শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাক
জিয়া
অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন
খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা ও তাঁর কারাগারে যাওয়ার মধ্য দিয়ে
বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে উত্তেজনা ও অস্থিরতার আশঙ্কা সৃষ্টি হলো, তা এড়ানো
সম্ভব হলে ভালো হতো। কেননা এটা নির্বাচনের বছর, একাদশ জাতীয় সংসদ
নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য করার
জন্য দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যকার দূরত্ব কমিয়ে গণতান্ত্রিক
রীতিমাফিক একটা কার্যকর রাজনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
খালেদা জিয়া পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার ফলে নির্বাচনে তাঁর
অংশগ্রহণ নিয়ে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, তা এখনই চূড়ান্ত নয়। তাঁর উচ্চ
আদালতে আপিল করার সুযোগ আছে। তাঁর আইনজীবী বলেছেন, রায়ের সার্টিফায়েড কপি
পাওয়ার পর তাঁরা আপিল করবেন। সুতরাং, নির্বাচনে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণের
ব্যাপারে বিএনপির আশান্বিত থাকার সুযোগ রয়েছে। তাদের মনে রাখতে হবে, রায়টি
তাদের কাছে যতই পক্ষপাতমূলক মনে হোক না কেন, তা এসেছে আইনি প্রক্রিয়ায় এবং এ
রায়কে যদি তারা নাকচ বা ভুল প্রমাণিত করতে চায়, তবে তা করার সুযোগও রয়েছে
একমাত্র আইনি প্রক্রিয়ায়। এটা স্বস্তির বিষয় যে, রায় ঘোষণার দিন বা তার পরে
বড় ধরনের কোনো অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেনি। বিএনপির নেতারা তাঁদের
কর্মী-সমর্থকদের শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়ে যথাযথ
দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আচরণে
অতিমাত্রায় সতর্কতা লক্ষ করা গেছে এবং তার ফলে সাধারণ মানুষের চলাফেরায়
অসুবিধার সৃষ্টি হলেও শারীরিক বলপ্রয়োগের ঘটনা ঘটেনি। ক্ষমতাসীন দল ও তার
অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর আচরণও সংযত ছিল। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে জনমনে
শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গের যে আশঙ্কা-উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল, তা কিছুটা প্রশমিত
হয়েছে বলে আপাতদৃষ্টিতে প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে তা সম্পূর্ণভাবে দূর হয়নি,
একধরনের চাপা উদ্বেগ-আশঙ্কা এখনো রয়ে গেছে।
গত কদিনে বিএনপির প্রচুর সংখ্যক
নেতা–কর্মীকে আটক করা হয়েছে, তাঁরা ক্ষুব্ধ। খালেদা জিয়ার কারাবাস তাঁদের
ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। তা ছাড়া তাঁরা আগে থেকেই সরকারি দমন-পীড়নের
অভিযোগ করে আসছেন; নতুন পরিস্থিতিতে দলের কর্মকাণ্ডে আরও বাধাবিঘ্নের
মুখোমুখি হলে তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ-উত্তেজনা আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে দেশে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশের
অনুপস্থিতিতে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—এ দুই প্রধান রাজনৈতিক দল, যাদের
একাধিকবার সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে, তাদের মধ্যে কোনো কার্যকর
রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। বিএনপির চেয়ারপারসনের দণ্ডিত ও কারারুদ্ধ হওয়ার মধ্য
দিয়ে তাদের মধ্যকার দূরত্ব আরও বেড়ে গেল, বৈরিতা আরও তীব্র হলো। ফলে আপাত
দৃশ্যমান শান্তিপূর্ণ পরিবেশের অন্তরালে ছাইচাপা আগুনের মতো উত্তেজনা
ঘনীভূত হচ্ছে কি না—এই উদ্বেগ অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আমরা শান্তি চাই। যে
উদ্বেগের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তার অবসান চাই। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা
চলছে, এপ্রিলের শুরুতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে। এই
পরীক্ষার্থীদের এবং সার্বিকভাবে সব শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক লেখাপড়ার পরিবেশ
অটুট রাখতে হলে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। কর্মজীবী মানুষের
পথেঘাটে চলাফেরা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নে
চলার নিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে হবে। সে জন্য সব রাজনৈতিক দলকে সংযম-সহিষ্ণুতার
পরিচয় দিতে হবে। সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হোক নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ।
সরকারকে দমন–পীড়নের পথ পরিহার করতে হবে; সবার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক
অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।
No comments