ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট ঢাকায় আসছেন আজ



ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো দু’দিনের এক রাষ্ট্রীয় সফরে আজ শনিবার ঢাকা আসছেন। দক্ষিণ এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে তিনি এ সফরে আসছেন। বাংলাদেশ সফরকালে তিনি রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নেবেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট আজ বিকেল ৪টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন। উইদোদো জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অমর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। তিনি ধানমণ্ডিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি জাদুঘরও পরিদর্শন করবেন। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সফরকালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও বৈঠক করবেন। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ তার সম্মানে শনিবার এক নৈশভোজের আয়োজন করবেন। রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ইন্দোনেশিয়া থেকে ‘লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস’ (এলএনজি) আমদানির একটি চুক্তি প্রেসিডেন্ট উইদোদোর সফরকালে সই হতে পারে। এ ছাড়া সফরকালে দু’দেশের মধ্যে নিয়মিত পররাষ্ট্র দফতরের মধ্যে ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন’ (এফওসি) বৈঠক অনুষ্ঠান সম্পর্কিত একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়ে প্রাধান্য পাবে। বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে বছরে প্রায় ১০০ কোটি ডলারের বার্ষিক বাণিজ্য হয়ে থাকে। বাণিজ্য ব্যাপকভাবে ইন্দোনেশিয়ার অনুকূলে রয়েছে। নতুন করে এলএনজি আমদানি চুক্তি হলে বাণিজ্য ঘাটতি আরও বাড়বে। ঢাকার এক কর্মকর্তা শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, ‘এলএনজি আমাদের খুব প্রয়োজন তাই আমদানি করা হচ্ছে। এটা ঠিক যে, এর মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি আরও বাড়বে। তবে এই ঘাটতি কীভাবে কমানো যায় তা নিয়ে আলোচনা করব। এ ক্ষেত্রে শুল্ক ও অশুল্ক বাণিজ্য বাধা দূর করার উপায় নিয়ে আলোচনা করব। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া থেকে অধিক হারে বিনিয়োগ পাওয়ার জন্যে অনুরোধ জানাব।
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের সফরসঙ্গী হিসেবে আসছেন ফার্স্ট লেডি ইরিয়ান জোকো উইদোদোসহ একাধিক মন্ত্রী। এ ছাড়া একটি শক্তিশালী ব্যবসায়ী দল তার সঙ্গে থাকবে। জোকো উইদোদো আসন্ন বাংলাদেশ সফরকালে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা সংকট শুরুর দিকে এ বিষয়ে আলোচনা করতে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি। রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে ইন্দোনেশিয়া বেশ সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে মিয়ানমারের বেশ সুসম্পক রয়েছে। ইন্দোনেশিয়াই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জোট আসিয়ানে মিয়ানমারকে সদস্য করেছিল। তাই রোহিঙ্গা সংকটকালে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে- এমন কোনো শব্দ উচ্চারণ করেনি ইন্দোনেশিয়া। তবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশ হওয়ায় ইন্দোনেশিয়ার অভ্যন্তরে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষে প্রবল জনমত রয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট উইদোদোর বাংলাদেশ সফর আয়োজনের প্রথমদিকে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে যাওয়ার কোনো কর্মসূচি ছিল না। তবে শেষ পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার অভ্যন্তরে জনমতের চাপের কথা বিবেচনা করে তিনি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে যাচ্ছেন। এতে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাকার্তা তার প্রথমদিকের অবস্থানে খানিকটা পরিবর্তন করেছে বলেও মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মানবাধিকার বিষয়ক তৃতীয় কমিটির ভোটেও ইন্দোনেশিয়া রোহিঙ্গাদের পক্ষে ভোট দিয়েছে। ইন্দোনেশিয়া থেকে কোনো রাষ্ট্রপতি ২০০৩ সালের পর বাংলাদেশ সফর করেননি। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময়ে বিভিন্ন উপলক্ষে একধিকবার ইন্দোনেশিয়া সফর করেছেন। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরকালে রোহিঙ্গা সংকট অধিক গুরুত্ব লাভ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.