খালেদা জিয়ার জেল
জিয়া
অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন
খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সাজা হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত
এই মামলার রায়ের ফলাফল ও এর সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া নিয়ে দেশে স্বাভাবিকভাবেই
একধরনের উদ্বেগ ও আতঙ্কের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল ৮ ফেব্রুয়ারি বড়
কোনো ধরনের অঘটন ছাড়াই রায় প্রদান সম্পন্ন হয়েছে। এ বছরকে নির্বাচনের বছর
হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সেই হিসেবে এই মামলার রায়ের একটি সুদূরপ্রসারী
তাৎপর্য রয়েছে। সাবেক সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদ দুর্নীতির মামলায় দণ্ড ভোগ
করলেও এই প্রথম দেশের কোনো নির্বাচিত সরকারপ্রধান দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত
হলেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করায় সংসদের বাইরে থাকলেও
দলটি এবং এর নেতা খালেদা জিয়া দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবেই
বিবেচিত। মামলায় খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড দেশের রাজনীতিকে এক নতুন
হিসাব-নিকাশের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ গতকাল সরকারি
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি
তাঁর পুত্র ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আরও চারজনকে ১০
বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। এ ছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সর্বমোট ২ কোটি ১০ লাখ
৭১ হাজার ৬৭১ টাকা জরিমানা দিতে বলেছেন। বিএনপির তরফে এরই মধ্যে এই রায়
প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তারা এই রায়কে ‘প্রতিহিংসামূলক’ হিসেবে বর্ণনা
করেছে। বিএনপির দুই শীর্ষ নেতৃত্বের জেল ও জরিমানা হওয়ায় এই রায় যে দেশের
আগামী দিনের রাজনীতির ওপর প্রভাব ফেলবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, এই
মামলার রায় ও সামনের দিনগুলোতে এর পরিণতির ওপর খালেদা জিয়ার আগামী
নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বা না করার সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা। কোনো কারণে
শান্তিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে তা দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু,
গ্রহণযোগ্য
এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিস্থিতিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। জিয়া
অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় প্রদানের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত হওয়ার
পর থেকেই দিনটিকে ঘিরে নানা মহলে উত্তেজনার আশঙ্কা করা হয়েছিল। সরকার এ
ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে দেশব্যাপী ধরপাকড় চালায়। ৭ তারিখ
বিকেল থেকে ঢাকাকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। এমন পরিস্থিতির মধ্যে রায়
শোনার জন্য খালেদা জিয়া আদালতে যান। যাত্রাপথে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও
খালেদা জিয়া আদালতে যাওয়ার পরই রায় ঘোষণা করা হয়। রায় ঘোষণার পর বিএনপির
পক্ষ থেকে জনগণকে রাস্তায় নেমে আসতে বলা হলেও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের কথা
বলা হয়েছে। দলটির নেতৃত্বকে যেকোনো মূল্যে তা নিশ্চিত করতে হবে। এর আগে
সুপ্রিম কোর্টের সামনের রাস্তায় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের পেছনের মিছিল থেকে
যেভাবে হামলা হয়েছে বা গতকালও মগবাজার এলাকায় যে ঘটনা ঘটেছে, তার
পুনরাবৃত্তি কোনোভাবে কাম্য নয়। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও
সংযত থাকতে হবে। বিএনপির নেতৃত্বকে বুঝতে হবে যে মামলার রায় হয়েছে আদালতের
মাধ্যমে এবং নিম্ন আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ আছে। খালেদা
জিয়ার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন গতকাল বলেছেন, রায়ের সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার
পর তাঁরা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। আমরা মনে করি, আইনি বিষয় আইনিভাবেই
বিএনপিকে মোকাবিলা করতে হবে। এর বাইরে অন্য কোনো পথ নেই।
No comments