‘আবিরের লাশটা যেন খুঁজে পাই’ by ওয়েছ খছরু
টগবগে
তরুণ আবির। পুরো নাম হাসানুর রহমান আবির। বন্ধুদের নিয়ে সখের বসে সাদা
পাথরে গিয়েছিল বেড়াতে। সাঁতার কাটতে গিয়ে আবির হারিয়ে গেল চিরতরে। দুই
দিনেও খোঁজ মিললো না তার। বেঁচে থাকার আশা ছেড়েই দিয়েছেন। এখন সবার একটাই
চাওয়া- ‘আবিরের লাশটা যেন পাই’। প্রথম দিন প্রশাসন তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদীর জলে।
কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চালানো হয় তল্লাশি অভিযান। কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি আবিরকে। প্রায় ৩ ঘণ্টা তল্লাশির পর প্রশাসন অভিযান শেষ করেছে। কিন্তু বসে নেই আবিরের পরিবার। সঙ্গে বন্ধুরাও। গতকাল আবিরের প্রায় ৫০ জন বন্ধু নৌকা নিয়ে ধলাই নদীর ভাটিতে তল্লাশি শুরু করেছে। দিনভর তল্লাশির পরও তারা আবিরের সন্ধান পায়নি। এরপরও আবিরের জন্য অন্তহীন অপেক্ষায় সবাই। এক নজর পুত্রের মুখ দেখতে অপেক্ষায় রয়েছেন হতভাগা পিতা-মাতা। আর ডুবে যাওয়ার খবর শোনার পর থেকে মাতম চলছে বাসায়। অসুস্থ পিতা নির্বাক। মায়ের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ। হাসানুর রহমান আবির। বয়স ২৩ কিংবা ২৪ বছর। সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। গত বছর একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবির অনার্স পাস করেছে। পিতা মতিউর রহমান অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। একমাত্র পুত্র আবির। বড় তিন বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। সচ্ছল পরিবার হওয়ার কারণে ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন মতিউর রহমান। পরিবারের সবার ছোট হওয়ায় আদরের ছিল সে। শুক্রবার সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদা পাথরে বেড়াতে গিয়েছিল আবির। ওই দিন বেশিক্ষণ থাকেনি। উজানের স্বচ্ছ জল ও পাথরের সমারোহ আবিরকে টেনেছিল। এ কারণে বাড়ি এসে সাদা পাথরের কথা বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করে। তাদের নিয়ে সাদা পাথর যাওয়ার তারিখও চূড়ান্ত করে। তারিখ অনুযায়ী গত রোববার ইউনিভার্সিটির বন্ধুদের নিয়ে সকালেই সাদা পাথর যায় আবির। দুপুরে তারা সাদা পাথরের জিরো পয়েন্টের কাছে সাঁতার কাটতে নামে। বন্ধুদের নিয়ে সে পানিতে নেমে ঝাপাঝাপি করে। আবিরের বন্ধুরা জানায়- আবির সাঁতার জানতো না। এরপরও সে বন্ধুদের সঙ্গে পানিতে নেমে জলকেলিতে মেতে ওঠে। এক ঘণ্টার বেশি সময় তারা পানিতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা চলে যায় জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি। ওখানে বিজিবির সদস্যরা টহলে ছিল। তারা আবির ও তার বন্ধুদের জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি এলাকা থেকে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তাদের নিষেধ দিয়ে বিজিবির সদস্যরা অন্য এলাকায় টহলে চলে যান। বিজিবির নিষেধ পেয়ে আবির ও তার বন্ধুরা তীরের পথে রওনা দেয়। এ সময় সবার পেছনে ছিল আবির। সে পাথরের উপর দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ করে ঢলের তোড়ে পা ফসকে যায় আবিরের। গভীর পানিতে চলে যায় সে। চিৎকারও দেয়। দৌড়ে গিয়ে বন্ধুরা তাকে ধরাধরি করে। কিন্তু সাঁতার না জানায় এক পর্যায়ে বন্ধুদের হাত ফসকে আবির বন্ধুদের চোখের সামনেই ধলাই নদীতে হারিয়ে যায়। বন্ধুদের চিৎকার শুনে এগিয়ে যান স্থানীয় শ্রমিকরা। তারা গিয়ে ডুবে যাওয়া এলাকায় আবিরের সন্ধান করে। কিন্তু তারা পায়নি। কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ খবর দেয় ডুবুরিকে। সিলেট থেকে ডুবুরিরা গিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত আবিরের খোঁজ করে। তারা সাদা পাথর এবং আশপাশ এলাকায়ও তল্লাশি করে। কিন্তু আবিরকে পায়নি। সন্ধ্যায় অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এদিকে- আবিরের