প্রবাসী শ্রমিকরা কোথায় থাকে, কী খায় জানে কি পরিবার! by মো. মুখলেছুর রহমান (মুকুল)
‘অনেক
বড় স্বপ্ন ছিল বিদেশ যাব, বিদেশে কতই না সুখ। কতই না টাকা। হুট করেই চলে
আসলাম মালয়েশিয়া। এখন বুঝি প্রবাস জীবন কত সুখের। সুখ নামের সোনার হরিণটা
কেমন। মায়ের সেই আদরমাখা ডাক নেই- বাবা খেতে আয় সেই সকালে খেয়েছিস, এখনও না
খেয়ে কীভাবে আছিস বলার কেউ নেই। এরই নাম হয়তোবা প্রবাস জীবন।’
হৃদয়বিদারক কথাগুলো বলছিলেন সদ্য মালয়েশিয়ায় যাওয়া কামরুল নামে এক রেমিট্যান্স যোদ্ধা।
পরবাসীর পরিবারকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় আপনার ছেলে; স্বামী; বা ভাই প্রবাসে কি করে? উত্তর আসবে, বিদেশে থাকে কিন্তু কি কাজ করে জানি না। কিংবা অত কিছু জানতেও চায় না অনেকেই। এ কথাটাই অপ্রিয় সত্য। পরিবারের সদস্যরা কিংবা আত্মীয়-স্বজন মনে করেন বিদেশ মানেই রোপন করা টাকার গাছ যা ঝাঁকি দিলেই কেবল টাকা আর টাকা।
প্রবাসে একা থাকা, নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা, খারাপ পরিবেশে কাজ করা ইত্যাদি কারণে হৃদরোগ বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বয়স ৩৫ হওয়ার আগেই অনেকের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিচ্ছে।
কোনো প্রবাসী যদি ঘরে টাকা কম দেয় পরিবারের সদস্যরা ধরে নেয় যে, তাদের ছেলে টাকা জমা করছে। আর যদি বিবাহিত হয় তাহলে তো কথাই নেই। সবাই এক বাক্যে বিশ্বাস করে ছেলে যা কামাই করছে সব শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে।
কিন্তু আসলে যে তার বেতন কত; কোথায় থাকে; কিভাবে থাকে; কি খাচ্ছে; কি কাজ করে; যা আয় করে তা হালাল না কি হারাম তা জানার কোনো প্রয়োজন মনে করে না।
শুধুমাত্র মাস শেষে টাকা পেলেই হয়। প্রবাসীরা যে কতটা অবহেলিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। খুব কম প্রবাসী আছে যারা পরিবারের সমর্থন পেয়ে থাকবে। গড়ে প্রতিদিন ৫৫-৬২ জন প্রবাসীর মরদেহ দেশে আসে। যাদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখানো হয় স্ট্রোক।
৪ বছর ৮ মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করেও প্রায় শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে এক প্রবাসী নারীকে। জানতে চায়লে তিনি বলেন, ‘ভোর চারটায় উঠে শুরু করতাম থালাবাসন ধোয়া। তারপর বিশাল বাড়ির সব মেঝে ধোয়া-মোছা শেষে শুরু হতো একে একে আটটি টয়লেট সাফ করার কাজ। একটু বিশ্রাম নেবেন সেই সুযোগ নেই’।
বলেন, ‘কাপড় শুকাতে দিয়েই যেতে হতো মালিকের মেয়ের বাড়িতে। সেখানেও রাজ্যের কাজ। মেয়ের বাড়ির কাজ শেষে মালিকের নতুন নির্দেশ- এবার যেতে হবে ভাইয়ের বাড়ির ছাগলের ঘর পরিষ্কারের চুক্তি। চুক্তির বাইরে এত অতিরিক্ত কাজের জন্য বাড়তি পারিশ্রমিক চাইলেও বিপদ। মালিক তখন রেগেমেগে বলত, ‘মেরে লাশ ফেলে দেব পাহাড়ে।’
কোনো সরকার কি ঘাম, রক্ত, এমনকি জীবন দিয়েও পরিবার ও দেশের সুন্দর আগামী নির্মাণে ভূমিকা রেখে যাওয়া এই প্রবাসী বাংলাদেশিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পর্যাপ্ত উদ্যোগ নিয়েছে?
