প্রকৃতির সুরক্ষা বনাম মজলুমের আত্মরক্ষা! by গোলাম মাওলা রনি
অত্যাচারিত
ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অত্যাচার সইতে সইতে এমন সাহসী, কৌশলী ও চৌকস হয়ে ওঠেন;
যা দেখে অত্যাচারীর হৃদয়ে সদাসর্বদা মৃত্যুভয় প্রলয়ঙ্করী ঝড়রূপে সুনামি বা
টর্নেডোর তাণ্ডব নিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করে দেয়। এ অবস্থায় অত্যাচারী যখন
তার সর্বশক্তি দিয়ে সর্বশেষ মরণ কামড়ের মাধ্যমে মজলুমের অস্তিত্ব বিনাশের
জন্য আক্রমণ চালায়, ঠিক তখনই প্রকৃতি তার আপন মহিমায় অদ্ভুত এক লীলাখেলার
মাধ্যমে নবতর ইতিহাস সৃষ্টি করে নির্যাতিতের সপক্ষে নজির স্থাপন করে
মানুষের অত্যাচার করার দুরন্ত স্পৃহা দেখে যতটা না অবাক হয়ে যাই, তার চেয়েও অনেক বেশি বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পড়ি মজলুমের আত্মরক্ষার কৌশল এবং অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম দেখে। অত্যাচারী এবং অত্যাচারিত এ দুই শ্রেণীর মন-মানসিকতা, চিন্তা-চেতনা এবং কর্মকাণ্ডে প্রকৃতি যে অভিনব প্রভাব বিস্তার করে, তা বিচার-বিশ্লেষণ করলে অন্যরাও আমার মতো অবাক না হয়ে পারবেন না। অনেকেই হয়তো জানেন, অত্যাচার করার সময় মানুষের বিবেক বলতে কিছু থাকে না- অত্যাচারীর বুদ্ধিনাশ ঘটে এবং দৃষ্টিশক্তিও মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। এমনকি তার শরীরের বলও মারাত্মকভাবে কমে যায়। অন্য দিকে, যার ওপর অত্যাচার করা হয়, তার বিবেকের দরজা যায় খুলে। আত্মরক্ষার নানা কৌশল মাথায় উঁকিঝুঁকি দিতে আরম্ভ করে এবং শরীরের ইন্দ্রিয়গুলো তাকে নানাভাবে সহায়তা করতে থাকে। মানুষ সাধারণত দুইভাবে অত্যাচার-নির্যাতন আরম্ভ করে। প্রথমত, প্রতিশোধস্পৃহা চরিতার্থ করার জন্য সে অত্যাচারের চাবুক হাতে তুলে নেয়। অত্যাচার করার দ্বিতীয় কারণ হলো, ভয় দেখানো। এই কারণটির আবার বেশ কয়েকটি অনুঘটক রয়েছে। অত্যাচারী ব্যক্তি তার অপকর্ম ধামাচাপা দেয়ার জন্য অনেক সময় অত্যাচার আরম্ভ করে দেয়। নিজের দুর্বলতা ও অক্ষমতা সম্পর্কে লোকজন যেন মুখ খুলতে এবং চোখ তুলে তাকাতে সাহসী না হয়, সেজন্য কিছু মানুষ অত্যাচারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। অত্যাচারের সবচেয়ে ভয়াবহ এবং জঘন্য অনুঘটক হলো অত্যাচার করা কারো অভ্যাসে পরিণত হওয়া। এই শ্রেণীর ব্যক্তিরা পৃথিবীতে বিধাতার অভিশাপ এবং শয়তানের প্রতিমূর্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার পর নিজেদের মন-মানসিকতা এমন অবস্থায় নিয়ে যায় যে, অত্যাচার তাদের প্রধান বিনোদনের বিষয়ে পরিণত হয়। এবার মজলুম বা অত্যাচারিত ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বলা যাক। অনাদিকালের সব অত্যাচার, অবিচার, জুলুম ও নির্যাতনের জন্য