এখানেও তাদের আগুন লাগানোর প্রচেষ্টা -প্রধানমন্ত্রী
মিয়ানমারের অস্থিতিশীল রাখাইন রাজ্যকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করতে মার্কিন
কংগ্রেসম্যান ব্রাড শেরম্যানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ধরনের প্রস্তাব গর্হিত কাজ উল্লেখ করে তিনি
বলেন, তারা যেখানেই হাত দিয়েছে সেখানেই আগুন জ্বলছে, জঙ্গিবাদের সৃষ্টি
হয়েছে। এখানেও তাদের আগুন লাগানোর প্রচেষ্টা। এটা কখনো গ্রহণযোগ্য না।
গতকাল বিকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সাম্প্রতিক
চীন সফরের বিষয়ে দেশবাসীকে অবহিত করতে প্রধানমন্ত্রী এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
লিখিত বক্তব্যে চীন সফরের বিস্তারিত তুলে ধরার পাশাপাশি প্রশ্নোত্তর পর্বে
রোহিঙ্গা ইস্যু, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করতে মার্কিন
কংগ্রেসম্যানের প্রস্তাব নিয়ে খোলামেলা প্রতিক্রিয়া জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রশ্নোত্তর পর্বে একজন সাংবাদিক মার্কিন কংগ্রেসম্যানের প্রস্তাবের
বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যে
সীমানা, ৫৪ হাজার বর্গমাইল জায়গা আমরা তাতেই খুশি। অন্যের জায়গা আমাদের
সঙ্গে যুক্ত করা এটি আমরা সম্পূর্ণ অস্বীকার করি। এটি আমরা চাই না।
মিয়ানমার তার সার্বভৌমত্ব নিয়ে থাকবে। সেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে তারা রাখাইন
স্টেট জুড়ে দিতে চায় কেন? এই ধরনের কথা বলা অত্যন্ত গর্হিত কাজ, অন্যায়
কাজ বলে আমি মনে করি। হতে পারে তারা খুব বড় দেশ। সেই দেশের একজন
কংগ্রেসম্যান। কিন্তু তারা ভুলে গেছে তাদের অতীত। তাদের যখন গৃহযুদ্ধ লেগেই
থাকত। সেই অতীততো তাদের ভুলে যাওয়া উচিত না। সেই অতীত ভবিষ্যতেও আসবে না
সেটা তারা কি করে ভাবে। তিনি বলেন, রাখাইনে প্রতিনিয়ত সমস্যার সৃষ্টি
হচ্ছে। আমরা জেনে-বুঝে ওই ধরনের একটা গোলমেলে জিনিস আমার দেশের সঙ্গে যুক্ত
করবো কেন? এটি আমরা কখনো করবো না। তছাড়া আমাদের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার।
মিয়ানমারে ঘটনা ঘটছে। সেখানকার মানুষ যখন আশ্রয় চেয়েছে মানবিক কারণে আমরা
তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছি। আশ্রয় দেয়ার অর্থ এটা না যে একেবারে রাষ্ট্রের একটা
অংশ নিয়ে আসব। এই মানসিকতা আমাদের নেই। এটা আমরা চাই না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটা দেশ তার সার্বভৌমত্ব নিয়ে থাকবে সেটাই আমি চাই। এটাও চাই- একথা না বলে বরং মিয়ানমার যাতে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় এই কংগ্রেসম্যান যেন সেটাই করেন। সেটাই হবে মানবিক দিক। এভাবে একটা দেশের ভেতরে গোলমাল পাকানো কোনোমতেই ঠিক না। যেখানে তারা হাত দিয়েছে সেখানেইতো আগুন জ্বলছে। সেখানে শান্তি আসেনি বরং জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হয়েছে। অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের এই অঞ্চলটা আমরা একটু শান্তিপূর্ণভাবে আগানোর চেষ্টা করছি। এখানেও তাদের আগুন লাগানোর প্রচেষ্টা। এটা কখনো গ্রহণযোগ্য না।
তিনি বলেন, চীন সফরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আমরা জোরালোভাবে তুলে ধরেছি। চীনের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়েছেন এবং এই সমস্যা সমাধানে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
