কখন হবে উত্তরের উপ-নির্বাচন by সালাহউদ্দিন বাবর
ঢাকা
উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের পাশাপাশি দুই সিটির বর্ধিত ৩৬টি ওয়ার্ডের
কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল ২৬
ফেব্রুয়ারি। কিন্তু হাইকোর্ট এসব পদের নির্বাচনের তফসিলের কার্যকারিতা তিন
মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। এসব পদের নির্বাচন নিয়ে মহানগরীর দুই অংশে
প্রার্থীদের ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল। ঢাকায় নির্বাচনী একটি আবহ
সৃষ্টি হয়েছিল। তা এখন থেমে যাবে। সে যা-ই হোক, নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ায়
বিভিন্ন মহলে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের
বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা নির্বাচন পেছানোর ক্ষেত্রে দায়ী করেছেন নির্বাচন কমিশনকে।
তাদের অভিমত হচ্ছে, ইসি ত্রুটি রেখেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে বলেই
এমন পরিস্থিতি হয়েছে। এই নির্বাচন স্থগিতের যে আদেশ হাইকোর্ট থেকে এসেছে,
নির্বাচন স্থগিত হওয়া নিয়ে সরকারি দলের অন্যতম প্রধান নেতা ও দলের সাধারণ
সম্পাদক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন স্থগিতের আদেশ এসেছে। তার
পেছনে সরকারের কোনো হাত নেই। পক্ষান্তরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল
ইসলাম আলমগীর এ সম্পর্কে বলেছেন, নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত জেনে সরকার সুযোগ
নিয়েছে। সিটির নির্বাচনে যারা প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন তারা সাজঘরে বসে
নিজেদের তৈরি করতে শুরু করেছিলেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে ঢাকার এই ভোট
নিয়ে রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশনের ব্যস্ততা লক্ষ করা গিয়েছিল। জাতীয়
নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিতব্য এই ভোটের গতিপ্রকৃতি দেখার জন্য রাজনৈতিক
পর্যবেক্ষক মহল সোৎসাহভরে অপেক্ষা করছিল। ২৬ ফেব্রুয়ারির ভোটের আগে
নির্বাচনী ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে বেশ কিছু স্তর পার হতে হতো। ১৮ জানুয়ারির
মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সবারই মনোনয়নপত্র দাখিলের কথা ছিল। মনোনয়নপত্র
বাছাই হতো ২১ ও ২২ জানুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের তারিখ ছিল ২৯
জানুয়ারি। এরপর প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হতো। উত্তর সিটি
করপোরেশনের মোট ভোটার ২৯ লাখ ৪৮ হাজার ৫১০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ও নারী ভোটার
যথাক্রমে ১৫ লাখ ২২ হাজার ৭২৬ জন ও ১৪ লাখ ২৫ হাজার ৭৮৪ জন। দক্ষিণের নতুন
ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৭৭ হাজার ৫১০ জন। অবিভক্ত ঢাকা সিটি
করপোরেশনের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, ১৮৬৪ সালের ১ আগস্ট ঢাকা
মিউনিসিপ্যালিটির সৃষ্টি। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতে ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন
মি. স্কিনার।
তিনি পদাধিকার বলে ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির প্রথম চেয়ারম্যান
নিযুক্ত হন। ১৮৮৫ সালে সর্বপ্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান হন আনন্দ চন্দ্র
রায়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর থেকে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিই
চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৭ সালের পৌরসভা অধ্যাদেশ জারি
হওয়ার পর থেকেই চেয়ারম্যানের সাথেই ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হওয়ার পদ্ধতি
চালু হয়। ওই অধ্যাদেশ বলে ১৯৭৮ সালে ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটিকে সিটি করপোরেশনে
রূপান্তর করা হয়। এ সময় ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র হন ব্যারিস্টার
আবুল হাসনাত। ২০১১ সালে ১৯ নভেম্বর জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকার সিটি
