বিচারক সংকট
দেশের
আদালতগুলোয় মামলার পাহাড় জমেছে। বিচারক সংকট ও অনুন্নত অবকাঠামোর কারণে
বিচারিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে এ পরিস্থিতি। এ থেকে উত্তরণে
নতুন বিচারক নিয়োগ এবং আদালত কাঠামোর সংস্কার প্রয়োজন। উচ্চ আদালতের আপিল
বিভাগে এক সময় এগারোজন বিচারপতি থাকলেও বর্তমানে রয়েছেন মাত্র চারজন। গত ১০
নভেম্বর প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা এবং ২ ফেব্রুয়ারি ভারপ্রাপ্ত প্রধান
বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা পদত্যাগ করেছেন। এর আগে গত বছরের
জানুয়ারিতে একজন বিচারপতির মৃত্যু এবং এরপর দু’জন বিচারপতি অবসরে যাওয়ার পর
নতুন করে কোনো বিচারপতিকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। বস্তুত আপিল বিভাগে গত দুই
বছরে কোনো বিচারপতির নিয়োগ হয়নি। ফলে মামলাজট কমাতে পদক্ষেপ নেয়া সত্ত্বেও
এক্ষেত্রে অগ্রগতি সামান্য। বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা
১৬ হাজার ৫৬৫ (৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত)। এই বিশালসংখ্যক মামলা দ্রুত
নিষ্পত্তি করতে দুটি বেঞ্চ গঠন করা দরকার, যা মাত্র চারজন বিচারপতি দিয়ে
সম্ভব নয়। আমরা মনে করি, আপিল বিভাগে যে হারে মামলার সংখ্যা বাড়ছে তাতে জট
কমাতে এবং বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচারের স্বার্থে দ্রুত বিচারক নিয়োগ দেয়া
প্রয়োজন।
শুধু উচ্চ আদালতে নয়, দেশের অধস্তন আদালতগুলোও বিচারক ও অবকাঠামো
সংকটে ভুগছে। এসব আদালতে মামলাজট সমস্যা তীব্র। তবে স্বীকার করতে হয়,
সরকার ও বিচার বিভাগের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে গত দুই বছরে আদালতগুলোতে মামলা
নিষ্পত্তিতে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। তারপরও মামলাজট নিরসনে হিমশিম খেতে
হচ্ছে বিচারকদের। অনেক জেলায় বিচারকসংশ্লিষ্ট সহায়ক জনবল সংকটের কারণে
বিচার কাজে গতি আসছে না। মামলা অনুপাতে নতুন বিচারক ও সহায়ক
কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ না হওয়ায় বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্ন
জেলায় প্রয়োজনীয় আদালত না থাকায় বিচারপ্রার্থীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত
হচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ, পরিবেশ আদালতের কার্যক্রম এখনও সীমাবদ্ধ। তাই দেখা
যায়, কোনো ঘটনা হয়তো পরিবেশসংক্রান্ত, কিন্তু সংশ্লিষ্ট জেলায় পরিবেশ আদালত
না থাকায় আইনজীবী ও বাদী বিষয়টিকে অন্য ধারা ব্যবহার করে ফৌজদারি মামলায়
পরিণত করছেন। এতে কোনো পক্ষই ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। অধস্তন আদালতগুলো ভুগছে
এজলাস সংকটেও। জানা যায়, দেশের শতাধিক আদালতে বিচারকদের কোনো নিজস্ব এজলাস
নেই। তারা অন্য বিচারকের এজলাস ভাগাভাগি করেন। অর্থাৎ একজন বিচারক বিচার
কাজ শেষ করে অন্যকে বিচার কাজ করার সুযোগ দেন। এসব সংকট নিরসনে আদালত
কাঠামোর সংস্কার জরুরি। সরকারকে অবশ্যই এজন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান
করতে হবে। সরকার ও বিচার বিভাগের সমন্বয়ে এ সমস্যার দ্রুত সমাধান সম্ভব।
এদিকে অবিলম্বে দৃষ্টি দেয়া দরকার।
No comments