পাউরুটির এক জাদুঘর
‘পূর্ণিমা
চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।’ কাব্য, শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম- প্রায় সব ক্ষেত্রেই
এমন রুটি বা পাউরুটির উল্লেখ পাওয়া যায়। সেই পাউরুটির ইতিহাস ও প্রভাব নিয়ে
একটা জাদুঘর রয়েছে অস্ট্রিয়ায়, যার স্থাপত্যশৈলীও নজর কাড়ার মতো। যেন
স্বপ্নপূরীর এক বাড়ি। অস্ট্রিয়ার লিনৎস শহরের উপকণ্ঠে আস্টেন জেলার
‘পানেউম’ জাদুঘর ভবনটি যেন ভবিষ্যৎ থেকে উঠে এসেছে। প্রায় ১ হাজার বর্গ
মিটারজুড়ে শুধু একটি বিষয় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে- পাউরুটি। পিটার আউগেনডপলার
তার বেকিং কোম্পানির দৌলতে গোটা বিশ্বে কোটি কোটি ইউরো আয় করছেন। পাউরুটির
জন্য এমন এক স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির স্বপ্ন থেকেই এটি নির্মাণ করেছেন তিনি।
গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পিটার বলেন, ‘যে মুহূর্তে কিছুই ছিল না, তখন
রুটিই ছিল সম্বল। তা সে যতই খারাপ হোক না কেন। সেটা খেয়ে বেঁচে থাকার উপায়
ছিল। পাউরুটি না থাকলেই লোকে বুঝত, আর কিছুই নেই। এটাই পাউরুটির
বৈশিষ্ট্য।’ সাধের এ মিউজিয়ামের জন্য তিনি এক অসাধারণ ভবন গড়তে চেয়েছিলেন।
ভিয়েনার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্থপতি সংস্থা কোয়প হিমেলবাউ এ জাদুঘরের
নকশা তৈরি করে।
পিটার বলেন, ‘ভবনটির আকৃতি নিয়ে নিত্য নতুন ব্যাখ্যা শুনলে
খুব খুশি হই। কেউ বলে রুটির ডেলা বা কেকের ছাঁচ। অবশ্যই ভুল ধারণা, কারণ
আমি শুধু মেঘের জাহাজের কথা ভেবেই ভবনটি তৈরি করেছি।’ কোয়প হিমেলবাউ সংস্থা
তাদের উদ্ভাবনী নকশার জন্য গোটা বিশ্বেই পরিচিত। ফ্রাংকফুর্ট শহরে ইউরোপীয়
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদর দফতর থেকে শুরু করে মিউনিখ শহরের বিএমডব্লিউ
ওয়ার্ল্ড, ফ্রান্সের লিয়ঁ শহরে বিজ্ঞান ও নৃতত্ত্ব জাদুঘর ভবনও তাদেরই
সৃষ্টি। ‘পানেউম’ জাদুঘর ভবনটি সংগ্রাহকের ব্যক্তিগত প্রদর্শনীর মঞ্চ করে
তোলাই ছিল লক্ষ্য। প্রদর্শনীর বস্তুগুলো শুধু কাচের কেসের আড়ালে রাখা হয়নি,
দেয়াল ও সিলিংয়েও কিছু শোভা পাচ্ছে। ঘরের মাঝে ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে দর্শকরা
চারতলার ওপর জাদুঘরের মূল কাঠের কামরায় পৌঁছতে পারেন। পিটার আউগেনডপলার
নিজেই বেশ কয়েক বছর ধরে প্রায় ১ হাজার ২০০ নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তিনি বলেন,
‘আমরা দর্শকদের দেখাতে চাই, পাউরুটি কিভাবে বিগত ছয় থেকে আট হাজার বছর ধরে
মানবজাতির ইতিহাসের ওপর প্রভাব রেখেছে। শুধু খাদ্য নয়- কৃষি, শিল্প,
সংস্কৃতি, ধর্মসহ মানুষের জীবনের সব ক্ষেত্রেই রুটির ভূমিকা রয়েছে।’ প্রায় ৯
হাজার বছর প্রাচীন ‘গ্রেন স্ল্যাব’ বা শস্যের ফলকের মাধ্যমে মিউজিয়ামে
রুটির আদি যুগও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বিভিন্ন ধর্মীয় ঐতিহ্যে রুটিকে কিভাবে
সম্মান দেখানো হয়েছে মিউজিয়ামে তারও দৃষ্টান্ত দেখা যায়। যেমন, দক্ষিণ
আমেরিকা বা প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতায়। শিল্পের ক্ষেত্রেও রুটি তৈরির
প্রক্রিয়া কিভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তারও দেখা মেলে এখানে।
সালমান রিয়াজ
সালমান রিয়াজ
No comments