অর্থ পাচার রোধের উদ্যোগ

অর্থ পাচার রোধে এবং চুরির টাকা দ্রুত ফেরত আনতে ‘পারস্পরিক সহায়তা আইন’ সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বৈঠকে। সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক। উল্লেখ্য, এ আইনের মাধ্যমে দেশে অর্থ ফেরত আনা এবং আইনি সহায়তা পেতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কাছে সহায়তা চাওয়া হয়। কিন্তু আইনটির কিছু জটিলতার কারণে এ ক্ষেত্রে বিদেশের সহায়তা পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানা গেছে, একই কারণে বহুল আলোচিত রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরত আনতেও সমস্যা হচ্ছে। আমরা আশা করব, আইনটি এমনভাবে সংশোধন করা হবে যাতে পাচারের টাকা দ্রুত দেশে আনার ক্ষেত্রে বাধা দূর হয় এবং পাচারকারীদের শনাক্ত করে ফেরত আনা সম্ভব হয়। বিষয়টি জরুরিও বটে। দেশ থেকে অর্থ পাচার অত্যন্ত উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবৈধ আর্থিক প্রবাহ বা মুদ্রা পাচার নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণকারী ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ৫ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এ অঙ্ক আমাদের মোট জাতীয় বাজেটের দ্বিগুণ। শুধু তাই নয়, প্রতিবছর টাকা পাচারের হার বাড়ছে। বিদেশে অর্থ পাচার একটি গুরুতর অপরাধ। এ জন্য শাস্তির বিধান রেখে আইনও প্রণয়ন করা হয়েছে। তারপরও টাকা পাচার বন্ধ হচ্ছে না। কী এর কারণ তা চিহ্নিত করে ফাঁকগুলো বন্ধ করতে হবে। ‘পারস্পরিক সহায়তা আইন’ সংশোধন করে সে চেষ্টা চালানো যেতে পারে। দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে নানা পন্থায়। সম্প্রতি টাকা পাচারের নতুন একটি কৌশলের কথা জানা গেছে।
এ ক্ষেত্রে পণ্য জাহাজীকরণের কাগজপত্র জাল করে এলসিকৃত পণ্যের পুরো টাকা তুলে নিয়ে তা বিদেশে রেখে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে এ মুহূর্তে অর্থ পাচার বৃদ্ধি পাওয়ার একটি বড় কারণ আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে ক্রমাগত ডলারের দাম বৃদ্ধিতে। এটি নির্বাচনের বছর হওয়ায় অর্থ পাচার বেড়ে গেছে। আর যখন অর্থ পাচার বাড়ে তখন ডলারের দামও বেড়ে যায়। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ নয়। কারণ ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে বেড়ে যাচ্ছে আমদানি ব্যয়। এতে কাঁচামালসহ মেশিনারিজের জন্য আমদানিনির্ভর শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অর্থ পাচার রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া গেলে এ পরিস্থিতির পরিবর্তন আসতে পারে। অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটে মূলত সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হলে। বাস্তবতা হল, দেশে সঞ্চয় বাড়লেও বিনিয়োগ বাড়ছে না। অর্থ পাচারের আরেকটি বড় কারণ হল দুর্নীতি। দুর্নীতি বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থ পাচারের হারও দিন দিন বাড়ছে। দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দিলেও টাকা পাচার বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির উপায় খোঁজা জরুরি। অর্থ পাচারকারীরা যাতে কোনোভাবে পার না পায়, সরকারের উচিত তা নিশ্চিত করা। তা না হলে নানা প্রক্রিয়ায় অর্থ পাচারের ঘটনা বাড়তেই থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.