উন্নয়ন চাইলে গ্যাসের দাম মেনে নিতে হবে: গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে হরতাল এবং ১৪ দলের কিছু নেতার সমালোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ইস্যুতে বাম আর ডান (বিএনপি) মিলে গেছে। এক সুরে কথা বলছে, এটা তো খুব ভালো কথা। তবে আমার প্রশ্ন, আমাদের কি গ্যাসের প্রয়োজন আছে কি না? দেশের যদি আমরা উন্নয়ন করতে চাই, তবে এনার্জি একটা বিষয়। এলএনজির জন্য খরচ যথেষ্ট বেশি পড়ে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, দাম বাড়ানোর পরও বছরে সরকারকে ১০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। তাহলে আমি এক কাজ করি, যে দামে কিনবো সে দামে বিক্রি করি? বহুদিন পর হরতাল পেয়েছেন, এটা পরিবেশের জন্য ভালো। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে আন্দোলন করছে আবার বলেছে, ভারতে দাম কমিয়েছে। এ সময় ভারত ও বাংলাদেশে গ্যাসের দামের পার্থক্য তুলে ধরে তিনি বলেন, এলএনজি আমদানিতে খরচ বাড়ায় ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, ২০০৪-০৫ সালে মিয়ানমারের গ্যাস নিতে চীন ও জাপান বিনিয়োগ করেছিল। ভারত সেই গ্যাস বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পাইপ লাইনে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু খালেদা জিয়া সেটা হতে দেয়নি। আমি হলে ভারতে গ্যাস নিতে তো দিতাম, আমার ভাগটাও রেখে দিতাম। সেই গ্যাসটা যদি পেতাম তাহলে আজ এলএনজি আমদানি করতে হতো না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, আমাদের গ্যাসের প্রয়োজন আছে কি না? ২০০৮ সাল পর্যন্ত জিডিপি কতটুকু বেড়েছে? গ্যাস আমাদের আমদানি করতে হচ্ছে। এলএনজি আমদানিতে খরচ বেশি পড়ে। যেটুকু বাড়ানো হয়েছে, সেটা যদি না বাড়ানো হয় তাহলে এলএনজি আমদানি কমে যাবে। বিদেশে সব দেশে এটা করা হয়, তারা মেনে নেয়। তিনি বলেন, ২০০১ সালে আমাদের কাছে প্রস্তাব ছিল গ্যাস বিক্রি করার। আমি রাজি হইনি। খালেদা জিয়া মুচলেকা দিয়েছিল গ্যাস বিক্রি করবে। যে কারণে ২০০১ সালে ভোট বেশি পেয়েও আমি ক্ষমতায় আসতে পারিনি। আমাকে জানতে হবে গ্যাসের মজুদ কত, বিক্রি করতে পারব কি না? প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, প্রতি ঘনমিটার এলএমজি আমদানি খরচ হয় ৬১ টাকা ১০ পয়সা। ভারতে গৃহস্থালির জন্য স্থানভেদে গ্যাসের দাম ৩০-৩৭ টাকা প্রতি ঘনমিটার। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ দাম মাত্র ১২ দশমিক ৬০ টাকা। শিল্পে আমাদের গ্যাসের দাম ১০ টাকা ৭০ পয়সা, সেখানে ভারতে এটির দাম ৪০ থেকে ৪২ টাকা। গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, যারা আন্দোলনের সময় বলছে ভারত কমিয়েছে, বাস্তবে ভারতে বছরে দু’বার গ্যাসের দাম বাড়ায়, এটাই তাদের নীতি। পয়লা এপ্রিল এবং অক্টোবরে গিয়ে তারা গ্যাসের দাম এ্যাডজাস্ট করে। অর্থাৎ মূল্যটা বাড়ায়। তিনি বলেন, ৬১ টাকা দিয়ে এলএনজি নিয়ে এসে আমরা সেটা বিক্রি করছি মাত্র ৯ টাকায়। তারপরও আন্দোলন! একটা মজার ব্যাপার আছে, বাম আর ডান মিলে গেছে। আমরা জিডিপি ডাবল ডিজিটে নিয়ে যাব। আমাদের গ্যাস লাগবে। তিনি বলেন, গ্যাস খাতে ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে বাড়ানোর পরেও ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আন্দোলন যখন করছে তখন এক কাজ করি। যে দামে গ্যাস কিনছি সেই দামে বিক্রি করি। ৯ টাকার গ্যাস ৬১ টাকা নিই। তাহলে আর ভতুর্কি দিতে হবে না।
চীন মিয়ানমারের সঙ্গে সবসময় আছে: রোহিঙ্গা সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (চীন) বলেছেন, বিষয়টা তারা বিবেচনা করবেন, দেখবেন। এটা কি সুখবর মনে হচ্ছে না? না দুঃখের খবর মনে হচ্ছে? এটা ঠিক যে চীন মিয়ানমারের সঙ্গে সব সময় আছে। এই যে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আছে, এটা যে বাংলাদেশের জন্য বিরাট সমস্যা- এই কথাটা তো তারা নিজেরাও উপলব্ধি করতে পারছে। সেই জন্যেই চীনও মনে করছে এই বিষয়টার দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত। এই জন্য তারা যতটুকু করার প্রয়োজন ততটুকু করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারকে সম্মত করতে চেষ্টা করবেন বলে দেশটির রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। তিনি উল্লেখ করেন চীন তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দুইবার মিয়ানমারে পাঠিয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনে তারা আবারও মন্ত্রীকে মিয়ানমারে পাঠাবে। তিনি বলেন, আমি উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করি। রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণে এই শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হাতে পারে বলে আমি উল্লেখ করি।