করপোরেশন সংশোধনী বিল ২০১১ পাসের মাধ্যমে ঢাকা সিটি করপোরেশন বিলুপ্ত করা
হয়। এর ফলে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে বিভক্ত করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নামে স্বতন্ত্র দুটি করপোরেশন গঠন করা হয়। ঢাকা
উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকাগুলো হচ্ছে- মিরপুর, মোহম্মদপুর,
শেরেবাংলা নগর, পল্লবী, আদাবর, কাফরুল, ঢাকা সেনানিবাস, তেজগাঁও, গুলশান,
রামপুরা, বনানী, খিলক্ষেত, ভাটারা, তুরাগ, উত্তরা, উত্তরখান ও দক্ষিণখান।
আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পল্টন, সবুজবাগ, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, কোতোয়ালি,
সূত্রাপুর, বংশাল, ওয়ারী, রমনা, গেন্ডারিয়া, লালবাগ, হাজারীবাগ, ধানমন্ডি,
শাহবাগ, নিউমার্কেট, খিলগাঁও, কামরাঙ্গীরচরসহ অন্যান্য থানাধীন আচ্ছাদন
নিয়ে গঠিত। এ বছরটি সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কাটবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন রাজধানীতে বলেই এর গুরুত্ব অনেক বেশি। তা ছাড়া
দলীয় ভিত্তিতে এই নির্বাচন হবে।
সে জন্য রাজনৈতিক অঙ্গনে একে ঘিরে উৎসাহ
আগ্রহ ব্যাপক। দেশের প্রধান দুই দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ডি-ফেক্টো
বিরোধী দল বিএনপির ভেতরেই মুখ্যত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তাই সবাই একে
মর্যাদার লড়াই হিসেবে গ্রহণ করেছিল। দলীয়ভাবে মেয়রপ্রার্থীরা মনোনয়ন
পেয়েছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হলে উভয় দলের নেতাকর্মীরা প্রচারণায়
মাঠে নামার কথা। উত্তর সিটি করপোরেশনের এটি ছিল উপ-নির্বাচন, মেয়র পদে
মেয়াদপূর্ণ নয়। তথাপি এসব নির্বাচনে গুরুত্ব পাবে না। রাজধানীর দক্ষিণ সিটি
করপোরেশনের মেয়র পদে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা সাঈদ খোকন। উত্তরেও মেয়র
ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মরহুম আনিসুল হক। তার মৃত্যুতেই এখন উপ-নির্বাচন
হওয়ার কথা। এ বছর জাতীয় নির্বাচনের আগে আসন্ন এই উপ-নির্বাচন সব মহলের কাছে
যেমন গুরুত্ব বহন করছে, তেমনি নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু করার ব্যাপারে
নির্বাচন কমিশনের বিরাট চ্যালেঞ্জ। স্মরণ করা যেতে পারে, এর আগে কমিল্লা ও
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন ভালোভাবে হয়েছে। এর ফলে নির্বাচন কমিশনের
ওপর মানুষের আস্থা ফিরে আসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই আশাবাদ যাতে বজায়
থাকে এবং উত্তরোত্তর তা বেড়ে যায়, সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি
করপোরেশনের নির্বাচন যাতে ত্রুটিমুক্ত হয় তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া
উচিত। জাতীয় নির্বাচনের আগে যেহেতু একটি মর্যাদার এবং প্রভাব বিস্তারকারী
এই নির্বাচন। তাই প্রধান দুই দলের স্নায়ুচাপসহ বিজয় অর্জনের জন্য তারা
মরিয়া হয়ে উঠতে পারে। এই বিষয়টি আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক হতে হবে।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে, এ নির্বাচনের
সম্ভাব্য প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচারণার আগেই নির্বাচন প্রচার কাজ শুরু
করেছেন। এসব নির্বাচন বিধির পরিপন্থী। এখন যদি এসব বিষয় তদারকিতে আনা না হয়
তবে এসব সীমা ছাড়িয়ে এবং নির্বাচনের আগেই বিধি ভঙ্গের অপরাধ করা বাড়তে
থাকবে। সে অবস্থা যাতে সৃষ্টি না হয় সেজন্য এখন থেকে কমিশনের কঠোর হওয়া
বাঞ্ছনীয়। ঢাকা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শহর এবং পৃথিবীর অন্যতম এক জনবহুল
শহর। এদিকে এক খবরে প্রকাশ, গোটা পৃথিবীতে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বাড়ছে শহরের
জনসংখ্যা। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ
জনবহুল শহর হবে ঢাকা।
জনসংখ্যা বেড়ে চলার মডেলগুলোর ওপর ভিত্তি করে কানাডার
টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল সিটিস ইনস্টিটিউটের করা নতুন এক তালিকায়
