ভারতের ২০১৯-২০২০ সালের বাজেট নির্বাচনমুখী by পি কে বালাচন্দ্রন
২০১৯-২০
অর্থবছরের ভারতের জাতীয় বাজেটটি তিনটি কারণে আলাদা: প্রথম পূর্ণাঙ্গ নারী
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এই বাজেট উপস্থাপন করছেন। এটাই প্রথম বাজেট
যেখানে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দের বিষয়টি উল্লেখ নেই। এবং তৃতীয়ত এবং সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ হলো, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও ঝাড়খান্ডে রাজ্য অ্যাসেম্বলি
নির্বাচনে জেতার জন্য এই বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে মহারাষ্ট্রে নির্বাচন হবে, হরিয়ানায় হবে নভেম্বরে এবং ঝাড়খাণ্ডে নির্বাচন হবে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে।
২০১৯-২০ সালের বাজেটকে তাই জনপ্রিয় হতে হবে, কারণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নিজেদের মধ্যে খুব ভালো করেই জানে যে, সদ্য সমাপ্ত পার্লামেন্ট নির্বাচনে তাদের জয়ের অন্যতম প্রধান কারণ হলো পুলওয়ামায় পাকিস্তান-প্রভাবিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।
আত্মঘাতী হামলাকারী কর্তৃক ৪৪ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ায় মোদি পাকিস্তানে বিমান হামলা চালানোর এবং ৩০০ জঙ্গিকে ‘হত্যার’ সুযোগ পেয়ে যান এবং নিজেকে একজন ‘শক্তিধর’ হিসেবে তুলে ধরার সুযোগ পান, যিনি যে কোন আগ্রাসনের কঠোর জবাব দিতে সক্ষম।
রাহুল গান্ধীসহ বিরোধী দলগুলোর কেউই এ পরিস্থিতিতে এ ধরনের দাবি করতে পারেননি, বিশেষ করে যে পরিস্থিতিতে জাতীয়তাবাদ উগ্র আকার ধারণ করেছিল। অবাক হওয়ার কিছু নেই, নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জয়লাভ করেছেন মোদি।
তবে মোদি জানতেন যে, ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর যে দীর্ঘ অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন, সেগুলো তিনি রাখতে পারেননি। যে ‘আচ্ছে দিনের’ প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন, সেটা এখনও অধরাই রয়ে গেছে।
বেকারত্বের হার ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ঋণে জর্জরিত কৃষকরা আত্মহত্যা করছে। তার বহুল উচ্চারিত “মেক ইন ইন্ডিয়া” পরিকল্পনা একটা প্রতারণায় পরিণত হয়েছে এবং খুব সামান্যই বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে।
মোদি যদি অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিদেশী ও অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোন পরিকল্পনা না নেন, তাহলে ভাগ্য হয়তো কয়েক মাস পরের নির্বাচনে মোদির সাথে থাকবে না। বিশ্বাসযোগ্যতার যে বিশাল ফারাক তৈরি হয়েছে, ২০১৯-২০ সালের বাজেটের মাধ্যমে সেটাই পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রতিরক্ষা
মোদি ও সীতারামন এই সুযোগটা নিচ্ছেন যে, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটে প্রতিরক্ষার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়ে গেছে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সরকারকে যে আর্থিক সীমাবদ্ধতার মোকাবেলা করতে হচ্ছে, সেখানে এখন বাড়তি কিছু সংযোগ করতে পারছে না সরকার।
