তিন ধর্মের সংস্কৃতির এক শহর
মধ্য
স্পেনের শহর টলেডো। রাজধানী মাদ্রিদ থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার উত্তরে
অবস্থিত শহরটি ১৯৮৬ সালে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো।
টলেডো সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধ এক ঐতিহাসিক শহর। বিভিন্ন সময় মুসলিম,
খ্রিস্টান ও ইহুদিদের আধিপত্য থাকায় একে তিন ধর্মের সংস্কৃতির শহরও বলা হয়।
শহরজুড়েই দেখার মতো রয়েছে বহু নিদর্শন। এর মধ্যে সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রাল,
এল গ্রেকো টেইল, সেন্ডা ইকোলজিকা, সান্তা ক্রুজ মিউজিয়াম, প্রাচীন মসজিদ
ক্রিস্টো দে লা লজ, সিনানগোগা ডেল ট্র্যান্সিটো, অ্যালকাজর প্রাসাদ
উল্লেখযোগ্য। স্বচ্ছ পানির লেকের ধারে পাখির কিচিরমিচির শব্দ যে কাউকেই
বিমোহিত করবে। অনাবিল এ সৌন্দর্য দেখতে পুরো বিশ্ব থেকে পর্যটকরা ভিড় জমান
এখানে। ব্রোঞ্জ সভ্যতার সময় এখানে বসতি গড়ে ওঠে। ১৫৬৩ সালের আগ পর্যন্ত
স্পেনের রাজধানী ছিল এটি। পুরনো ভবন ও দেয়ালে ঘেরা এ শহরের আঁকাবাঁকা
রাস্তায় হাঁটলে মনে হবে যেন মধ্যযুগীয় কোনো সভ্যতায় দাঁড়িয়ে আছেন। আর
সুদৃশ্য সেতুও পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দোকানগুলোতে
সাজানো আছে মধ্যযুগীয় সভ্যতার দৃষ্টিনন্দন সামগ্রী। একসময় এ শহরে
মুসলমানদের আধিপত্য থাকলেও তা চলে যায় খ্রিস্টান ও ইহুদির দখলে।
তবু
প্রাচীন বহু মুসলিম নিদর্শন অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে সংরক্ষিত আছে। ক্রিস্টো
দে লা লজ নামের স্থাপনাটি একটি প্রাচীন মসজিদ। ৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে এটি
নির্মিত হয়েছিল। দ্বাদশ শতকে শহরটি খ্রিস্টানদের অধিকারে আসার পর এর একাংশ
গির্জায় রূপান্তর করা হয়। তবে মসজিদের অংশটি এখনও সংরক্ষিত আছে। টলেডো তার
ঐতিহ্যবাহী ডামসেসেন মেটালওয়ার্ক, অ্যান্টিক-অনুপ্রাণিত তলোয়ার এবং হাতে
তৈরি মিষ্টি আলুর ক্যান্ডিস ম্যারজিপ্যানের জন্য পরিচিত। টলেডো ক্যাথিড্রাল
শহরটির প্রাচীন ক্যাথলিক গির্জা। ১২২৬ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল এটি। এর
অনুপম স্থাপত্যশৈলী আজও হাজারও পর্যটককে মুগ্ধ করে। গির্জাটির দেয়ালজুড়ে
রয়েছে অসংখ্য পাথরের মূর্তি। টলেডো শহরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে ‘টাগুস’ নদী।
প্রায় ১ হাজার ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীর ৭১৬ কিলোমিটারই স্পেনে, ৪৭
কিলোমিটার স্পেন-পর্তুগাল সীমান্তে এবং ২৭৫ কিলোমিটার পর্তুগালে। শহর ঘুরে
দেখার জন্য আছে ট্যুরিস্ট বাস আর ছোট ছোট ট্রেন। মাত্র ৫ থেকে ১০ ইউরো খরচ
করে এসব বাহনে চড়ে টলেডোর প্রাচীন স্থাপনাগুলো কম সময়েই ঘুরে দেখা যায়।
শহরটির নয়নাভিরাম এ সৌন্দর্য দেখার জন্য প্রতিদিন ভিড় জমান বিশ্বে বিভিন্ন
দেশ থেকে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থী।
No comments