বাংলাদেশের পায়রা সমুদ্রবন্দর আরেকটি চীনা ‘মুক্তা’ হবে না by কনর ফেয়ারম্যান
প্রতিবেশী
বাংলাদেশের বন্দরগুলোর উন্নয়নে চীনের সম্পৃক্ততাকে ভারত সবসময় সন্দেহের
চোখে দেখে। ২০১৯ সালের এপ্রিলে ভারতীয় সংবাদসংস্থা এএনআই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ
করে এক প্রতিবেদনে বলেছে যে বাংলাদেশের পায়রা সমুদ্রবন্দর চীনের তথাকথিত
‘মুক্তার মালা’র অংশে পরিণত হতে পারে। দক্ষিণ বাংলাদেশে অবস্থিত পায়রা
সমুদ্রবন্দরটি ১৫ বিলিয়ন ডলারের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের
অংশবিশেষ। এটি নির্মাণ করবে চায়না হার্বার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ও চায়না
স্টেট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। এ দুটি চীনা
রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার যথাক্রমে গোয়াদর ও
হাম্বানতোতা বন্দরের তদারকিতেও নিয়োজিত রয়েছে। ভারত মহাসাগরে চীনা সমুদ্র
ঘেরাও হওয়ার ভারতীয় আশঙ্কা সত্ত্বেও পায়রা সমুদ্রবন্দরটি কখনো চীনা সম্পদে
পরিণত হবে না। কারণ এর অবস্থানগত জটিলতা, দুর্বল সহায়ক অবকাঠামো ও
বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।
পায়রা সমুদ্রবন্দরটির প্রস্তাবিত স্থানটির গভীরতা প্রাকৃতিকভাবেই কম। ফলে এর বার্থে কার্গো জাহাজগুলোর যাওয়ার জন্য ব্যাপক ড্রেজিং প্রয়োজন। লুক্সেমবার্গভিত্তিক জ্যান ডি নুল গ্রুপ ১০ বছরের জন্য ড্রেজিং ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়েছে। বন্দরটিকে সচল রাখার জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে বঙ্গোপসাগরগামী রবনাবাদ চ্যানেলে অবশ্যই ৭৫ কিলোমিটার ড্রেজিং করতে হবে। প্রাথমিক ড্রেজিংয়ে খরচ পড়বে ৯৬৩ মিলিয়ন ডলার। এতে ১০০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার টনের বেশি পলি সরিয়ে ফেলার প্রয়োজন পড়বে। জাহাজ ভেড়া নিশ্চিত করার জন্য এখানে বিরতিহীনভাবে ড্রেজিং করে যেতে হবে। আবার এমনকি একটিমাত্র সাইক্লোনেই চ্যানেলটি ভরাট হয়ে জাহাজগুলোকে আটকিয়ে দিতে পারে। যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য সার্বক্ষণিক ড্রেজিং করার ব্যয়ভার এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোও বহন করতে পারবে না। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা এই উদ্যোগকে ‘আক্ষরিক অর্থেই পানিতে টাকা ঢাকা’ হিসেবে অবহিত করেছেন।
কেবল প্রাকৃতিক বাধা পায়রা বন্দরকে সমস্যায় ফেলছে না, পাশ্ববর্তী ১.৬ বিলিয়ন ডলারের পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াটের কয়লাচালিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্যও এটি হুমকি সৃষ্টি করছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎই পায়রা বন্দরে ব্যবহৃত হওয়ার কথা। চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের তহবিলে চীনা রাষ্ট্রায়ত্ত উদ্যোক্ততাদের একটি কনসোর্টিয়াম এটি নির্মাণ করছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লা পায়রা বন্দরে অবতরণ করার কথা।
এখানকার প্রথম ৬৬০ মেগাওয়াটের ইউনিটটি ২০১৯ সালের এপ্রিলে যাত্রা শুরুর কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পটির আংশিক মালিক নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড প্লান্টটির ৮১ ভাগ কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছে, আর মাত্র ৫৭ ভাগ অর্থায়ন করেছে। এখান থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য যে ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ করার কথা তা বিলম্বিত হচ্ছে। কোম্পানিটি এজন্য দুর্বল সমন্বয়কে দায়ী করছে। এছাড়া রয়েছে নিরাপত্তাগত সমস্যা। গত জুনে এই প্লান্টে বাংলাদেশী শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষে এক চীনা শ্রমিক নিহত হলে এক সপ্তাহের জন্য কাজ বন্ধ থাকে। ফলে কেবল পায়রা সমুদ্রবন্দরই নয়, পায়রা কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভবিষ্যতও হুমকির মুখে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক ও সার্বিক ঋণ সমস্যার ঝুঁকিও কম। ২০১৭ অর্থবছরের শেষ নাগাদ মোট বৈদেশিক ঋণ ছিল জিডিপির ৪.