ভারতে হিন্দু নারীর মুসলিম স্বামীদের হত্যার হুমকি
শতাধিক
মুসলিম পুরুষের এক তালিকা ফেসবুকে প্রকাশ করে তাদের হত্যার আহ্বান
জানিয়েছিল হিন্দু কট্টরপন্থীরা। তাদের অপরাধ, হিন্দু নারীকে বিয়ে করা।
বিতর্কিত এই তালিকাটি এখন ফেসবুক থেকে মুছে ফেলা হয়েছে। তালিকায় যে
মুসলিম পুরুষদের নাম ছিল, তাদের ফেসবুক প্রোফাইলের লিংকও সেখানে দেয়া ছিল।
ফেসবুকের একটি পাতায় তালিকা প্রকাশ করে 'তাদের খুঁজে বের করে হত্যার'
আহ্বান জানানো হয়। তালিকাটি প্রকাশের পর এটি ভারতে তীব্র ক্ষোভ সৃ্ষ্টি
করেছে। যাদের নাম এই তালিকায় আছে তাদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়।
যে ফেসবুক পাতায় এই তালিকা প্রকাশ করা হয়, সেটির নাম 'হিন্দুত্ব বার্তা।
তবে কোনো হিন্দুত্ববাদী সংগঠনই এই ফেসবুক পাতার সাথে তাদের সম্পর্কের কথা
স্বীকার করেনি। টুইটারে প্রথম একজন এই তালিকাটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে
বিষয়টি অনেকের নজরে আসে। টুইটার বার্তাটিতে বলা হয়, "হিন্দু সন্ত্রাসীরা
আন্তধর্মীয় বিয়ের একটি দীর্ঘ তালিকা প্রকাশ করে এই মহিলাদের স্বামীদের
হত্যার জন্য হিন্দুদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। " যদিও পাতাটি এখন ফেসবুক
থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে, কয়েকটি ভারতীয় নিউজ সাইট এই ফেসবুক পাতার ছবি
তাদের সাইটে প্রকাশ করেছে। যদিও তারা নামগুলো অস্পষ্ট করে দিয়েছে। সব কয়টি
ফেসবুক পোস্টেই তথাকথিত 'লাভ জিহাদে'র বিরুদ্ধে সহিংসতায় উস্কানি দেয়া
হয়। ভারতে কট্টরপন্থী হিন্দু গোষ্ঠীগুলো কত কয়েক বছর ধরে এরকম প্রচারণা
চালাচ্ছে যে মুসলিম পুরুষরা হিন্দু মেয়েদের ধর্মান্তরিত করার জন্য প্রেমের
ফাঁদে ফেলে বিয়ে করছে।
"এরকম একটা তালিকা যে তৈরি করা হয়েছে সেটাই খুব
উদ্বেগের কথা", বলছিলেন ভারতের 'অল্ট নিউজ' বলে একটি সাইটের অন্যতম
প্রতিষ্ঠাতা প্রতীক সিনহা। তাদের সাইট গণমাধ্যমে 'ফেইক নিউজ' বা ভুয়া
খবরের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে। মোট ১০২ জনের নাম ছিল এই তালিকায়। ফেসবুকে
তাদের রিলেশনশীপ স্ট্যাটাস দেখে এই তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করা
হচ্ছে। প্রতীক সিনহা বলেন, এবারই যে প্রথম এরকম তালিকা প্রকাশ করা হলে, তা
নয়। ২০১৭ সালে আরেকটি তালিকা ছাড়া হয়েছিল 'জাস্টিস ফর হিন্দুস' নাম
দিয়ে। সেখানেও মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় উস্কানি দেয়া হয়েছিল।
প্রতীক সিনহা বলেন, "কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যে প্রচারণা চালানো হয়
এবং এসব তালিকা একজনের ফেসবুক পাতা থেকে আরেকজনের পাতায় চালাচালি হতে
থাকে, এটা তার একটা উদাহারণ।" রক্ষণশীল ভারতীয়রা বরাবরই হিন্দু-মুসলিম
বিয়ে মেনে নিতে আপত্তি করেছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে এ ধরণের বিয়ের পেছনে
একটি 'ষড়যন্ত্রমূলক উদ্দেশ্য' খোঁজা হচ্ছে, যেটি আগে কখনো শোনা যায়নি। এক
মুসলিম পুরুষকে সম্প্রতি কুপিয়ে হত্যা করা হয় অন্য ধর্মের মেয়েকে বিয়ে
করায়। অন্যদিকে এক হিন্দু মেয়ে তার মুসলমান ছেলে বন্ধুর সাথে সম্পর্ক
নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে হয়রানির শিকার হওয়ার পর আত্মহত্যা করে।
No comments