সীতারামন তার বক্তৃতায় প্রতিরক্ষা সম্পর্কে একমাত্র যেটা বলেছেন, সেটা হলো: “প্রতিরক্ষা বাহিনীর আধুনিকায়ন ও আপগ্রেডের ত্বরিৎ প্রয়োজন রয়েছে। এটা একটা জাতীয় অগ্রাধিকার। এ কারণে ভারতে যে সব সরঞ্জাম তৈরি হচ্ছে না, সেগুলো আমদানির ক্ষেত্রে বেসিক কাস্টমস শুল্ক বাতিল করা হলো”।
১ ফেব্রুয়ারি পার্লামেন্টে ২০১৯-২০ সালের যে অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট পেশ করা হয়, সেখানে প্রতিরক্ষা খাতের জন্য ৪২.৭ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়, আগের বছরের চেয়ে যেটার পরিমাণ ৮% বেশি।
তবে এই বৃদ্ধিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় খুশি হতে পারেনি, কারণ তাদের চাহিদা পূরণের জন্য প্রচুর ঘাটতি রয়েছে তাদের। ২০১৮-১৯ সালে, তিন বাহিনীর জন্য তহবিল ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩০%, বা ১,১২,১৩৭ কোটি রুপি, যেখানে চাহিদা দেখানো হয়েছিল ৩,৭১,০২৩ কোটি রুপি।
অন্যান্য খাত
সীতারামনের বাজেটে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে যে, ২০২২ সালের মধ্যে প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে এবং ২০১৯ সালের ২ অক্টোবরের পর কোথাও খোলামেলা মলত্যাগ করা চলবে না।
গ্রামীণ যোগাযোগ – যেটার অবস্থা ভারতের বহু জায়গায় খুবই দুর্বল – সেটার উন্নতির জন্য আগামী পাঁচ বছরে ১২৫,০০০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের ঘোষণা দেয়া হয়েছে বাজেটে। যেহেতু শহর ও গ্রাম সবখানেই আবাসনের বিষয়টি একটি সমস্যা, তাই ১৯৫ কোটি ঘর তৈরির ঘোষণা রাখা হয়েছে এতে। বাড়ি নির্মাণের জন্য জনগণ যাতে ঋণ নিতে পারে, সেজন্য ৩.৫ লাখ রুপি সুদ ছাড় দেয়া হয়েছে।
ধনী কোম্পানিগুলোর উপর যেখানে ব্যাপক কর আরোপ করা হবে, কিন্তু নতুন কোম্পানিগুলো যে তহবিল সংগ্রহ করেছে, সেটাকে কর ডিপার্টমেন্টের নজরদারির ভেতর দিয়ে যেতে হবে না। দোকানদার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য পেনশান স্কিম থাকবে, যাদের বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ হবে ১.৫ কোটি রুপি।
কৃষকদের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের স্বার্থ রক্ষায় ১০,০০০ নতুন ফার্মার প্রডিউসারস অর্গানাইজেশান গঠন করা হবে। সীতারামন আরও বলেন যে, ‘জিরো বাজেট ফার্মিং’ চালু করা হবে, যেখানে ঋণের উপর কোন নির্ভরতা থাকবে না, এবং পণ্যের উৎপাদন খরচও সেখানে হবে সামান্য। তিনি বলেন, এটা করা সম্ভব, কারণ কিছু রাজ্যে এটা করা হয়েছে। প্রাইভেট কর্পোরেট খাতকে কৃষিতে বিনিয়োগের ব্যাপারে উৎসাহিত করা হবে।
রেলওয়ে যেহেতু অর্থনীতিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, এ জন্য এই খাতের জন্য ২০১৮-২০৩০ সাল সময়কালের জন্য ৫০ লাখ কোটি রুপি সরিয়ে রাখা হয়েছে। এবং সম্ভবত প্রথমবারের মতো নদী পরিবহনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে, যেটাকে দীর্ঘদিন ধরে অবজ্ঞা করা হয়েছে।
বিনিয়োগের জন্য তহবিল ঘাটতি পূরণের জন্য, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আরও বেশি ধার করা হবে। এটা করা যেতে পারে কারণ ভারতের সার্বভৌম বিদেশী ঋণের পরিমাণ জিডিপির মাত্র ৫%, যেটা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম।
বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো পরিবেশ তৈরি করবে ভারত। সীতারামন ইঙ্গিত দেন যে, শ্রম আইন সংশোধন করা হবে। ইন্সুরেন্স মধ্যস্থতাকারী, মিডিয়া ও বিমান পরিবহনকে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য খুলে দেয়া হবে। বিদেশী শিক্ষার্থীদের ভারতের লেখাপড়ার জন্য উৎসাহিত করা হবে এখানে অবদান রাখার জন্য উৎসাহিত করা হবে।
ভারত যেহেতু মহাকাশ প্রযুক্তিতে এগিয়ে গেছে, তাই অর্থ উপার্জনের জন্য এর বাণিজ্যিক প্রয়োগকে ব্যবহার করা হবে। এটা বাস্তবায়নের জন্য নিউ স্পেস ইন্ডিয়া লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি তৈরি করা হবে।
মোদির পরিকল্পনা হলো ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে ভারতকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশে পরিণত করা। ২০১৯ সালের শেষ নাগাদ ভারতের অর্থনীতির আকার দাঁড়াবে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। সীতারামন দাবি করেন যে, অর্থনীতিকে এক ট্রিলিয়ন ডলারের পর্যায়ে নিতে ৫৫ বছর সময় লেগেছে, কিন্তু মোদি সরকার মাত্র পাঁচ বছরে এটার আকার ১ ট্রিলিয়ন ডলার বাড়িয়েছে।
তবে তিনি স্বীকার করেন যে, এখনও বহু কিছু করার রযেছে। মন্ত্রী বলেন, “অবকাঠামো খাতে, ডিজিটাল অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের ব্যাপক বিনিয়োগ করতে হবে”।
প্রাইভেট খাতে সন্দেহের ঘনঘটা
প্রাইভেট খাত অবশ্য সরকারের মতো এতো নিশ্চিন্ত নয়। এনডিটিভিতে এক প্যানেল আলোচনায় প্রাইভেট খাতের বিশেষজ্ঞরা এটা বলেছেন যে, খাবার পরেই কেবল নিশ্চিত হওয়া যাবে যে পুডিং তৈরি হয়েছে। তারা উল্লেখ করেন যে, প্রতিটি সরকার এবং প্রতিটি বাজেটেই বহু কিছুর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, কিন্তু মিলেছে সেখানে সামান্যই।
বিশেষজ্ঞরা হতাশা ব্যক্ত করেছেন যে, বিচার বিভাগের পুনর্গঠনের কোন উল্লেখ করা হয়নি, যেটা অভ্যন্তরীণ ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরকে হতাশ করেছে। কর সংগ্রহ সিস্টেমকে যেখানে আরও উন্নত করতে হবে ঠিক, কিন্তু এর বদলে ‘কর সন্ত্রাস’ হলে চলবে না বলে মন্তব্য করেন তারা।
তারা বলেন, সিস্টেমটা এত দুর্নীতিগ্রস্ত যে বড় বড় কর ফাঁকিদাতারা পার পেয়ে যায় আর ছোট ছোট ব্যক্তিরা ধরা পড়ে। যে সিস্টেমের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা নেই, সেটা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করতে পারবে না।
বিচার বিভাগকে গতিশীল করার কোন সিস্টেম নেই। ভোডাফোন বিতর্কের এরপরও সমাধান হয়েছে এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এতে অসন্তুষ্ট হয়েছে।
কৃষিখাতে প্রাইভেট কর্পোরেট বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার সরকার ঘোষণাকে স্বাগত জানানো হয়েছে, কিন্তু অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বাস্তবে এই ধরনের ঘোষণার বাস্তবায়ন হয় না। বাস্তবতা হলো কৃষিতে কর্পোরেট খাতকে স্বাগত জানানো হয় না।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতকে উৎসাহিত করা দরকার ঠিক, কিন্তু সেখানে খুব বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হবে না। বেশি কর্মসংস্থান দিতে পারবে বড় কোম্পানিগুলো এবং চীনের অভিজ্ঞতা এটাই বলে। চীন এই বিষয়টাকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছে এবং এর মাধ্যমে বহু মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্রসীমা থেকে তুলে এনেছে।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে মহারাষ্ট্রে নির্বাচন হবে, হরিয়ানায় হবে নভেম্বরে এবং ঝাড়খাণ্ডে নির্বাচন হবে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে।