যে কেবল অত্যাচারী বা জুলুমকারী দায়ী তা নয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মজলুম নিজে বা গোষ্ঠীগতভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অত্যাচারের রাস্তা তৈরি করে দেয়; অনেকটা খাল কেটে কুমির আনার ঘটনার মতো। মজলুমের নির্বুদ্ধিতা, অহঙ্কার, বাচালতা, মোনাফেকি, নাফরমানি, কাপুরুষতা, দুর্বলচিত্ত, সব কিছু এড়িয়ে চলার অভ্যাস, স্বার্থপরতা ইত্যাদি কারণে নিজের জন্য প্রায়ই অত্যাচারীকে যেন নিমন্ত্রণ করে নিয়ে আসে।
মানুষের অত্যাচার করার দুরন্ত স্পৃহা দেখে যতটা না অবাক হয়ে যাই, তার চেয়েও অনেক বেশি বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পড়ি মজলুমের আত্মরক্ষার কৌশল এবং অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম দেখে। অত্যাচারী এবং অত্যাচারিত এ দুই শ্রেণীর মন-মানসিকতা, চিন্তা-চেতনা এবং কর্মকাণ্ডে প্রকৃতি যে অভিনব প্রভাব বিস্তার করে, তা বিচার-বিশ্লেষণ করলে অন্যরাও আমার মতো অবাক না হয়ে পারবেন না। অনেকেই হয়তো জানেন, অত্যাচার করার সময় মানুষের বিবেক বলতে কিছু থাকে না- অত্যাচারীর বুদ্ধিনাশ ঘটে এবং দৃষ্টিশক্তিও মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। এমনকি তার শরীরের বলও মারাত্মকভাবে কমে যায়। অন্য দিকে, যার ওপর অত্যাচার করা হয়, তার বিবেকের দরজা যায় খুলে। আত্মরক্ষার নানা কৌশল মাথায় উঁকিঝুঁকি দিতে আরম্ভ করে এবং শরীরের ইন্দ্রিয়গুলো তাকে নানাভাবে সহায়তা করতে থাকে। মানুষ সাধারণত দুইভাবে অত্যাচার-নির্যাতন আরম্ভ করে। প্রথমত, প্রতিশোধস্পৃহা চরিতার্থ করার জন্য সে অত্যাচারের চাবুক হাতে তুলে নেয়। অত্যাচার করার দ্বিতীয় কারণ হলো, ভয় দেখানো। এই কারণটির আবার বেশ কয়েকটি অনুঘটক রয়েছে। অত্যাচারী ব্যক্তি তার অপকর্ম ধামাচাপা দেয়ার জন্য অনেক সময় অত্যাচার আরম্ভ করে দেয়। নিজের দুর্বলতা ও অক্ষমতা সম্পর্কে লোকজন যেন মুখ খুলতে এবং চোখ তুলে তাকাতে সাহসী না হয়, সেজন্য কিছু মানুষ অত্যাচারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। অত্যাচারের সবচেয়ে ভয়াবহ এবং জঘন্য অনুঘটক হলো অত্যাচার করা কারো অভ্যাসে পরিণত হওয়া। এই শ্রেণীর ব্যক্তিরা পৃথিবীতে বিধাতার অভিশাপ এবং শয়তানের প্রতিমূর্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার পর নিজেদের মন-মানসিকতা এমন অবস্থায় নিয়ে যায় যে, অত্যাচার তাদের প্রধান বিনোদনের বিষয়ে পরিণত হয়। এবার মজলুম বা অত্যাচারিত ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বলা যাক। অনাদিকালের সব অত্যাচার, অবিচার, জুলুম ও নির্যাতনের জন্য যে কেবল অত্যাচারী বা জুলুমকারী দায়ী তা নয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মজলুম নিজে বা গোষ্ঠীগতভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অত্যাচারের রাস্তা তৈরি করে দেয়; অনেকটা খাল কেটে কুমির আনার ঘটনার মতো। মজলুমের নির্বুদ্ধিতা, অহঙ্কার, বাচালতা, মোনাফেকি, নাফরমানি, কাপুরুষতা, দুর্বলচিত্ত, সব কিছু এড়িয়ে চলার অভ্যাস, স্বার্থপরতা ইত্যাদি কারণে নিজের জন্য প্রায়ই অত্যাচারীকে যেন নিমন্ত্রণ করে নিয়ে আসে।
