প্রত্যাবাসন আতঙ্কে ক্যাম্প ছাড়ছেন অনেক রোহিঙ্গা
মিয়ানমার
সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গাদের অবশিষ্ট ঘরবাড়ি ধংস করতে অভিযান অব্যাহত
রেখেছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সম্প্রতি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে
চুক্তির পর নিজ উদ্যোগে কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা ফিরে গিয়েছিলেন রাখাইনের নিজ
এলাকায়। এখন সেসব এলাকায়ও রোহিঙ্গাদের উপর সীমান্তরক্ষী বাহিনী লেলিয়ে
দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। এদিকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সামনে রেখে
কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন অনে ক রোহিঙ্গা।
রোহিঙ্গারা জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার ওপারে রাখাইনের তুমব্রু এলাকায়
স্বল্পসংখ্যক রোহিঙ্গা নির্যাতন সহ্য করেও নিজ নিজ ঘরবাড়িতে থেকে যান। গত
কয়েকদিন তাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় মগরা। এরপর
রোহিঙ্গাদের ধরে নিয়ে শারীরিক নির্যাতনের পর কোথায় রাখা হয়েছে তা এখনো জানা
যায়নি। এছাড়া রাখাইনের বকশু ও বইল্যাপাড়ায় শুক্রবার থেকে টহল শুরু করেছে
সেনা সদস্যরা। রোহিঙ্গাদের সুত্র জানায়, শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে
সেনাবাহিনীর ৪০/৫০ জনের একটি দল অতর্কিতভাবে এলাকায় ঢুকে রোহিঙ্গাদের
বাড়িতে তল্লাশি ও ভাঙচুর করে। কয়েকজন রোহিঙ্গা ভাঙচুর বন্ধের জন্য সেনা
সদস্যদের কাছে গেলে তাদেরকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। হঠাৎ করে এভাবে তল্লাশির
কারণে রোহিঙ্গারা আতঙ্কে রয়েছেন। বাংলাদেশ-মিয়ানমার চুক্তি অনুসারে
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। প্রত্যাবাসনের
তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয়ের জন্য ঘুমধুম ও নয়াপাড়া এলাকায়
স্থাপন করা হচ্ছে দুটি ট্রানজিট ক্যাম্প।
আরো তিন ট্রানজিট ক্যাম্প
স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের প্রতিবেদনে বলা হয়,
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তররের জন্য এক লাখ রোহিঙ্গার তালিকা
চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। এদিকে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত মনে করে এখন কিছু
রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এসব রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে মিয়ানমারে
একাধিক মামলা থাকায় তারা দেশে ফিরতে চাননা। এজন্য প্রত্যাবাসন শুরুর আগেই
তারা দালালের মাধ্যমে সপরিবারে ক্যাম্প ছাড়ছেন। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের
বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপন করা চেকপোষ্ট অতিক্রমকালে যাত্রীবাহী বিভিন্ন
যানবাহনে তল্লাশি চালিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৬ হাজার রোহিঙ্গাকে আটক করে
ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নানের
পাঠানো এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম
কমিটির দাবি- আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নজর এড়িয়ে অনেক রোহিঙ্গা অন্যত্র চলে
গেছে। এসব রোহিঙ্গার সন্ধান করে তাদেরকে ক্যাম্প ফেরত আনতে হবে।কক্সবাজার
জেলা পুলিশ চট্টগ্রামমুখী সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপিত ১১টি চেকপোস্ট
ছাড়াও বিভিন্ন থানা পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড, র্যাব ও সেনা সদস্যরা
পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে রোহিঙ্গাদের আটক করছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে
৭১২ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগে ৫৫২ জনকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা প্রদান করা
হয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে
জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় এপিবিএনসহ এক হাজার পুলিশ সদস্য ও ২২০
জন ব্যাটালিয়ন আনসার নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর এক হাজার সাতশ’
সদস্য পর্যায়ক্রমে ত্রাণ বিতরণ কাজে সহায়তা করছে। কক্সবাজার ও বান্দরবান
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এপর্যন্ত প্রায় নয় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে
এসেছেন। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ছয় লাখ ৮৮
হাজার এসেছেন। কুতুপালং ক্যাম্পের হেড মাঝি আব্দুর রশিদ, বালুখালী
ক্যাম্পের হেডমাঝি লালু মাঝি, থাইংখালী তাজনিমারখোলা ক্যাম্পের হেড মাঝি
মোহাম্মদ আলী, বালুখালী ২নং ক্যাম্পের হেড মাঝি আবু তাহের সহ বেশ ক’জন
রোহিঙ্গা মাঝি জানান, এ পর্যন্ত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে উধাও হয়ে
গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব রোহিঙ্গার মধ্যে বিত্তশালীরা দেশের বিভিন্ন
স্থানে অবস্থানরত তাদের স্বজনদের কাছে চলে গেছে। কিছু রোহিঙ্গা মালয়েশিয়া ও
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সপরিবারে পাড়ি জমিয়েছে। আবার অধিকাংশ হতদরিদ্র
পরিবার বিভিন্ন শহরে বসবাসের জন্য ক্যাম্প ছেড়েছে।
No comments