‘মরে গেলে মনে করো আমি রাতের আকাশের তারা’ by রুদ্র মিজান
‘প্রিয়
মা-বাবা, আমি বোধ হয় আর বাঁচবো না। আমার প্রচণ্ড মাথা ব্যথা হয়। রক্ত বমি
হয়। মরে গেলে তোমরা আমার জন্য কান্না করো না। মনে করো আমি রাতের আকাশের
যেকোনো একটি তারা। খুব মনে পড়লে তারার দিকে তাকিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলো।
আমার জন্য দোয়া করো।’ মৃত্যুর আগে এভাবেই মা-বাবাকে নিজের অসহ্য যন্ত্রণার
কথা লিখে গেছেন আইরিন আক্তার। তার লাশ উদ্ধার করতে গিয়ে নিজের ডায়রিতে এই
লেখাগুলো পেয়েছে পুলিশ।
আইরিন আক্তার থাকতেন ঢাকার লালমাটিয়ার মোহনা ভিআইপি গার্লস হোস্টেলে। হোস্টেলের এডমিনে চাকরি করতেন এই তরুণী। সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখতেন। হোস্টেলের বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল আইরিনের। সুন্দর-সুখের একটি সংসারের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। পাত্র ঠাকুরগাঁওয়ের বাসিন্দা মোহাম্মদ রিমন। রিমনকে নিয়ে সাজাতে চেয়েছিলেন তার পৃথিবী। মাত্র দেড়-দু’মাস আগের কথা। আইরিনের জীবনে একটা ঝড় আসে। সব এলোমেলো হয়ে যায়। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত রিমন। সেভাবে চিকিৎসার সুযোগ হয়নি। পারি দেন না ফেরার দেশে। রিমন পৃথিবী থেকে বিদায় নেন, উড়ে যায় আইরিনের স্বপ্ন। স্বজনরা অনুপ্রেরণা দেন নতুন করে স্বপ্ন দেখতে। নতুন করে পথ চলতে। কিন্তু তা আর হয়ে উঠে না। রিমনকে হারিয়ে একা হয়ে যান আইরিন।
রিমনের মৃত্যু শোকের মধ্যেই অনুভূত হয় আইরিন নিজেও সুস্থ নেই। মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা হয়। বমি হয়। শরণাপন্ন হন চিকিৎসকের। জানতে পারেন তিনি ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত। চিকিৎসা প্রয়োজন। ব্রেইন টিউমার ধীরে ধীরে ক্যানসারে রূপ নিচ্ছিল। এক করুণ-কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি আইরিন আক্তার। হতাশাগ্রস্ত জীবন-যাপন করছিলেন। একদিকে অসুখের যন্ত্রণা অন্যদিকে দরিদ্রতা। চোখে অন্ধকার দেখছিলেন দরিদ্র পিতার কন্যা আইরিন।
মোহনা ভিআইপি হোস্টেলের বাসিন্দা ইডেন কলেজের ছাত্রী নবনীতা জানান, চাপা স্বভাবের ছিলেন আইরিন। একাকী থাকতেন। যে কারণে তার ব্যক্তিগত বিষয়গুলো সেভাবে জানা হয়নি। নবনীতা বলেন, আইরিন কষ্টে ছিলেন। নিজের অসুখ নিয়ে কষ্ট পেতেন। আর্থিক সমস্যাও ছিল। প্রায়ই বলতেন আমিতো সুস্থ হব না। মারা যাব। আমার মা-বাবা ধনী না। এত টাকা ব্যয় করলে তারাতো অসহায় হয়ে যাবে। আমার পেছনে টাকা ব্যয় করলে তারা বাঁচবে কি করে। আমার ভাইটির কি হবে?
হোস্টেলের বাসিন্দারা জানান, ব্যথায় চিৎকার করে কান্না করতেন আইরিন। খবর পেয়ে তার কৃষক বাবা অতি কষ্টে মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন। স্কয়ার হাসপাতালে ব্যয়বহুল চিকিৎসা করা হচ্ছিল তার। এর মধ্যেই ঘটে ঘটনাটি।
১৮ই নভেম্বর দুপুরে হোস্টেলে অন্যদের সঙ্গে খাবার খান। তারপর ২টার দিকে নিজের রুমে চলে যান। বিকাল ৪টায় হোস্টেলের অফিস কক্ষে ডিউটি করার কথা ছিল তার। কিন্তু আইরিনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ফোনে কল দিলেও তা রিসিভ হচ্ছিল না। তার রুমের দরজা বন্ধ। বাইরে থেকে ডেকেও সাড়া পাচ্ছিলেন না হোস্টেলের বাসিন্দারা। হোস্টেলের দায়িত্বশীলসহ অন্য মেয়েরা রুমের দরজা ভেঙ্গে দেখতে পান করুণদৃশ্যপট। ততক্ষণে আইরিন আর জীবিত নেই। ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না প্যাঁচিয়ে ঝুলে রয়েছেন।
খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। সেই সঙ্গে পাওয়া যায় তার লেখা ডায়রি। এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক তারেক জাহান বলেন, অসুখে অসহ্য যন্ত্রণায় ভুগছিলেন তিনি। শারীরিক-মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।
আইরিন আক্তারের পিতা আনিসুজ্জামান চৌধুরীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বিনা ময়না তদন্তে তার লাশটি হস্তান্তর করেছে পুলিশ। সোমবারই তার লাশ দিনাজপুরের বোচাগঞ্জের কংসরা নিজ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে। আইরিনের পিতা আনিসুজ্জামান জানান, দেওগাঁও ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী ছিল আইরিন। কিন্তু লেখাপাড়া শেষ করতে পারেনি। চাকরি করছিল ঢাকার ওই হোস্টেলে। তিনি বলেন, আমি কৃষি কাজ করি। অর্থ-সম্পত্তি নেই। অনেক কষ্ট করে মেয়ের চিকিৎসা করাচ্ছিলাম। কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না। মেয়েটি অসুখের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে বলে জানান তিনি। আনিসুজ্জামানের দুই সন্তানের মধ্যে আইরিন বড়। তার ছোট ছেলে দিনাজপুরে একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নরত।
