকাল দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনার ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী ‘শুটার’ আনসার ও তার সহযোগী নাঈমকে সিলেট জেলার ওসমানীনগর থানার বড় হাজিরপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব সদস্যরা। র‌্যাব’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে; শাহ্‌পরাণ থানার তালিকাভুক্ত আসামি আনসার ওসমানীনগর উপজেলার বড় হাজীপুর গ্রামের একটি বাড়িতে অবস্থান করছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গতকাল দুপুরের পর র‌্যাব’র পক্ষ থেকে ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে শুটার আনসার আহমদ ও তার বন্ধু আমিনুল ইসলাম নাঈমকে গ্রেপ্তার করে। আনসারের বাড়ি মেজরটিলার সৈয়দপুর এলাকায়। তার পিতার নাম উনাই মিয়া। আর নাঈম মেজরটিলার ইসলামপুর কলোনির আলমগীর হোসেনে ছেলে। আত্মগোপনে তারা ওসমানীনগরের ওই গ্রামে অবস্থান করছিল। র‌্যাব জানিয়েছে- শুটার আনসার এলাকার ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তাদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।মেজরটিলা এলাকার স্থানীয়রা জানিয়েছেন- শুটার আনসার মেজরটিলা ও ইসলামপুরের স্থানীয় বাসিন্দা। এলাকায় সে অস্ত্রবাজ ও ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। তার নেতৃত্বে মেজরটিলা বাজারে একটি অপরাধী গ্রুপ রয়েছে। জমি দখল, দোকান দখল কিংবা আধিপত্য বিস্তারে তাদের ব্যবহার করেছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা।  মেজরটিলা এলাকা শাসন করতেন সিলেট জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন। সরকারের শেষদিকে এসে জাহাঙ্গীরের কাছাকাছি ভিড়ে শুটার আনসার। মূলত শেল্টার নিতে সে দলবল নিয়ে জাহাঙ্গীরের বলয়ে ঢুকে। এর আগে এলাকায় জমি দখল নিয়ে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে তার বিরোধ ছিল। এসব বিরোধকে কেন্দ্র করে সব সময় মহড়া-পাল্টা মহড়া চলে মেজরটিলার টেক্সটাইল মিল ও সৈয়দপুর এলাকায়।  মেজরটিলা পয়েন্টে তার মালিকানাধীন একটি রেস্টুরেন্ট ছিল। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন; শুটার আনসার রেস্টুরেন্টকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করতেন। এলাকায় ছিনতাই, মাদক সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে সে পরিচিত ছিল। কেউ ভূমি দখলে নিতে হলে তার গ্রুপকে ব্যবহার করতেন। তার নিয়ন্ত্রণে থাকা অপরাধীরা মেজরটিলা, ইসলামপুর, সৈয়দপুর, শ্যামলী, পল্লবী ও মোহাম্মদ এলাকায় মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল। একই সঙ্গে বাসা দখল করে অসামাজিক কাজেও নিয়ন্ত্রণ ছিল তার। তারা জানিয়েছেন; ভয়ঙ্কর অপরাধী হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতেন না। যারাই প্রতিবাদ করেছেন- হামলার শিকার হয়েছেন। এলাকার লোকজন জানান- মেজরটিলার পাশেই হচ্ছে সিলেট এমসি ও সরকারি কলেজ। এর পাশে আলোচিত টিলাগড় পয়েন্ট। ফলে এ দু’টি কলেজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাতা এবং টিলাগড় দখলে রাখতে এর আগে নিজ দলের প্রতিপক্ষ গ্রুপের সঙ্গে লড়াইয়ে অস্ত্র নিয়ে বেপরোয়া ছিল শুটার আনসার। এমসি কলেজে অস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনায়ও এসেছিল তার নাম। তখন রাজনৈতিক নেতাদের শেল্টার থাকায় তার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যায়নি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ওই সময় শাহ্‌পরাণ থানা পুলিশের মাঠ পর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার সখ্য ছিল। ফলে শুটার আনসার সবসময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল।
mzamin

No comments

Powered by Blogger.