শান্তির লক্ষ্যে দোহায় আফগানিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনীতিকদের বৈঠক
আফগানিস্তানের এক ডজনের মতো প্রভাবশালী রাজনীতিক রোববার কাতারের রাজধানী
দোহায় তালেবানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসব রাজনীতিকের মধ্যে পরস্পরের প্রবল
প্রতিদ্বন্দ্বী এমন কয়েকজনও রয়েছেন। তারা ১৮ বছরের যুদ্ধ অবসানের জন্য
দেশটিতে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি এবং নারী ও সংখ্যালঘুদের ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা
করেন।
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে মার্কিন-তালেবান আলোচনার পর আফগান রাজনীতিকদের
সঙ্গে তালেবানদের আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে। আলোচনা রাত
পর্যন্ত গড়ায়। বিদেশের মাটিতে তার সবচেয়ে দীর্ঘ যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চাচ্ছে
যুক্তরাষ্ট্র।
ওয়াশিংটন চাচ্ছে সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তানের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট
নির্বাচনের আগেই তালেবানদের সঙ্গে একটি রাজনৈতিক চুক্তি করতে, যাতে
আফগানিস্তান থেকে বিদেশী সেনা প্রত্যাহার করা যায়।
কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাঝে দোহার একটি বিলাসবহুল হোটেলে তালেবান ও
আফগান রাজনীতিকদের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ৭০ জনের মতো আফগান প্রতিনিধি
যোগ দেন। হলে প্রবেশের আগের সবার ফোন রেখে দেয়া হয়। তারা বিশালাকার
অর্ধবৃত্ত ভিডিও স্ক্রিনের সামনে বসে আলোচনা করেন। কাতার ও জার্মানী এই
বৈঠকের আয়োজন করে।
জার্মানির বিশেষ আফগান প্রতিনিধি মার্কুস পোতজেল উদ্বোধনী বক্তব্যে
বলেন, আজ আফগান সমাজের বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধিত্বকারী কিছু উজ্জ্বল
মস্তিষ্ক সমবেত হয়েছেন। আজ আপনাদের সামনে সংঘাতকে শান্তিপূর্ণ বিতর্কে
পরিণত করার অনন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে।
সম্মেলনের প্রবেশ মুখে নিরাপত্তা প্রহরীর সঙ্গে আফগান আলোচক আব্বাস স্তানেকজাইয়ের সঙ্গে হালকা বিতণ্ডা হয়।
স্তানেকজাই এক অফিসারকে বলেন, আমরা সংলাপে যেতে চাই কিন্তু তারা আমাদের
যেতে দিচ্ছে না। ওই অফিসার জবাবে বলেন: আমরা আপনার সঙ্গে জোক করছি না,
আমাদের সঙ্গে চিৎকার করে কথা বলবেন না।
তবে শেষ পর্যন্ত আলোচনা শুরুর কিছু সময় আগে তালেবান প্রতিনিধি দল
বিলাসবহুল বলরুমে তাদের নির্ধারিত আসনে গিয়ে বসেন। তাদের মধ্যে তালেবানদের
দোহা অফিসের মুখপাত্র সুহাইল শাহিনও ছিলেন।
মহিলাদের কাজ করার সুযোগ দিতে হবে
কাতার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সন্ত্রাস-দমন বিভাগের বিশেষ দূত মুতলাক
আল-কাহতানি বলেন, আফগানিস্তানের ভবিষ্যতের ব্যাপারে একটি রোডম্যাপ চায়
দোহা।
যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে ছয় দিন আলোচনা পর এই আন্ত:আফগান আলোচনা
অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই আলোচনার জন্য তালেবান-মার্কিন বৈঠক দুইদিন স্থগিত রাখা
হয়েছে।
বৈঠকে সবাই যুদ্ধবিরতির উপর গুরুত্ব দেয় বলে একটি সূত্র এএফপি’কে জানিয়েছে।
তাছাড়া নারীদের ভূমিকা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সংখ্যালঘুদের ভূমিকার ব্যাপারে তালেবান অবস্থান নিয়ে কথা বলেন স্তানেকজাই।
আফগান সংস্কৃতি ও ইসলামী মূল্যবোধ অনুযায়ী নারীদের কাজ করা ও শিক্ষা গ্রহণের অনুমতি দেয়া হবে বলে স্তানেকজাই উল্লেখ করন।
আলোচনার অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে তালেবান।
দুই দিনের এই আফগান বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি অংশ নিচ্ছে না। তালেবানরা
আফগান সরকারের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে অস্বীকার করায় বৈঠকে কয়েকজন
সরকারি কমকর্তা অংশ নিলেও তারা নিজে সামর্থে্য অংশ নিচ্ছেন বলে কাবুল
সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়।
আফগান যুদ্ধে তালেবানরা এখন সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের
সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার মাঝেও আফগান বাহিনীর উপর হামলা অব্যাহত রেখেছে
তারা।
No comments