তিস্তার পানি প্রসঙ্গ: এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিস্তার পানি দেননি বলেই ইলিশ পাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। আমরা বলেছিলাম তিস্তায় পানি নেই। তবে ইলিশ আসবে কীভাবে? মমতা ব্যানার্জির ‘জয় বাংলা’ স্লোগান প্রদান প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শেখ হাসিনা বলেন, ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছে। শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে। একসঙ্গে যুদ্ধ করে তাদেরও অনেক সৈন্য প্রাণ দিয়েছেন। আর জয় বাংলা স্লোগান এসেছে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা থেকে। কেউ যদি জয় বাংলা স্লোগান দেয়, তার মুখ থেকে তো কেড়ে নিতে পারি না। মমতা ব্যানার্জি এ স্লোগান বলেছেন, ভালো লেগেছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা দেশের সমস্ত নদী খনন করবো। বর্ষায় পানি সংগ্রহ করে রাখবো। কারোর কাছে আমাদের পানি চাইতে হবে না। আমরা আত্মনির্ভরশীল হতে চাই, পরনির্ভরশীল নয়। তিনি বলেন, গত ১০ বছর আগে দেশের অবস্থা কি ছিল, এখন আমরা কী অবস্থায় দেশকে নিয়ে এসেছি তা একটু বিচার করুন। দেশের এত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে কারণ আওয়ামী লীগ এ দেশকে স্বাধীন করেছে। সেই দেশই প্রকৃত উন্নত করতে পারে যারা স্বাধীনতার সংগ্রাম করেছে, মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছে। উড়ে এসে জুড়ে বসা কোনো দল দেশের কোনো উন্নয়ন করতে পারে না, অতীতে তা বার বার প্রমাণ হয়েছে।
সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়: বিশ্বের বড় বড় পরাশক্তির মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পররাষ্ট্র নীতিই হচ্ছে সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারোর সঙ্গে বৈরিতা নয়। কার সঙ্গে কার কী সমস্যা, কার সঙ্গে কার কী যুদ্ধ- সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। এক সময় চীন আমেরিকার বড় বন্ধু ছিল। এখন আবার তাদের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ। আমরা কারো সঙ্গে ঝগড়া করতে যাই না। আমরা কারোর ঘরে আগুন লাগলে আলু পোড়া দিয়ে খাব, এটা চিন্তা করি না। বরং কোনো দেশের সঙ্গে আমরা কতটুকু অর্থনৈতিক সহযোগিতা পাব, সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে পারবো- সে দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা চলি।
বৈদেশিক ঋণ গ্রহণেও আমরা সতর্ক: অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা খুব সতর্ক ও সচেতন। আমাদের বাজেটে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ তত বেশি নয়। জিডিপির মাত্র ১৪ ভাগ বৈদেশিক ঋণ। আমরা ঋণ নিয়ে আবার সময়মতো পরিশোধ করি। বাজেটের ৯৯ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে আমরা বাস্তবায়ন করছি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে। সকল ক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থানে থেকে কাজ করছি বলেই আমরা দেশকে সবদিক থেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি। নিজের দেশের ভালো কাজগুলো বিশ্ববাসীর সামনে ভালোভাবে তুলে ধরার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের এবারের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ ভাগে উন্নীত হয়েছে। যা বিশ্বের মধ্যে অনেকটাই রেকর্ড। নিজ দেশের এমন ভালো কাজগুলো ভালোভাবে তুলে ধরা উচিত। বাস্তবে দেশের কিছু মানুষ আছে তাদের কোনো কিছুই ভালো লাগে না, তাদের চোখে কোনো কিছুই ধরা পড়ে না।
