বইমেলায় ডিজিটাল পেমেন্টে বৈষম্য
বইমেলায়
নগদ টাকা আর বিকাশের মাধ্যমেই পরিশোধ করা যায় বইয়ের মূল্য। মেলায় বিকাশের
বাইরে অন্য কোনো ব্যাংক বা ডেবিট কার্ড বা অন্য কোনো মাধ্যমে পেমেন্টের
কোনো ব্যবস্থা নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ স্লোগান নিয়ে এগিয়ে যাওয়া একটি দেশে
লেনদেনে এমন ধরাবাঁধা ব্যবস্থা নিয়ে বৈষম্য তৈরি করাটা কতটা যুক্তিসঙ্গত
সেটা ভাবতে হবে। এভাবেই প্রতিদিন অনেক বইপ্রেমী বইয়ের মূল্য পরিশোধ করতে
গিয়ে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। অনেকেই বাধ্য হয়ে যাচ্ছেন আশপাশে থাকা এটিএম
বুথ থেকে টাকা তুলতে। আর এভাবে নির্দিষ্ট মাধ্যমে লেনদেন নির্ধারিত করাকে
জোরপূর্বক সম্মতি আদায়ের সঙ্গেও তুলনা করেছেন অনেকে। বাংলা একাডেমি আয়োজিত
এবারের বইমেলা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি স্টলেই সাইনবোর্ড, ফেস্টুনের
মাধ্যমে বিকাশে বইয়ের মূল্য পরিশোধের কথা বলা হচ্ছে। এতে করে প্রতি গ্রাহক
১০ শতাংশ টাকা ক্যাশব্যাক পাবেন বলেও একটি অফার চলমান আছে। তবে বিকাশ
অ্যাকাউন্ট ছাড়া যারা অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বা বিভিন্ন
ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন তাদের কোনো সুবিধাই দিতে পারছেন না
প্রকাশকরা। প্রকাশকরা ও বই বিক্রেতারা বলছেন, বিকাশের পাশাপাশি যদি
অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানিকেও সমান সুবিধা দেয়া হতো তাহলে একটি
সুষ্ঠু প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি হতো। আর ক্রেতারাও এতে করে সুবিধাটা আরও
বেশি পেত। আর বিকাশকে নির্ধারিত করে দেয়ার এমন সিদ্ধান্তে বাংলা একাডেমিকে
বিকাশের কাছে দায়বদ্ধতা আছে বলেও মন্তব্য করেন অনেকে। সরেজমিন ঘুরে জানা
যায়, বিকাশের মতোই আরেকটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘আইপে’
বইমেলায় ১৫ শতাংশ ক্যাশব্যাক দেয়ার চুক্তি করেছিল মেলায় অংশ নেয়া ২৫টি
প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে। তবে ওই কোম্পানি ও তালিকাভুক্ত প্রকাশনা সংস্থাকে
নিষেধ করা হয়েছে এই অফারের প্রচারণা করতে। একই সঙ্গে এই মাধ্যম ব্যবহার করে
সব ধরনের লেনদেনও নিষিদ্ধ করেছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ।
এমনকি ওই
প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মী, কোম্পানির লোগো সংবলিত টি-শার্ট পরে মেলায় বই
কিনতে গেলে তাদেরও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি অপদস্থ করেছে বলেও অভিযোগ
রয়েছে। বিষয়টি জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ
যুগান্তরকে বলেন, এবারের মেলায় প্রধান স্পন্সর বিকাশ। তাই তাদের দেয়া
শর্তানুযায়ী, নগদ ও বিকাশ ছাড়া আর কোনো মাধ্যমে লেনদেনকে আমরা অনুমোদন দিতে
পারছি না। যেহেতু তারা স্পন্সর, তাই তারা বাদে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান একই
ধরনের অন্য কোনো পণ্যের প্রচারণা চালাতে পারবে না। দেশে যেহেতু আরও অনেক
এমন প্রতিষ্ঠান আছে এবং অন্যান্য মাধ্যমেও লেনদেন করা যায় সেখানে একটি
প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট করে দেয়া বৈষম্য কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে একাডেমির
এই পরিচালক বলেন, যেই প্রতিষ্ঠান ৯০ লাখ টাকা দিয়ে স্পন্সর করেছে। তারা
নিশ্চই চাইবে না একই ধরনের অন্য কোম্পানিগুলোও কার্যক্রম চালাবে। আর যেহেতু
তাদের সঙ্গে আমরা চুক্তিবদ্ধ, তাই আমরাও বিকাশ ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমকে
অনুমোদন দিতে পারছি না। তবে বিষয়টিকে অনৈতিক আচরণ বলে উল্লেখ করেছেন মেলায়
বইপ্রেমী ক্রেতারা। তারা বলছেন, এমন কোনো চুক্তি থাকলে তা বাংলা একাডেমির
সঙ্গে বিকাশের; বই ক্রেতা বা বই ক্রেতাদের সঙ্গে নয়। বাংলা একাডেমি একটি
সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়ে একটি পার্টিকুলার প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিয়ে কোনো
ভোক্তাকে বঞ্চিত করতে পারে না।
No comments