স্বর্ণালী বালুর হাতছানি সোনারচরে
পটুয়াখালীর
রাঙ্গাবালী উপজেলার পূর্ব-দক্ষিণে বঙ্গপসাগরের কোল ঘেঁষে সোনার চর।
বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপটির বুকে কোনো বসতি বা মানুষের সুরেলা কণ্ঠ কানে না
বাজলেও পাখির কলরব আর সাগরের ঢেউয়ের গর্জনে মুখরিত হয়ে ওঠে পরিবেশ। সাগরে
আছরে পরা ঢেউগুলোও কোনো চিত্র শিল্পীর রঙ তুলির পরশ মনে হয়। শেষ বিকেলে
মৃদু বাতাসের ছন্দেও কিছুটা আনন্দ উপভোগ করে সবুজ গাছপালাও। নোনা জলে ভেজা
স্বর্ণালী বালুতে চলে লাল কাঁকড়াদের ছুটাছুটি। খানিকটা দূরে ঝাউ বাগানের
ভেতর দিয়ে বয়ে চলা বাতাসের শো শো আওয়াজ। ঝাউ গাছের ঝরা পাতাগুলো শুকনো
বালুর ওপর যেন কার্পেটের নরম বিছানায় পরিনত হয়। মাঝে মাঝে দ্বীপে উড়ে আসা
পাখিদের কলকাকলি সমুদ্র সৈকতের অপরূপ রূপকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে। এমনই
অতুলনীয় হচ্ছে সোনারচরের সৌন্দর্য। স্থানীয়দের মতে এ চরটিকে সরকারিভাবে
রক্ষণাবেক্ষণ করলে পর্যটন শিল্পে যোগ হবে এক নতুন মাত্রা। স্বর্ণময় রূপ
নিয়ে উপকূলবর্তী জেলা পটুয়াখালীর সর্বদক্ষিণে সমুদ্রের কোলে প্রকৃতির অপার
সৌন্দর্য্য নিয়ে জেগে আছে এই চরটি। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, নগর থেকে বহুদূরের
এই চরের সৌন্দর্য এখনো অনেকের কাছেই অজানা। নদী আর সড়ক পথ পাড়ি দিয়ে
সোনারচরে এসেই এর সৌন্দর্য্য উপলব্ধি করা যায়। অনেকেরই হয়তো বা ম্যানগ্রোভ
আর ঝাউ বাগানের শো-শো শব্দ নির্জনে সৈকতের বালুতে গা এলিয়ে দিয়ে শোনা হয়নি ।
অবলোকন করা হয়নি উত্তাল সাগরের ঢেউয়ের দৃশ্য। বন্ধুদের হাতে হাত রেখে
নির্জন পরিবেশে ঝাউ বনের মধ্যে বয়ে যাওয়া দিঘল পথে যাওয়া হয়নি। নয়নে ধারন
করতে পারেনি শিশির ভেজা বালুতে লাল কাঁকড়াদের আঁকা অনাবিল সুন্দরের আলপনা।
কোনো শিল্পির রঙ তুলির ছোয়া প্রাকৃতিক সব বুনোরাই যেন সৈকতের সৌন্দর্য্যকে
অনেকখানি বাড়িয়ে রেখেছে।
প্রকৃতির টানে
সোনারচরের আকর্ষণ যেকোনো মানুষকেই কাছে টানে। এখানে পা না ফেললে এটা বোঝার কোন উপায় নেই কোনো দর্শনার্থীর। এখানে রয়েছে প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত। সূর্যাস্ত আর সুর্যোদয়ের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে কোনো দর্শনার্থিকে স্থানন্তর হতে হয় না। একই স্থানে বসে পরিবারের সদস্যরা এ দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। অপরুপ লীলার দৃশ্যে সমুদ্রে টেনে নেয়ার বিন্দুমাত্র ভয় জাগে না কারো মনে। সমুদ্রের স্রোতের কারণে পানির নিম্নমুখী টান লক্ষ্য করা যায়নি। ফলে পর্যটকরা এখানে থাকবেন নিরাপদে। সৈকতের গা ঘেঁসে জেগে থাকা ঝাউবন এখানকার সৌন্দর্য আরো অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। হরিণ, বুনো মহিষ, মেছোবাঘ, শুঁকর, উদসহ নানা প্রজাতির প্রাণী রয়েছে এখানে। কোনো দর্শনার্থির সকালে উঠতে ঘড়ির কাটা দেখতে হয় না। বনের পাখিরাই অপেক্ষমাণ সময়ের আওয়াজ তোলে সর্বদাই। কখন রাত বারোটা বাজলো, কিংবা কখন ভোর তা ঘড়ি দেখে কারো বোঝার প্রয়োজন হয় না এখানে। এই সময়গুলোতে পাখিরা একযোগে আওয়াজ তুলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথাই মনে করিয়ে দেয়। শীত মৌসুমে স্থানীয় পাখির দলে যোগ দেয় হাজারো অতিথি পাখি। সাইবেরিয়ান হাঁস, সরাইল, গাঙচিলসহ নানা জাতের পাখিরা আসে। প্রভাত আর গোধুলি ক্ষণই সোনারচরের অন্যতম আকর্ষণ। পূর্ব আকাশের দিগন্ত ছুঁয়ে উঁকি দেয় ভোরের নতুন সুর্য। শেষ বিকালে রক্তরঙ সূর্যটা রক্তিম আভা ছড়িয়ে সমুদ্রের কোলে নীড় খোঁজে। তখন সোনারচরের স্বর্ণময় রূপের নীল জলকে স্বর্ণালী করে তোলে। গোধুলির আচ্ছন্নতায় ম্লান হয় সোনারচরের আলো। নিজের রূপের আয়নায় ঘোমটা টেনে আরেকটি নতুন সকালের অপেক্ষায় ঘুমিয়ে পড়ে সমুদ্রের কোলে জেগে ওঠা স্বর্নালি বর্ণের সোনারচর।
আয়তন ও আকৃতি ঃ
ভূখন্ড পরিমাপের হিসাবে সোনারচরের আয়তন ৭ হাজার একর। সাম্প্রতিককালে চরের পূর্বদিকে নতুন চর পড়ায় এই আয়তন ১০ হাজার একরে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। চরটি দেখতে অনেকটা বাদামের দানার আকৃতির মত। সোনারচর ও এর পার্শ্ববর্তী চর আন্ডার মাঝখানে একসময় বড় নদী ছিল। কালের বিবর্তণে সে নদী এখন ছোট হয়ে গেছে। শুকনো সময়ে পায়ে হেঁটেই পার হওয়া যায়। সোনারচর চ্যানেল সরু হয়ে গিয়ে বনের সৌন্দর্য্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়াও অগনিত চ্যানেল রয়েছে সোনার চরের আশে পাশে। পর্যটকরা ঘুরতে পারেন নৌকা অথবা ট্রলার নিয়ে। চ্যানেলের দুই পাশ জুড়ে বহু পুরনো ম্যানগ্রোভ আর ঝাউ বন। যা বন বিভাগের রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ রেঞ্জের সোনারচর বিটের আওতাধীন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি চরের কোল ঘেঁষে অবস্থান মৌসুমি জেলে অথবা জেলে শ্রমিকের। শুকনো মৌসুমে নানা স্থান থেকে ব্যবসার জন্য এই চরটিতে আশ্রয় নেয় জেলেরা। একটু দূরেই রয়েছে তাদের সামর্থ্যানুযায়ী কয়েটি খাবার হোটেল। বৃত্তবানদের জন্য কোনো কোমল পানীয় না থাকলে সমুদ্রের বালু খনন করে তারা তোলে খাবার পানি। যার স্বাদ অসাধারণ।
যাওয়ার পথ ঃ
সরকারীভাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকায় সোনারচরে সরাসরি সড়ক কিংবা নৌপথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা আজও হয়ে ওঠেনি। জেলা শহর পটুয়াখালী থেকে গলাচিপা উপজেলায় পৌঁছাতে হবে কোনো দর্শনার্থিকে। সেখান থেকে যে কোনো ভাড়াটে মটর সাইকেলের মাধ্যমে পৌঁছাতে হবে আগুনমুখা নদীর মোহনায়। কোনো তৃষ্ণার্থ ব্যক্তি আগুন মুখার তীরে পৌঁছালে বুড়াগৌরাঙ্গ ও দাঁড়ছিড়া নদী পাড়ি দিতেই দু’পাশ জুড়ে ঘন ম্যানগ্রোভ বনের দৃশ্য তার মনকে দ্বিগুণ প্রাণবন্ত করে তুলবে। ট্রলার কিংবা লঞ্চযোগে আগুনমুখার মোহনা থেকে ঘণ্টা দুয়েক এগুলেই চোখে পড়বে মায়াবী দ্বীপ ‘চর তাপসী’। তাপসীর দুই পাশ জুড়ে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য অতিক্রম কালেই সোনার চরের হাতছানি। তাপসী থেকে ৩০ মিনিটের পথ দক্ষিণে এগিয়ে গেলেই সোনারচর। বিত্তবানরা যেতে পারেন স্পিডবোট নিয়েও। এছাড়াও রয়েছে ছোট ছোট ইঞ্জিন চালিত ট্রলার। রাঙ্গাবালী উপজেলা সদর থেকে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে সোনারচর যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আবার কুয়াকাটা থেকেও সমুদ্র পাড়ি দিয়ে সোনারচরে যাওয়া যায়।