যার জন্য দায়ী মানসিক চাপ, তাই, প্রবাসীদের পরিবারের প্রতি অনুরোধ রইল যে আপনার ঘরের প্রবাসী সন্তানকে মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করুন। প্রবাসীরা এভাবেই খায় তাদের পাঠানো টাকায় পরিবারের লোকেরা ডাইনিং টেবিলে বসে খায়।
ঘাম, রক্ত, এমনকি জীবন দিয়েও পরিবার ও দেশের ভাগ্য পরিবর্তনে ভূমিকা রাখেনছেন প্রবাসীরা। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় বাংলাদেশিদের বিদেশে পাড়ি জমানোর প্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে৷ এর পাশাপাশি প্রবাসে নির্যাতনও বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। প্রায় নিয়মিতই আসছে মৃত্যুর খবর। পরিবারে সুদিন ফেরানোর আশায় বিদেশে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরছেন অনেকে।
প্রবাস নামের এই জেলখানায় মৃত্যু হয়েছে অনেক স্বপ্নচারীর। সৌভাগ্য হয়নি নীড়ে ফিরে যাওয়ার। শেষ বিদায় সেটিই যখন দেশ ছেড়ে আসছে।৫০-৬০ বছরের ক্ষণস্থায়ী জীবনে ৩০ বছর প্রবাসে কাটিয়ে দেয়া মানুষের সংখ্যা কম হবে না।
এই রেমিট্যান্স যোদ্ধা বলেন, ‘প্রবাসে কেউ সাবলম্বী, কেউ অপরাধী, কেউবা আজও ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে পারেনি। এভাবেই চলছে জীবন; নিয়তির এ খেলা কখনই শেষ হওয়ার নয়। মহাকাল ধরে চলছে, চলবে। আমরা এর পথযাত্রী। স্বপ্ন দেখাটা তো দোষের কিছু না এজন্য দেখছি। অনেক রাত হয়ে গেছে একটু পর ঘুম থেকে উঠে কাজে যেতে হবে। এভাবেই চলছে প্রবাস জীবন।’
হৃদয়বিদারক কথাগুলো বলছিলেন সদ্য মালয়েশিয়ায় যাওয়া কামরুল নামে এক রেমিট্যান্স যোদ্ধা।
পরবাসীর পরিবারকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় আপনার ছেলে; স্বামী; বা ভাই প্রবাসে কি করে? উত্তর আসবে, বিদেশে থাকে কিন্তু কি কাজ করে জানি না। কিংবা অত কিছু জানতেও চায় না অনেকেই। এ কথাটাই অপ্রিয় সত্য। পরিবারের সদস্যরা কিংবা আত্মীয়-স্বজন মনে করেন বিদেশ মানেই রোপন করা টাকার গাছ যা ঝাঁকি দিলেই কেবল টাকা আর টাকা।
প্রবাসে একা থাকা, নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা, খারাপ পরিবেশে কাজ করা ইত্যাদি কারণে হৃদরোগ বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বয়স ৩৫ হওয়ার আগেই অনেকের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিচ্ছে।
কোনো প্রবাসী যদি ঘরে টাকা কম দেয় পরিবারের সদস্যরা ধরে নেয় যে, তাদের ছেলে টাকা জমা করছে। আর যদি বিবাহিত হয় তাহলে তো কথাই নেই। সবাই এক বাক্যে বিশ্বাস করে ছেলে যা কামাই করছে সব শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে।
কিন্তু আসলে যে তার বেতন কত; কোথায় থাকে; কিভাবে থাকে; কি খাচ্ছে; কি কাজ করে; যা আয় করে তা হালাল না কি হারাম তা জানার কোনো প্রয়োজন মনে করে না।