এমন তথ্য উঠে এসেছে। এই ঢাকা শহরে অধিবাসীদের সেবা দিয়ে থাকে দুটি সিটি
করপোরেশনের দু’জন মেয়র। দুই মেয়রের দায়িত্ব পৃথিবীর অন্য বড় শহরগুলোর চেয়ে
কোনো অংশে কম নয় বরং বেশি। আর অন্য সিটি করপোরেশনগুলোর চেয়ে এই নগীর সমস্যা
হাজার গুণ। বিশ্বে অবাসযোগ্য শহরগুলোর তালিকায় রয়েছে ঢাকা। আরো খারাপ খবর
হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে হতাশাগ্রস্ত শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা সপ্তম। সম্প্রতি
যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান জিপজেটের করা এক তালিকায় এমন চিত্র উঠে
এসেছে। যেসব বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে এই তালিকা করা হয় তা হলো- মানসিক ও
শারীরিক স্বাস্থ্য, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, ট্রাফিক জ্যাম, লিঙ্গগত সমতা,
বেকারত্ব, নাগরিকদের আর্থিক অবস্থা, একটি শহর কী পরিমাণ সূর্যালোক পায়
ইত্যাদি। ১৫০টি শহরের ওপর করা বৈশ্বিক এ তালিকায় ঢাকার অবস্থান ১৪৪। হতাশার
ক্রমান্বয়ে ঊর্ধ্বক্রম অনুসারে শহরগুলোর তালিকাটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
অন্য দিকে, ১৫০তম অবস্থানে থাকা ইরাকের রাজধানী বাগদাদ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি
হতাশাগ্রস্ত শহর। এ ছাড়া ঢাকাবাসীর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের পয়েন্টেও
ভালো নয়। বলা হয়েছে, এ শহরে প্রচণ্ড ঘনবসতি। রয়েছে ভয়াবহ যানজট। ঢাকা
শহরের বহু সমস্যা রয়েছে। তাই নগরের মেয়রের পদটি অত্যন্ত কঠিন। যারা এই
শহরের নগর পিতা হওয়ার জন্য নির্বাচনে দাঁড়াতে চান, তাদের সাহসকে শুধু সাহস
বললেই চলবে না বলতে হবে দুঃসাহস। যে যা-ই হোক, এই শহরের মেয়র পদের নির্বাচন
ভবিষ্যতে হবে। এই শহরের করপোরেশন কর্তৃপক্ষের বহু সমস্যার কথা আগেই উল্লেখ
করা হয়েছে। এসব সমস্যায় ভুগতে ভুগতে ঢাকাবাসী ত্যক্ত বিরক্ত। সমস্যাগুলো
নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব নয়। এখনে তির্যক কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা
হতে পারে। ঢাকা মহানগরীতে নাগরিকদের সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে দ্বৈত ব্যবস্থা
রয়েছে। যেমন ঢাকা শহরে সুপেয় পানি সরবরাহ করে ঢাকা ওয়াসা। সরবরাহ করা পানি
প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অথচ এ ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের বলার বা করার
কিছুই নেই। অথচ যথেষ্ট পানির অভাবে নগরবাসীর প্রয়োজন সম্পন্ন করতে পারে না।
পর্যাপ্ত পানি পাওয়ার যে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন, তা ওয়াসা নেয় না।
ঢাকা
মহানগর নদী দিয়ে বেষ্টিত, কিন্তু দূষণের কারণে সে পানি ব্যবহারের অযোগ্য।
নদী দূষণমুক্তের উদ্যোগ সিটি করপোরেশন নিচ্ছে না। ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহার
না করে ওয়াসা ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করছে। এতে ঢাকার পরিবেশের ভারসাম্য
নষ্ট হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের এ ব্যাপারে উদ্যোগ আয়োজন নেই। ঢাকা শহর দ্রুত
বিস্তৃত হচ্ছে। এই অপরিকল্পিত বিস্তার রোখা সম্ভব হচ্ছে না। নগরীর এই
অপরিকল্পিত বিস্তার নিত্যনতুন সমস্যা সৃষ্টি করছে। এ বিষয়টি দেখার দায়িত্ব
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। অথচ এই সরকারি প্রতিষ্ঠানটির এতে কোনো
মাথাব্যথা নেই। ভয়াবহ যানজটে নাকাল মহানগরবাসী। যে পথ দিয়ে নগরে যানবাহন
চলছে তা সিটি করপোরেশনের আওতায়। কিন্তু যানবাহন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা
করপোরেশনের হাতে নয়, পুলিশের হাতে। দুই পক্ষের কোনো সমন্বয় নেই। এই সমস্যা
ভয়াবহ হলেও তা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারি কোনো প্রচেষ্টা নেই। রাজধানীর
জনসংখ্যা কোটির অনেক উপরে। এ বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য এখনকার আইনশৃঙ্খলা
স্বাভাবিকভাবেই খারাপ। এখানে সিটি করপোরেশনের কিছু করণীয় নেই। এর দায়
