ব্যাংক ঋণ অবলোপনে অনিয়ম ঠেকাতে দুদকের ১০ দফা
নিয়মবহির্ভূতভাবে
ব্যাংক ঋণ অবলোপন ঠেকাতে ১০ দফা সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তিন ব্যাংকের ঋণ অবলোপন পক্রিয়ায় অসঙ্গতি খুঁজে পাওয়ার পর দুদক এ চিঠি
দিল। অসঙ্গতি খুঁজে পাওয়া ব্যাংক তিনটি হচ্ছে- এবি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক
ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড। ঋণ অবলোপনে অনিয়ম পাওয়ার পর তিন
ব্যাংকসহ দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের ঋণ অবলোপন প্রক্রিয়ায়
স্বচ্ছতা আনতে এ সুপারিশ করা হয়েছে। সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে ওই
সুপারিশসহ চিঠি পাঠান দুদক সচিব ড. শামসুল আরেফিন। চিঠির অনুলিপি বাংলাদেশ
ব্যাংকের গভর্নর এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র সচিবকেও
দেয়া হয়েছে। চিঠিতে দুদকের অনুসন্ধান টিমের সুপারিশ পর্যালোচনা করে তা
বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। যে খেলাপি ঋণ ৫
বছর পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হয়নি, তা ব্যাংকের লেজার বুক থেকে সরিয়ে অন্য
জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। নিয়ম হচ্ছে, সরিয়ে নেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ঋণ খেলাপির
বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে ব্যাংকের মামলা করা। অবলোপনকৃত ঋণের শতভাগ
নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে
দেখা গেছে, এসব নিয়মের কোনোটাই অনুসরণ করেনি তিনটি ব্যাংক। এসব কারণে ঋণ
অবলোপনের এই সুপারিশ করে দুদক বলছে, মামলা ছাড়া কোনো ঋণ অবলোপন করা যাবে
না। ঋণ অবলোপনের আগে অবশ্যই এর কারণ সুনির্দিষ্ট করতে হবে। সংশ্লিষ্ট
ব্যবসায়ী ঋণের ফান্ড অন্যত্র হস্তান্তর করেছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখতে হবে।
ঋণ সুপারিশ থেকে অবলোপন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে
কোনো ত্রুটি/অনিয়ম আছে কিনা, তা উল্লেখ করতে হবে। দুদকের সুপারিশে বলা
হয়েছে, ব্যাংকিং রেজুলেশন অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্ট (বিআরপিডি) সার্কুলার
০২/২০০৩ এর নির্দেশ মোতাবেক অবলোপনকৃত ঋণ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সব
পরিচালককে খেলাপি হিসেবে ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) চিহ্নিত করার
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিদ্যমান আইনি কাঠামোর আওতায় ঋণ আদায়ের
সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ঋণ অবলোপনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের
বোর্ডের অনুমোদনের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের
অনুমোদন নেয়ার বিধান প্রবর্তন করতে হবে। ঋণ অবলোপনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট
ব্যাংকের আগের বছর পর্যন্ত লভ্যাংশ থেকে শতভাগ প্রভিশন রাখার নিয়ম থাকলেও
কোনো কোনো ব্যাংক চলতি বছরের লভ্যাংশ থেকে প্রভিশন করে থাকে, যা বন্ধ করতে
হবে। ঋণ অবলোপনের ক্ষেত্রে প্রচলিত বিধান মোতাবেক অর্থ ঋণ আদালতে মামলা
করতে হয় এবং মামলায় রায় পাওয়ার পর ব্যাংক এক্সিকিউশন কেস করে। অর্থাৎ,
এক্ষেত্রে ২টি মামলা করতে হয়। একটি মূল মামলা, অপরটি এক্সিকিউশন মামলা।
কিন্তু অনেক ব্যাংক মূল মামলা করার সঙ্গে সঙ্গেই ঋণ অবলোপন করে ফেলে।
এক্ষেত্রে এক্সিকিউশন মামলার পর ঋণ অবলোপনের বিষয়টি বিবেচনা করার বিধান
তৈরি করতে হবে। সুপারিশে প্রচলিত নিয়মে অনেক ক্ষেত্রে মামলা ছাড়াও বাংলাদেশ
ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে ঋণ অবলোপন করা যায়। এক্ষেত্রে মামলা ছাড়া কোনো ঋণ
যেন অবলোপন করা না যায়, সে রকম বিধান প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে।
No comments