খোঁজে তল্লাশি চলছে। গতকাল সকাল হতেই আবিরের স্বজন ও বন্ধু প্রায় ৫০ জন মিলে কোম্পানীগঞ্জ যায়। তারা গিয়ে নৌকাযোগে কোম্পানীগঞ্জ থেকে নদীর ভাটি ছাতক পর্যন্ত আবিরের সন্ধান করে। বিকাল পর্যন্ত তারা খোঁজ চালালেও খুঁজে পায়নি। এদিকে- আবিরের মুখ একবার দেখতে পাগলপ্রায় তার পিতা-মাতা। একমাত্র ছেলেকে ছায়ার মতো আগলে রাখতেন তারা। চোখে চোখে রাখতেন মা। দুই দিন ধরে পানিতে নিখোঁজ ছেলে। বেঁচে থাকার আশাও নেই। সিলেট নগরীর সৈয়দ মুগনী আবাসিক এলাকার বাসায় আবিরের জন্য মাতম চলছে। বাইপাস সার্জারি রোগী পিতা মতিউর রহমান নির্বাক হয়ে গেছেন। আর মায়ের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে এলাকা। আবিরের পরিবারের স্বজন অ্যাডভোকেট তাজ উদ্দিন জানিয়েছেন- ‘প্রিয়জন হারানোর বেদনা বড়ই ভয়ঙ্কর। তার চেয়ে ভয়ঙ্কর হচ্ছে অপেক্ষা। আবিরকে এখনো পাওয়া যায়নি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা তার লাশটা অন্তত মিলুক। পরম মমতায় তাকে শায়িত যেন করতে পারি।’ আবিরের প্রতিবেশি সিলেট মহানগর বিএনপি নেতা হুমায়ূন আহমদ মাসুক জানিয়েছেন- আবিরের পিতা-মাতার আর্তনাদ সহ্য করা যাচ্ছে না। যারাই বাড়িতে যাচ্ছেন কাঁদছেন। অসুস্থ পিতাকে সান্ত্ব্তনা দেয়ার ভাষা কারো জানা নেই। আমরা এখন আবিরের লাশের অপেক্ষায় আছি। সবার একটাই চাওয়া- আবিরের লাশটা যেন ফিরে পাই। তা হলে অন্তত একটু সান্ত্বনা পাওয়া যাবে। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন- আবিরের সন্ধান চলছে। আমরা সব জায়গায় বার্তাও পাঠিয়েছি। কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী শামীম আহমদ জানিয়েছেন- আবিরের ঘটনা দুঃখজনক। এতে আমরা মর্মাহত। আবিরের সন্ধানে প্রশাসন সক্রিয় রয়েছে। তিনি বলেন- সাদা পাথর এলাকা ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। এটা খোলামেলা স্পট। সাঁতার না জানলে দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। এজন্য দুর্ঘটনা এড়াতে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। এরই মধ্যে পর্যটকদের সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চালানো হয় তল্লাশি অভিযান। কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি আবিরকে। প্রায় ৩ ঘণ্টা তল্লাশির পর প্রশাসন অভিযান শেষ করেছে। কিন্তু বসে নেই আবিরের পরিবার। সঙ্গে বন্ধুরাও। গতকাল আবিরের প্রায় ৫০ জন বন্ধু নৌকা নিয়ে ধলাই নদীর ভাটিতে তল্লাশি শুরু করেছে। দিনভর তল্লাশির পরও তারা আবিরের সন্ধান পায়নি। এরপরও আবিরের জন্য অন্তহীন অপেক্ষায় সবাই। এক নজর পুত্রের মুখ দেখতে অপেক্ষায় রয়েছেন হতভাগা পিতা-মাতা। আর ডুবে যাওয়ার খবর শোনার পর থেকে মাতম চলছে বাসায়। অসুস্থ পিতা নির্বাক। মায়ের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ। হাসানুর রহমান আবির। বয়স ২৩ কিংবা ২৪ বছর। সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। গত বছর একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবির অনার্স পাস করেছে। পিতা মতিউর রহমান অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। একমাত্র পুত্র আবির। বড় তিন বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। সচ্ছল পরিবার হওয়ার কারণে ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন মতিউর রহমান। পরিবারের সবার ছোট হওয়ায় আদরের ছিল সে। শুক্রবার সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদা পাথরে বেড়াতে গিয়েছিল আবির। ওই দিন বেশিক্ষণ থাকেনি। উজানের স্বচ্ছ জল ও পাথরের সমারোহ আবিরকে টেনেছিল। এ কারণে বাড়ি এসে সাদা পাথরের কথা বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করে। তাদের নিয়ে সাদা পাথর যাওয়ার তারিখও চূড়ান্ত করে। তারিখ অনুযায়ী গত রোববার ইউনিভার্সিটির বন্ধুদের নিয়ে সকালেই