পাহাড় জুড়ে আতঙ্ক by কাজী সোহাগ
দেশের
তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান ফের অশান্ত হয়ে উঠছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর সশস্ত্র হামলার পর পাহাড়জুড়ে দেখা
দিয়েছে আতঙ্ক। বিশেষ করে সাধারণ পাহাড়িরা রয়েছেন বিপাকে। এমনিতেই সারা বছর
তারা উপজাতি সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। এর মধ্যে যোগ হয়েছে
সশস্ত্র হামলা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি যে কোনো সময় তাদের
ওপরও হামলা হতে পারে এ আশংকা করছেন তিন পার্বত্য জেলার সাধারণ অধিবাসীরা।
এদিকে পরিস্থিতি বিবেচনায় সম্প্রতি পাহাড়ে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী
তাদের নজরদারি ও তৎপরতা বাড়িয়েছে। পাহাড়ে একচ্ছত্র আধিপত্য, চাঁদাবাজি ও
ভূমি দখলের লক্ষ্যে অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে পাহাড়কে অশান্ত করে তুলেছে
আঞ্চলিক চারটি সংগঠন।
ওই চার সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-প্রসিত), ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), জনসংহতি সমিতি (সন্তু লারমা বা মূল) ও জেএসএস (সংস্কার)। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করে আসছে তারাই আধিপত্য বিস্তার ও নিজের শক্ত অবস্থান জানান দিতে অস্ত্রের হুঙ্কার দিচ্ছে। তারা প্রতিনিয়তই ঘটাচ্ছে নৃশংস নানা ঘটনা। আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে এই আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করছে নানা ধরনের অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র। ২৬ শে আগষ্ট সকাল ১০টার দিকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বরাদম এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি দল অভিযান চালাতে গেলে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর গুলি চালায়। এ সময় দুপক্ষের ‘গোলাগুলিতে’ এক পর্যায়ে আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফের (প্রসিত) দলের তিন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। নিহতরা হলো বজেন্দ্র চাকমা (৪৫), তরুণ চাকমা (২৫) ও নবীন জ্যোতি চাকমা (৩২)। তারা দীঘিনালার কৃপাপুর এলাকার বাসিন্দা। ওইদিন অভিযানস্থল থেকে সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত একটি আমেরিকান এম-৪ অটোমেটিক কারবাইন (৪ রাউন্ড গুলিসহ) ও দুটি পিস্তল (৮ রাউন্ড গুলিসহ) উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, আমেরিকান এই ভারী অস্ত্র মূলত সমরাস্ত্র হিসেবে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে। অথচ এমন বিপুল পরিমাণ অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র ব্যবহার করছে পার্বত্য অঞ্চলের এই সংগঠনগুলো। এ অঞ্চলে কাজ করা গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মনে করেন, পার্বত্য অঞ্চলের চার সংগঠনের হাতে অন্তত সাড়ে ৪ হাজার অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। যার বেশিরভাগই বিদেশি এবং কেউ না কেউ সরবরাহ করছে। চলতি মাসেই মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে প্রায় তিন দফায় সেনা টহলের ওপর গুলি চালায় পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের গুলিতে ইতোমধ্যেই একজন সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। অবশ্য অভিযান চালাতে গিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে ১৬ আগস্ট সুমন চাকমা নামে এক ইউপিডিএফ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। এসব কারণে চরম আতঙ্ক, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সময় পার করছে পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় নিরীহ বাঙালি ও সাধারণ উপজাতিরা। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ১৯৯৮ সাল থেকে ইউপিডিএফ (প্রসিত) ও জেএসএসের (সন্তু লারমা) মধ্যে আধিপত্য ও চাঁদাবাজি নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলে এলেও ২০১৫ সালের শেষদিকে এসে নিজেদের মধ্যে ‘সহাবস্থানের’ অলিখিত একটি চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তি অনুসারে পার্বত্য অঞ্চলের নির্বাচন, এলাকার আধিপত্য, চাঁদাবাজির ভাগবাটোয়ারাসহ কিছু ক্ষেত্রে তারা দুটি দলই এক সঙ্গে কাজ করছে। বর্তমানে খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের (প্রসিত) তৎপরতা সবচেয়ে বেশি দেখছে নিরাপত্তা বাহিনী। অন্যদিকে রাঙামাটিতে বেশি তৎপর জেএসএস (মূল)। এই দুটি দলই আবার পাঁচ-ছয় মাস ধরে বান্দরবান এলাকায় প্রভাব সৃষ্টির জন্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কেননা এখানে মূলধারার রাজনীতি তথা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা বেশ মজবুত। এ কারণে সেখানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্যেও কাজ করছে ওই আঞ্চলিক পাহাড়ি সংগঠনগুলো। তারা জানান,পাহাড়ে অবস্থানরত সশস্ত্র সংগঠনগুলোর কাছে বর্তমানে এসএমজি, এলএমজি, এম-১ কারবাইন, গ্রেনেড, এম-১৬ রাইফেল, এম-৪, একে-৪৭ ও একে-২২ রাইফেলের মতো অস্ত্রসহ অন্তত ৪ হাজারের