শুধুমাত্র মাস শেষে টাকা পেলেই হয়। প্রবাসীরা যে কতটা অবহেলিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। খুব কম প্রবাসী আছে যারা পরিবারের সমর্থন পেয়ে থাকবে। গড়ে প্রতিদিন ৫৫-৬২ জন প্রবাসীর মরদেহ দেশে আসে। যাদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখানো হয় স্ট্রোক।
৪ বছর ৮ মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করেও প্রায় শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে এক প্রবাসী নারীকে। জানতে চায়লে তিনি বলেন, ‘ভোর চারটায় উঠে শুরু করতাম থালাবাসন ধোয়া। তারপর বিশাল বাড়ির সব মেঝে ধোয়া-মোছা শেষে শুরু হতো একে একে আটটি টয়লেট সাফ করার কাজ। একটু বিশ্রাম নেবেন সেই সুযোগ নেই’।
বলেন, ‘কাপড় শুকাতে দিয়েই যেতে হতো মালিকের মেয়ের বাড়িতে। সেখানেও রাজ্যের কাজ। মেয়ের বাড়ির কাজ শেষে মালিকের নতুন নির্দেশ- এবার যেতে হবে ভাইয়ের বাড়ির ছাগলের ঘর পরিষ্কারের চুক্তি। চুক্তির বাইরে এত অতিরিক্ত কাজের জন্য বাড়তি পারিশ্রমিক চাইলেও বিপদ। মালিক তখন রেগেমেগে বলত, ‘মেরে লাশ ফেলে দেব পাহাড়ে।’
কোনো সরকার কি ঘাম, রক্ত, এমনকি জীবন দিয়েও পরিবার ও দেশের সুন্দর আগামী নির্মাণে ভূমিকা রেখে যাওয়া এই প্রবাসী বাংলাদেশিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পর্যাপ্ত উদ্যোগ নিয়েছে?
যার জন্য দায়ী মানসিক চাপ, তাই, প্রবাসীদের পরিবারের প্রতি অনুরোধ রইল যে আপনার ঘরের প্রবাসী সন্তানকে মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করুন। প্রবাসীরা এভাবেই খায় তাদের পাঠানো টাকায় পরিবারের লোকেরা ডাইনিং টেবিলে বসে খায়।
ঘাম, রক্ত, এমনকি জীবন দিয়েও পরিবার ও দেশের ভাগ্য পরিবর্তনে ভূমিকা রাখেনছেন প্রবাসীরা। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় বাংলাদেশিদের বিদেশে পাড়ি জমানোর প্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে৷ এর পাশাপাশি প্রবাসে নির্যাতনও বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। প্রায় নিয়মিতই আসছে মৃত্যুর খবর। পরিবারে সুদিন ফেরানোর আশায় বিদেশে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরছেন অনেকে।
প্রবাস নামের এই জেলখানায় মৃত্যু হয়েছে অনেক স্বপ্নচারীর। সৌভাগ্য হয়নি নীড়ে ফিরে যাওয়ার। শেষ বিদায় সেটিই যখন দেশ ছেড়ে আসছে।৫০-৬০ বছরের ক্ষণস্থায়ী জীবনে ৩০ বছর প্রবাসে কাটিয়ে দেয়া মানুষের সংখ্যা কম হবে না।
এই রেমিট্যান্স যোদ্ধা বলেন, ‘প্রবাসে কেউ সাবলম্বী, কেউ অপরাধী, কেউবা আজও ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে পারেনি। এভাবেই চলছে জীবন; নিয়তির এ খেলা কখনই শেষ হওয়ার নয়। মহাকাল ধরে চলছে, চলবে। আমরা এর পথযাত্রী। স্বপ্ন দেখাটা তো দোষের কিছু না এজন্য দেখছি। অনেক রাত হয়ে গেছে একটু পর ঘুম থেকে উঠে কাজে যেতে হবে। এভাবেই চলছে প্রবাস জীবন।’
No comments