২০১৯-২০ সালের বাজেটকে তাই জনপ্রিয় হতে হবে, কারণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নিজেদের মধ্যে খুব ভালো করেই জানে যে, সদ্য সমাপ্ত পার্লামেন্ট নির্বাচনে তাদের জয়ের অন্যতম প্রধান কারণ হলো পুলওয়ামায় পাকিস্তান-প্রভাবিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।
আত্মঘাতী হামলাকারী কর্তৃক ৪৪ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ায় মোদি পাকিস্তানে বিমান হামলা চালানোর এবং ৩০০ জঙ্গিকে ‘হত্যার’ সুযোগ পেয়ে যান এবং নিজেকে একজন ‘শক্তিধর’ হিসেবে তুলে ধরার সুযোগ পান, যিনি যে কোন আগ্রাসনের কঠোর জবাব দিতে সক্ষম।
রাহুল গান্ধীসহ বিরোধী দলগুলোর কেউই এ পরিস্থিতিতে এ ধরনের দাবি করতে পারেননি, বিশেষ করে যে পরিস্থিতিতে জাতীয়তাবাদ উগ্র আকার ধারণ করেছিল। অবাক হওয়ার কিছু নেই, নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জয়লাভ করেছেন মোদি।
তবে মোদি জানতেন যে, ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর যে দীর্ঘ অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন, সেগুলো তিনি রাখতে পারেননি। যে ‘আচ্ছে দিনের’ প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন, সেটা এখনও অধরাই রয়ে গেছে।
বেকারত্বের হার ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ঋণে জর্জরিত কৃষকরা আত্মহত্যা করছে। তার বহুল উচ্চারিত “মেক ইন ইন্ডিয়া” পরিকল্পনা একটা প্রতারণায় পরিণত হয়েছে এবং খুব সামান্যই বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে।
মোদি যদি অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিদেশী ও অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোন পরিকল্পনা না নেন, তাহলে ভাগ্য হয়তো কয়েক মাস পরের নির্বাচনে মোদির সাথে থাকবে না। বিশ্বাসযোগ্যতার যে বিশাল ফারাক তৈরি হয়েছে, ২০১৯-২০ সালের বাজেটের মাধ্যমে সেটাই পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রতিরক্ষা
মোদি ও সীতারামন এই সুযোগটা নিচ্ছেন যে, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটে প্রতিরক্ষার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়ে গেছে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সরকারকে যে আর্থিক সীমাবদ্ধতার মোকাবেলা করতে হচ্ছে, সেখানে এখন বাড়তি কিছু সংযোগ করতে পারছে না সরকার।
সীতারামন তার বক্তৃতায় প্রতিরক্ষা সম্পর্কে একমাত্র যেটা বলেছেন, সেটা হলো: “প্রতিরক্ষা বাহিনীর আধুনিকায়ন ও আপগ্রেডের ত্বরিৎ প্রয়োজন রয়েছে। এটা একটা জাতীয় অগ্রাধিকার। এ কারণে ভারতে যে সব সরঞ্জাম তৈরি হচ্ছে না, সেগুলো আমদানির ক্ষেত্রে বেসিক কাস্টমস শুল্ক বাতিল করা হলো”।