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা প্রসঙ্গ: এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন নিয়মিত পড়াশোনা করলে ২৩ থেকে ২৫ বছরের মধ্যেই সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিতে পারে। এ ছাড়া তিনটি বিসিএসে দেখা গেছে, যারা বেশি বয়সী, তাদের পাসের হার খুবই কম। তিনি বলেন, এখন জন্মনিবন্ধন হয়। নিয়মিত পড়াশোনা করলে ১৬ বছরে এসএসসি পাস করে। এরপর ২ বছরে এইচএসসি। এরপর ৪ বছরে অনার্স ও ১ বছরে মাস্টার্স করলে ২৩ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিতে পারে। তিনটি বিসিএসের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৩৫তম বিসিএসে ২৩ থেকে ২৫ বছরের প্রার্থীদের মধ্যে ৪০ দশমিক ৭ শতাংশ, ২৫ থেকে ২৭ বছরের প্রার্থীদের মধ্যে ৩০ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং ২৭ থেকে ২৯ বছরের প্রার্থীদের মধ্যে ১৩ দশমিক ১৭ শতাংশ পাস করেছে। এ ছাড়া ২৯ বছরের বেশি বয়সের প্রার্থীদের পাসের হার মাত্র ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ৩৬তম বিসিএসে ২৩ থেকে ২৫ বছরের প্রার্থীদের ৩৭.৪৫ শতাংশ, ২৫ থেকে ২৭ বছরের প্রার্থীদের মধ্যে ৩৪.৭৮ শতাংশ, ২৭ থেকে ২৯ বয়সের ১৯.৮৯ শতাংশ প্রার্থী পাস করেছেন। এ ছাড়া ২৯ বছরের বেশি বয়সী প্রার্থীদের পাসের হার ৩.২৩ শতাংশ। এ ছাড়া ৩৭তম বিসিএসে ২৩ থেকে ২৫ বছরের ৪৩.৬৫ শতাংশ, ২৫ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে ২৩.৩৫ শতাংশ, ২৭ থেকে ২৯ বয়সের ৭.২০ শতাংশ প্রার্থী পাস করেছেন। এই পরীক্ষায় ২৯ বছরের বেশি বয়সী প্রার্থীদের পাসের হার দশমিক ৬১ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী এ সময় প্রশ্ন রেখে বলেন, এখন আপনারাই বলেন, চাকরির বয়স বাড়ালে কি হবে?’ চাকরি প্রার্থীদের যদি ৩৫ বছর বয়সে চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়, ততদিনে তাদের ঘর-সংসার, বউ-বাচ্চা হবে। এই বয়সে এসব সামলে চাকরি পাওয়া কঠিন। এ ছাড়া যদি কোনো প্রার্থী ৩৫ বছরে চাকরিতে প্রবেশ করে তাহলে প্রশিক্ষণের পর চাকরি শুরু করতে করতে তার বয়স হবে ৩৭। এই বয়সে চাকরিতে প্রবেশ করলে তার চাকরির বয়স ২৫ বছর হবে না। এটি না হলে তিনি চাকরিতে পূর্ণ পেনশনও পাবেন না।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরমেন্সে খুশি প্রধানমন্ত্রী: বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পারফরমেন্স প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যথেষ্ট উন্নতি করেছে। বিশ্বকাপ পাওয়া একেকটা নামিদামি দলের সঙ্গে খেলা সেটা কিন্তু কম কথা নয়। কিন্তু সেখানে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স অত্যন্ত চমৎকার ছিল। আমরা যে খেলতে পেরেছি বা এতটা যেতে পেরেছি এটা অনেক বড় কথা। আমাদের যারা খেলোয়াড় যেমন সাকিব আল হাসান সে তো বিশ্বে একটা স্থান করে নিয়েছে। মোস্তাফিজ একটা স্থান করে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলা এমন একটা জিনিস অনেক সময় ভাগ্যও কিন্তু লাগে। সবসময় যে একই রকম হবে তা নয়। খেলায় সাহসী মনোভাব নিয়ে মোকাবিলা করতে পারা- আমি এটা প্রশংসা করি। এতগুলো দল খেললো তার মধ্যে মাত্র চারটি দল সেমিফাইনালে উঠেছে। তার মানে কি বাকিরা সবাই খারাপ খেলেছে? একেকটা জাঁদরেল জাঁদরেল দল, দীর্ঘদিন ধরে যারা খেলে খেলে অভ্যস্ত তাদের সঙ্গে মোকাবিলা করে খেলায় আমাদের ছেলেদের কনফিডেন্সের কোনো অভাব দেখিনি। তিনি বলেন, আমি নিজে খেলা দেখেছি। আমাদের ছেলেদের ধন্যবাদ জানাবো, তারা যথেষ্ট সাহসের পরিচয় দিয়েছে। তাদের ভেতর একটা আলাদা আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। ধীরে ধীরে আরো উন্নতি হবে। তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন খেলাধুলায় আসে কারা, প্লেয়ার পাচ্ছেন কতজন? ছোটবেলা থেকে ছেলেরা যাতে খেলায় অংশ নিয়ে অভ্যস্ত হয় সে পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। ছোটবেলা থেকে প্র্যাকটিস করে তাদের তৈরি করেছি। এটা আস্তে আস্তে করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আমার ছেলেদের কখনও নিরুৎসাহিত করি না। আমি বলি, তোমরা ভালো খেলেছো। ৩৮১ রানের টার্গেটে ৩৩৩ করেছে। এটাকে খারাপ বলবেন কি? বলবো না। আমাদের ছেলেদের কেউ খারাপ বলতে পারবে না। আমি নিজে খেলা দেখেছি, যেখানে আমাদের ছেলেরা যথেষ্ট ভালো খেলেছে। খেলোয়াড়দের কনফিডেন্স, তাদের পারফরম্যান্স বাড়াতে আমরা কাজ করছি।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী সারা দেশে বিশাল আকারে পালন করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালনে সরকারিভাবে কমিটি গঠন করা হয়েছে, দলীয়ভাবেও পৃথক পৃথক কমিটি করা হয়েছে। ২০২০-২০২১ বর্ষকে আমরা মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছি। রজতজয়ন্তী যেভাবে পালন হয়েছিল, এই বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার জন্মবার্ষিকী তার চেয়ে আরো ব্যাপক ও বিশালভাবে আমরা পালন করবো। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটা দেশ তার সার্বভৌমত্ব নিয়ে থাকবে সেটাই আমি চাই। এটাও চাই- একথা না বলে বরং মিয়ানমার যাতে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় এই কংগ্রেসম্যান যেন সেটাই করেন। সেটাই হবে মানবিক দিক। এভাবে একটা দেশের ভেতরে গোলমাল পাকানো কোনোমতেই ঠিক না। যেখানে তারা হাত দিয়েছে সেখানেইতো আগুন জ্বলছে। সেখানে শান্তি আসেনি বরং জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হয়েছে। অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের এই অঞ্চলটা আমরা একটু শান্তিপূর্ণভাবে আগানোর চেষ্টা করছি। এখানেও তাদের আগুন লাগানোর প্রচেষ্টা। এটা কখনো গ্রহণযোগ্য না।
তিনি বলেন, চীন সফরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আমরা জোরালোভাবে তুলে ধরেছি। চীনের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়েছেন এবং এই সমস্যা সমাধানে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
উন্নয়ন চাইলে গ্যাসের দাম মেনে নিতে হবে: গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে হরতাল এবং ১৪ দলের কিছু নেতার সমালোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ইস্যুতে বাম আর ডান (বিএনপি) মিলে গেছে। এক সুরে কথা বলছে, এটা তো খুব ভালো কথা। তবে আমার প্রশ্ন, আমাদের কি গ্যাসের প্রয়োজন আছে কি না? দেশের যদি আমরা উন্নয়ন করতে চাই, তবে এনার্জি একটা বিষয়। এলএনজির জন্য খরচ যথেষ্ট বেশি পড়ে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, দাম বাড়ানোর পরও বছরে সরকারকে ১০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। তাহলে আমি এক কাজ করি, যে দামে কিনবো সে দামে বিক্রি করি? বহুদিন পর হরতাল পেয়েছেন, এটা পরিবেশের জন্য ভালো। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে আন্দোলন করছে আবার বলেছে, ভারতে দাম কমিয়েছে। এ সময় ভারত ও বাংলাদেশে গ্যাসের দামের পার্থক্য তুলে ধরে তিনি বলেন, এলএনজি আমদানিতে খরচ বাড়ায় ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, ২০০৪-০৫ সালে মিয়ানমারের গ্যাস নিতে চীন ও জাপান বিনিয়োগ করেছিল। ভারত সেই গ্যাস বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পাইপ লাইনে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু খালেদা জিয়া সেটা হতে দেয়নি। আমি হলে ভারতে গ্যাস নিতে তো দিতাম, আমার ভাগটাও রেখে দিতাম। সেই গ্যাসটা যদি পেতাম তাহলে আজ এলএনজি আমদানি করতে হতো না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, আমাদের গ্যাসের প্রয়োজন আছে কি না? ২০০৮ সাল পর্যন্ত জিডিপি কতটুকু বেড়েছে? গ্যাস আমাদের আমদানি করতে হচ্ছে। এলএনজি আমদানিতে