অ্যাটর্নি জেনারেলের অভিযোগ
অ্যাটর্নি
জেনারেল মাহবুবে আলম সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের কোনো কোনো বেঞ্চ
সংশ্লিষ্ট বিচারপতি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ
এনেছেন। এই অভিযোগ কোনো মামুলি অভিযোগ নয়। আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে,
নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে তিনি
লিখিতভাবে যেসব সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনেছেন, তা সুচিন্তিত এবং প্রতিকার
পাওয়ার আশা তাতে সুস্পষ্ট। অন্যদিকে দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার
প্রতিষ্ঠায় ‘যা কিছু করা সম্ভব, তার সবই করবেন’ বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন
প্রধান বিচারপতি। দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে তাঁর অভিষেক এবং তাঁর
ওই প্রতিশ্রুতিকে আমরা স্বাগত জানাই। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার সঙ্গে উচ্চ
আদালতের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও তার জবাবদিহির প্রশ্ন ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
সুতরাং বিচারব্যবস্থা ভেঙে পড়ার যে হুঁশিয়ারি অ্যাটর্নি জেনারেল উচ্চারণ
করেছেন, তারপর প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রতিকারমূলক
ব্যবস্থাই প্রত্যাশিত। এর আগে ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি
বিচার বিভাগ ‘ডুবুডুবু অবস্থায় নাক উঁচু করা’ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে বলেও
উল্লেখ করেছিলেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর আগে যে খানা
জরিপ প্রকাশ করেছিল, তাতে আদালত ব্যবস্থাপনায় ঘুষ-দুর্নীতির বিষয়ে একটি
উদ্বেগজনক চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। এখন স্বয়ং দেশের সর্বোচ্চ আইন
কর্মকর্তা হিসেবে মাহবুবে আলম যা উন্মোচন করেছেন, তাতে বিচারপ্রার্থীরা আরও
বেশি উদ্বেগ অনুভব করতে পারেন। এটা লক্ষণীয় যে, অ্যাটর্নি জেনারেল
ঢালাওভাবে বা সাধারণভাবে কোনো অনির্দিষ্ট মন্তব্য করেননি। তিনি সতর্কতার
সঙ্গে দশটিরও বেশি নির্দিষ্ট অনিয়মের বিষয়ে নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির
দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এর মধ্যে ‘কতিপয় বিচারপতি’ এবং কতিপয় আইনজীবীর
বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছেন, তা সব থেকে স্পর্শকাতর। অ্যাটর্নি জেনারেলের
নিজের কথায়, ‘সব থেকে ভয়াবহ হলো বিশেষ বিশেষ কোর্ট বিশেষ বিশেষ আইনজীবী হয়ে
যাওয়া।’ কিছু অসাধু কর্মচারী ও বেঞ্চ অফিসারদের দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ
নতুন নয়, অনেক সময় তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানা
গিয়েছিল।
কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য থেকে এটা পরিষ্কার যে
পরিস্থিতির উন্নতি নয়, বরং গুরুতর অবনতি ঘটেছে। তাঁরা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে
নিচ্ছেন। তবে ‘কোন কোর্টে কাকে নিয়ে গেলে মামলা জেতা যাবে’, রকেট গতিতে
শুনানি হওয়া, মামলা কজলিস্টে না এনে জামিন বা স্থগিতাদেশ হওয়া, বিনা নোটিশে
মামলা আংশিক শ্রুত হওয়া এবং বিচারপতিদের স্ত্রী-সন্তানদের আইন পেশায়
সক্রিয় হওয়ার মতো অভিযোগগুলোর মধ্যে কতগুলো নিতান্তই অব্যবস্থাপনাগত।
কিন্তু যেগুলো বিচারপতিদের জন্য প্রণীত আচরণবিধির বিচ্যুতি, সেটা খতিয়ে
দেখার দাবি রাখে। আর এই বিষয়টি প্রধানত প্রধান বিচারপতির এখতিয়ারভুক্ত বলেই
প্রতীয়মান হয়। আর প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিষয়ে একটি
ব্যাপকভিত্তিক তদন্তের জন্য একটি উপযুক্ত কমিটি গঠনের কথা জ্যেষ্ঠ
আইনজীবীদের কেউ কেউ অনুভব করছেন। তবে এর আগের একটি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট
‘নিখোঁজ’ কীভাবে হলো, তা রীতিমতো এক রহস্য। অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই এর
উদ্ঘাটন জরুরি। অ্যাটর্নি জেনারেল এক বিচারকের রায় লিখতে না পারার কারণে
হাসাহাসির যে গল্প বলেছেন, তাতে সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুর ‘এলডি
ক্লার্ক হতেও অযোগ্যদের বিচারক নিয়োগ’ মন্তব্যটির প্রতিধ্বনি রয়েছে। নতুন
প্রধান বিচারপতি যথার্থই বিচারক নিয়োগ আইন করতে বলেছেন। এর দ্রুত বাস্তবায়ন
আমরা আশা করি।
No comments