সাদা পাথর যায় আবির। দুপুরে তারা সাদা পাথরের জিরো পয়েন্টের কাছে সাঁতার কাটতে নামে। বন্ধুদের নিয়ে সে পানিতে নেমে ঝাপাঝাপি করে। আবিরের বন্ধুরা জানায়- আবির সাঁতার জানতো না। এরপরও সে বন্ধুদের সঙ্গে পানিতে নেমে জলকেলিতে মেতে ওঠে। এক ঘণ্টার বেশি সময় তারা পানিতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা চলে যায় জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি। ওখানে বিজিবির সদস্যরা টহলে ছিল। তারা আবির ও তার বন্ধুদের জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি এলাকা থেকে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তাদের নিষেধ দিয়ে বিজিবির সদস্যরা অন্য এলাকায় টহলে চলে যান। বিজিবির নিষেধ পেয়ে আবির ও তার বন্ধুরা তীরের পথে রওনা দেয়। এ সময় সবার পেছনে ছিল আবির। সে পাথরের উপর দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ করে ঢলের তোড়ে পা ফসকে যায় আবিরের। গভীর পানিতে চলে যায় সে। চিৎকারও দেয়। দৌড়ে গিয়ে বন্ধুরা তাকে ধরাধরি করে। কিন্তু সাঁতার না জানায় এক পর্যায়ে বন্ধুদের হাত ফসকে আবির বন্ধুদের চোখের সামনেই ধলাই নদীতে হারিয়ে যায়। বন্ধুদের চিৎকার শুনে এগিয়ে যান স্থানীয় শ্রমিকরা। তারা গিয়ে ডুবে যাওয়া এলাকায় আবিরের সন্ধান করে। কিন্তু তারা পায়নি। কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ খবর দেয় ডুবুরিকে। সিলেট থেকে ডুবুরিরা গিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত আবিরের খোঁজ করে। তারা সাদা পাথর এবং আশপাশ এলাকায়ও তল্লাশি করে। কিন্তু আবিরকে পায়নি। সন্ধ্যায় অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এদিকে- আবিরের খোঁজে তল্লাশি চলছে। গতকাল সকাল হতেই আবিরের স্বজন ও বন্ধু প্রায় ৫০ জন মিলে কোম্পানীগঞ্জ যায়। তারা গিয়ে নৌকাযোগে কোম্পানীগঞ্জ থেকে নদীর ভাটি ছাতক পর্যন্ত আবিরের সন্ধান করে। বিকাল পর্যন্ত তারা খোঁজ চালালেও খুঁজে পায়নি। এদিকে- আবিরের মুখ একবার দেখতে পাগলপ্রায় তার পিতা-মাতা। একমাত্র ছেলেকে ছায়ার মতো আগলে রাখতেন তারা। চোখে চোখে রাখতেন মা। দুই দিন ধরে পানিতে নিখোঁজ ছেলে। বেঁচে থাকার আশাও নেই। সিলেট নগরীর সৈয়দ মুগনী আবাসিক এলাকার বাসায় আবিরের জন্য মাতম চলছে। বাইপাস সার্জারি রোগী পিতা মতিউর রহমান নির্বাক হয়ে গেছেন। আর মায়ের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে এলাকা। আবিরের পরিবারের স্বজন অ্যাডভোকেট তাজ উদ্দিন জানিয়েছেন- ‘প্রিয়জন হারানোর বেদনা বড়ই ভয়ঙ্কর। তার চেয়ে ভয়ঙ্কর হচ্ছে অপেক্ষা। আবিরকে এখনো পাওয়া যায়নি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা তার লাশটা অন্তত মিলুক। পরম মমতায় তাকে শায়িত যেন করতে পারি।’ আবিরের প্রতিবেশি সিলেট মহানগর বিএনপি নেতা হুমায়ূন আহমদ মাসুক জানিয়েছেন- আবিরের পিতা-মাতার আর্তনাদ সহ্য করা যাচ্ছে না। যারাই বাড়িতে যাচ্ছেন কাঁদছেন। অসুস্থ পিতাকে সান্ত্ব্তনা দেয়ার ভাষা কারো জানা নেই। আমরা এখন আবিরের লাশের অপেক্ষায় আছি। সবার একটাই চাওয়া- আবিরের লাশটা যেন ফিরে পাই। তা হলে অন্তত একটু সান্ত্বনা পাওয়া যাবে। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন- আবিরের সন্ধান চলছে। আমরা সব জায়গায় বার্তাও পাঠিয়েছি। কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী শামীম আহমদ জানিয়েছেন- আবিরের ঘটনা দুঃখজনক। এতে আমরা মর্মাহত। আবিরের সন্ধানে প্রশাসন সক্রিয় রয়েছে। তিনি বলেন- সাদা পাথর এলাকা ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। এটা খোলামেলা স্পট। সাঁতার না জানলে দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। এজন্য দুর্ঘটনা এড়াতে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। এরই মধ্যে পর্যটকদের সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
No comments