সরকারি বাহিনী পুলিশের। কিন্তু এই অবনতির কারণে ভুগছে নগরবাসী। বিশেষ করে
সম্প্রতি যে হারে এই মহানগরীতে গুম, হত্যা, নারী নির্যাতন ঘটছে তাতে এক
ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কোনো নগরীতে এমন অবস্থা বিরাজ করলে সে
শহরের নাগরিকদের মনে স্বস্তি থাকার কথা নয়। বিভিন্ন সংবাদপত্র ২০১৭ সালের
গুম নারী নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সব চেয়ে অবাক হওয়ার বিষয়, এসব
গুমের কোনো হদিস পুলিশ করতে পারছে না। আরো বিস্ময়ের বিষয় হলো, গুম হওয়া
ব্যক্তিদের কেউ কেউ কিছুকাল পরে ফিরে আসছেন। কিন্তু এ সময় তারা কোথায়
কিভাবে ছিলেন ও কী কারণে তারা গুম হয়েছিলেন তার কোনো জবাব পাওয়া যাচ্ছে না।
এমন বিষয়গুলো শুধু ভীতিজনক নয় রহস্যময়ও বটে। সরকারি দলের অঙ্গ ছাত্র
সংগঠনের অন্ত এবং আন্তদল হাঙ্গামাও রাজধানীর পরিবেশ বিঘ্নিত করছে। ঢাকার
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন হাল এবং এর ফলে নাগরিক জীবনে যে বিরূপ প্রভাব
ফেলে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোচনা উৎকণ্ঠা রয়েছে। সম্প্রতি নগরীতে
নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি করেছে উগ্রবাদীদের তৎপরতা। এ নগরেই এসব ঘটছে কিন্তু
সিটি করপোরেশনের এখানে কিছু করণীয় নেই। গত বর্ষায় স্বাভাবিকের চেয়ে কিছু
বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় রাজধানীর রাজপথ সয়লাব হয়ে গিয়েছিল। পথে জলাবদ্ধতার
কারণে লোক ও যানবাহন চলাচলে মরাত্মক সঙ্কট দেখা দেয়। এমনকি কোনো কোনো পথের
ধারে বিভিন্ন ভবনের নিচের তলায় পানি প্রবেশ করে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে।
শহরের পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। ঢাকা দক্ষিণ সিটি
করপোরেশনেই জলাবদ্ধতার সমস্যাটা বেশি। কিন্তু এই জলাবদ্ধতা দূর করার কোনো
উদ্যোগ লক্ষ করা যায় না। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা সিটি করপোরেশনের
যেকোনো অংশের মেয়র হওয়াটা দুঃসাহসিক ব্যাপার। এই মহানগরী মূলত হাজার
সমস্যার একটি ভাগাড়। আর্থিক সীমাবদ্ধতা, দ্বৈত শাসন, সরকারের সহায়তার অভাব
এসব কারণে এই নগরীকে জনগণের বসবাসের উপযোগী করে তোলা এক কষ্টকর ব্যাপার এবং
অনেকটা যেন অসাধ্য সাধন। সমস্যা অগণিত কিন্তু তার সমাধান করাটা এককভাবে
দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। সরকারের পক্ষ থেকে এ কথা বারবার বলা হচ্ছে, দেশ
উন্নয়নের মহাসড়কে। কিন্তু ঢাকা শহরের সড়কগুলোর যে হাল তাতে মনে করার কোনো
কারণে নেই যে, আমরা সেই সুন্দর মসৃণ মহাসড়কে আছি।
সংস্কার ও উন্নয়ন মাথা
থেকে শুরু করে সর্বত্র ছড়িয়ে যায়। কিন্তু সেই বিচারে বিশৃঙ্খল নোংরা ঢাকার
উল্লেখ করার মতো কয়েকটি ফ্লাই ওভার ছাড়া ভিন্ন কিছু চোখে পড়ে না। সারা বছর
নানা মওসুমে ঢাকাবাসী যে মওসুমি ভোগান্তি ও কষ্ট সহ্য করে তা সমাধানের কোনো
জাদুর কাঠি কারো কাছে নেই। সমস্যার স্তূপ কিন্তু সুরাহার কোনো ভরসা নেই এই
বিরাট শহরের মানুষের। তাই দেশের এক কোটির ওপর মানুষ যদি হতাশায় ভোগে তবে
কোনো আশারবাণী শোনাতে পারবেন কি কোনো মেয়র? যে কোনো নগরীই এগিয়ে যায় একটি
পরিকল্পনার আলোকে। কিন্তু ঢাকা মহানগরীর জন্য সম্প্রতি তৈরি কোনো পরিকল্পনা
আছে সে খবর কারো জানা নেই। এভাবে কোনো কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ছাড়া কোনো
শহরের সমস্যা সুরাহা হওয়ার নয়। সিটি করপোরেশনের নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ায়
কিন্তু ভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করবে। তিন মাসের জন্য নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়া
অর্থ হচ্ছে আগামী জুন-জুলাইয়ের আগে সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হচ্ছে না। তখন
কিন্তু জাতীয় সংসদের নির্বাচনের বিষয় নিয়ে গোটা দেশ ব্যস্ত হয়ে পড়বে।
নির্বাচন কমিশনের জন্য সিটি করপোরেশনের ভোটের পর আবার জাতীয় নির্বাচনের
প্রস্তুতি নেয়া কষ্টকর হবে। সে ক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাচনের পরই করপোরেশনের
এই ভোট পিছিয়ে যেতে পারে।
No comments