বিশ্বরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা রাশিয়া-ভারত-চীন গ্রুপিং by প্রিচাপক তেকাসুক
জাপানের ওসাকায় জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার
মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা ছাড়াও আরেকটি নজরকাড়া ঘটনা ছিল। তা হলো উদীয়মান তিন
প্রধান আঞ্চলিক শক্তিকে নিয়ে রাশিয়া-ইন্ডিয়া-চায়না গ্রুপিংয়ের (আরআইসি)
আত্মপ্রকাশ।
ভারত ও চীনকে নিয়ে রাশিয়া নিজের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে এই অঞ্চলের নেতৃত্বে দিতে চাইছে, মার্কিন-নেতৃত্বাধীন আঞ্চলিক ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে আরো বহুপক্ষীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করার স্বপ্ন দেখছে।
বহুপক্ষীয়বাদ, অবাধ ও উন্মুক্ত বাজার ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে সরিয়ে বহু মেরুর এশিয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আরআইসি আঞ্চলিক গ্রুপিংকে এগিয়ে নিতে চাইছে রাশিয়া ও ভারত উভয়েই।
চীন ও রাশিয়া বিশেষভাবে মনে করছে যে যুক্তরাষ্ট্র হলো আঞ্চলিক ও বিশ্ব ব্যবস্থার প্রতি একটি হুমকি।
এক মাসের মধ্যে এটি হলো দ্বিতীয় আরআইসি সভা। প্রথমটি হয়েছিল কিরগিজিস্থানে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সম্মেলনের সময়।
গত দুটি শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দৃশ্যত আরআইসি উদ্যোগের প্রতি সমর্থনসূচক ছিলেন, তিনি পরবর্তী সভাকে স্বাগতও জানান।
শীর্ষ সম্মেলনগুলোতে তার বক্তৃতা ছিল বেশ ইতিবাচক। তিনি ইঙ্গিত দেন যে কৌশলগত অংশীদারিত্বের ওপর ভিত্তি করে আরআইসি হতে পারে উন্নয়ন, রাজনীতি, অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চালক।
আরআইসিরি আত্মপ্রকাশ বিশ্ব রাজনীতির একটি মাইলফলক।
বিশ্ব ভূরাজনীতির দৃশ্যপটে রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ শক্তিগুলো প্রভাব বিস্তারের লড়াই চালাচ্ছে। আর এই প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
এটা এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে যেখানে সব পক্ষ ভারতের সমর্থন কামনা করছে। কারণ দেশটির প্রভাব বিস্তারের এলাকা। অধিকন্তু উভয় শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের ভিশন এই প্রশ্ন তুলেছে ভারত কি আরো স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকছে নাকি নিজেকে একমাত্র আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। ভারতের কৌশলগত পরিবর্তনের ব্যাপারে কিছু দেশের যে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন তা বোধগম্য।
ভবিষ্যতের সাথে তাল মিলিয়ে ভারতের কৌশলগত চিন্তাভাবনা ও পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন হচ্ছে।
মোদি কেবলমাত্র আরআইসি সভাতেই উপস্থিত ছিলেন না, তিনি আরেকটি তিন জাতি গ্রুপিংয়ের সাথেও তথা জেআইএ (জাপান-যুক্তরাষ্ট্র-ইন্ডিয়া)-এর সাথেও ছিলেন। এটি হলো জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে ট্রাম্পের ইন্দো-প্যাসিফিক আঞ্চলিক গ্রুপিংয়ের অংশবিশেষ।
ত্রিপক্ষীয় জোট জেএআই সৃষ্টি করা হয়েছে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা ও চীনের প্রভাব সংযত রাখার জন্য।
ফলে জেএআই মূলত নিরাপত্তা ও চীনকেন্দ্রিক গ্রুপিং। আবার এটি অস্ট্রেলিয়াসহ চার জাতির ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্দো-প্যাসিফিক রিজিওয়নের (এফওআআইপি) অংশবিশেষ।
জেএআই ও আরআইসি পরস্পর বিরোধী গ্রুপ। কিন্তু ভারত উভয়টিতেই আছে। এতে বোঝা যাচ্ছে যে ভারতীয় কৌশলগত চিন্তাভাবনায় দোটানা বিরাজ করছে, পাশ্চাত্য না স্বৈরতান্ত্রিক শক্তি- কোন দিকে যাবে বুঝতে পারছে না।