৩ ভাগ। বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে রয়েছে বাংলাদেশের মোট ঋণের ৬০ ভাগ। এরপর রয়েছে জাপান (৯.২ ভাগ), চীন (২.৯ ভাগ)। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের জন্য বাংলাদেশের গড় সময় রয়েছে ৩১ বছর। বাংলাদেশ সরকার মনে করছে, বার্ষিক জিডিপি যদি ৫ ভাগ হ্রাসও পায়, তবুও এসব ঋণ পরিশোধ করতে পারবে বাংলাদেশ। অন্যদিকে হাম্বানতোতা বন্দর নিয়ে শ্রীলঙ্কা হলো তথাকথিত চীনা ঋণ-ফাঁদের পোস্টারচাইল্ড। ঋণের কারণে বাংলাদেশের কোনো বন্দর চীন নিয়ে নিতে পারবে না।
পায়রা যদি চীনা ‘মুক্তা’ না হয়, তবে এসব প্রকল্পে চীনা বিনিয়োগের সম্ভাব্য অন্য ব্যাখ্যা থাকতে পারে। চীনা রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো ২০১১ থেকে ২০১৩ সময়কালে পুরো বিশ শতকে যুক্তরাষ্ট্র যত সিমেন্ট উৎপাদন করেছে, তার চেয়ে বেশি করেছে। এই সিমেন্টের ব্যবস্থা করতেই হবে, তা যেখানেই হোক না কেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের মরিয়া প্রয়োজন অবকাঠামোর, বিশেষ করে বিদ্যুত খাতে। আর চীন অবকাঠামো খাতেই বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। কেবল চীন যেহেতু বড় বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী, ফলে বাংলাদেশের সামনে বিকল্প আছে সামান্যই। দুই পক্ষের প্রয়োজনের কারণেই প্রকল্পগুলো হাতে নেয়া হচ্ছে।
আবার উন্নয়নশীল এশিয়ার নতুন ও আধুনিক অবকাঠামোর প্রয়োজন ব্যাপক। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে, দারিদ্র মোকাবিলা করতে ও জলবায়ু পরিবর্তনে সাড়া দিতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত এশিয়ার দেশগুলোর প্রয়োজন ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। কিন্তু তা সত্ত্বেও হাতে পেলেই প্রকল্প গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে সরকারগুলোকে। এর বদলে তাদেরকে দীর্ঘ মেয়াদি সুফল পাওয়া যায় ও ন্যূনতম বাধার মুখে পড়ে এমন যথার্থ প্রকল্পগুলোতেই তাদের বিনিয়োগ করতে হবে। আমাদের উচিত হবে এই লেন্স দিয়েই পায়রা সমুদ্রবন্দরকে মূল্যায়ন করা।
পায়রা সমুদ্রবন্দরটির প্রস্তাবিত স্থানটির গভীরতা প্রাকৃতিকভাবেই কম। ফলে এর বার্থে কার্গো জাহাজগুলোর যাওয়ার জন্য ব্যাপক ড্রেজিং প্রয়োজন। লুক্সেমবার্গভিত্তিক জ্যান ডি নুল গ্রুপ ১০ বছরের জন্য ড্রেজিং ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়েছে। বন্দরটিকে সচল রাখার জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে বঙ্গোপসাগরগামী রবনাবাদ চ্যানেলে অবশ্যই ৭৫ কিলোমিটার ড্রেজিং করতে হবে। প্রাথমিক ড্রেজিংয়ে খরচ পড়বে ৯৬৩ মিলিয়ন ডলার। এতে ১০০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার টনের বেশি পলি সরিয়ে ফেলার প্রয়োজন পড়বে। জাহাজ ভেড়া নিশ্চিত করার জন্য এখানে বিরতিহীনভাবে ড্রেজিং করে যেতে হবে। আবার এমনকি একটিমাত্র সাইক্লোনেই চ্যানেলটি ভরাট হয়ে জাহাজগুলোকে আটকিয়ে দিতে পারে। যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য সার্বক্ষণিক ড্রেজিং করার ব্যয়ভার এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোও বহন করতে পারবে না। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা এই উদ্যোগকে ‘আক্ষরিক অর্থেই পানিতে টাকা ঢাকা’ হিসেবে অবহিত করেছেন।