অকারণে ভয় পাওয়া, পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে না পারা এবং
পরিবেশ-পরিস্থিতি মূল্যায়ন না করে অহেতুক একগুঁয়েমি করার কারণেও অনেক লোক
মজলুমে পরিণত হয়ে থাকেন। এমনকি বিনা কারণে বহু লোক মজলুম হয়ে পড়েন। কিছু
লোক মজলুম হয়ে যান সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে। অনেকে অত্যাচারের
শিকার হন সৎসাহসে প্রতিবাদ করার কারণে। সত্য ভাষণ, সত্যনিষ্ঠ চালচলন,
ধার্মিক ও সাধু-সন্ন্যাসীর মতো জীবনযাপনের কারণেও অনেকে জুলুম-অত্যাচারের
কবলে পড়েন। এ ক্ষেত্রে অত্যাচারী তার অত্যাচারকে যখন বিনোদনের উপকরণে পরিণত
করে, তখন সমাজের যা কিছু কল্যাণকর, দৃষ্টিনন্দন ও সুগন্ধ বিস্তারকারী তার
সবই জুলুমের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেন। এজন্য সব ধর্মে হয় আত্মরক্ষার কৌশল
রপ্ত করাকে অবশ্যকরণীয় অর্থাৎ ফরজ করা হয়েছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যে সব
ঐশীপুরুষ, ওলি আল্লাহ, নবী-রাসূল, পীর-মাশায়েখ নিতান্ত সরলসোজা এবং
নির্বিরোধ ও নিরীহ জীবনযাপন করেছেন তাদের অনেককে অত ্যাচারীরা হত্যা করেছে,
কাউকে দেশছাড়া করেছে অথবা জেলে ঢুকিয়ে নিজেদের হীন বাসনা চরিতার্থ করেছে।
অন্য দিকে, সাধু-সজ্জন মহান ব্যক্তিরা যখন হাতে প্রতিবাদের তলোয়ার তুলে
নিয়েছেন, সেখানেই সৃষ্টি হয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ও অনন্য ইতিহাস।আজকের নিবন্ধের
মূল কথা হলো- মজলুমকে একপর্যায়ে সর্বদা প্রকৃতি রক্ষা করে থাকে। আল্লাহ,
খোদা, বিধাতা কিংবা ভগবান- যে নামেই আমরা মহান স্রষ্টাকে ডাকি না কেন, অথবা
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান অথবা মুসলিম ইত্যাদি যে ধর্মের অনুসারীই হই না
কেন, মানুষ হিসেবে আমরা সবাই এই মর্ত্যলোকে একই প্রকৃতির আইনে শাসিত ও
নিয়ন্ত্রিত হই। মহাভারত, কলিঙ্গ, ট্রয়, স্পার্টা, গাওগিমেলা, কেন্নাই,
ওয়াটার লু প্রভৃতি যুগান্তকারী যুদ্ধের ময়দানে প্রকৃতি কিভাবে বিজয়ীর পক্ষ
অবলম্বন করেছিল এবং পরাজিতের পতন ডেকে এনেছিল তা সবিস্তারে বর্ণনা করলে
হয়তো এক মহাকাব্য রচিত হয়ে যাবে। মজলুম যখন প্রকৃতির সুরক্ষা পায়, তখন শত
জুলুম-নির্যাতনের মধ্যে থেকেও সে অত্যাচারীর মনে রীতিমতো আতঙ্ক সৃষ্টি করতে
সফল হয়। আমাদের প্রকৃতি সাধারণত দুইভাবে দুর্বল ও মজলুমকে সুরক্ষা দিয়ে
