প্রত্যাবাসন চুক্তির পর পালিয়ে এসেছে ৬০ হাজার রোহিঙ্গা
রোহিঙ্গাদের
প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের চুক্তি হলেও প্রত্যাবাসন
পরবর্তী রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় এখনো কাটছে না। রোহিঙ্গাদের
ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশের সাথে চুক্তি করার পরও সেনাবাহিনী
বর্বরতা থামাচ্ছে না। দ্বি-পাক্ষিক চুক্তিতে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের
প্রত্যাবাসনে যথাযথ প্রস্তুতি এবং নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করলেও
এখনো রাখাইনে রোহিঙ্গা পল্লীতে জ্বালাও-পোড়াওয়ের অভিযোগ করছেন রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে রাখাইনের উগ্রবাদী বৌদ্ধ
সন্ত্রাসী ও দেশটির সেনারা। চুক্তির পর গত দুই মাস ৮ দিনে আইওএম ও সরকারের
দেয়া তথ্যমতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ৬০ হাজার রোহিঙ্গা। প্রতিদিনই
রাখাইনের রোহিঙ্গা পল্লীতে এখনো জ্বালাও-পোড়াওয়ের ঘটনা রোহিঙ্গাদের আতঙ্কিত
করছে। তবে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের পক্ষে যথাযথ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পরিবারভিত্তিক রোহিঙ্গাদের তালিকার কাজও এগিয়ে চলছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
কার্যক্রমে জাতিসঙ্ঘকেও অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রোহিঙ্গা
প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি হয়েছে
গত ২৪ নভেম্বর। চুক্তির দুই মাসের মাথায় প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও
দু’দেশের প্রস্তুতি না থাকায় প্রত্যাবাসন পিছিয়ে যায়। রাখাইনের ওপারের
সূত্রগুলো জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ৩০টি
শিবির নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি তিনটি ট্রানজিট পয়েন্টও
প্রতিষ্ঠা করছে। সে দেশের তমব্রু লেফ্ট নাগপুরাতে এই তিনটি ক্যাম্প তৈরী
করছে প্রশাসন। অপরদিকে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষও এপারের সীমান্তের পাঁচটি
ট্রানজিট পয়েন্ট তৈরী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ পাঁচটি ট্রানজিট পয়েন্টের
জন্য স্থানও নির্ধারণ করা হয়েছে। রোহিঙ্গারা সুনির্দিষ্টভাবে বলছে, এপার
থেকে ওপারে গিয়ে তারা কোন অবস্থাতে শিবিরে বন্দীর মতো জীবন কাটাতে চায় না।
তারচেয়ে এপারে তারা ভালো পরিবেশে রয়েছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সরকারের পক্ষে
গঠিত ওয়ার্কিং গ্রুপ কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও মিয়ানমারের পক্ষ থেকে
প্রয়োজনীয় সহযোগিতার বিষয়টি অনুপস্থিত বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে মংডুর দংখালীতে ফের অভিযান শুরু করেছে সেনা সদস্যরা। কয়েক প্লাটুন
দংখালী ও এর আশপাশ ঘিরে রোহিঙ্গা বসতি লক্ষ্য করে রোববার রাতে গুলিবর্ষণ
করেছে। ফলে গ্রামটির কয়েক শ’ রোহিঙ্গা সীমান্তের জিরো পয়েন্টে দংখালীতে
পালিয়ে এসেছে। গত এক সপ্তাহে পাচ শতাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের উখিয়া ও
টেকানাফের আশপাশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছে। টেকনাফের সাবরাং হারিয়াখালী
সেনাবাহিনী ত্রাণকেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের
প্রতিনিধি দেলোয়ার হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এখন রোহিঙ্গারা সাগরপথে নৌকা
দিয়ে টেকনাফের বিভিন্ন উপকূলীয় পয়েন্ট দিয়ে ঢুকছে। শনিবার ও রোববার
আশ্রয়সন্ধানী প্রায় আড়াই শতাধিক রোহিঙ্গাকে ত্রাণ দিয়ে ক্যাম্পে আশ্রয়
দেয়ার সত্যতা জানান তিনি। নতুন করে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান,
সেনাবাহিনীর হামলার মুখে তারা বাড়িঘর ছেড়ে বন-জঙ্গলে পালিয়ে ছিল। সেখানে
তারা খাবারের জন্য হাটবাজারে যেতে পারছে না। মংডুর দংখালীর উপকূলে রোহিঙ্গা
গ্রামে অগ্নিসংযোগ ও গুলি চালিয়েছে সেনারা। ফলে প্রাণ বাঁচাতে তারা
বাংলাদেশে আশ্রয়ের সন্ধান করছে। দংখালীর বালুরচরে ত্রিপল টাঙ্গিয়ে প্রায়
দুই মাসের মতো অবস্থান করছে প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা শরণার্থী
প্রত্যাবাসন কমিশনার, মোহাম্মদ আবুল কালাম জানান, বর্তমানে রোহিঙ্গাদের
পরিবারভিত্তিক তালিকার কাজ এগিয়ে চলছে। পাশাপাশি দুইটি ট্রানজিট ক্যাম্প
স্থাপনের কাজ চলছে। মানবিক সহায়তায় রোহিঙ্গাদের সকল ধরনের সহায়তা দেয়া
হচ্ছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নতুন পুরাতন
মিলে এ পর্যন্ত ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৩৩৭ রোহিঙ্গার নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে।
কক্সবাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি)’র তথ্যমতে, গত
২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৮৯ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে।
No comments