প্রতি রাতে উড়তো কোটি কোটি টাকা by পিয়াস সরকার
মোহামেডান
স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড। এ ক্লাবের প্রধান কার্যালয়ে রোববার অভিযান চালায়
পুলিশ। উদ্ধার করা হয় বিপুল ক্যাসিনো সামগ্রী ও নথিপত্র। ঐতিহ্যবাহী এ
ক্লাবে গড়ে ওঠা ক্যাসিনোর চিত্র দেখে অনেকে হতবাক হয়েছেন। ওই ক্লাব থেকে
উদ্ধার হওয়া নথিপত্র থেকে দেখা যায়, প্রতিদিন এখানে কয়েক কোটি টাকা লেনদেন
হতো ক্যাসিনোতে। ক্লাবে প্রতিদিন কমন রুমে জুয়া খেলতে আসতেন প্রায় হাজার
লোক। প্রতিদিনের যারা আসতেন তাদের ব্যালেন্স শিটে নাম লেখা হতো। একেকটি
পাতায় থাকতো ১৮ জনের করে নাম। এমন একটি ব্যালেন্স শিটে দেখা যায় মোট ৭ লাখ ৩
হাজার টাকার চিপস বিক্রি হয়েছে। আর ভিআইপি রুম ছিলো ৩টি। এসব রুমে একবার
খেলতে সর্বনিম্ন পকেটে থাকতে হয় দেড় লাখ টাকা। কোটি কোটি টাকার খেলায় মেতে
উঠতেন তারা।
ভিআইপিদের একটি তালিকায় দেখা যায়, ১৮ জন ১ কোটি ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকার চিপস কেনেন। এই শিট অনুযায়ী ২০ লাখ ৮০ হাজার টাকার চিপস কেনেন এক ব্যক্তি। আর সর্বনিম্ন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার।
মেলে ৯ লাখ টাকা পরিশোধের একটি কাগজ। ১৫ই অক্টোবর ২০১৮ সালে এটি ‘মনিটর’র মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। যার বিল নং এম- ০৪০-১৮১৯।
মোহামেডান ক্যাসিনোর ভিতরে লাগানো ছিলো একটি নোটিশ বোর্ড। যেখানে দেখা যায় ১০ হাজার থেকে ৪৯ হাজার টাকা চিপস কিনলে তখনই ২ শতাংশ টাকা ফেরৎ দেয়া হয়। আর এই পরিমাণ টাকা হারলে ১০ শতাংশ টাকা পেতেন তারা। ঠিক এইভাবে ৫০ হাজার থেকে ৯৯ হাজারে ৩ শতাংশ টাকা ও হারলে মিলতো ১৫ শতাংশ টাকা। ১ লাখ বা তার অধিক টাকার ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ও ২০ শতাংশ টাকা ফেরৎ। এছাড়াও প্রতিটি ক্লাবে ছিলো অসংখ্য খেলার নির্দেশনাবলী।
গত রোববার মতিঝিল থানা পুলিশের অভিযানে সিলগালা করে দেয়া হয়েছে ৪টি ক্লাব। এগুলো হলো, মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব ও ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব। ক্লাবগুলোতে দেখা যায়, আধুনিকসব ক্যাসিনো সামগ্রি। স্লট মেশিন, রুলেট বোর্ড, ডার্ক বোর্ড ইত্যাদি। এছাড়াও সরিয়ে ফেলার কারণে মিলেছে অল্প পরিমাণ মদ, বিয়ার, সীসার সরঞ্জাম। তবে সাজসজ্জা দেখে বোঝা যায় অধিক পরিমাণে ছিলো এসব পণ্য। জানা যায়, এসব স্থানে খেলতে আসতো অনেক পরিচিত মানুষ। এসব ব্যক্তিদের জন্য রাখা হয়েছে মুখোশ পরিহিত অবস্থায় খেলবার সুযোগ। প্রতিটি ক্লাবে মেলে রান্নার সামগ্রী। মিলতো জাপানিজ, চাইনিজ, থাই, বাংলাসহ অনেক আধুনিক মানের খাবার। এগুলো খাবারের জন্য গুণতে হতো মোটা অংকের টাকা। খাবার গ্রহণ ব্যবস্থা ছিলো বুফে স্টাইলে। এসব ক্লাবে খাবারের জন্য গুনতে হতো শহরের আধুনিক রেস্টুরেন্টের থেকে কয়েকগুণ অধিক অর্থ।