১ ফেব্রুয়ারি পার্লামেন্টে ২০১৯-২০ সালের যে অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট পেশ করা হয়, সেখানে প্রতিরক্ষা খাতের জন্য ৪২.৭ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়, আগের বছরের চেয়ে যেটার পরিমাণ ৮% বেশি।
তবে এই বৃদ্ধিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় খুশি হতে পারেনি, কারণ তাদের চাহিদা পূরণের জন্য প্রচুর ঘাটতি রয়েছে তাদের। ২০১৮-১৯ সালে, তিন বাহিনীর জন্য তহবিল ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩০%, বা ১,১২,১৩৭ কোটি রুপি, যেখানে চাহিদা দেখানো হয়েছিল ৩,৭১,০২৩ কোটি রুপি।
অন্যান্য খাত
সীতারামনের বাজেটে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে যে, ২০২২ সালের মধ্যে প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে এবং ২০১৯ সালের ২ অক্টোবরের পর কোথাও খোলামেলা মলত্যাগ করা চলবে না।
গ্রামীণ যোগাযোগ – যেটার অবস্থা ভারতের বহু জায়গায় খুবই দুর্বল – সেটার উন্নতির জন্য আগামী পাঁচ বছরে ১২৫,০০০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের ঘোষণা দেয়া হয়েছে বাজেটে। যেহেতু শহর ও গ্রাম সবখানেই আবাসনের বিষয়টি একটি সমস্যা, তাই ১৯৫ কোটি ঘর তৈরির ঘোষণা রাখা হয়েছে এতে। বাড়ি নির্মাণের জন্য জনগণ যাতে ঋণ নিতে পারে, সেজন্য ৩.৫ লাখ রুপি সুদ ছাড় দেয়া হয়েছে।
ধনী কোম্পানিগুলোর উপর যেখানে ব্যাপক কর আরোপ করা হবে, কিন্তু নতুন কোম্পানিগুলো যে তহবিল সংগ্রহ করেছে, সেটাকে কর ডিপার্টমেন্টের নজরদারির ভেতর দিয়ে যেতে হবে না। দোকানদার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য পেনশান স্কিম থাকবে, যাদের বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ হবে ১.৫ কোটি রুপি।
কৃষকদের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের স্বার্থ রক্ষায় ১০,০০০ নতুন ফার্মার প্রডিউসারস অর্গানাইজেশান গঠন করা হবে। সীতারামন আরও বলেন যে, ‘জিরো বাজেট ফার্মিং’ চালু করা হবে, যেখানে ঋণের উপর কোন নির্ভরতা থাকবে না, এবং পণ্যের উৎপাদন খরচও সেখানে হবে সামান্য। তিনি বলেন, এটা করা সম্ভব, কারণ কিছু রাজ্যে এটা করা হয়েছে। প্রাইভেট কর্পোরেট খাতকে কৃষিতে বিনিয়োগের ব্যাপারে উৎসাহিত করা হবে।
রেলওয়ে যেহেতু অর্থনীতিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, এ জন্য এই খাতের জন্য ২০১৮-২০৩০ সাল সময়কালের জন্য ৫০ লাখ কোটি রুপি সরিয়ে রাখা হয়েছে। এবং সম্ভবত প্রথমবারের মতো নদী পরিবহনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে, যেটাকে দীর্ঘদিন ধরে অবজ্ঞা করা হয়েছে।
বিনিয়োগের জন্য তহবিল ঘাটতি পূরণের জন্য, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আরও বেশি ধার করা হবে। এটা করা যেতে পারে কারণ ভারতের সার্বভৌম বিদেশী ঋণের পরিমাণ জিডিপির মাত্র ৫%, যেটা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম।
বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো পরিবেশ তৈরি করবে ভারত। সীতারামন ইঙ্গিত দেন যে, শ্রম আইন সংশোধন করা হবে। ইন্সুরেন্স মধ্যস্থতাকারী, মিডিয়া ও বিমান পরিবহনকে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য খুলে দেয়া হবে। বিদেশী শিক্ষার্থীদের ভারতের লেখাপড়ার জন্য উৎসাহিত করা হবে এখানে অবদান রাখার জন্য উৎসাহিত করা হবে।
