সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ৬ বছরেও শেষ হয়নি তদন্ত ‘ছেলের কবরে যান না সালেহা’ by শুভ্র দেব
বয়সের
চাপে ন্যুব্জ সালেহা মুনির। অঝোর ধারায় চোখ গড়িয়ে জল পড়ছে। কথা বলতে গিয়েও
থমকে যাচ্ছেন দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত সাংবাদিক সাগর সরোয়ারের মা সালেহা
মুনির। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলের বিচার কী আদৌ হবে? মৃত্যুর আগে
কী আমার ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারবো? ৬ বছর ধরে আমি ছেলের কবর
জিয়ারত করতে যাইনি। প্রতিজ্ঞা করেছি যেদিন বিচার হবে সেদিনই ছেলের কবর
জিয়ারত করবো। জানি, এই জনমেও ছেলে হত্যার বিচার হবে না।
তারপরও আসমান জমিন যতদিন থাকবে আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চেয়েই যাবো। কী অপরাধে আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। শোকে আমি পাথর হয়ে গেছি। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ৬ বছর পরও রহস্যের জট খোলেনি। অনেকটা রহস্যের বেড়াজালে আটকে আছে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত। নির্মম, নৃশংস ও আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের সুরাহা কবে হবে তাও কারো জানা নেই। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরাও দিতে পারছেন না কোনো আশার বাণী। এমনকি গত ৬ বছর ধরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি তারা। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সর্বশেষ তারিখ ছিল পহেলা ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সেদিনও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি। পরে আদালত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ দিয়েছেন ১৩ই মার্চ। এ নিয়ে চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়েছে ৫৪ বার। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে বারবার আদালতের কাছ থেকে সময় নিয়েছেন। এতে করে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিয়ে সন্ধিহান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব সদর দপ্তরের সহকারী কমিশনার মহিউদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফরেনসিক প্রতিবেদন না পাওয়ায় মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এখন আমরা শুধু আমেরিকার প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি। এছাড়া অন্যান্য তদন্তও আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।
সালেহা মুনির মানবজমিনকে বলেন, আমি শুধু জানতে চাই আমার ছেলের অপরাধটা কী। সাগর-রুনি দেশদ্রোহী ছিল না রাজনীতিবিদও ছিল না। এমনকি তারা ক্রাইম রিপোর্টারও না। তবে তাদের কেন মারা হলো। আর একটি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে কতদিন লাগে। প্রধানমন্ত্রী যদি একটু সদয় হন তবেই এই হত্যাকাণ্ডের সুবিচার হবে। দেশে কত বড় বড় হত্যাকাণ্ডের বিচার হচ্ছে। সাত খুন, বিশ্বজিৎ হত্যাসহ আরো অনেক হত্যার বিচার হয়েছে। কিন্তু কেন আমার ছেলে হত্যার বিচার হবে না। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করা হবে। কিন্তু সেই ৪৮ ঘণ্টা এখনো শেষ হচ্ছে না।
২০১২ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজা বাজারের নিজ বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তাফা সারোয়ার ওরফে সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন নাহার রুনা ওরফে মেহেরুন রুনি দম্পতি। হত্যাকাণ্ডের পর রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ওই থানার একজন উপ-পরিদর্শক। চারদিন পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে ডিবি রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ১৮ই এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। র্যাব তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর সাগর-রুনির মরদেহ কবর থেকে তোলার আবেদন জানায়। পরে ২০১২ সালের ২৬শে এপ্রিল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুজ্জামানের উপস্থিতিতে সাগর-রুনির মরদেহ তোলা হয়। তাতে পরীক্ষা করে দেখা যায়, নিহত সাগর-রুনিকে হত্যার আগে কোনো নেশাজাতীয় খাবার পানীয় দেয়া হয়নি এবং কোনো বিষও পাওয়া যায়নি। হত্যাকাণ্ডের ৮ মাস পর ২০১২ সালের ১০ই অক্টোবর বনানী থানায় একটি হত্যা ও ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার থাকা ৫ আসামি মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু বকুল মিয়া, কামরুল হাসান অরুন, রফিকুল ইসলাম ও আবু সাঈদকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওইদিনই রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমান ও বাড়ির দারোয়ান পলাশ রুদ্র পাল এবং পরবর্তীতে অন্য দারোয়ান এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবিরকে গ্রেপ্তার করা ছাড়া মামলার তদন্তে দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি নেই। পলাশ রুদ্র পাল ও তানভীর রহমান এখন জামিনে আছেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি র্যাব। র্যাবের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, সাগর-রুনির বাসার পলাতক দারোয়ান এনামুল হক ওরফে হুমায়ুনকে ধরতে পারলে হত্যাকাণ্ডের রহস্যজট খুলে যাবে। এ জন্য এনামুলকে ধরতে ১০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ২০১৩ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি এনামুলকে গ্রেপ্তার করা হলেও খুলেনি রহস্যজট।
এছাড়া এই হত্যাকাণ্ডের পর দুই দফায় ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত আলামত, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ছুরি, ছুরির বাঁট, চুল, সাগরের মোজা, একটি কম্বল, সাগরের পরনের প্যান্ট, সাগরের হাত-পা বাঁধা কাপড় ও রুনির পরনের টি-শার্ট পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে। প্রথম দফায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এসব আলামত থেকে দুজন ব্যক্তির সম্পূর্ণ ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া যায়। পরে এ দুই ব্যক্তির প্রোফাইলের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার জন্য এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত নিহত সাংবাদিক দম্পতির পারিবারিক বন্ধু তানভীর, দুই নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পাল ও এনামুল ওরফে হুমায়ুন কবীর এবং পাঁচ ডাকাত রফিকুল, বকুল, সাইদ, মিন্টু ও কামরুল হাসান ওরফে অরুনের চুল ও লালা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। সে সময় বলা হয়েছিল, এ আলামত পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পেলে তদন্ত নতুন মোড় নেবে। রহস্য উদঘাটনে সহায়ক ভূমিকা হিসেবে কাজ করবে। সেই পরীক্ষার একটি প্রতিবেদনও হাতে পায় মামলার তদন্ত সংস্থা। কিন্তু সেই ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে কারও ডিএনএ ম্যাচ করেনি। ফলে অধরাই থেকে গেছে খুনিরা।
মামলার বাদী রুনির ভাই নওশের আলম রোমান মানবজমিনকে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে এখন আর আমার যোগাযোগ হয় না। কারণ তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে একেক জন একেক ধরনের কথা বলে। তারা আদৌ এই মামলার তদন্ত করছেন কিনা বুঝতে পারছি না। তিনি বলেন, তদন্তে গাফিলতির কারণে বারবার এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়ে যাচ্ছে। বলতে গেলে এই মামলার আজ পর্যন্ত কোনো অগ্রগতিই দেখলাম না। আদৌ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হবে কিনা জানি না। মামলার তদন্ত নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে নওশের আরো বলেন, তদন্তকারী সংস্থা মামলার সুষ্ঠু তদন্তও করতে পারছে না। আবার মামলাটাও তারা ছাড়ছে না। আমরা সবসময়ই এই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে আসছি।
এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ৬ বছরেও একটি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি এটা খুবই দুঃখজনক। খুব দ্রুত এই মামলার তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। কারণ, তদন্তের দীর্ঘসূত্রতা বিচার ব্যবস্থাকে বিলম্বিত করে। তাই আমরা তাগিদ দিয়েছি সাগর-রুনিসহ যে সব মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দীর্ঘায়িত হচ্ছে সেগুলো যেন দ্রুত দেয়া হয়। কারণ জনগণ একটি মামলার তদন্ত খুব দ্রুত হোক এটাই প্রত্যাশা করে।
