প্রশ্নফাঁসের নিরবচ্ছিন্ন ঘটনা
এসএসসি
ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে চলেছে একের পর এক। এ পর্যায়ে ফাঁস
হয়েছে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্ন। বুধবার পরীক্ষার অন্তত ৫০ মিনিট আগে
ঢাকার আবদুল্লাপুরের একটি কেন্দ্রের অদূরে পরীক্ষার্থীদের মোবাইল সেটে যেসব
প্রশ্ন পাওয়া গেছে, পরীক্ষার পর সেগুলোর সঙ্গে মূল প্রশ্নপত্রের মিল লক্ষ
করা গেছে। শুধু ঢাকা নয়, দেশের বিভিন্ন জেলায়ও প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার খবর
রয়েছে। আমরা বুঝতে পারছি না, প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রতিরোধ করা কী এমন কঠিন
কাজ! এমন তো নয় যে, এই অপরাধ দু’-একবার সংঘটিত হয়েছে। একের পর এক ফাঁস
হচ্ছে প্রশ্ন। শিক্ষামন্ত্রী অনেকবারই এ অপরাধের বিরুদ্ধে তার কঠোর
অবস্থানের কথা জানিয়েছিলেন দেশবাসীকে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। তাহলে
কি এটাই ধরে নিতে হবে যে, প্রশ্নপত্র ফাঁস অনিরাময়যোগ্য এক ব্যাধি? বোঝাই
যাচ্ছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীরা কোনো কিছুই তোয়াক্কা করছে না।
আইন-পুলিশ-আদালত ইত্যাদি তাদের কাছে অতি তুচ্ছ বিষয়। প্রশ্ন ওঠাই
স্বাভাবিক, তাহলে কি তারা রাষ্ট্রের চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান? মঙ্গলবার
শিক্ষামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার পদত্যাগের অভিপ্রায়
জানিয়েছেন। আমাদের কথা হল, তিনি যদি পদত্যাগ করেনও তাতেই কি সমস্যার সমাধান
হয়ে যাবে? প্রধানমন্ত্রী অবশ্য মন্ত্রীকে কঠোরভাবে তার মন্ত্রণালয়
পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছেন।
আমরা যতদূর বুঝি, শিক্ষামন্ত্রী যথেষ্ট কঠোরই
ছিলেন, তারপরও প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। তাহলে বুঝতে হবে প্রশ্নফাঁস রোধের
বিষয়টি শুধু মন্ত্রীর কঠোরতার ওপর নির্ভর করে না। এটি এখন এমন এক সামাজিক
ব্যাধির রূপ নিয়েছে যে, একটি সমন্বিত সামগ্রিক পদক্ষেপই কেবল পারে এর
নিরাময় করতে। আমরা দেখেছি, শুধু পাবলিক পরীক্ষাগুলোয় নয়, প্রথম শ্রেণীর
পরীক্ষাতেও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। অর্থাৎ অপরাধটি ছড়িয়ে গেছে সর্বত্রই।
অপরাধীরা সিন্ডিকেট করে একের পর এক ফাঁস করছে প্রশ্নপত্র। বস্তুত প্রশাসনের
একটি অসাধু চক্রকে ‘ম্যানেজ’ করে কিংবা ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন
অঙ্গসংগঠনকে সম্পৃক্ত করে এসব অপকর্ম করা হয়। প্রশাসনযন্ত্র ও রাজনৈতিক
দলগুলো যদি নিয়ম মেনে চলত, আইন প্রতিপালনে আন্তরিক হতো, তাহলে প্রশ্ন
ফাঁসসহ অন্যান্য নৈরাজ্য যে কমে আসত এতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রশ্নপত্র
ফাঁসের মাধ্যমে বেকারত্বের যন্ত্রণায় দগ্ধ হতে থাকা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ
নিরীহ ও সৎ চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে যেমন তামাশা করা হচ্ছে, ঠিক তেমনি
কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মেধা ও সৃজনশীলতা ধ্বংসের বন্দোবস্তও পাকা করা
হচ্ছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় রয়েছে অনেক ত্রুটি, সেগুলো সারানোর চেষ্টা
নেয়া হচ্ছে না, উল্টো তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন সংকট। প্রশ্নফাঁসের অপরাধ
নির্মূল করতেই হবে। যথেষ্ট হয়েছে। আর নয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিয়ে ছিনিমিনি
খেলা বেশিদিন চলতে পারে না।
No comments