ছাত্রলীগের দাবির মুখে রমেকের এমবিবিএস পরীক্ষার ফলাফল স্থগিত
পাশ না করে দিলে ছাত্রলীগ নেতাদের আত্মাহুতির হুমকি এবং অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘটের ঘটনায় অবশেষে রংপুর মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস পরীক্ষার ফলাফল স্থগিত ঘোষণা করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এ ঘটনায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে মেডিক্যাল শিক্ষা ব্যবস্থায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আনোয়ার হাবিব স্বাক্ষরিত এক পত্রে মঙ্গলবার রাতে এক চিঠি দিয়ে ফলাফল স্থগিতের এই ঘোষণা দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. নুর নবী লাইজু। তিনি বলেন, এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফলে কোনো কোনো পরীক্ষার্থীর রোল নম্বর এবং নামের মধ্যে মিল না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, ৪১ তম ব্যাচে এমবিবিএস পরীক্ষায় মোট ২১২ জন পরীক্ষা দিয়েছিল। তার মধ্যে ১৫৪ জন পাশ করেছে। ১৩৪৭ সিরিয়ালটির নাম ভুল হয়ে ১৩৪৮ এর নাম চলে এসেছে। ওই শিক্ষার্থীর নাম গৌরাঙ্গচন্দ্র সাহা। তিনি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। এই ফলাফলে তিনিসহ কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি মাসুদ পারভেজসহ বাকীরাও সবাই ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। তারা সবাই ফেল করেছেন। কিন্তু নাম ভুলের বিষয়টিকে সামনে এনে ছাত্রলীগ ওই ফলাফল বাতিল করে মঙ্গলবার সকাল থেকে কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তাদের পাশ করিয়ে না দিলে আত্মাহুতিরও হুমকি দেয় তারা। এরই প্রেক্ষিতে ওই ফলাফল স্থগিত ঘোষণা করলো কর্তৃপক্ষ। ফলাফল স্থগিত করায় ছাত্রলীগ শুক্রবার পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করে। বিষয়টিকে মন্দ চোখে দেখছেন অনেকেই। কলেজের অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ছাত্রলীগের একটি অনৈতিক দাবির মুখে ফলাফল স্থগিত করার মাধ্যমে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাটাকেই প্রশ্নের মুখোমুখি করা হয়েছে। এখন থেকে এই রেওয়াজ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফলাফলে পড়বে। তারা আরও বলেন, ছাত্রনেতাদের মৌখিক পরীক্ষায় ছাড় দেওয়া হয় কিন্তু লিখিত পরীক্ষা ভালো না দিলে পাস করানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বিএমএ কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট ও রংপুর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ডা. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি কলেজে গিয়ে আন্দোলকারী ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি।
কতিপয় পরীক্ষার্থীর রোল নম্বর ও নামের মধ্যে মিল ছিল না এটা ঠিক। তারপরেও আমি তাদের বলেছি ৬ মাস পর আবারও পরীক্ষা দেওয়া যাবে। তাই তাদেরকে ভালো করে লেখাপড়া করতে পরামর্শ দিয়েছি। তিনি মনে করেন পাশের আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি কিছুটা ক্ষুণ্ন হয়েছে। ছাত্রলীগ সেক্রেটারী গৌরাঙ্গ সাহা জানান, মোট ২১২ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলাম। প্রথমে সবাইকে পাশ দেখানো হয়েছে। আমরা বাড়িতে মিষ্টি বিতরণ করেছি। কিন্তু এখন দেখানো হচ্ছে আমাদের ৫৮ জন ফেল। এই ফলাফল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং রংপুর মেডিক্যাল কলেজের যোগসাজসে আমাদেরকে ফেল দেখানো হয়েছে। ফলাফল স্থগিত করায় আমাদের দাবির প্রাথমিকভাবে পূর্ণ হয়েছে। এখন ফলাফল সংশোধন করে প্রকাশ করা হোক। এজন্য আমরা শুক্রবার পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করেছি। আমাদের দাবি না মানা না হলে পেট্রোল ঢেলে আমরা সবাই আত্মহুতি দিবো। এ ব্যপারে রংপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনিমেষ মজুমদার জানান, মোট ২১২ জন পরীক্ষা দিয়েছিল। তার মধ্যে ১৫৪ জন পাশ করেছে। ১৩৪৭ সিরিয়ালটির নাম ভুল হয়ে ১৩৪৮ এর নাম চলে এসেছে। ওই শিক্ষার্থীর নাম গৌরাঙ্গচন্দ্র সাহা। আসলে সে ফেল করেছে। এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ফলাফল স্থগিত করেছে। দেখি তারা কি করে।
No comments