এদিকে নিহত সাগর-রুনি পরিবারের পক্ষ থেকে আজ বিভিন্ন স্থানে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে। সাগরের মা সালেহা মুনির জানিয়েছেন, গত শুক্রবার বাদ জুমা রাজধানীর রায় সাহেব মসজিদে কোরআন খতম ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিলো। সাগরের নিজ বাড়িতে এতিমখানায় দোয়ার আয়োজন করা হয়। সাগরের মামার বাড়ি রাজবাড়ীতেও কোরআন খতম ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।
তারপরও আসমান জমিন যতদিন থাকবে আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চেয়েই যাবো। কী অপরাধে আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। শোকে আমি পাথর হয়ে গেছি। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ৬ বছর পরও রহস্যের জট খোলেনি। অনেকটা রহস্যের বেড়াজালে আটকে আছে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত। নির্মম, নৃশংস ও আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের সুরাহা কবে হবে তাও কারো জানা নেই। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরাও দিতে পারছেন না কোনো আশার বাণী। এমনকি গত ৬ বছর ধরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি তারা। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সর্বশেষ তারিখ ছিল পহেলা ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সেদিনও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি। পরে আদালত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ দিয়েছেন ১৩ই মার্চ। এ নিয়ে চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়েছে ৫৪ বার। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে বারবার আদালতের কাছ থেকে সময় নিয়েছেন। এতে করে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিয়ে সন্ধিহান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব সদর দপ্তরের সহকারী কমিশনার মহিউদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফরেনসিক প্রতিবেদন না পাওয়ায় মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এখন আমরা শুধু আমেরিকার প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি। এছাড়া অন্যান্য তদন্তও আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।
সালেহা মুনির মানবজমিনকে বলেন, আমি শুধু জানতে চাই আমার ছেলের অপরাধটা কী। সাগর-রুনি দেশদ্রোহী ছিল না রাজনীতিবিদও ছিল না। এমনকি তারা ক্রাইম রিপোর্টারও না। তবে তাদের কেন মারা হলো। আর একটি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে কতদিন লাগে। প্রধানমন্ত্রী যদি একটু সদয় হন তবেই এই হত্যাকাণ্ডের সুবিচার হবে। দেশে কত বড় বড় হত্যাকাণ্ডের বিচার হচ্ছে। সাত খুন, বিশ্বজিৎ হত্যাসহ আরো অনেক হত্যার বিচার হয়েছে। কিন্তু কেন আমার ছেলে হত্যার বিচার হবে না। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করা হবে। কিন্তু সেই ৪৮ ঘণ্টা এখনো শেষ হচ্ছে না।
২০১২ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজা বাজারের নিজ বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তাফা সারোয়ার ওরফে সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন নাহার রুনা ওরফে মেহেরুন রুনি দম্পতি। হত্যাকাণ্ডের পর রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ওই থানার একজন উপ-পরিদর্শক। চারদিন পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে ডিবি রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ১৮ই এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। র্যাব তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর সাগর-রুনির মরদেহ কবর থেকে তোলার আবেদন জানায়। পরে ২০১২ সালের ২৬শে এপ্রিল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুজ্জামানের উপস্থিতিতে সাগর-রুনির মরদেহ তোলা হয়। তাতে পরীক্ষা করে দেখা যায়, নিহত সাগর-রুনিকে হত্যার আগে কোনো নেশাজাতীয় খাবার পানীয় দেয়া হয়নি এবং কোনো বিষও পাওয়া যায়নি। হত্যাকাণ্ডের ৮ মাস পর ২০১২ সালের ১০ই অক্টোবর বনানী থানায় একটি হত্যা ও ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার থাকা ৫ আসামি মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু বকুল মিয়া, কামরুল হাসান অরুন, রফিকুল ইসলাম ও আবু সাঈদকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওইদিনই রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমান ও বাড়ির দারোয়ান পলাশ রুদ্র পাল এবং পরবর্তীতে অন্য দারোয়ান এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবিরকে গ্রেপ্তার করা ছাড়া মামলার তদন্তে দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি নেই। পলাশ রুদ্র পাল ও তানভীর রহমান এখন জামিনে আছেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি র্যাব। র্যাবের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, সাগর-রুনির বাসার পলাতক দারোয়ান এনামুল হক ওরফে হুমায়ুনকে ধরতে পারলে হত্যাকাণ্ডের রহস্যজট খুলে যাবে। এ জন্য এনামুলকে ধরতে ১০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ২০১৩ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি এনামুলকে গ্রেপ্তার করা হলেও খুলেনি রহস্যজট।
এছাড়া এই হত্যাকাণ্ডের পর দুই দফায় ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত আলামত, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ছুরি, ছুরির বাঁট, চুল, সাগরের মোজা, একটি কম্বল, সাগরের পরনের প্যান্ট, সাগরের হাত-পা বাঁধা কাপড় ও রুনির পরনের টি-শার্ট পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে। প্রথম দফায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এসব আলামত থেকে দুজন ব্যক্তির সম্পূর্ণ ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া যায়। পরে এ দুই ব্যক্তির প্রোফাইলের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার জন্য এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত নিহত সাংবাদিক দম্পতির পারিবারিক বন্ধু তানভীর, দুই নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পাল ও এনামুল ওরফে হুমায়ুন কবীর এবং পাঁচ ডাকাত রফিকুল, বকুল, সাইদ, মিন্টু ও কামরুল হাসান ওরফে অরুনের চুল ও লালা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। সে সময় বলা হয়েছিল, এ আলামত পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পেলে তদন্ত নতুন মোড় নেবে। রহস্য উদঘাটনে সহায়ক ভূমিকা হিসেবে কাজ করবে। সেই পরীক্ষার একটি প্রতিবেদনও হাতে পায় মামলার তদন্ত সংস্থা। কিন্তু সেই ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে কারও ডিএনএ ম্যাচ করেনি। ফলে অধরাই থেকে গেছে খুনিরা।
মামলার বাদী রুনির ভাই নওশের আলম রোমান মানবজমিনকে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে এখন আর আমার যোগাযোগ হয় না। কারণ তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে একেক জন একেক ধরনের কথা বলে। তারা আদৌ এই মামলার তদন্ত করছেন কিনা বুঝতে পারছি না। তিনি বলেন, তদন্তে গাফিলতির কারণে বারবার এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়ে যাচ্ছে। বলতে গেলে এই মামলার আজ পর্যন্ত কোনো অগ্রগতিই দেখলাম না। আদৌ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হবে কিনা জানি না। মামলার তদন্ত নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে নওশের আরো বলেন, তদন্তকারী সংস্থা মামলার সুষ্ঠু তদন্তও করতে পারছে না। আবার মামলাটাও তারা ছাড়ছে না। আমরা সবসময়ই এই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে আসছি।
এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ৬ বছরেও একটি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি এটা খুবই দুঃখজনক। খুব দ্রুত এই মামলার তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। কারণ, তদন্তের দীর্ঘসূত্রতা বিচার ব্যবস্থাকে বিলম্বিত করে। তাই আমরা তাগিদ দিয়েছি সাগর-রুনিসহ যে সব মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দীর্ঘায়িত হচ্ছে সেগুলো যেন দ্রুত দেয়া হয়। কারণ জনগণ একটি মামলার তদন্ত খুব দ্রুত হোক এটাই প্রত্যাশা করে।
এদিকে নিহত সাগর-রুনি পরিবারের পক্ষ থেকে আজ বিভিন্ন স্থানে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে। সাগরের মা সালেহা মুনির জানিয়েছেন, গত শুক্রবার বাদ জুমা রাজধানীর রায় সাহেব মসজিদে কোরআন খতম ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিলো। সাগরের নিজ বাড়িতে এতিমখানায় দোয়ার আয়োজন করা হয়। সাগরের মামার বাড়ি রাজবাড়ীতেও কোরআন খতম ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।
No comments