সরকারি সেচযন্ত্রে প্রতিমন্ত্রী পুত্রের জমজমাট ব্যবসা
প্রতিমন্ত্রীর ছেলে বলে কথা! মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণচন্দ্র চন্দের ছেলে সত্যজিৎ চন্দের বিরুদ্ধে সার বিক্রিতে অসদুপায় অবলম্বন এবং সরকারের সেচ যন্ত্র দিয়ে পানি বিক্রির জমজমাট ব্যবসার অভিযোগ ওঠেছে। ইউনিয়নের সার ডিলার মেসার্স ঊষা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হচ্ছেন প্রতিমন্ত্রীপুত্র সত্যজিৎ চন্দ। অভিযোগ রয়েছে, ঊষা এন্টারপ্রাইজের কাছ থেকে বেশি দামে সার কিনে সরকার নির্ধারিত কেজিপ্রতি ১৬ টাকায় কৃষক পর্যায়ে সার বিক্রি করতে পারছেন না ৯ জন সাব-ডিলারের কেউই। কৃষককে সাব-ডিলারদের কাছ থেকে ১৭/১৮ টাকায় এবং কখনও কখনও আরও বেশি দামে সার ক্রয় করতে হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) থেকে অনেক বেশি পরিমাণ সার তুলে কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গুরুতর অভিযোগটি হচ্ছে- বিএডিসির টেস্টিং বোরিং প্রকল্পের আওতায় আনা সেচ যন্ত্রটি তিন বছর আগে সত্যজিৎ চন্দ তার বাড়িতে বসিয়ে আশপাশের জমিতে সেচ দিয়ে কৃষকের কাছ থেকে চার ভাগের এক ভাগ ধান তুলে নেন। সমবায়ের ভিত্তিতে সেচ যন্ত্রটি ব্যবহারের বিধান থাকলেও প্রতিমন্ত্রীপুত্র সেটি তার বাড়িতে বসানোর ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দীপক বিশ্বাসসহ একাধিক সাব ডিলার জানিয়েছেন, ঊষা এন্টারপ্রাইজ থেকেই কেজিপ্রতি ১৫ টাকা ৬০ পয়সায় সার কিনতে হচ্ছে। ভোক্তা পর্যায়ে তাদেরকে ১৭ টাকায় বিক্রি করতে হয়। চাহিদা বেশি হলে কেনা-বেচার মূল্য দুটিই তখন বেড়ে যায়। কথা হয় সাব-ডিলার সুশেন ঢালীর সঙ্গে। তিনি জানান, ইউনিয়ন ডিলারের কাছ থেকে আমরা ১৫ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ১৬ টাকা কেজি দরে সার ক্রয় করি। এরপর পরিবহন খরচ যোগ করে ১ থেকে ২ টাকা কেজিপ্রতি লাভে বিক্রি করতে হয়। এসব বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ইউনিয়নের ডিলারদের চাহিদাপত্রের পরিপ্রেক্ষিতেই সার বণ্টন করা হয়। বেশি দামে সার বিক্রির বিষয় আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব’। সূত্র জানায়, ভান্ডারপাড়া ইউনিয়নের ৯ জন সাব-ডিলার ছাড়াও অতিরিক্ত ৬ জন খুচরা বিক্রেতাকে সার বিক্রিতে নিয়োজিত করা হচ্ছে।
এছাড়া পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নগুলোতে পছন্দের লোক দিয়ে অবৈধভাবে সার বিক্রি করানো হচ্ছে। ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তুলনামূলক মাসে ২/৩ গুণ বেশি সার বরাদ্দ পান সত্যজিৎ চন্দ। গত এপ্রিলে তিনি বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) থেকে সার পান ১৩ টন। অথচ ডুমুরিয়া সদর, আটলিয়া ও খর্নিয়া ইউনিয়নে চাহিদা বেশি থাকার পরও সেখানে দেয়া ৬ টন করে। এছাড়া বাকি ইউনিয়নে বরাদ্দ আরও কম। চলতি রবি মৌসুমেই সত্যজিৎ সার উত্তোলন করেছেন ৩১০ টন। যেখানে অন্য অনেক ইউনিয়নের ডিলাররা ১০০ টনও সার বরাদ্দ পায়নি। সেচ যন্ত্র সম্পর্কে এক প্রশ্নে জবাবে বিএডিসির খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী (সেচ) নুরুল আলম বলেন, সেচ যন্ত্র সংরক্ষণ ও পরিচালনা করবে কৃষকদের নিয়ে গঠিত কমিটি। সার্বিক ব্যয় নির্বাহ করবেন তারাই। শর্ত দিয়ে ব্যক্তি বিশেষের ১/৪ ভাগ ধান নেয়ার সুযোগ নেই। কোথাও কোনো সমস্যা হলে কৃষকদের অভিযোগ দিতে হবে আমার দফতরে। তবে এ ধরনের কোনো অভিযোগ তিনি পাননি বলে জানান। তবে সার ও সেচ যন্ত্র নিয়ে অভিযোগ স্বীকার করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়নচন্দ্র চন্দের ছেলে সত্যজিৎ চন্দ। তিনি বলেছেন, ‘গ্রামের মানুষ এ বিষয়ে সচেতন নয়। তারা সেচ যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখভাল করতে পারবে না। এজন্য আমার বাড়িতে স্থাপন করা হয়েছে। সেচ মেশিন সংরক্ষণ ও বিদ্যুৎ খরচের জন্য মোট উৎপাদিত ধানের ৪ ভাগের একভাগ আদায় করা হয়। ওই টাকাতেও খরচ সংকুলান হয় না। অতিরিক্ত সার গ্রহণ এবং অবৈধ ডিলার নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের চাহিদার বিপরীতে উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি সার বরাদ্দ দেয়- যা দেয় তা-ই গ্রহণ করি। প্রভাব খাটিয়ে বেশি সার নেয়া হয় না বলে তিনি দাবি করেন।
No comments