ক্লাবে যেসব প্লেয়িং কার্ড দিয়ে খেলা হতো সেগুলোও আধুনিক মানের। একটি প্লেয়িং কার্ডের সেট নিয়ে এসে দেখানো হয় একটি দোকানে। শুক্রাবাদের এক স্টেশনারী দোকানদার বলেন, এই কার্ড বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। এগুলো নিয়ে আসা হয় সিঙ্গাপুর কিংবা থাইল্যান্ড থেকে। আমাদের কাছে যেসব কার্ড রয়েছে সর্বোচ্চ মূল্য এক সেট ১ হাজার টাকা। এটি তার থেকেও বেশি আধুনিক। সম্পূর্ণ প্লাস্টিকের কার্ডগুলো পোড়ানোর চেষ্টা করলেও তা পোড়েনি। আর কার্ড প্রায় ৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পরেও তার রং কিংবা বৈশিষ্ট নষ্ট হয়নি। প্রায় সব ক্লাবেই মেলে এসব কার্ড। আর দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাবে পাওয়া যায় এরকম ৪ কার্টুন নতুন কার্ড। প্রতিটি কার্টুনে ছিলো ৫শ’ পিচ করে কার্ড সেট। আর সব ক্লাবেই মেলে অসংখ্য চিপস। মোহামেডানে পাওয়া যায় সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকার চিপস।
ভিক্টোরিয়া ক্লাবের দেয়ালে দেখা যায়, আধুনিক সব ছবির ফ্রেম। একজন শিল্পী এসব ছবি ও বৈশিষ্ট দেখে বলেন, এসব জলছাপের ছবি। এসব কিনতে লেগেছে প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। আর মোহামেডানের দেয়ালে ছিলো এর থেকেও বড় ছবির ফ্রেম। তবে অভিযানের আগেই এসব সরিয়ে ফেলা হয়েছে। দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাবে একটি চক্রাকার সিড়ির আছে। এই সিড়ির মূল্যও নেহায়েত কম নয়। আর মোহামেডান ক্লাবে যেসব বাতির দেখা পাওয়া যায়, যার একেকটির মূল্য আনুমানিক ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকা বলে জানান এক ব্যবসায়ী।
ভিক্টোরিয়া ক্লাবের ছিলো কিছু ভিজিটিং কার্ড। কৃষ্ণা শ্রেষ্ঠা, ম্যানেজিং ডিরেক্টর। নেপালী। তার নম্বরে ২দিন ধরে চেষ্টা করে মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়াও প্রতিটি ক্লাবে লক্ষ্যনীয় নেপালীদের বিভিন্ন পুজার সামগ্রী। মোহামেডানে ঝোলানো ছিলো লেবু-লঙ্কা দিয়ে সাজানো বিশেষ পুজার সামগ্রী।
মতিঝিল এলাকার ঠিক মোহামেডান ক্লাবের সামনে বেশ কয়েকটি চায়ের দোকান। একটি দোকানে বসে ছিলেন হাসনাইন শিকদার। তিনি ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, প্রায়শই ক্লাবগুলোতে যেতাম। এসব ক্লাবে আসতো, ধনী ধনী সব ব্যক্তি। যারা কোটি টাকা হারলেও হাসি মুখে বেরিয়ে যেতেন।
এক ব্যক্তি আফসোস নিয়ে বলেন, ক্লাবগুলোতে যারা আসতো তারা সকলেই কোটিপতি। এসব মানুষ টাকাকে পানির মতো উড়ানোর জন্যই আসতো। আমরা প্রায় ৬ জন বিভিন্ন ক্লাবে ঘুরে বেড়াতাম। এরপর কোন ব্যক্তি অধিক টাকা উড়াচ্ছেন দেখলেই সবাই চলে যেতাম সেখানে। এরপর তার সঙ্গে পরিচিত হয়ে খেলা শুরু করতাম। এতে বেশ লাভ হতো। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার ৪ লাখ টাকা দিয়ে খেলে ২৭ লাখ টাকা জিতেছি। তার ভাষায় ‘ট্রিক্স’ বুঝে খেলতেন তারা।