থাকার জায়গা ঃ
সোনারচরে রাত্রিযাপনের জন্য নিরাপদ আরামদায়ক ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি। তবে প্রশাসনের উদ্যোগে পর্যটকদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ছোট্ট তিন কক্ষের একটি বাংলো। রয়েছে বন বিভাগের ক্যাম্প। এসব স্থানে রাতে থাকার সুযোগ রয়েছে। চাইলে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখে ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা ট্রলারে মাত্র আধাঘন্টার মধ্যে রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নে গিয়ে থাকার সুযোগ রয়েছে। সেখানে রয়েছে বন বিভাগ, বেসরকারি সংস্থা স্যাপ-বাংলাদেশ, মহিলা উন্নয়ন সমিতির বাংলো ও সাথী মিয়ার রেস্ট হাউজ।
নামকরণ ঃ
সোনারচরে নেই কোনো স্বর্ণ, আছে স্বর্ণালি রঙের বালু আর মৃদু বাতাসের নিত্য। সকাল কিংবা শেষ বিকেলের রোদের আলো চরের বেলাভূমিতে পড়লে দূর থেকে পুরো দ্বীপটাকে সোনারি রঙের থালার মতো মনে হয়। বালুর ওপরে সূর্যের আলোয় চোখের দৃষ্টিতে সোনারঙ আভা ছড়িয়ে যায়। মনে হবে দ্বীপটিতে যেন কাঁচা সোনার প্রলেপ দেয়া হয়েছে। বিশেষত এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই দ্বীপটির নাম ‘সোনারচর’ রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এক সময়ে দ্বীপটিতে প্রচুর পরিমাণে সোনালী ধান জন্মাতো বলে এই নামকরণ হয়েছে বলে ধারণা করা হয় । আবার অনেকে মৎস্য আহরণের ক্ষেত্র হিসেবে চরটিকে সোনারচর বলে অখ্যায়িত করেন।
সম্ভাবনার হাতছানি ঃ
সরেজমিনে সোনারচরের নিকটবর্তী রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ বাজারে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপচারীতা হয়। তাদের দাবি একটাই, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়ে এই চরের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলতে হবে। সোনারচরকে পর্যটনকেন্দ্র ঘোষণার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হলে এটি হবে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। এখানে পর্যটকদের ভিড় জমবে। পাশাপাশি সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে পারেন। পর্যটকরা সোনারচরের পাশেই জাহাজমারা, তুফানিয়া ও শিবচরসহ আরো কয়েকটি দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ পাবেন।
প্রকৃতির টানে
সোনারচরের আকর্ষণ যেকোনো মানুষকেই কাছে টানে। এখানে পা না ফেললে এটা বোঝার কোন উপায় নেই কোনো দর্শনার্থীর। এখানে রয়েছে প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত। সূর্যাস্ত আর সুর্যোদয়ের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে কোনো দর্শনার্থিকে স্থানন্তর হতে হয় না। একই স্থানে বসে পরিবারের সদস্যরা এ দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। অপরুপ লীলার দৃশ্যে সমুদ্রে টেনে নেয়ার বিন্দুমাত্র ভয় জাগে না কারো মনে। সমুদ্রের স্রোতের কারণে