উনের চেয়ে ট্রাম্পকে ভয় পান দ.কোরীয়রা
গত কয়েক মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতা, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্রের উচ্চাশার জেরে বর্ধিষ্ণু আঞ্চলিক উত্তেজনার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মোট ১৩ জন প্রার্থীর মধ্যে জয়ী হয়েছেন বামপন্থী প্রার্থী মুন জায়ে ইন। সাবেক মানবাধিকার আইনজীবী ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক সেনা কর্মকর্তা তিনি। প্রতিদ্বন্দ্বী মুনের সাবেক সহকর্মী আন চিএল সু। মুন জায়ে তার নির্বাচনী প্রচারণায় উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক ও উষ্ণ করার কথা বলে আসছেন। উত্তর কোরিয়ার প্রতি দক্ষিণের যে কঠোর অবস্থান তা নরম করতে এবং একই সঙ্গে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান মুন জায়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় ব্যবসায় অংশীদার হচ্ছে চীন। পাঁচ বছর আগে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন তার দেশের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির গতি আরও ত্বরান্বিত করেন। পরমাণু সক্ষমতা আরও বাড়াতে সম্প্রতি উত্তর কোরিয়া বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। ফলে দক্ষিণের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে একটা যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাড বা টার্মিনাল হাই অ্যালটিটিউড ডিফেন্স মোতায়েন করে। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে দুই দেশের এক চুক্তি অনুযায়ী দক্ষিণ কোরিয়ায় এ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়। তবে এ চুক্তি বাতিল করতে চীনের পক্ষ থেকে অব্যাহত চাপের মুখে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। তবে এ ক্ষেত্রে মুন জায়ে ঠিক কী পদক্ষেপ নেবেন, তা এখনই স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। অবশ্য নির্বাচনী প্রচারণাকালে তিনি বলেছেন, থাড মোতায়েন বাতিল করবেন তিনি।
তবে এ ক্ষেত্রে চীনের চাপ বাড়তে থাকলে তিনি অভিযোগ করে বলেছিলেন, চীন সিউলের ওপর ‘অতিরিক্ত চাপ’ প্রয়োগ করছে এবং একপর্যায়ে ঘোষণা দেন- দক্ষিণ কোরিয়ার থাড মোতায়েনের সিদ্ধান্তে চীনের নাক গলানোর দরকার নেই। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থাডের বিনিময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে অর্থ দাবি করলে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়। সিউলের পক্ষ থেকে বলা হয়, থাড ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য দক্ষিণ কোরিয়া ওয়াশিংটনকে এক পয়সাও দেবে না। মুন জায়েও পার্ক জিউনের প্রশাসন ও মার্কিন কর্তাদের থাড মোতায়েনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। থাড ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনকালে দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকরা এর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। দক্ষিণ কোরীয়রা বর্তমানে কিম জনের চেয়ে ট্রাম্পের ব্যাপারে বেশি শঙ্কিত। প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়ার হুমকি ধামকির ব্যাপারে তারা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট দেশটির নিরাপত্তার অজুহাতে তার জনগণের ওপর নিজের মতামত চাপিয়ে দিচ্ছেন। দেশটির ভোটাররা এ বিষয়টা বেশ অবগত। তাই তারা এমন একজনকে তাদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিচ্ছেন, যিনি মূলত এ সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশ ও জাতির দায়িত্ব নিতে পারেন। সিউলের অধিবাসী কিম জিউং সুক নামের একজন ভোটার বলেন, আমি এমন একজনকে ভোট দিয়েছি, যিনি আগামী পাঁচ বছর দেশ ও জাতির জন্য দায়বদ্ধ থাকবেন। তিনি মূলত ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী মুন জায়ে ইনকে ভোট দিয়েছেন। কারণ তিনি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে একটা সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং সম্ভবত দেশটির দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ঢেলে সাজাবেন।
No comments