খরচ বেশি পড়ে। যেটুকু বাড়ানো হয়েছে, সেটা যদি না বাড়ানো হয় তাহলে এলএনজি আমদানি কমে যাবে। বিদেশে সব দেশে এটা করা হয়, তারা মেনে নেয়। তিনি বলেন, ২০০১ সালে আমাদের কাছে প্রস্তাব ছিল গ্যাস বিক্রি করার। আমি রাজি হইনি। খালেদা জিয়া মুচলেকা দিয়েছিল গ্যাস বিক্রি করবে। যে কারণে ২০০১ সালে ভোট বেশি পেয়েও আমি ক্ষমতায় আসতে পারিনি। আমাকে জানতে হবে গ্যাসের মজুদ কত, বিক্রি করতে পারব কি না? প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, প্রতি ঘনমিটার এলএমজি আমদানি খরচ হয় ৬১ টাকা ১০ পয়সা। ভারতে গৃহস্থালির জন্য স্থানভেদে গ্যাসের দাম ৩০-৩৭ টাকা প্রতি ঘনমিটার। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ দাম মাত্র ১২ দশমিক ৬০ টাকা। শিল্পে আমাদের গ্যাসের দাম ১০ টাকা ৭০ পয়সা, সেখানে ভারতে এটির দাম ৪০ থেকে ৪২ টাকা। গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, যারা আন্দোলনের সময় বলছে ভারত কমিয়েছে, বাস্তবে ভারতে বছরে দু’বার গ্যাসের দাম বাড়ায়, এটাই তাদের নীতি। পয়লা এপ্রিল এবং অক্টোবরে গিয়ে তারা গ্যাসের দাম এ্যাডজাস্ট করে। অর্থাৎ মূল্যটা বাড়ায়। তিনি বলেন, ৬১ টাকা দিয়ে এলএনজি নিয়ে এসে আমরা সেটা বিক্রি করছি মাত্র ৯ টাকায়। তারপরও আন্দোলন! একটা মজার ব্যাপার আছে, বাম আর ডান মিলে গেছে। আমরা জিডিপি ডাবল ডিজিটে নিয়ে যাব। আমাদের গ্যাস লাগবে। তিনি বলেন, গ্যাস খাতে ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে বাড়ানোর পরেও ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আন্দোলন যখন করছে তখন এক কাজ করি। যে দামে গ্যাস কিনছি সেই দামে বিক্রি করি। ৯ টাকার গ্যাস ৬১ টাকা নিই। তাহলে আর ভতুর্কি দিতে হবে না।
চীন মিয়ানমারের সঙ্গে সবসময় আছে: রোহিঙ্গা সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (চীন) বলেছেন, বিষয়টা তারা বিবেচনা করবেন, দেখবেন। এটা কি সুখবর মনে হচ্ছে না? না দুঃখের খবর মনে হচ্ছে? এটা ঠিক যে চীন মিয়ানমারের সঙ্গে সব সময় আছে। এই যে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আছে, এটা যে বাংলাদেশের জন্য বিরাট সমস্যা- এই কথাটা তো তারা নিজেরাও উপলব্ধি করতে পারছে। সেই জন্যেই চীনও মনে করছে এই বিষয়টার দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত। এই জন্য তারা যতটুকু করার প্রয়োজন ততটুকু করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারকে সম্মত করতে চেষ্টা করবেন বলে দেশটির রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। তিনি উল্লেখ করেন চীন তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দুইবার মিয়ানমারে পাঠিয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনে তারা আবারও মন্ত্রীকে মিয়ানমারে পাঠাবে। তিনি বলেন, আমি উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করি। রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণে এই শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হাতে পারে বলে আমি উল্লেখ করি।
তিস্তার পানি প্রসঙ্গ: এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিস্তার পানি দেননি বলেই ইলিশ পাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। আমরা বলেছিলাম তিস্তায় পানি নেই। তবে ইলিশ আসবে কীভাবে? মমতা ব্যানার্জির ‘জয় বাংলা’ স্লোগান প্রদান প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শেখ হাসিনা বলেন, ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছে। শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে। একসঙ্গে যুদ্ধ করে তাদেরও অনেক সৈন্য প্রাণ দিয়েছেন। আর জয় বাংলা স্লোগান এসেছে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা থেকে। কেউ যদি জয় বাংলা স্লোগান দেয়, তার মুখ থেকে তো কেড়ে নিতে পারি না। মমতা ব্যানার্জি এ স্লোগান বলেছেন, ভালো লেগেছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা দেশের সমস্ত নদী খনন করবো। বর্ষায় পানি সংগ্রহ করে রাখবো। কারোর কাছে আমাদের পানি চাইতে হবে না। আমরা আত্মনির্ভরশীল হতে চাই, পরনির্ভরশীল নয়। তিনি বলেন, গত ১০ বছর আগে দেশের অবস্থা কি ছিল, এখন আমরা কী অবস্থায় দেশকে নিয়ে এসেছি তা একটু বিচার করুন। দেশের এত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে কারণ আওয়ামী লীগ এ দেশকে স্বাধীন করেছে। সেই দেশই প্রকৃত উন্নত করতে পারে যারা স্বাধীনতার সংগ্রাম করেছে, মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছে। উড়ে এসে জুড়ে বসা কোনো দল দেশের কোনো উন্নয়ন করতে পারে না, অতীতে তা বার বার প্রমাণ হয়েছে।
সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়: বিশ্বের বড় বড় পরাশক্তির মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পররাষ্ট্র নীতিই হচ্ছে সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারোর সঙ্গে বৈরিতা নয়। কার সঙ্গে কার কী সমস্যা, কার সঙ্গে কার কী যুদ্ধ- সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। এক সময় চীন আমেরিকার বড় বন্ধু ছিল। এখন আবার তাদের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ। আমরা কারো সঙ্গে ঝগড়া করতে যাই না। আমরা কারোর ঘরে আগুন লাগলে আলু পোড়া দিয়ে খাব, এটা চিন্তা করি না। বরং কোনো দেশের সঙ্গে আমরা কতটুকু অর্থনৈতিক সহযোগিতা পাব, সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে পারবো- সে দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা চলি।
বৈদেশিক ঋণ গ্রহণেও আমরা সতর্ক: অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা খুব সতর্ক ও সচেতন। আমাদের বাজেটে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ তত বেশি নয়। জিডিপির মাত্র ১৪ ভাগ বৈদেশিক ঋণ। আমরা ঋণ নিয়ে আবার সময়মতো পরিশোধ করি। বাজেটের ৯৯ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে আমরা বাস্তবায়ন করছি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে। সকল ক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থানে থেকে কাজ করছি বলেই আমরা দেশকে সবদিক থেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি। নিজের দেশের ভালো কাজগুলো বিশ্ববাসীর সামনে ভালোভাবে তুলে ধরার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের এবারের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ ভাগে উন্নীত হয়েছে। যা বিশ্বের মধ্যে অনেকটাই রেকর্ড। নিজ দেশের এমন ভালো কাজগুলো ভালোভাবে তুলে ধরা উচিত। বাস্তবে দেশের কিছু মানুষ আছে তাদের কোনো কিছুই ভালো লাগে না, তাদের চোখে কোনো কিছুই ধরা পড়ে না।
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা প্রসঙ্গ: এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন নিয়মিত পড়াশোনা করলে ২৩ থেকে ২৫ বছরের মধ্যেই সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিতে পারে। এ ছাড়া তিনটি বিসিএসে দেখা গেছে, যারা বেশি বয়সী, তাদের পাসের হার খুবই কম। তিনি বলেন, এখন জন্মনিবন্ধন হয়। নিয়মিত পড়াশোনা করলে ১৬ বছরে এসএসসি পাস করে। এরপর ২ বছরে এইচএসসি। এরপর ৪ বছরে অনার্স ও ১ বছরে মাস্টার্স করলে ২৩ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিতে পারে। তিনটি বিসিএসের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৩৫তম বিসিএসে ২৩ থেকে ২৫ বছরের প্রার্থীদের মধ্যে ৪০ দশমিক ৭ শতাংশ, ২৫ থেকে ২৭ বছরের প্রার্থীদের মধ্যে ৩০ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং ২৭ থেকে ২৯ বছরের প্রার্থীদের মধ্যে ১৩ দশমিক ১৭ শতাংশ পাস করেছে। এ ছাড়া ২৯ বছরের বেশি বয়সের প্রার্থীদের পাসের হার মাত্র ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ৩৬তম বিসিএসে ২৩ থেকে ২৫ বছরের প্রার্থীদের ৩৭.