আইরিন আক্তার থাকতেন ঢাকার লালমাটিয়ার মোহনা ভিআইপি গার্লস হোস্টেলে। হোস্টেলের এডমিনে চাকরি করতেন এই তরুণী। সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখতেন। হোস্টেলের বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল আইরিনের। সুন্দর-সুখের একটি সংসারের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। পাত্র ঠাকুরগাঁওয়ের বাসিন্দা মোহাম্মদ রিমন। রিমনকে নিয়ে সাজাতে চেয়েছিলেন তার পৃথিবী। মাত্র দেড়-দু’মাস আগের কথা। আইরিনের জীবনে একটা ঝড় আসে। সব এলোমেলো হয়ে যায়। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত রিমন। সেভাবে চিকিৎসার সুযোগ হয়নি। পারি দেন না ফেরার দেশে। রিমন পৃথিবী থেকে বিদায় নেন, উড়ে যায় আইরিনের স্বপ্ন। স্বজনরা অনুপ্রেরণা দেন নতুন করে স্বপ্ন দেখতে। নতুন করে পথ চলতে। কিন্তু তা আর হয়ে উঠে না। রিমনকে হারিয়ে একা হয়ে যান আইরিন।
রিমনের মৃত্যু শোকের মধ্যেই অনুভূত হয় আইরিন নিজেও সুস্থ নেই। মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা হয়। বমি হয়। শরণাপন্ন হন চিকিৎসকের। জানতে পারেন তিনি ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত। চিকিৎসা প্রয়োজন। ব্রেইন টিউমার ধীরে ধীরে ক্যানসারে রূপ নিচ্ছিল। এক করুণ-কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি আইরিন আক্তার। হতাশাগ্রস্ত জীবন-যাপন করছিলেন। একদিকে অসুখের যন্ত্রণা অন্যদিকে দরিদ্রতা। চোখে অন্ধকার দেখছিলেন দরিদ্র পিতার কন্যা আইরিন।
মোহনা ভিআইপি হোস্টেলের বাসিন্দা ইডেন কলেজের ছাত্রী নবনীতা জানান, চাপা স্বভাবের ছিলেন আইরিন। একাকী থাকতেন। যে কারণে তার ব্যক্তিগত বিষয়গুলো সেভাবে জানা হয়নি। নবনীতা বলেন, আইরিন কষ্টে ছিলেন। নিজের অসুখ নিয়ে কষ্ট পেতেন। আর্থিক সমস্যাও ছিল। প্রায়ই বলতেন আমিতো সুস্থ হব না। মারা যাব। আমার মা-বাবা ধনী না। এত টাকা ব্যয় করলে তারাতো অসহায় হয়ে যাবে। আমার পেছনে টাকা ব্যয় করলে তারা বাঁচবে কি করে। আমার ভাইটির কি হবে?
হোস্টেলের বাসিন্দারা জানান, ব্যথায় চিৎকার করে কান্না করতেন আইরিন। খবর পেয়ে তার কৃষক বাবা অতি কষ্টে মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন। স্কয়ার হাসপাতালে ব্যয়বহুল চিকিৎসা করা হচ্ছিল তার। এর মধ্যেই ঘটে ঘটনাটি।
১৮ই নভেম্বর দুপুরে হোস্টেলে অন্যদের সঙ্গে খাবার খান। তারপর ২টার দিকে নিজের রুমে চলে যান। বিকাল ৪টায় হোস্টেলের অফিস কক্ষে ডিউটি করার কথা ছিল তার। কিন্তু আইরিনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ফোনে কল দিলেও তা রিসিভ হচ্ছিল না। তার রুমের দরজা বন্ধ। বাইরে থেকে ডেকেও সাড়া পাচ্ছিলেন না হোস্টেলের বাসিন্দারা। হোস্টেলের দায়িত্বশীলসহ অন্য মেয়েরা রুমের দরজা ভেঙ্গে দেখতে পান করুণদৃশ্যপট। ততক্ষণে আইরিন আর জীবিত নেই। ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না প্যাঁচিয়ে ঝুলে রয়েছেন।
খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। সেই সঙ্গে পাওয়া যায় তার লেখা ডায়রি। এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক তারেক জাহান বলেন, অসুখে অসহ্য যন্ত্রণায় ভুগছিলেন তিনি। শারীরিক-মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।
আইরিন আক্তারের পিতা আনিসুজ্জামান চৌধুরীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বিনা ময়না তদন্তে তার লাশটি হস্তান্তর করেছে পুলিশ। সোমবারই তার লাশ দিনাজপুরের বোচাগঞ্জের কংসরা নিজ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে। আইরিনের পিতা আনিসুজ্জামান জানান, দেওগাঁও ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী ছিল আইরিন। কিন্তু লেখাপাড়া শেষ করতে পারেনি। চাকরি করছিল ঢাকার ওই হোস্টেলে। তিনি বলেন, আমি কৃষি কাজ করি। অর্থ-সম্পত্তি নেই। অনেক কষ্ট করে মেয়ের চিকিৎসা করাচ্ছিলাম। কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না। মেয়েটি অসুখের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে বলে জানান তিনি। আনিসুজ্জামানের দুই সন্তানের মধ্যে আইরিন বড়। তার ছোট ছেলে দিনাজপুরে একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নরত।
No comments