পাল্টা মামলার হুমকি আরসিবিসির
বাংলাদেশ
ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলার পরিকল্পনা করছে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল
ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি)। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় আরসিবিসিকে
ধারাবাহিকভাবে দায়ী করে মামলার সিদ্ধান্ত জানানোর পরদিনই এক বিবৃতিতে
ব্যাংকটি এ তথ্য জানায়। ব্যাংকটি বলছে, যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজেদের
লোকেরাই এ ঘটনায় জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আরসিবিসির
বিরুদ্ধে মামলা যৌক্তিক নয়। ফিলিপাইনের বার্তা সংস্থা রেপলার গতকাল
বৃহস্পতিবার এ তথ্য দিয়েছে। গত বুধবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত
বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করবে
বাংলাদেশ ব্যাংক। সেদিনই এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে বাংলাদেশ ব্যাংকও
জানিয়েছে, চুরির ঘটনায় আরসিবিসি দায়ী। আরসিবিসিকে কিছু প্রস্তাব দেওয়া
হয়েছে। প্রস্তাব না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে মামলা
করা হবে। নিউইয়র্কের আদালতে দায়ের করা হবে এই মামলা। মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের
ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বা ফেড ও বিশ্বজুড়ে আর্থিক লেনদেন নিষ্পত্তির
বার্তা আদান-প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সুইফটকেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে রাখার
চেষ্টা চলছে। এরপরই গতকাল বৃহস্পতিবার আরসিবিসি জানায়, ‘আমরা তাদের
(বাংলাদেশ ব্যাংক) ধারাবাহিকভাবে মানহানি করার সুযোগ দেব না।
বিভিন্ন
প্রতিবেদনে এসেছে, চুরির জন্য তারা নিজেরাই দায়ী। নিজেদের লোকদের আড়াল করতে
বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের প্রতিবেদনের তথ্য প্রকাশ করতে রাজি হচ্ছে না, যারা
নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে অর্থ চুরি করতে সহায়তা করেছে।’
আরসিবিসি জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক মামলা করলে তারা লড়তে প্রস্তুত। কিন্তু
বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রথমে নিজেদের প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে বলা হবে।
তাহলে আইনের আওতায় আরসিবিসি স্বেচ্ছায় যেসব তথ্য প্রকাশ করেছে, সেসব তথ্য
নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সমস্যায় পড়বে। আরসিবিসির কাছে কোনো তথ্য লুকানো নেই।
এখন বাংলাদেশ ব্যাংক ও ঢাকাকে এ বিষয়টি পরিষ্কার করতে হবে, জনগণের উত্তর
দিতে হবে। গত বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী
আজমালুল হোসেন কিউসি বলেন, তারা আমাদের থেকে সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনের
প্রতিবেদন চেয়েছিল। এ প্রতিবেদনের কোনো আইনি ভিত্তি না থাকায় আমরা রাজি
হয়নি। তবে তাদের এ-সংক্রান্ত ফরেনসিক প্রতিবেদন দেওয়া হবে। সেদিনই ডেপুটি
গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে এখনো
ফিলিপাইনে রয়েছে ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। এর মধ্যে দেড় কোটি ডলারের কোনো হদিস
পাওয়া যায়নি। সব অর্থ আদায়ে মামলা হবে। রিজার্ভ চুরির বিষয়ে আরসিবিসির
বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা ও দায় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে
ব্যাংকও দায় এড়াতে পারে না। ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে যুক্তরাষ্ট্রের
ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক বা ফেডে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের
হিসাব থেকে ১৯৪ কোটি ডলার বের করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সব আদেশ কার্যকর
না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত চুরি হয় ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার।
No comments