ভারত যেহেতু মহাকাশ প্রযুক্তিতে এগিয়ে গেছে, তাই অর্থ উপার্জনের জন্য এর বাণিজ্যিক প্রয়োগকে ব্যবহার করা হবে। এটা বাস্তবায়নের জন্য নিউ স্পেস ইন্ডিয়া লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি তৈরি করা হবে।
মোদির পরিকল্পনা হলো ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে ভারতকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশে পরিণত করা। ২০১৯ সালের শেষ নাগাদ ভারতের অর্থনীতির আকার দাঁড়াবে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। সীতারামন দাবি করেন যে, অর্থনীতিকে এক ট্রিলিয়ন ডলারের পর্যায়ে নিতে ৫৫ বছর সময় লেগেছে, কিন্তু মোদি সরকার মাত্র পাঁচ বছরে এটার আকার ১ ট্রিলিয়ন ডলার বাড়িয়েছে।
তবে তিনি স্বীকার করেন যে, এখনও বহু কিছু করার রযেছে। মন্ত্রী বলেন, “অবকাঠামো খাতে, ডিজিটাল অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের ব্যাপক বিনিয়োগ করতে হবে”।
প্রাইভেট খাতে সন্দেহের ঘনঘটা
প্রাইভেট খাত অবশ্য সরকারের মতো এতো নিশ্চিন্ত নয়। এনডিটিভিতে এক প্যানেল আলোচনায় প্রাইভেট খাতের বিশেষজ্ঞরা এটা বলেছেন যে, খাবার পরেই কেবল নিশ্চিত হওয়া যাবে যে পুডিং তৈরি হয়েছে। তারা উল্লেখ করেন যে, প্রতিটি সরকার এবং প্রতিটি বাজেটেই বহু কিছুর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, কিন্তু মিলেছে সেখানে সামান্যই।
বিশেষজ্ঞরা হতাশা ব্যক্ত করেছেন যে, বিচার বিভাগের পুনর্গঠনের কোন উল্লেখ করা হয়নি, যেটা অভ্যন্তরীণ ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরকে হতাশ করেছে। কর সংগ্রহ সিস্টেমকে যেখানে আরও উন্নত করতে হবে ঠিক, কিন্তু এর বদলে ‘কর সন্ত্রাস’ হলে চলবে না বলে মন্তব্য করেন তারা।
তারা বলেন, সিস্টেমটা এত দুর্নীতিগ্রস্ত যে বড় বড় কর ফাঁকিদাতারা পার পেয়ে যায় আর ছোট ছোট ব্যক্তিরা ধরা পড়ে। যে সিস্টেমের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা নেই, সেটা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করতে পারবে না।
বিচার বিভাগকে গতিশীল করার কোন সিস্টেম নেই। ভোডাফোন বিতর্কের এরপরও সমাধান হয়েছে এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এতে অসন্তুষ্ট হয়েছে।
কৃষিখাতে প্রাইভেট কর্পোরেট বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার সরকার ঘোষণাকে স্বাগত জানানো হয়েছে, কিন্তু অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বাস্তবে এই ধরনের ঘোষণার বাস্তবায়ন হয় না। বাস্তবতা হলো কৃষিতে কর্পোরেট খাতকে স্বাগত জানানো হয় না।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতকে উৎসাহিত করা দরকার ঠিক, কিন্তু সেখানে খুব বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হবে না। বেশি কর্মসংস্থান দিতে পারবে বড় কোম্পানিগুলো এবং চীনের অভিজ্ঞতা এটাই বলে। চীন এই বিষয়টাকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছে এবং এর মাধ্যমে বহু মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্রসীমা থেকে তুলে এনেছে।
লোকসভায় ২০১৯-২০ সালের বাজেট পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন |
No comments