থাকে। প্রথমত, দুর্বল ও মজলুমের শারীরিক ও মানসিক গঠন সর্বদা ব্যতিক্রমী
হয়ে থাকে। দ্বিতীয়ত, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অর্থাৎ জুলুম নির্যাতনের সময়
প্রকৃতি হঠাৎ করে এমন কোনো ঘটনা ঘটায়, যা মজলুমের বিজয় এবং অত্যাচারীর পতন
নিশ্চিত করে দেয়। মানুষ ছাড়াও প্রকৃতির অপরাপর সৃষ্টি বা মাখলুকাতের মধ্যে
এমন সব অদ্ভুত, বিস্ময়কর ও মহাশক্তিশালী আত্মরক্ষার বিষয় লুকায়িত থাকে, যা
আবিষ্কারের পর বিজ্ঞানীরা হতবাক হয়ে গেছেন। গভীর সমুদ্রে এক ধরনের মাছ
রয়েছে, যারা নিজেদের আক্রমণকারীর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আশপাশের পানিকে
মুহূর্তের মধ্যে ঘোলা অথবা বিদ্যুতায়িত করে ফেলতে পারে। ফলে তাদের
আক্রমণকারীরা ইলেকট্রিক শক খেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়, আবার অনেকে ঘোলাপানির
মধ্যে পড়ে রীতিমতো বেকুব ও নাস্তানাবুদ হয়ে পালানোর পথটি পর্যন্ত খুঁজে পায়
না। সমাজে একটি প্রবাদ রয়েছে, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ রুখে দাঁড়ানোর
দুরন্ত সাহস পেয়ে যায়। আরো একটি প্রবাদ- বিপদে পড়লে মানুষের বুদ্ধি বাড়ে।
প্রবাদ দু’টি যে কতটা বাস্তব ও চিরন্তন তা অনুধাবনের জন্য ইতিহাসে বহু ঘটনা
লিপিবদ্ধ রয়েছে।
প্রাচীন দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সম্রাটের নাম ছিলেন সাইরাস।
ইতিহাসে সাইরাসকে বলা হয় ‘মহান বাদশাহ’। সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা,
ইরান, মধ্য এশিয়া ও ইউরোপের বিশাল অংশ অধিকার করে প্রাচীন দুনিয়ায় তিনি
মহান সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন, যার আয়তন, জৌলুশ ও শক্তিমত্তার সাথে তুলনীয়
কোনো সাম্রাজ্য আজ অবধি পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়নি বলা চলে। এত বড় সাম্রাজ্যের
সিংহাসনে বসেও সম্রাট সাইরাস শান্তি পাচ্ছিলেন না। কারণ, জয়ের নেশা,
যুদ্ধক্ষেত্রের কোলাহল, পরাজিতের আর্তচিৎকার, বিজয়ী সৈন্যদের লুটতরাজ ও
অট্টহাসির শব্দে তিনি এতটাই মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন, যা শেষ অবধি তার পতন
ডেকে আনে। অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে সাইরাসকে পরাজিত ও নিহত হতে হয়েছিল, যা
ইতিহাসের জনক হিরোডোটাস তার অমর গ্রন্থ ‘হিস্টিরিয়া’তে বর্ণনা করে গিয়েছেন।
হিরোডোটাসের মতে, সাইরাস যখন ক্ষমতা, বিত্ত ও বৈভবের চূড়ান্ত স্তরে পৌঁছে
গেলেন, তখন প্রায়ই হাপিত্যেশ করতে থাকলেন- হায়! পৃথিবী এত ছোট কেন; আমার
যে জয় করার আর অবশিষ্ট কিছুই নেই। তৎকালীন দুনিয়ার সবচেয়ে বড় রাজধানী
পার্সিপোলিসে বসে তিনি ভূগোলবিদদের ডেকে পাঠালেন এবং পৃথিবীর স্থলভাগ
সম্পর্কে খোঁজখবর নিলেন। রাজধানী থেকে ছয় মাসের দূরত্ব- এমন সব ভূমি
সরাসরি শাসনাধীনে আনলেন এবং দূরবর্তী অঞ্চলকে করদরাজ্যে পরিণত করার পর বহু
দূরবর্তী রাজ্যগুলোতে দূত পাঠালেন তার প্রতি যাতে সেখানকার বাসিন্দারা
আনুগত্য দেখায়। দূতেরা বহু বছর পর বড় বড় দূরবর্তী রাজ্য থেকে আনুগত্যের
দলিল সংগ্রহ করে সম্রাট সাইরাস বরাবর পেশ করলে সম্রাট নতুন করে খোঁজখবর
নিলেন : কোন করদরাজ্যটিকে সরাসরি শাসনের আওতায় আনার জন্য দখল করা যেতে
পারে।ভূগোলবিদেরা জানালেন, ছোট্ট একটি রাজ্য রয়েছে যেটির মালিকানা একজন
এতিম নাবালক শাহজাদা, যার পিতা সাইরাসের বন্ধু ছিলেন। বর্তমানে রাজ্যটি
এতিম শাহজাদার পক্ষে তার বিধবা মা পরিচালনা করছেন। সম্রাট সাথে সাথে হুকুম
জারি করলেন মহিলা ও এতিম শাহজাদাকে আত্মসমর্পণ করে রাজকীয় প্রতিনিধির কাছে
ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য। সাইরাসের ফরমান পেয়ে মহিলা আত্মসমর্পণ না করে
চমৎকার একটি চিঠি লিখলেন, যা পৃথিবীর রাজ্য-রাজা ও রাজধানীর ইতিহাসে অমর
হয়ে আছে। চিঠি পেয়ে সম্রাট ক্রোধে কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেললেন এবং মহিলার
রাজ্য আক্রমণ করতে গিয়ে অলৌকিকভাবে পরাজিত ও নিহত হলেন। প্রায় একই ঘটনা
ঘটেছিল সাইরাসের অর্ধপাগল ছেলে ক্যামবিসেসের ক্ষেত্রে। তিনি যখন ব্যাবিলন
দখল করলেন, তখন অপ্রয়োজনীয় একটি অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে মরুভূমির মধ্যে
তার বিশাল এক চৌকস বাহিনী, যার সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ২৫ হাজার; তা
রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে গেল। গত আড়াই হাজার বছর ধরে ক্রমাগত অনুসন্ধান
করেও সম্রাট ক্যামবিসেসের হারিয়ে যাওয়া ২৫ হাজার সৈন্যের কোনো হদিস পাননি
বিভিন্ন যুগ, কাল ও শতাব্দীর খ্যাতিমান পণ্ডিত ও প্রত্নতত্ত্ববিদেরা।
সাইরাস বা ক্যামবিসেসের মতো আরো শত-সহস্র কাহিনী রয়েছে রাজনীতির ইতিহাসে।
ব্যক্তি, সমাজ ও পরিবারের ইতিহাসে প্রতিদিনই সংযুক্ত হচ্ছে অজস্র ঘটনা,
যেখানে অত্যাচারী ও দাম্ভিক মানুষেরা অত্যাচার চালাতে চালাতে কাণ্ডজ্ঞান
হারিয়ে বদ্ধ উন্মাদ অথবা বুদ্ধিহীন নির্জীব প্রাণীতে পরিণত হয়ে যান। অন্য
দিকে, অত্যাচারিত ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অত্যাচার সইতে সইতে এমন সাহসী, কৌশলী ও
চৌকস হয়ে ওঠেন; যা দেখে অত্যাচারীর হৃদয়ে সদাসর্বদা মৃত্যুভয় প্রলয়ঙ্করী
ঝড়রূপে সুনামি বা টর্নেডোর তাণ্ডব নিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করে দেয়। এ অবস্থায়
অত্যাচারী যখন তার সর্বশক্তি দিয়ে সর্বশেষ মরণ কামড়ের মাধ্যমে মজলুমের
অস্তিত্ব বিনাশের জন্য আক্রমণ চালায়, ঠিক তখনই প্রকৃতি তার আপন মহিমায়
অদ্ভুত এক লীলাখেলার মাধ্যমে নবতর ইতিহাস সৃষ্টি করে নির্যাতিতের সপক্ষে
নজির স্থাপন করে।
No comments