ক্যাসিনো ঘিরে ছিলো ‘লাকি হ্যান্ড’। খেলতে আসাদের অনেকেই কিছু ছেলের হাত দিয়ে তাদের চাল চালতেন। অনেক সময় কোন সংখ্যা বা কোন ঘরে চাল দিবেন তারাই ঠিক করতেন। এসব চালে টাকা পাওয়ার পর সাধারণত তারা পেতেন ১ হাজার টাকা করে। কিংবা অনেকে খুশি হয়ে দিতেন ৫, ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
তিনি আরো বলেন, খেলা শেষে ভিআইপি ব্যক্তিরা কর্মচারী যেমন ওয়েটার, গার্ডদের, খেলা পরিচালনাকারীদের টিপস দিতেন সবমিলিয়ে ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
ভিআইপিদের একটি তালিকায় দেখা যায়, ১৮ জন ১ কোটি ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকার চিপস কেনেন। এই শিট অনুযায়ী ২০ লাখ ৮০ হাজার টাকার চিপস কেনেন এক ব্যক্তি। আর সর্বনিম্ন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার।
মেলে ৯ লাখ টাকা পরিশোধের একটি কাগজ। ১৫ই অক্টোবর ২০১৮ সালে এটি ‘মনিটর’র মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। যার বিল নং এম- ০৪০-১৮১৯।
মোহামেডান ক্যাসিনোর ভিতরে লাগানো ছিলো একটি নোটিশ বোর্ড। যেখানে দেখা যায় ১০ হাজার থেকে ৪৯ হাজার টাকা চিপস কিনলে তখনই ২ শতাংশ টাকা ফেরৎ দেয়া হয়। আর এই পরিমাণ টাকা হারলে ১০ শতাংশ টাকা পেতেন তারা। ঠিক এইভাবে ৫০ হাজার থেকে ৯৯ হাজারে ৩ শতাংশ টাকা ও হারলে মিলতো ১৫ শতাংশ টাকা। ১ লাখ বা তার অধিক টাকার ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ও ২০ শতাংশ টাকা ফেরৎ। এছাড়াও প্রতিটি ক্লাবে ছিলো অসংখ্য খেলার নির্দেশনাবলী।
গত রোববার মতিঝিল থানা পুলিশের অভিযানে সিলগালা করে দেয়া হয়েছে ৪টি ক্লাব। এগুলো হলো, মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব ও ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব। ক্লাবগুলোতে দেখা যায়, আধুনিকসব ক্যাসিনো সামগ্রি। স্লট মেশিন, রুলেট বোর্ড, ডার্ক বোর্ড ইত্যাদি। এছাড়াও সরিয়ে ফেলার কারণে মিলেছে অল্প পরিমাণ মদ, বিয়ার, সীসার সরঞ্জাম। তবে সাজসজ্জা দেখে বোঝা যায় অধিক পরিমাণে ছিলো এসব পণ্য। জানা যায়, এসব স্থানে খেলতে আসতো অনেক পরিচিত মানুষ। এসব ব্যক্তিদের জন্য রাখা হয়েছে মুখোশ পরিহিত অবস্থায় খেলবার সুযোগ। প্রতিটি ক্লাবে মেলে রান্নার সামগ্রী। মিলতো জাপানিজ, চাইনিজ, থাই, বাংলাসহ অনেক আধুনিক মানের খাবার। এগুলো খাবারের জন্য গুণতে হতো মোটা অংকের টাকা। খাবার গ্রহণ ব্যবস্থা ছিলো বুফে স্টাইলে। এসব ক্লাবে খাবারের জন্য গুনতে হতো শহরের আধুনিক রেস্টুরেন্টের থেকে কয়েকগুণ অধিক অর্থ।
ক্লাবে যেসব প্লেয়িং কার্ড দিয়ে খেলা হতো সেগুলোও আধুনিক মানের। একটি প্লেয়িং কার্ডের সেট নিয়ে এসে দেখানো হয় একটি দোকানে। শুক্রাবাদের এক স্টেশনারী দোকানদার বলেন, এই কার্ড বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। এগুলো নিয়ে আসা হয় সিঙ্গাপুর কিংবা থাইল্যান্ড থেকে। আমাদের কাছে যেসব কার্ড রয়েছে সর্বোচ্চ মূল্য এক সেট ১ হাজার টাকা। এটি তার থেকেও বেশি আধুনিক। সম্পূর্ণ প্লাস্টিকের কার্ডগুলো পোড়ানোর চেষ্টা করলেও তা পোড়েনি। আর