উপহারে অনিয়মের মামলায় খালাস পেলেন এরশাদ
রাষ্ট্রপতি থাকাকালে পাওয়া বিভিন্ন উপহার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে করা মামলায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ খালাস পেয়েছেন। বিচারিক আদালতের তিন বছরের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে সাবেক এ রাষ্ট্রপতির করা আপিল দীর্ঘ ২৫ বছর পর মঞ্জুর করে এ রায় দেয়া হয়। মঙ্গলবার বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। বেলা ১১টা ২৫ মিনিট থেকে শুরু করে এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে পৌনে ৪টা পর্যন্ত রায় ঘোষণা চলে। রায়ে এ মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া তিন বছরের সাজা বৃদ্ধি চেয়ে সরকারের করা আপিল খারিজ করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া মামলায় এক সাক্ষীর (তাজুল ইসলাম চৌধুরী) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রপক্ষের করা আরেকটি আপিলও খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি জব্দ করা প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ফেরতের দাবিতে জাতীয় পার্টির মহাসচিবের করা ‘মানি স্যুট’ ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ের পর সাবেক এ রাষ্ট্রপতির আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম বলেন, হাইকোর্ট উপহারসামগ্রী গ্রহণের মামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদকে খালাস দিয়েছেন। দণ্ড দিয়ে বিচারিক আদালতের দেয়া রায় খারিজ করে দিয়েছেন। এতে প্রমাণিত হল, সাবেক এ রাষ্ট্রপতি নির্দোষ ছিলেন। তিনি কোনো অপরাধ করেননি, কোনো দুর্নীতির সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন না। আরও প্রমাণিত হল, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার শাসনামলে দেশে অনেক ভালো কাজ করেছেন, তারপরও তার নামে বিভিন্ন সময়ে একাধিক মামলা দেয়া হয়েছে। ইতিপূর্বেও তিনি অনেক মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন, আজও খালাস পেলেন। রায়ে সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মানি স্যুটের ব্যাপারে আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ১ কোটি ৯০ লাখ ৮১ হাজার ৫৬৫ টাকা ফেরতের দাবিতে মানি স্যুটটি করেছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব। সরকার যেহেতু টাকাটা নিয়ে গিয়েছিল, সে জন্য সরকারের কাছ থেকে ফেরতের দাবিতে এ মামলা করা হয়। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার একটি আদালতে বিচারাধীন। এ মামলা ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ১৯৯১ সালের ৮ জানুয়ারি তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো এরশাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলাটি করে। এতে অভিযোগ করা হয়, ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এরশাদ রাষ্ট্রপতি থাকাকালে পাওয়া বিভিন্ন উপহার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেননি। মামলায় আয়বহির্ভূতভাবে ১ কোটি ৯০ লাখ ৮১ হাজার ৫৬৫ টাকা অর্জনসহ দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮৬ হাজার ৭৬৫ টাকা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়। এ মামলার রায়ে ১৯৯২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি এরশাদের তিন বছরের সাজা হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে ১৯৯২ সালে হাইকোর্টে আপিল করেন এরশাদ।
আর তার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে ওই বছরই আপিল করে সরকার। একই মামলায় এরশাদের পক্ষে দেয়া এক সাক্ষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে সরকার আরেকটি আপিল করে। দীর্ঘদিন পর এসে ২০১১ সালে দুদক সরকারের আপিলে পক্ষভুক্ত হয়। এরপর সরকার ও দুদকের তিনটি আপিলের মধ্যে এরশাদের করা আপিলের ওপর গত বছরের ৩০ নভেম্বর শুনানি শুরু হয়ে এ বছরের ৯ মার্চ শেষ হয়। এর ওপর ২৩ মার্চ রায়ের দিন রেখেছিলেন বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুসের একক বেঞ্চ। সেদিন নথি পর্যালোচনা করে সরকারের অনিষ্পন্ন থাকা দুই আপিল ও এসবের একসঙ্গে শুনানির জন্য ইতিপূর্বের আদেশ থাকায় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আদেশের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে তিন আপিলের নথি পাঠিয়ে দেন হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ। এরপর প্রধান বিচারপতি তিনটি আপিলেরই একসঙ্গে নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চকে দায়িত্ব দেন। এরপর শুনানি নিয়ে গত ১২ এপ্রিল রায়ের জন্য ৯ মে দিন ধার্য করেন। রায়ের পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর সাবেক রাষ্ট্রপতি পদ থেকে এরশাদ পদত্যাগ করেন। পরে তিনি গ্রেফতার হন। আর মামলা হয়েছে ১৯৯১ সালের জানুয়ারিতে। যখন মামলা হয়েছে তখন তিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন না। তখন তিনি পাবলিক অফিস হোল্ড করতেন না। যেহেতু পাবলিক অফিস হোল্ড করেন না, সেহেতু তিনি পাবলিক সার্ভেন্ট (প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী) ছিলেন না। সে কারণে তাকে আইনের ৫(২) ধারায় সাজা দেয়া যায় না। ৫(২) ধারায় শুধু প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের সাজা দিতে হয়। কিন্তু নিন্ম আদালত থেকে তাকে ৫(২) ধারায় তিন বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। এ কারণে হাইকোর্ট সাজা থেকে খালাস দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, রায়ের ব্যাপারে দুদককে জানানো হয়েছে এবং হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার পরামর্শ দিয়েছি।
No comments