মর্মস্পর্শী দুটি মৃত্যু
শুক্রবার
ভোররাতের দিকে রাজধানীতে দুটি মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। একটি ঘটনায়
মারা গেছেন একজন হাসপাতাল কর্মী, অন্য মৃত্যুটি এক ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ীর।
দু’জনই নিহত হয়েছেন ছিনতাইকারীর হাতে, ভিন্ন ভিন্ন এলাকায়। প্রথম ঘটনায়
হাসপাতাল কর্মী হেলেনা বেগম ও তার স্বামী বরিশাল থেকে লঞ্চযাত্রায় খুব ভোরে
সদরঘাট টার্মিলালে নেমে বাসে চড়ে ধানমণ্ডিতে নামলেই একটি প্রাইভেট কারে
আসা ছিনতাইকারীরা তার ব্যাগ ধরে টান দেয়। মুহূর্তেই গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে
তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। দ্বিতীয়টিতে রাত তিনটার দিকে স্বামীবাগে
ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন ব্যবসায়ী ইব্রাহীম। তাদের ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত
অবস্থায় বাঁচার তীব্র আকাক্সক্ষায় দৌড়ে মাইলখানেক দূরের একটি হাসপাতালে
পৌঁছেন তিনি, সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে
সেখানে তার মৃত্যু ঘটে। উপরের দুটি ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে
দিচ্ছে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোন অবস্থায় রয়েছে। লক্ষ করার বিষয়,
ছিনতাইকারীরা একটি ঘটনায় রাত তিনটা, অন্যটিতে ভোর পাঁচটায় পথচারীর ওপর
আক্রমণ করেছে।
অর্থাৎ মধ্যরাতের পর থেকে প্রত্যুষ এই মধ্যবর্তী সময়ের
নির্জন রাস্তায়ই হত্যাকাণ্ড দুটি ঘটেছে। তবে কি আমাদের এখন ধরে নিতে হবে
যে, এই সময়ে আমাদের কারোরই ঘরের বাইরে থাকা উচিত নয়? তাহলে প্রশ্ন, রাতের
রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেসব সদস্য টহল দিয়ে থাকেন, তারা কী করেন?
ঢাকার বাইরে থেকে নাইট কোচ অথবা রাতের লঞ্চে যারা রাজধানীতে আসেন, তারা
পৌঁছেন খুব ভোরে। তারা তাহলে কীভাবে দ্রুত তাদের গন্তব্যে পৌঁছবেন? হাজার
হাজার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আসলে কাদের? শুধু গভীর রাত
বা অতি প্রত্যুষ নয়, দিন-দুপুরেও ছিনতাইয়ের ঘটনা কম ঘটেনি। এমনকি পুলিশের
বড় কর্মকর্তাকেও ছিনতাইকারীর কবলে পড়তে হয়েছে। সত্য কথা, রাজধানীতে প্রায়
পৌনে দুই কোটি লোক বসবাস করেন। এই শহরের আয়তনও অনেক বড়। এত বিস্তৃত এলাকা
পাহারা দিয়ে রাখা সহজ কাজ নয়। আমাদের কথা হল, প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
আকার বাড়িয়েও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
দায়িত্বে অবহেলা কিংবা অপরাধীদের সঙ্গে যোগসাজশের বিষয়টিও অতীতে অনেকবার
আলোচিত হয়েছে। আমরা মনে করি, তারা যদি তাদের দায়িত্বের প্রতি আন্তরিক
থাকেন, তাহলে ছিনতাই বা অন্য কোনো ধরনের অপরাধ দমন করা কঠিন কাজ হবে না।
মর্মস্পর্শী যে দুটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, তা অনেকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।
এমন মৃত্যু কারোরই কাম্য হতে পারে না। ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধ, বিশেষত
অপমৃত্যু রোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা ও দক্ষতা খুব বেশি
প্রয়োজন এখন।
No comments