কার্ড প্রায় ৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পরেও তার রং কিংবা বৈশিষ্ট নষ্ট হয়নি। প্রায় সব ক্লাবেই মেলে এসব কার্ড। আর দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাবে পাওয়া যায় এরকম ৪ কার্টুন নতুন কার্ড। প্রতিটি কার্টুনে ছিলো ৫শ’ পিচ করে কার্ড সেট। আর সব ক্লাবেই মেলে অসংখ্য চিপস। মোহামেডানে পাওয়া যায় সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকার চিপস।
ভিক্টোরিয়া ক্লাবের দেয়ালে দেখা যায়, আধুনিক সব ছবির ফ্রেম। একজন শিল্পী এসব ছবি ও বৈশিষ্ট দেখে বলেন, এসব জলছাপের ছবি। এসব কিনতে লেগেছে প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। আর মোহামেডানের দেয়ালে ছিলো এর থেকেও বড় ছবির ফ্রেম। তবে অভিযানের আগেই এসব সরিয়ে ফেলা হয়েছে। দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাবে একটি চক্রাকার সিড়ির আছে। এই সিড়ির মূল্যও নেহায়েত কম নয়। আর মোহামেডান ক্লাবে যেসব বাতির দেখা পাওয়া যায়, যার একেকটির মূল্য আনুমানিক ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকা বলে জানান এক ব্যবসায়ী।
ভিক্টোরিয়া ক্লাবের ছিলো কিছু ভিজিটিং কার্ড। কৃষ্ণা শ্রেষ্ঠা, ম্যানেজিং ডিরেক্টর। নেপালী। তার নম্বরে ২দিন ধরে চেষ্টা করে মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়াও প্রতিটি ক্লাবে লক্ষ্যনীয় নেপালীদের বিভিন্ন পুজার সামগ্রী। মোহামেডানে ঝোলানো ছিলো লেবু-লঙ্কা দিয়ে সাজানো বিশেষ পুজার সামগ্রী।
মতিঝিল এলাকার ঠিক মোহামেডান ক্লাবের সামনে বেশ কয়েকটি চায়ের দোকান। একটি দোকানে বসে ছিলেন হাসনাইন শিকদার। তিনি ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, প্রায়শই ক্লাবগুলোতে যেতাম। এসব ক্লাবে আসতো, ধনী ধনী সব ব্যক্তি। যারা কোটি টাকা হারলেও হাসি মুখে বেরিয়ে যেতেন।
এক ব্যক্তি আফসোস নিয়ে বলেন, ক্লাবগুলোতে যারা আসতো তারা সকলেই কোটিপতি। এসব মানুষ টাকাকে পানির মতো উড়ানোর জন্যই আসতো। আমরা প্রায় ৬ জন বিভিন্ন ক্লাবে ঘুরে বেড়াতাম। এরপর কোন ব্যক্তি অধিক টাকা উড়াচ্ছেন দেখলেই সবাই চলে যেতাম সেখানে। এরপর তার সঙ্গে পরিচিত হয়ে খেলা শুরু করতাম। এতে বেশ লাভ হতো। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার ৪ লাখ টাকা দিয়ে খেলে ২৭ লাখ টাকা জিতেছি। তার ভাষায় ‘ট্রিক্স’ বুঝে খেলতেন তারা।
ক্যাসিনো ঘিরে ছিলো ‘লাকি হ্যান্ড’। খেলতে আসাদের অনেকেই কিছু ছেলের হাত দিয়ে তাদের চাল চালতেন। অনেক সময় কোন সংখ্যা বা কোন ঘরে চাল দিবেন তারাই ঠিক করতেন। এসব চালে টাকা পাওয়ার পর সাধারণত তারা পেতেন ১ হাজার টাকা করে। কিংবা অনেকে খুশি হয়ে দিতেন ৫, ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
তিনি আরো বলেন, খেলা শেষে ভিআইপি ব্যক্তিরা কর্মচারী যেমন ওয়েটার, গার্ডদের, খেলা পরিচালনাকারীদের টিপস দিতেন সবমিলিয়ে ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
No comments