তবে আঞ্চলিক নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশকারী দেশগুলোর মধ্যে ভারতেরই বেশি দরকষাকষির সুযোগ রয়েছে। আর এটাই বিশ্ব ভূ-রাজনীতিতে ভারতকে সুবিধাজনক অবস্থানে রেখেছে। সবাই ভারতকে কাছে টানার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, দুই গ্রুপ যখন একে অপরের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হবে, তখন ভারত কোন পক্ষে থাকবে। এতে ভারতের কৌশলগত ও পররাষ্ট্রনীতির ভাবনায় দুটি মানদণ্ড প্রকাশ করছে।
প্রথমত, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব বিস্তার, পাকিস্তান নীতি, ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি ঋণ ফাঁদ নীতি প্রয়োগ নিয়ে দিল্লি অস্বস্তিতে আছে।
চীনের এসব কার্যক্রম নিজের এলাকাতেই ভারতকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। এ কারণেই সে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জেএআইয়ের দিকে ঝুঁকেছে।
অন্যদিকে শুল্ক যুদ্ধ এবং রাশিয়া ও ইরানের সাথে ভারতের বাণিজ্য করার ওপর মার্কিন বিধিনিষেধের ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক স্থিতিশীল নয়।
ভারত তার নিজের স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, এমন কৌশলগত ভারসাম্য খুঁজে পেতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আবার আরআইসি ভারতকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করায় এই ভূরাজনৈতিক সুবিধাটি ভারত কাজে লাগাতে পারে, একে ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যের সাথে দরকষাকষি করতে পারে।
আর একটি স্বাধীন ফ্যাক্টর ও ওয়াইল্ড কার্ড হিসেবে ভারত আরআইসিকে বিরূপ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভালো অবস্থায় থাকতে পারে।
গণতান্ত্রিক ভারতের সিদ্ধান্ত হয়তো তার একনায়কতান্ত্রিক শক্তির প্রতি ঝুঁকে থাকার প্রমাণ নয়, তবে এতে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ভারত তার জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে চায়।
ভারত ও চীনকে নিয়ে রাশিয়া নিজের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে এই অঞ্চলের নেতৃত্বে দিতে চাইছে, মার্কিন-নেতৃত্বাধীন আঞ্চলিক ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে আরো বহুপক্ষীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করার স্বপ্ন দেখছে।
বহুপক্ষীয়বাদ, অবাধ ও উন্মুক্ত বাজার ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে সরিয়ে বহু মেরুর এশিয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আরআইসি আঞ্চলিক গ্রুপিংকে এগিয়ে নিতে চাইছে রাশিয়া ও ভারত উভয়েই।
চীন ও রাশিয়া বিশেষভাবে মনে করছে যে যুক্তরাষ্ট্র হলো আঞ্চলিক ও বিশ্ব ব্যবস্থার প্রতি একটি হুমকি।
এক মাসের মধ্যে এটি হলো দ্বিতীয় আরআইসি সভা। প্রথমটি হয়েছিল কিরগিজিস্থানে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সম্মেলনের সময়।
গত দুটি শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দৃশ্যত আরআইসি উদ্যোগের প্রতি সমর্থনসূচক ছিলেন, তিনি পরবর্তী সভাকে স্বাগতও জানান।
শীর্ষ সম্মেলনগুলোতে তার বক্তৃতা ছিল বেশ ইতিবাচক। তিনি ইঙ্গিত দেন যে কৌশলগত অংশীদারিত্বের ওপর ভিত্তি করে আরআইসি হতে পারে উন্নয়ন, রাজনীতি, অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চালক।
আরআইসিরি আত্মপ্রকাশ বিশ্ব রাজনীতির একটি মাইলফলক।
বিশ্ব ভূরাজনীতির দৃশ্যপটে রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ শক্তিগুলো প্রভাব বিস্তারের লড়াই চালাচ্ছে। আর এই প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