কেবল প্রাকৃতিক বাধা পায়রা বন্দরকে সমস্যায় ফেলছে না, পাশ্ববর্তী ১.৬ বিলিয়ন ডলারের পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াটের কয়লাচালিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্যও এটি হুমকি সৃষ্টি করছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎই পায়রা বন্দরে ব্যবহৃত হওয়ার কথা। চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের তহবিলে চীনা রাষ্ট্রায়ত্ত উদ্যোক্ততাদের একটি কনসোর্টিয়াম এটি নির্মাণ করছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লা পায়রা বন্দরে অবতরণ করার কথা।
এখানকার প্রথম ৬৬০ মেগাওয়াটের ইউনিটটি ২০১৯ সালের এপ্রিলে যাত্রা শুরুর কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পটির আংশিক মালিক নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড প্লান্টটির ৮১ ভাগ কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছে, আর মাত্র ৫৭ ভাগ অর্থায়ন করেছে। এখান থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য যে ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ করার কথা তা বিলম্বিত হচ্ছে। কোম্পানিটি এজন্য দুর্বল সমন্বয়কে দায়ী করছে। এছাড়া রয়েছে নিরাপত্তাগত সমস্যা। গত জুনে এই প্লান্টে বাংলাদেশী শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষে এক চীনা শ্রমিক নিহত হলে এক সপ্তাহের জন্য কাজ বন্ধ থাকে। ফলে কেবল পায়রা সমুদ্রবন্দরই নয়, পায়রা কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভবিষ্যতও হুমকির মুখে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক ও সার্বিক ঋণ সমস্যার ঝুঁকিও কম। ২০১৭ অর্থবছরের শেষ নাগাদ মোট বৈদেশিক ঋণ ছিল জিডিপির ৪.৩ ভাগ। বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে রয়েছে বাংলাদেশের মোট ঋণের ৬০ ভাগ। এরপর রয়েছে জাপান (৯.২ ভাগ), চীন (২.৯ ভাগ)। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের জন্য বাংলাদেশের গড় সময় রয়েছে ৩১ বছর। বাংলাদেশ সরকার মনে করছে, বার্ষিক জিডিপি যদি ৫ ভাগ হ্রাসও পায়, তবুও এসব ঋণ পরিশোধ করতে পারবে বাংলাদেশ। অন্যদিকে হাম্বানতোতা বন্দর নিয়ে শ্রীলঙ্কা হলো তথাকথিত চীনা ঋণ-ফাঁদের পোস্টারচাইল্ড। ঋণের কারণে বাংলাদেশের কোনো বন্দর চীন নিয়ে নিতে পারবে না।
পায়রা যদি চীনা ‘মুক্তা’ না হয়, তবে এসব প্রকল্পে চীনা বিনিয়োগের সম্ভাব্য অন্য ব্যাখ্যা থাকতে পারে। চীনা রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো ২০১১ থেকে ২০১৩ সময়কালে পুরো বিশ শতকে যুক্তরাষ্ট্র যত সিমেন্ট উৎপাদন করেছে, তার চেয়ে বেশি করেছে। এই সিমেন্টের ব্যবস্থা করতেই হবে, তা যেখানেই হোক না কেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের মরিয়া প্রয়োজন অবকাঠামোর, বিশেষ করে বিদ্যুত খাতে। আর চীন অবকাঠামো খাতেই বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। কেবল চীন যেহেতু বড় বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী, ফলে বাংলাদেশের সামনে বিকল্প আছে সামান্যই। দুই পক্ষের প্রয়োজনের কারণেই প্রকল্পগুলো হাতে নেয়া হচ্ছে।
আবার উন্নয়নশীল এশিয়ার নতুন ও আধুনিক অবকাঠামোর প্রয়োজন ব্যাপক। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে, দারিদ্র মোকাবিলা করতে ও জলবায়ু পরিবর্তনে সাড়া দিতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত এশিয়ার দেশগুলোর প্রয়োজন ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। কিন্তু তা সত্ত্বেও হাতে পেলেই প্রকল্প গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে সরকারগুলোকে। এর বদলে তাদেরকে দীর্ঘ মেয়াদি সুফল পাওয়া যায় ও ন্যূনতম বাধার মুখে পড়ে এমন যথার্থ প্রকল্পগুলোতেই তাদের বিনিয়োগ করতে হবে। আমাদের উচিত হবে এই লেন্স দিয়েই পায়রা সমুদ্রবন্দরকে মূল্যায়ন করা।
গত ৫ জুলাই বেইজিংয়ের দিয়াওইউতি স্টেট গেস্ট হাউজে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং |
No comments