মতো অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। বিভিন্ন সময় অস্ত্রসহ আটক ইউপিডিএফ বা জেএসএসের সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে গোয়েন্দারা আরও জানতে পেরেছেন, পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর ওই চারটি সশস্ত্র আঞ্চলিক সংগঠনের চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার, শান্তিচুক্তি নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলায় অশান্তি-অস্থিরতা কাজ করছে। তাদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে নিরাপত্তাহীনতায়। গত বছরের ৩ মে আধিপত্যের কোন্দলে ‘ব্রাশফায়ার’ করে জেএসএস (সংস্কার) সমর্থিত নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমাকে হত্যা করে ইউপিডিফের (মূল) সন্ত্রাসীরা। পর দিন ৪ মে শক্তিমানের শেষকৃত্যে যোগ দিতে যাওয়ার সময় ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) সভাপতি তপন জ্যোতি চাকমা বর্মাসহ পাঁচজনকে ‘ব্রাশফায়ার’ করে হত্যা করে ইউপিডিএফের (মূল) সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। চলতি বছরও আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছে। পাহাড়ে এমন গোলাগুলি, সংঘর্ষ, হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণের ঘটনা এখন অহরহ ঘটছে। ১৯৯৭ সালে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির সঙ্গে (জেএসএস) শান্তিচুক্তির পরই প্রকাশ্যে বিরোধিতা করে ইউপিডিএফ। শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের ঘোষণা দিয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে ইউপিডিএফ সদস্যরা। মূলত তারপরই পাহাড়ে আবারও রক্তের খেলা শুরু হয়। এরপর ২০০৭ সালে জেএসএস থেকে বেরিয়ে রূপায়ণ দেওয়ান ও সুধাসিন্ধু খিসাদের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা), যা সংস্কার নামেও পরিচিত। এতদিন ইউপিডিএফ ও জেএসএস (সংস্কার) দুই সংগঠন অনেকটা এক হয়ে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএসের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিল। কিন্তু ২০১৭ সালে মূল ইউপিডিএফ ভেঙে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে পাহাড়ের চতুর্থ আঞ্চলিক দল বা সংগঠন গঠিত হলে এই চার সংগঠনের ক্ষমতার বিস্তার, চাঁদাবাজি ও আধিপত্যের লড়াইয়ে আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে পাহাড়। সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনের কাছে থাকা অস্ত্রের ৩ ভাগের একভাগেরও কম জমা দেয়। তাও আবার জরাজীর্ণ, নষ্ট বা পরিত্যক্ত অস্ত্রগুলো। পক্ষান্তরে অত্যাধুনিক অস্ত্রগুলো তারা তাদের কাছে রেখে দেয়। পাশাপাশি নতুন নতুন অত্যাধুনিক অস্ত্রে তারা আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ সম্প্রতি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বর্তমানে ওই স্থানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন। ভবিষ্যতেও এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ওই চার সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-প্রসিত), ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), জনসংহতি সমিতি (সন্তু লারমা বা মূল) ও জেএসএস (সংস্কার)। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করে আসছে তারাই আধিপত্য বিস্তার ও নিজের শক্ত অবস্থান জানান দিতে অস্ত্রের হুঙ্কার দিচ্ছে। তারা প্রতিনিয়তই ঘটাচ্ছে নৃশংস নানা ঘটনা। আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে এই আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করছে নানা ধরনের অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র। ২৬ শে আগষ্ট সকাল ১০টার দিকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বরাদম এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি দল অভিযান চালাতে গেলে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর গুলি চালায়। এ সময় দুপক্ষের ‘গোলাগুলিতে’ এক পর্যায়ে আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফের (প্রসিত) দলের তিন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। নিহতরা হলো বজেন্দ্র চাকমা (৪৫), তরুণ চাকমা (২৫) ও নবীন জ্যোতি চাকমা (৩২)। তারা দীঘিনালার কৃপাপুর এলাকার বাসিন্দা। ওইদিন অভিযানস্থল থেকে সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত একটি আমেরিকান এম-৪ অটোমেটিক কারবাইন (৪ রাউন্ড গুলিসহ) ও দুটি পিস্তল (৮ রাউন্ড গুলিসহ) উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, আমেরিকান এই ভারী অস্ত্র মূলত সমরাস্ত্র হিসেবে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে। অথচ এমন বিপুল পরিমাণ অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র ব্যবহার করছে পার্বত্য অঞ্চলের এই সংগঠনগুলো। এ অঞ্চলে কাজ করা গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মনে করেন, পার্বত্য অঞ্চলের চার সংগঠনের হাতে অন্তত সাড়ে ৪ হাজার অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। যার বেশিরভাগই বিদেশি এবং কেউ না কেউ সরবরাহ করছে। চলতি মাসেই মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে প্রায় তিন দফায় সেনা টহলের ওপর গুলি চালায় পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের গুলিতে ইতোমধ্যেই একজন সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। অবশ্য অভিযান চালাতে গিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে ১৬ আগস্ট সুমন চাকমা নামে এক ইউপিডিএফ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। এসব কারণে চরম আতঙ্ক, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সময় পার করছে পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় নিরীহ বাঙালি ও সাধারণ উপজাতিরা। