১০ বছর ধরে শিকলে বাঁধা মজনুর জীবন
১০ বছর ধরে মানষিক প্রতিবন্ধী মজনুকে (২১) শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধি না হলেও মাথায় আঘাত পেয়ে মস্তিক বিকৃতি হওয়ায় তার এ করুণ অবস্থা। এদিকে হতদরিদ্র বাবা-মা ঝাঁড়-ফুক ছাড়া অর্থভাবে মজনুকে উন্নত চিকিৎসাসেবা দিতে পারেনি। তারা উন্নত চিকিৎসায় সহায়তার আবেদন করেছেন। মজনু সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার সরাতৈল গ্রামের দিনমুজুর সুলতান শেখের ছেলে। সরেজমিনে জানা যায়, সুস্থ স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেয়া মজনু ছোটবেলায় সারাক্ষণ হাঁসি খুশি দিন কাটাতেন। পরিবারের সবার প্রিয় ছিল সে। কিন্তু হঠাৎ করে এক বছর বয়সে তার মাথায় সামান্য একটু আঘাত লাগে। তখন দিনমুজুর বাবা-মা গ্রামের কবিরাজী ওষুধ ও ঝাঁড়-ফুক দিয়ে সুস্থতার আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু বহুদিন পেড়িয়ে গেলেও সুস্থ না হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে মজনু। অভাবের সংসারে দিনমুজুর বাবা সুলতান অর্থের অভাবে প্রিয় সন্তানকে আর উন্নত চিকিৎসা দিতে পারেনি। তখন থেকে বস্ত্রহীন হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুড়ে বেড়ায়, পানিতে পড়ে থাকে, ছোট ছেলে-মেয়েদের মারধর করে এবং কুকুরসহ গরু-ছাগলের মুখে হাত দিয়ে খেলা করে। এজন্য প্রায় ১০ বছর ধরে শিকল দিয়ে বেঁধে খোলা একটি ছাপড়া ঘরের মাটির মেঝেতে ময়লা ছেড়া কাঁথা দিয়ে রেখেছে তার পরিবার। তার নিকট কেউ যেতে চায় না। পাশ দিয়ে যাবার সময় পাগল বলে হাসি-তামাশা করেন সবাই। মানসিক প্রতিবন্ধী মজনুর মা মমতা বেগম জানান,
‘শ্বশুরের কাছ থেকে তিন শতাংশ জমি পেয়েছি। তার উপর একটা দোচালা ঘর তুলে বসবাস করছি। দুই ছেলে চার মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ভাই-বোনের মধ্যে মজনু তৃতীয়। আমরা সারাদিন মানুষের বাড়িতে কাজ করে যা পাই তা দিয়ে কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে সংসার চলে। টাকা-পয়সা না থাকার কারণে বড় কোনো ডাক্তারের কাছে নিয়ে চিকিৎসা করাতে পারিনি। ভালো কোনো খাবার কিংবা পোশাক কিনে দিতে পারিনি কোনোদিন। স্থানীয় একাধিক কবিরাজ ও ওঁঝা দিয়ে ঝাঁড়ফুক দিয়েছি, তাতে কোনো উপকার হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে ঘরের খুটির সাথে বেঁধে রাখতে হচ্ছে। আমি মা হয়ে ছেলেকে বেঁধে রাখা কত যে যন্ত্রণার তা শুধু আমি আর আল্লাহই জানে।’ তিনি আরো বলেন, যাদি ছেড়ে দেই তাহলে বহুদূর হারিয়ে যাবে। অথবা কারও ক্ষতি করতে পারে এই ভয়ে এবং লোকজনের মারধরের হাত থেকে রক্ষায় তাকে এভাবে আটকে রাখা হয়েছে ১০ বছর ধরে। আগে একটু ভালো ছিলো এখন সাথে কাপড়ও রাখতে চায় না। আমার ছেলেকে সুস্থ করতে দেশের বিত্তবান ও মানব দরদীদের নিকট সাহায্যের আবেদন করছি। এদিকে প্রতিবেশী আব্দুল কুদ্দুস এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিবন্ধী যুবক মজনুকে অনেক কষ্ট করে জীবন কাটাতে হচ্ছে। দিনমুজুর বাবা অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না। উন্নত চিকিৎসা দিলে যুবক মজনু ভালো হয়ে যাবে। এলাকা থেকে আমরা সাধ্যমতো সাহায্য করব, সেই সাথে দেশের হৃদয়বানদের নিকট মজনুর জীবনে সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা কামনা করছি।
No comments