পানির নিম্নমুখী টান লক্ষ্য করা যায়নি। ফলে পর্যটকরা এখানে থাকবেন নিরাপদে। সৈকতের গা ঘেঁসে জেগে থাকা ঝাউবন এখানকার সৌন্দর্য আরো অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। হরিণ, বুনো মহিষ, মেছোবাঘ, শুঁকর, উদসহ নানা প্রজাতির প্রাণী রয়েছে এখানে। কোনো দর্শনার্থির সকালে উঠতে ঘড়ির কাটা দেখতে হয় না। বনের পাখিরাই অপেক্ষমাণ সময়ের আওয়াজ তোলে সর্বদাই। কখন রাত বারোটা বাজলো, কিংবা কখন ভোর তা ঘড়ি দেখে কারো বোঝার প্রয়োজন হয় না এখানে। এই সময়গুলোতে পাখিরা একযোগে আওয়াজ তুলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথাই মনে করিয়ে দেয়। শীত মৌসুমে স্থানীয় পাখির দলে যোগ দেয় হাজারো অতিথি পাখি। সাইবেরিয়ান হাঁস, সরাইল, গাঙচিলসহ নানা জাতের পাখিরা আসে। প্রভাত আর গোধুলি ক্ষণই সোনারচরের অন্যতম আকর্ষণ। পূর্ব আকাশের দিগন্ত ছুঁয়ে উঁকি দেয় ভোরের নতুন সুর্য। শেষ বিকালে রক্তরঙ সূর্যটা রক্তিম আভা ছড়িয়ে সমুদ্রের কোলে নীড় খোঁজে। তখন সোনারচরের স্বর্ণময় রূপের নীল জলকে স্বর্ণালী করে তোলে। গোধুলির আচ্ছন্নতায় ম্লান হয় সোনারচরের আলো। নিজের রূপের আয়নায় ঘোমটা টেনে আরেকটি নতুন সকালের অপেক্ষায় ঘুমিয়ে পড়ে সমুদ্রের কোলে জেগে ওঠা স্বর্নালি বর্ণের সোনারচর।
আয়তন ও আকৃতি ঃ
ভূখন্ড পরিমাপের হিসাবে সোনারচরের আয়তন ৭ হাজার একর। সাম্প্রতিককালে চরের পূর্বদিকে নতুন চর পড়ায় এই আয়তন ১০ হাজার একরে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। চরটি দেখতে অনেকটা বাদামের দানার আকৃতির মত। সোনারচর ও এর পার্শ্ববর্তী চর আন্ডার মাঝখানে একসময় বড় নদী ছিল। কালের বিবর্তণে সে নদী এখন ছোট হয়ে গেছে। শুকনো সময়ে পায়ে হেঁটেই পার হওয়া যায়। সোনারচর চ্যানেল সরু হয়ে গিয়ে বনের সৌন্দর্য্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়াও অগনিত চ্যানেল রয়েছে সোনার চরের আশে পাশে। পর্যটকরা ঘুরতে পারেন নৌকা অথবা ট্রলার নিয়ে। চ্যানেলের দুই পাশ জুড়ে বহু পুরনো ম্যানগ্রোভ আর ঝাউ বন। যা বন বিভাগের রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ রেঞ্জের সোনারচর বিটের আওতাধীন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি চরের কোল ঘেঁষে অবস্থান মৌসুমি জেলে অথবা জেলে শ্রমিকের। শুকনো মৌসুমে নানা স্থান থেকে ব্যবসার জন্য এই চরটিতে আশ্রয় নেয় জেলেরা। একটু দূরেই রয়েছে তাদের সামর্থ্যানুযায়ী কয়েটি খাবার হোটেল। বৃত্তবানদের জন্য কোনো কোমল পানীয় না থাকলে সমুদ্রের বালু খনন করে তারা তোলে খাবার পানি। যার স্বাদ অসাধারণ।
যাওয়ার পথ ঃ
সরকারীভাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকায় সোনারচরে সরাসরি সড়ক কিংবা নৌপথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা আজও হয়ে ওঠেনি। জেলা শহর পটুয়াখালী থেকে গলাচিপা উপজেলায় পৌঁছাতে হবে কোনো দর্শনার্থিকে। সেখান থেকে যে কোনো ভাড়াটে মটর সাইকেলের মাধ্যমে পৌঁছাতে হবে আগুনমুখা নদীর মোহনায়। কোনো তৃষ্ণার্থ ব্যক্তি আগুন মুখার তীরে পৌঁছালে বুড়াগৌরাঙ্গ ও দাঁড়ছিড়া নদী পাড়ি দিতেই দু’পাশ জুড়ে ঘন ম্যানগ্রোভ বনের দৃশ্য তার মনকে দ্বিগুণ প্রাণবন্ত করে তুলবে। ট্রলার কিংবা লঞ্চযোগে আগুনমুখার মোহনা থেকে ঘণ্টা দুয়েক এগুলেই চোখে পড়বে মায়াবী দ্বীপ ‘চর তাপসী’। তাপসীর দুই পাশ জুড়ে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য অতিক্রম কালেই সোনার চরের হাতছানি। তাপসী থেকে ৩০ মিনিটের পথ দক্ষিণে এগিয়ে গেলেই সোনারচর। বিত্তবানরা যেতে পারেন স্পিডবোট নিয়েও। এছাড়াও রয়েছে ছোট ছোট ইঞ্জিন চালিত ট্রলার। রাঙ্গাবালী উপজেলা সদর থেকে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে সোনারচর যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আবার কুয়াকাটা থেকেও সমুদ্র পাড়ি দিয়ে সোনারচরে যাওয়া যায়।
থাকার জায়গা ঃ
সোনারচরে রাত্রিযাপনের জন্য নিরাপদ আরামদায়ক ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি। তবে প্রশাসনের উদ্যোগে পর্যটকদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ছোট্ট তিন কক্ষের একটি বাংলো। রয়েছে বন বিভাগের ক্যাম্প। এসব স্থানে রাতে থাকার সুযোগ রয়েছে। চাইলে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখে ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা ট্রলারে মাত্র আধাঘন্টার মধ্যে রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নে গিয়ে থাকার সুযোগ রয়েছে। সেখানে রয়েছে বন বিভাগ, বেসরকারি সংস্থা স্যাপ-বাংলাদেশ, মহিলা উন্নয়ন সমিতির বাংলো ও সাথী মিয়ার রেস্ট হাউজ।
নামকরণ ঃ
সোনারচরে নেই কোনো স্বর্ণ, আছে স্বর্ণালি রঙের বালু আর মৃদু বাতাসের নিত্য। সকাল কিংবা শেষ বিকেলের রোদের আলো চরের বেলাভূমিতে পড়লে দূর থেকে পুরো দ্বীপটাকে সোনারি রঙের থালার মতো মনে হয়। বালুর ওপরে সূর্যের আলোয় চোখের দৃষ্টিতে সোনারঙ আভা ছড়িয়ে যায়। মনে হবে দ্বীপটিতে যেন কাঁচা সোনার প্রলেপ দেয়া হয়েছে। বিশেষত এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই দ্বীপটির নাম ‘সোনারচর’ রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এক সময়ে দ্বীপটিতে প্রচুর পরিমাণে সোনালী ধান জন্মাতো বলে এই নামকরণ হয়েছে বলে ধারণা করা হয় । আবার অনেকে মৎস্য আহরণের ক্ষেত্র হিসেবে চরটিকে সোনারচর বলে অখ্যায়িত করেন।
সম্ভাবনার হাতছানি ঃ
সরেজমিনে সোনারচরের নিকটবর্তী রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ বাজারে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপচারীতা হয়। তাদের দাবি একটাই, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়ে এই চরের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলতে হবে। সোনারচরকে পর্যটনকেন্দ্র ঘোষণার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হলে এটি হবে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। এখানে পর্যটকদের ভিড় জমবে। পাশাপাশি সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে পারেন। পর্যটকরা সোনারচরের পাশেই জাহাজমারা, তুফানিয়া ও শিবচরসহ আরো কয়েকটি দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ পাবেন।
No comments