এটা এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে যেখানে সব পক্ষ ভারতের সমর্থন কামনা করছে। কারণ দেশটির প্রভাব বিস্তারের এলাকা। অধিকন্তু উভয় শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের ভিশন এই প্রশ্ন তুলেছে ভারত কি আরো স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকছে নাকি নিজেকে একমাত্র আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। ভারতের কৌশলগত পরিবর্তনের ব্যাপারে কিছু দেশের যে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন তা বোধগম্য।
ভবিষ্যতের সাথে তাল মিলিয়ে ভারতের কৌশলগত চিন্তাভাবনা ও পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন হচ্ছে।
মোদি কেবলমাত্র আরআইসি সভাতেই উপস্থিত ছিলেন না, তিনি আরেকটি তিন জাতি গ্রুপিংয়ের সাথেও তথা জেআইএ (জাপান-যুক্তরাষ্ট্র-ইন্ডিয়া)-এর সাথেও ছিলেন। এটি হলো জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে ট্রাম্পের ইন্দো-প্যাসিফিক আঞ্চলিক গ্রুপিংয়ের অংশবিশেষ।
ত্রিপক্ষীয় জোট জেএআই সৃষ্টি করা হয়েছে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা ও চীনের প্রভাব সংযত রাখার জন্য।
ফলে জেএআই মূলত নিরাপত্তা ও চীনকেন্দ্রিক গ্রুপিং। আবার এটি অস্ট্রেলিয়াসহ চার জাতির ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্দো-প্যাসিফিক রিজিওয়নের (এফওআআইপি) অংশবিশেষ।
জেএআই ও আরআইসি পরস্পর বিরোধী গ্রুপ। কিন্তু ভারত উভয়টিতেই আছে। এতে বোঝা যাচ্ছে যে ভারতীয় কৌশলগত চিন্তাভাবনায় দোটানা বিরাজ করছে, পাশ্চাত্য না স্বৈরতান্ত্রিক শক্তি- কোন দিকে যাবে বুঝতে পারছে না।
তবে আঞ্চলিক নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশকারী দেশগুলোর মধ্যে ভারতেরই বেশি দরকষাকষির সুযোগ রয়েছে। আর এটাই বিশ্ব ভূ-রাজনীতিতে ভারতকে সুবিধাজনক অবস্থানে রেখেছে। সবাই ভারতকে কাছে টানার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, দুই গ্রুপ যখন একে অপরের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হবে, তখন ভারত কোন পক্ষে থাকবে। এতে ভারতের কৌশলগত ও পররাষ্ট্রনীতির ভাবনায় দুটি মানদণ্ড প্রকাশ করছে।
প্রথমত, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব বিস্তার, পাকিস্তান নীতি, ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি ঋণ ফাঁদ নীতি প্রয়োগ নিয়ে দিল্লি অস্বস্তিতে আছে।
চীনের এসব কার্যক্রম নিজের এলাকাতেই ভারতকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। এ কারণেই সে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জেএআইয়ের দিকে ঝুঁকেছে।
অন্যদিকে শুল্ক যুদ্ধ এবং রাশিয়া ও ইরানের সাথে ভারতের বাণিজ্য করার ওপর মার্কিন বিধিনিষেধের ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক স্থিতিশীল নয়।
ভারত তার নিজের স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, এমন কৌশলগত ভারসাম্য খুঁজে পেতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আবার আরআইসি ভারতকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করায় এই ভূরাজনৈতিক সুবিধাটি ভারত কাজে লাগাতে পারে, একে ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যের সাথে দরকষাকষি করতে পারে।
আর একটি স্বাধীন ফ্যাক্টর ও ওয়াইল্ড কার্ড হিসেবে ভারত আরআইসিকে বিরূপ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভালো অবস্থায় থাকতে পারে।
গণতান্ত্রিক ভারতের সিদ্ধান্ত হয়তো তার একনায়কতান্ত্রিক শক্তির প্রতি ঝুঁকে থাকার প্রমাণ নয়, তবে এতে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ভারত তার জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে চায়।
No comments