৪৫ শতাংশ, ২৫ থেকে ২৭ বছরের প্রার্থীদের মধ্যে ৩৪.৭৮ শতাংশ, ২৭ থেকে ২৯ বয়সের ১৯.৮৯ শতাংশ প্রার্থী পাস করেছেন। এ ছাড়া ২৯ বছরের বেশি বয়সী প্রার্থীদের পাসের হার ৩.২৩ শতাংশ। এ ছাড়া ৩৭তম বিসিএসে ২৩ থেকে ২৫ বছরের ৪৩.৬৫ শতাংশ, ২৫ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে ২৩.৩৫ শতাংশ, ২৭ থেকে ২৯ বয়সের ৭.২০ শতাংশ প্রার্থী পাস করেছেন। এই পরীক্ষায় ২৯ বছরের বেশি বয়সী প্রার্থীদের পাসের হার দশমিক ৬১ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী এ সময় প্রশ্ন রেখে বলেন, এখন আপনারাই বলেন, চাকরির বয়স বাড়ালে কি হবে?’ চাকরি প্রার্থীদের যদি ৩৫ বছর বয়সে চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়, ততদিনে তাদের ঘর-সংসার, বউ-বাচ্চা হবে। এই বয়সে এসব সামলে চাকরি পাওয়া কঠিন। এ ছাড়া যদি কোনো প্রার্থী ৩৫ বছরে চাকরিতে প্রবেশ করে তাহলে প্রশিক্ষণের পর চাকরি শুরু করতে করতে তার বয়স হবে ৩৭। এই বয়সে চাকরিতে প্রবেশ করলে তার চাকরির বয়স ২৫ বছর হবে না। এটি না হলে তিনি চাকরিতে পূর্ণ পেনশনও পাবেন না।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরমেন্সে খুশি প্রধানমন্ত্রী: বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পারফরমেন্স প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যথেষ্ট উন্নতি করেছে। বিশ্বকাপ পাওয়া একেকটা নামিদামি দলের সঙ্গে খেলা সেটা কিন্তু কম কথা নয়। কিন্তু সেখানে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স অত্যন্ত চমৎকার ছিল। আমরা যে খেলতে পেরেছি বা এতটা যেতে পেরেছি এটা অনেক বড় কথা। আমাদের যারা খেলোয়াড় যেমন সাকিব আল হাসান সে তো বিশ্বে একটা স্থান করে নিয়েছে। মোস্তাফিজ একটা স্থান করে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলা এমন একটা জিনিস অনেক সময় ভাগ্যও কিন্তু লাগে। সবসময় যে একই রকম হবে তা নয়। খেলায় সাহসী মনোভাব নিয়ে মোকাবিলা করতে পারা- আমি এটা প্রশংসা করি। এতগুলো দল খেললো তার মধ্যে মাত্র চারটি দল সেমিফাইনালে উঠেছে। তার মানে কি বাকিরা সবাই খারাপ খেলেছে? একেকটা জাঁদরেল জাঁদরেল দল, দীর্ঘদিন ধরে যারা খেলে খেলে অভ্যস্ত তাদের সঙ্গে মোকাবিলা করে খেলায় আমাদের ছেলেদের কনফিডেন্সের কোনো অভাব দেখিনি। তিনি বলেন, আমি নিজে খেলা দেখেছি। আমাদের ছেলেদের ধন্যবাদ জানাবো, তারা যথেষ্ট সাহসের পরিচয় দিয়েছে। তাদের ভেতর একটা আলাদা আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। ধীরে ধীরে আরো উন্নতি হবে। তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন খেলাধুলায় আসে কারা, প্লেয়ার পাচ্ছেন কতজন? ছোটবেলা থেকে ছেলেরা যাতে খেলায় অংশ নিয়ে অভ্যস্ত হয় সে পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। ছোটবেলা থেকে প্র্যাকটিস করে তাদের তৈরি করেছি। এটা আস্তে আস্তে করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আমার ছেলেদের কখনও নিরুৎসাহিত করি না। আমি বলি, তোমরা ভালো খেলেছো। ৩৮১ রানের টার্গেটে ৩৩৩ করেছে। এটাকে খারাপ বলবেন কি? বলবো না। আমাদের ছেলেদের কেউ খারাপ বলতে পারবে না। আমি নিজে খেলা দেখেছি, যেখানে আমাদের ছেলেরা যথেষ্ট ভালো খেলেছে। খেলোয়াড়দের কনফিডেন্স, তাদের পারফরম্যান্স বাড়াতে আমরা কাজ করছি।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী সারা দেশে বিশাল আকারে পালন করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালনে সরকারিভাবে কমিটি গঠন করা হয়েছে, দলীয়ভাবেও পৃথক পৃথক কমিটি করা হয়েছে। ২০২০-২০২১ বর্ষকে আমরা মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছি। রজতজয়ন্তী যেভাবে পালন হয়েছিল, এই বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার জন্মবার্ষিকী তার চেয়ে আরো ব্যাপক ও বিশালভাবে আমরা পালন করবো। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন।
No comments