আতঙ্কে কুপোকাত শেয়ারবাজার
মুদ্রানীতির
আতঙ্কে কুপোকাত শেয়ারবাজার। আজ সোমবার নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে
বাংলাদেশ ব্যাংক। তার নেতিবাচক প্রভাবে গতকাল রোববার শেয়ারবাজারে মূল্যসূচক
ও লেনদেন উভয়ই কমে গেছে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের
(ডিএসই) সার্বিক সূচকটি গতকাল এক দিনেই ৭১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৪ শতাংশ কমে
গেছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটি
১৯৩ পয়েন্ট বা ১ শতাংশ কমে গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আজ
জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন গভর্নর ফজলে কবির।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আগেই বলা হয়েছিল, মুদ্রানীতিতে ঋণের লাগাম
টানা হবে। যদিও এরই মধ্যে ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রীয়
ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা হয়েছে। ব্যাংকার শীর্ষ নির্বাহীদের
সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ
ব্যাংককে বলেছে, নির্বাচনের বছরে ঋণের লাগাম টানলে তাতে ব্যাংক খাতে সমস্যা
তৈরি হবে। এ অবস্থায় ঋণের লাগাম টানা হবে কি না, তা জানা যাবে মুদ্রানীতি
ঘোষণার পর। এদিকে ঋণের লাগাম টানা হতে পারে, এ জুজুর ভয়ে শেয়ারবাজারে
সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় দরপতন ঘটে গেছে। বাজারসংশ্লিষ্ট
ব্যক্তিরা বলছেন, মুদ্রানীতি সামনে রেখে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক
ভর করেছে। তাতে এদিন সকাল থেকে বাজারে ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতা বেড়ে যায়। আর
বিক্রির চাপে সূচকও কমতে থাকে। পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও বেসরকারি ইউনাইটেড
ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ মুসা বাজারের এ পতনের জন্য
মুদ্রানীতির চেয়ে দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতাকেই বেশি দায়ী করছেন।
তিনি বলেন, দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা
জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুর্নীতি-সংক্রান্ত একটি মামলার রায়ের দিন
ঘোষণা করেছেন আদালত। এ রায়কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছুটা অনিশ্চয়তা
তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বড়
বিনিয়োগকারীরাও কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। তাই তাঁরা বাজারে বিনিয়োগ
থেকে নিজেদের কিছুটা গুটিয়ে রেখেছেন। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মুদ্রানীতির
ভয়। মোহাম্মদ মুসা আরও বলেন, এরই মধ্যে ব্যাংক খাতে আমানতের সুদের হার বেশ
খানিকটা বেড়ে গেছে। তার মানে ভবিষ্যতে ঋণের সুদের হারও বাড়বে। ব্যাংক খাতের
আমানতের সুদ বেড়ে যাওয়া শেয়ারবাজারের জন্য মোটেই সুসংবাদ নয়।
এর মধ্যে
মুদ্রানীতিতে ঋণের লাগাম টানা হলে আমানত সংগ্রহে ব্যাংকগুলো আরও তৎপর হবে।
সব মিলিয়ে তাই বাজারে একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। যার নেতিবাচক প্রভাব
পড়েছে সূচক ও লেনদেনে। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের
(বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ প্রথম আলোকে বলেন, মুদ্রানীতি
সামনে রেখে একটি গোষ্ঠী বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে ফায়দা লুটছে। সাধারণ
বিনিয়োগকারীরা সেই আতঙ্কে আতঙ্কিত হয়ে হাতের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। যার
কারণে বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে বাজারে। দেখা যাবে মুদ্রানীতি ঘোষণার পর আবার
বাজার তার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে। অথচ এ মুদ্রানীতি সামনে রেখে একটি গোষ্ঠী
বাজারে দরপতন ঘটিয়ে কম দামে শেয়ার কিনেছে। শেয়ারবাজারের শীর্ষ পর্যায়ের
ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকালের
দরপতনে ঢাকার বাজারের মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) সোয়া ১ শতাংশের বেশি কমে
গেছে। গতকাল দিন শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৮২-এ। খাতভিত্তিক
লেনদেনের সবচেয়ে বেশি কমেছে টেলিকম খাতের লেনদেন। গতকাল এ খাতের ২
কোম্পানির সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৪ কোটি টাকা, যা আগের
কার্যদিবসের চেয়ে প্রায় ৫২ শতাংশ কম। আর খাতভিত্তিক লেনদেন বেড়েছে
বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের। এ খাতের ১৮ কোম্পানির সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ
ছিল প্রায় ৩৫ কোটি টাকা, যা আগের কার্যদিবসের চেয়ে ৭২ শতাংশ বেশি।
লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে গতকাল
লেনদেনে আধিপত্য ছিল প্রকৌশল খাতের। ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৮ শতাংশই ছিল এ
খাতের। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ব্যাংক খাত। ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৬ শতাংশই
ছিল এ খাতের। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস শেষে গতকাল ডিএসইএক্স সূচকটি কমে
দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৪৫ পয়েন্টে। দিন শেষে ঢাকার বাজারে লেনদেনের পরিমাণ ছিল
৩৫৯ কোটি টাকা, যা আগের কার্যদিবসের চেয়ে ৫৪ কোটি টাকা কম। দিন শেষে
চট্টগ্রামের বাজারে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৭ কোটি টাকা, যা আগের কার্যদিবসের
চেয়ে ৯ কোটি টাকা কম।
No comments