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ১৯৯৮ সাল থেকে ইউপিডিএফ (প্রসিত) ও জেএসএসের (সন্তু লারমা) মধ্যে আধিপত্য ও চাঁদাবাজি নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলে এলেও ২০১৫ সালের শেষদিকে এসে নিজেদের মধ্যে ‘সহাবস্থানের’ অলিখিত একটি চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তি অনুসারে পার্বত্য অঞ্চলের নির্বাচন, এলাকার আধিপত্য, চাঁদাবাজির ভাগবাটোয়ারাসহ কিছু ক্ষেত্রে তারা দুটি দলই এক সঙ্গে কাজ করছে। বর্তমানে খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের (প্রসিত) তৎপরতা সবচেয়ে বেশি দেখছে নিরাপত্তা বাহিনী। অন্যদিকে রাঙামাটিতে বেশি তৎপর জেএসএস (মূল)। এই দুটি দলই আবার পাঁচ-ছয় মাস ধরে বান্দরবান এলাকায় প্রভাব সৃষ্টির জন্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কেননা এখানে মূলধারার রাজনীতি তথা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা বেশ মজবুত। এ কারণে সেখানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্যেও কাজ করছে ওই আঞ্চলিক পাহাড়ি সংগঠনগুলো। তারা জানান,পাহাড়ে অবস্থানরত সশস্ত্র সংগঠনগুলোর কাছে বর্তমানে এসএমজি, এলএমজি, এম-১ কারবাইন, গ্রেনেড, এম-১৬ রাইফেল, এম-৪, একে-৪৭ ও একে-২২ রাইফেলের মতো অস্ত্রসহ অন্তত ৪ হাজারের মতো অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। বিভিন্ন সময় অস্ত্রসহ আটক ইউপিডিএফ বা জেএসএসের সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে গোয়েন্দারা আরও জানতে পেরেছেন, পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর ওই চারটি সশস্ত্র আঞ্চলিক সংগঠনের চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার, শান্তিচুক্তি নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলায় অশান্তি-অস্থিরতা কাজ করছে। তাদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে নিরাপত্তাহীনতায়। গত বছরের ৩ মে আধিপত্যের কোন্দলে ‘ব্রাশফায়ার’ করে জেএসএস (সংস্কার) সমর্থিত নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমাকে হত্যা করে ইউপিডিফের (মূল) সন্ত্রাসীরা। পর দিন ৪ মে শক্তিমানের শেষকৃত্যে যোগ দিতে যাওয়ার সময় ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) সভাপতি তপন জ্যোতি চাকমা বর্মাসহ পাঁচজনকে ‘ব্রাশফায়ার’ করে হত্যা করে ইউপিডিএফের (মূল) সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। চলতি বছরও আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছে। পাহাড়ে এমন গোলাগুলি, সংঘর্ষ, হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণের ঘটনা এখন অহরহ ঘটছে। ১৯৯৭ সালে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির সঙ্গে (জেএসএস) শান্তিচুক্তির পরই প্রকাশ্যে বিরোধিতা করে ইউপিডিএফ। শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের ঘোষণা দিয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে ইউপিডিএফ সদস্যরা। মূলত তারপরই পাহাড়ে আবারও রক্তের খেলা শুরু হয়। এরপর ২০০৭ সালে জেএসএস থেকে বেরিয়ে রূপায়ণ দেওয়ান ও সুধাসিন্ধু খিসাদের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা), যা সংস্কার নামেও পরিচিত। এতদিন ইউপিডিএফ ও জেএসএস (সংস্কার) দুই সংগঠন অনেকটা এক হয়ে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএসের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিল। কিন্তু ২০১৭ সালে মূল ইউপিডিএফ ভেঙে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে পাহাড়ের চতুর্থ আঞ্চলিক দল বা সংগঠন গঠিত হলে এই চার সংগঠনের ক্ষমতার বিস্তার, চাঁদাবাজি ও আধিপত্যের লড়াইয়ে আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে পাহাড়। সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনের কাছে থাকা অস্ত্রের ৩ ভাগের একভাগেরও কম জমা দেয়। তাও আবার জরাজীর্ণ, নষ্ট বা পরিত্যক্ত অস্ত্রগুলো। পক্ষান্তরে অত্যাধুনিক অস্ত্রগুলো তারা তাদের কাছে রেখে দেয়। পাশাপাশি নতুন নতুন অত্যাধুনিক অস্ত্রে তারা আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ সম্প্রতি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বর্তমানে ওই স্থানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন। ভবিষ্যতেও এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
No comments